ভাবালুতা অথবা নস্টালজিয়া

লিখেছেন লিখেছেন সাজিদ করিম ১৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:২২:০৪ সন্ধ্যা



বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। এখানে মধ্যপ্রাচ্চে এমন বৃষ্টি খুবই বিরল। তবে পৃথিবীর প্রত্যেক বৃষ্টিরই বোধহয় একটা গুণ আছে। মানুষকে প্রচন্ড ভাবালু করে দেয়। প্রচন্ড ভাবালুতায় কারো কারো দুচোখ বেয়ে রাজ্যের ঘুম নামে। আমার এখানে নামে নস্টালজিয়া। এ জিনিসটা পৃথিবীর যে কটা মানুষের কাছ থেকে সর্বদা দূরে দূরে থাকতো, আগে আমি তার ভেতরে ছিলাম। যখন ঢাকায় থাকতাম তখন বাসার কথা মোটেও মনে থাকতোনা। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে বাসায় আসলে ঢাকার কথা ঘূর্ণাক্ষরেও মনে আসতোনা। মামুন কাকা এক মাস পর ফোন দিয়ে বলতেন, কিরে আমাদের ভুলেই গেলি নাকি? সেই আমি দেশ ছেড়ে আসার পর কিভাবে যেন বদলে গেলাম। ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলেই মনে হয় এখনই বাসায় ছুটে যাই। বৃষ্টিভেজা বাতাস নাকে এলেই আর ঘরে বসে থাকতে মন চাইতোনা। বাসার গেটের সামনে বিশাল ফজলির গাছের দিকে তাকিয়ে থাকা। প্রচন্ড বাতাসে বড় বড় পড়ন্ত আমগুলি এদিক ওদিক দুলতো আর আমাদের আশাভরা সময়গুলো কেটে যেত। বৃষ্টি শুরু হলে আম্মার কাছে আবদার শুরু করতাম। আম্মা কখনোই সায় দিতোনা, “না, ঠান্ডা লেগে জ্বর বাধাবি।” এরপর গোমড়া মুখে বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকা আর সুযোগের অপেক্ষা। অসতর্ক মুহূর্ত পেলেই ছুটে বাড়ির বাইরে চলে আসতাম। সব তিন-চারতলা বাড়ির ছাদের পাইপ দিয়ে পানি পড়ে গলিতে অসংখ্য ঝর্ণার সৃষ্টি হত। এক ঘণ্টা পর বাহাদুরি খতম হলে বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিৎকার দিতাম, “তামান্না আপু, গামছা।” এখন মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করে বাসায় ছুটে যাই। আম্মার চিৎকার অমান্য করে আবার ঝর্ণায় গোসল করে জ্বর বাধাই। আবার আম্মা বকা দিক, কতবার মানা করেছিলাম? আবার আমার জ্বরের জন্য স্পেশাল খাবার রান্না করুক। এখানে কেউ বলেনা বৃষ্টিতে নামলে ঠান্ডা লেগে যাবে; আমারও আর বৃষ্টিতে নামা হয়না।

বিষয়: বিবিধ

১৩৩০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

210244
১৯ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
নীল জোছনা লিখেছেন : দিলেন তো মনটা উরাধুরা কৈরা। এমনি প্রচন্ড গরমে গা ছটফট করছে তার উপ্রে ছুডবেলাকার স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন।
210315
১৯ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৪৭
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
210716
২০ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৫
মু নূরনবী লিখেছেন : নস্টালজিক...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File