ইসরাইলি বুলেট এবং জেমস মিলারের ক্যামেরা

লিখেছেন লিখেছেন সাজিদ করিম ০২ আগস্ট, ২০১৪, ০১:২১:৪৩ দুপুর





গাজা উপত্যকা, ২০০৩। পাঁচবার অ্যামি এওয়ার্ড জেতা ব্রিটিশ ডিরেক্টর-ক্যামেরাম্যান জেমস মিলার ও তার সহকারী সাইরা শাহ এলেন রাফাহ এলাকায়, উদ্দেশ্য গাজায় ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলী শিশুদের উপর যুদ্ধের বর্বরতা ও প্রভাব নিয়ে ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে গাজা ছিল ইসরাইলীদের হাতে। ব্যাপক প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও চাপের মুখে যার অবসান ঘটে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে। এর পূর্ব পর্যন্ত গাজায় ছিল ইহুদীদের জন্য 'বসতি' আর ফিলিস্তিনিদের জন্য 'বস্তি' । রাফাহর বস্তি বা উদ্বাস্তু ক্যাম্পে তাদের পরিচয় হল বারো বছরের দুইজন শিশুর সাথে। প্রাণের বন্ধু আহমাদ ও মুহাম্মাদ। পুরো ফিল্মের বেশীরভাগ অংশেই ক্যামেরা ছিল তাদের সামনে। এক সপ্তাহে শুধু রাফাহতেই ছয়জন শহীদের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছে জেমস মিলারের ক্যামেরা। তাদের মধ্যে একজন ১৪ বছরের সালেম শায়ে'রী, তার অপরাধ সে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। মৃত্যুর পূর্বে তার ছোট ক্ষত-বিক্ষত দেহ দেখে ক্যামেরা ধরা অভিজ্ঞ মিলারও নিজের কাঁপুনি সামলাতে পারছিলেননা। তার ক্যামেরা অন্যায় নির্বিচার বাড়ী ও সম্পত্তি ধ্বংসের মহাযজ্ঞের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত এটা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ২ মে রাতে তারা এলেন ১৬ বছরের এক বালিকার বাড়িতে যাদের আশেপাশের সবার বাড়ি বুল্ডোজার দিয়ে ভাঙ্গা হচ্ছিল, আর পাশে পাহারায় ছিল দুটি ট্যাঙ্ক। রাত এগারোটার দিকে সারা আর মিলার সাদা পতাকা হাতে করে বেরিয়ে এলেন ইসরাইলিদের সাথে কথা বলার জন্য, চিৎকার করে তারা বলছিলেন, We're journalists from Britain. We wanna talk to you. ইসরাইলী রক্ত-পিপাসুরা চেক করারও প্রয়োজন বোধ করলোনা, শুরু হল গুলিবৃষ্টি। কাঁধে গুলি লেগে লুটিয়ে পড়লেন মিলার, তার ক্যামেরায় ধারণকৃত সপ্তম ব্যাক্তি হিসেবে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার নিজের মৃত্যু তার ক্যামেরায় ধারণ করা হল।

যে সৈন্যটি তাকে গুলি করেছিল তাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল, ক্যাপ্টেইন হিবাল হেইব। ৯ মার্চ , ২০০৫ সালে ইসরাইল জেমস মিলার কেসের সমাপ্তি ঘোষণা করে এবং স্বভাবতই হিবাল হেইবকে কখনোই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি। যে ব্রিটেনের কাছ থেকে ইসরাইলের উৎপত্তি, সেই ব্রিটেনের এটর্নি জেনারেল ২০০৭ সালে ইসরাইলের এটর্নি জেনারেলকে এ কেস পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। সে অনুরোধ অগ্রাহ্য করা হয় ।



তার মৃত্যু পর্যন্ত মিলারের ধারণকৃত ফিল্মটি ২০০৪ সালে প্রচারিত হয় Death in Gaza শিরোনামে। চমৎকার ডকুমেন্টারি, দেখে নিতে পারেন।

টরেন্ট লিঙ্ক : http://xrumerblast.com/movie/19707/death-in-gaza/

বিষয়: বিবিধ

১৪৩১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

250091
০২ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৫৬
সুন্দরের আহবান লিখেছেন : কিন্তু এ নরপশুদের রক্ত পিপাশা থামবে কবে?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File