মতিঝিলে পড়ে থাকা বাদল ভাইকে চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন সাজিদ করিম ১১ মার্চ, ২০১৩, ০৬:১১:১৬ সন্ধ্যা
প্রিয় বাদল ভাই,
আশা করি ভালো আছো। কঠিন মাটি ভেদ করে আমার কথাগুলো হয়তো তোমার কাছে পৌঁছাবেনা, তবু বলছি। বুকে আশা রাখছি তুমি বোধহয় প্রদীপ দাস বা মনিরুল ইসলামের মত ছিলেনা, বরং তাদের মাঝে ছিলে যারা নির্যাতিতকে একটা বাড়ি দিয়ে বিবেকের দশটা বাড়িতে বালিশ ভেজায়।
তোমার লাশ যখন মতিঝিলে পড়ে থাকার খবর জানলাম, একাত্তর টিভির মতামত অনুযায়ী আমিও ভেবে নিয়েছিলাম এটা হয়তোবা জামাত-শিবিরেরই কাজ। তবে চেতনার পক্ষের মিডিয়াগুলো কেন জানি তোমাকে বেশীক্ষণ খবরে রাখলনা। তোমাকে কেউ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় শহীদ বলেও অভিহিত করলনা। চেতনার সৈনিক এই যুগের মুক্তিযোদ্ধা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও হুঙ্কার শুনতে পেলামনা। আমি মনে খুব কষ্ট পেলাম। শেষ আশা ছিলেন ভদ্র ডিএমপি কমিশনার বেনজীর সাহেব। তাকেও যখন দেখলামনা তোমার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে জেহাদ ঘোষণা করতে, বা তোমার বাসায় গিয়ে তোমার শোকে মুহ্যমান স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিতে, আমার আশা মিইয়ে গেলো। সে স্থান দখল করলো সন্দেহ আর জিজ্ঞাসা।
তুমি তো শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে সিসি ক্যামেরা অপারেট করতে। সমস্যাটা কি হয়েছিল, মুসলমান ঘরের সন্তান হিসেবে ঈমান কি বিদ্রোহ করেছিল? তোমার তো বোঝা উচিৎ ছিল, যে প্রজন্ম চত্বর গঠিত হয়েছে যৌবনজ্বালা ডট কম বা হালে যৌবনযাত্রা ডট কমের প্রজন্ম থেকে সেখানে এমন অনেক কিছুই ঘটতে পারে যা তোমার ঈমান সহ্য করবেনা। তুমি সায়েন্স পড়লে তো প্র্যাক্টিকাল ক্লাসের গুরুত্ব বোঝই, দুনিয়ার সব প্র্যাক্টিকাল ক্লাসই তো আর দিনের বেলা হয়না। তোমার ঈমানকে দমিয়ে রেখে প্রজন্ম নেতা চটি পিয়ালের সাথে যোগাযোগ করলেও তো অনেক ভালো করতে, তোমারও লাভ হত আর আশ্রম মামার কন্টেন্টও ডেভেলপ করত।আফসোস! সব নষ্টের গোড়া তোমার ওই ঈমান আর বিবেক, তোমার বড়কর্তারা বিক্রি করতে পারলো; তুমি করলেনা কেন? তাহলে আজকে কি তোমার স্ত্রীকে এভাবে কাঁদতে হত!
প্রজন্ম চত্বরের শুরুর কাহিনী
জানিনা আসলে তোমার ভাগ্যে কি ঘটেছিল। মুসা (আঃ)র যুগের ন্যায় তুমি ফিরে এসে সত্য জানাবে এমনটাও ঘটার সম্ভাবনা নেই। তবে যেন এস্পার বা ওস্পার হয়। হয় তোমার হত্যাকারীরা শাস্তি পাবে নতুবা তোমার মত অনেক মানুষের ঈমান কবরস্থ হবে। খোদা তোমায় ক্ষমা করে দিন।
(আইটি বিভাগে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া শাহবাগের সিসি ক্যামেরার দায়িত্বে ছিলেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাত একটার দিকে তার মৃতদেহ মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনির কাছে পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত তার হত্যার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অনগ্রগতি সাধন করেছে পুলিশ। আরেকটা তথ্য দেই, ২২ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটা আমি শাহবাগ মোড়ে ছিলাম। আমার বাম দিকে ছাত্রলীগ সেক্রেটারী সিদ্দিকী নাজমুল শ্লোগান দিচ্ছিলেন আর ডানে রাস্তার সিসিটিভিটা খোলা হচ্ছিলো)
বিষয়: বিবিধ
১৪২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন