আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শিরকের সাথে বসবাস এবং ধনী কৃষকের গল্প

লিখেছেন লিখেছেন সাজিদ করিম ০৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:০৯:০৩ রাত



وَيَقُولُ يَـٰلَيْتَنِى لَمْ أُشْرِكْ بِرَبِّىٓ أَحَدًۭا [١٨:٤٢]

“সে বলতে লাগলঃ হায়,আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক না করতাম।”

সূরা আল কাহাফের ৪২ নম্বর আয়াত এটি। মজার বিষয় হল আয়াতটা পড়ার সময় অনেকেই বুঝতে পারেন না কিভাবে শিরক করেছেন সেই ব্যাক্তি। সূরা কাহাফে আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা পুরো এক রুকুতে একটি উদাহরণ দিয়েছেন। সেই উদাহরণটি দুইজন কৃষকের , এর মধ্যে একজন এতোটাই গরীব যার সম্পদের উল্লেখও আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা করেননি। আরেকজন হচ্ছে এমন যাকে আল্লহ তাআ’লা এতোটাই রহমত দান করেছিলেন যে তার ছিল দুটো আংগুরের বাগান এবং তার সাথে সাথে শস্যক্ষেত্র । তার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত করেছিলেন ঝর্না, ফলে তাঁকে কষ্ট করে সেচ দেয়ারও প্রয়োজন পড়তোনা। আর তার পুরো জমি ঘিরে দিয়েছিলেন খেজুর গাছ দিয়ে যারা বাতাস থেকে আঙুরের দুর্বল গাছগুলোকে রক্ষা করতো। (كِلْتَا ٱلْجَنَّتَيْنِ ءَاتَتْ أُكُلَهَاوَلَمْ تَظْلِم مِّنْهُ شَيْـًۭٔا) এবং আল্লহ তাআ’লা বলছেন, “উভয় বাগানই ফলদান করত এবং তা থেকে কিছুই হ্রাস করত না”। অর্থাৎ, সে তার বাগান থেকে পুরোপুরিই ফল পেত। সে পুরোপুরি একজন সফল ও ধনী কৃষক ছিল। সে এমন কি বলল যে আল্লহ তাআ’লা একে শিরক হিসেবে অভিহিত করলেন?আল্লহ তাআ’লা জানাচ্ছেন,

فَقَالَ لِصَـٰحِبِهِۦ وَهُوَ يُحَاوِرُهُۥٓ أَنَا۠ أَكْثَرُ مِنكَ مَالًۭا وَأَعَزُّ نَفَرًۭا

“অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বললঃ আমার ধন-সম্পদ তোমার চাইতে বেশী এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী।”

সুবহানাল্লহ। আপনি যদি শুরু থেকে ঘটনাটা পড়েন তাহলে দেখবেন সবসময় আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেছেন, আমি তাঁকে দিয়েছি, আমি বাগান দিয়েছি, আমি করেছি। অথচ সে ব্যাক্তি যখন তার সাথীকে কটাক্ষ করছিল, লক্ষ্য করুন তার ভাষাঃ ‘আমার’ ধন-সম্পদ, ‘আমি’ বেশী শক্তিশালী। আল্লাহ আআ’লা সূরা ওয়াকিয়াহর ৬৩-৬৪ আয়াতে বলছেন,

أَفَرَءَيْتُم مَّا تَحْرُثُونَ ءَأَنتُمْ تَزْرَعُونَهُۥٓ أَمْ نَحْنُ ٱلزَّ‌ٰرِعُونَ

“তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তাকে উৎপন্ন কর, না আমি উৎপন্নকারী ?”

এটাই হচ্ছে আল্লহর সাথে শরীক করা । নিজেকে শরীক করা । যেমন ধরুন এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিন কোন টিভি সাংবাদিক গেছে রাজধানীর নামকরা এক স্কুলে । এ প্লাস পাওয়া আমাদের সন্তানকে জিজ্ঞেস করা হল, তোমার সাফল্যের কারণ কি? আমাদের সন্তানেরা উত্তর দেয়, ‘আমি দিনে ১০ ঘন্টা পড়ালেখা করেছি, আমার বাবা-মা এবং টিচাররা অনেক হেল্পফুল ছিল………” কিন্তু কি সেই প্রকৃত কারণ যার কারণে সে সফল হয়েছে ? কি সেই কারণ যার কারণে সেই কৃষক সম্পদশালী হতে পেরেছে? কারণ আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা চেয়েছেন, একান্ত অনুগ্রহ করে সফলতা আর সম্পদের নিয়ামত প্রদান করেছেন।

আল্লহ তাআ’লা আমাদের শিখিয়ে দিইয়েছেন কি বলতে হবে। ধনী কৃষক যখন সকল কৃতিত্ব নিজে দাবী করলো, তার গরীব সাথী তাঁকে জানালো,

وَلَوْلَآ إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَآءَ ٱللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِٱللَّهِ

“যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন একথা কেন বললে না; আল্লাহ যা চান, তাই হয়। আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই।”

আমরা মাশাআল্লহ শব্দটা ঠিকই ব্যবহার করি, কিন্তু যে অর্থে ব্যবহার করা উচিৎ ছিল সে অর্থে করিনা। কোন এক ভাই কিছু সুন্দর কথা লিখল, আমরা কমেন্ট করি, “মাশাআল্লহ খুব সুন্দর লিখেছেন”। এর মাধ্যমে আমরা এমন জিনিস বোঝাই যে লেখক অনেক ট্যালেন্টেড বা তার লেখার হাত খুব ভালো। অথচ এটা দ্বারা এমন অর্থ হয় বা হওয়া উচিৎ ছিলঃ আল্লহ চেয়েছেন (মাশাআল্লহ) তাই আপনার পক্ষে সুন্দর লেখা সম্ভবপর হয়েছে। লেখাটা সুন্দর এর অর্থ এই নয় যে আপনি কঠিন ট্যালেন্ট। আল্লহ চেয়েছেন আপনার হাত দিয়ে এমন লেখা লেখাবেন, তাই আপনার এ লেখা সম্ভব হয়েছে।

আমরা যেন কখনোই কোন কাজে সাফল্যের জন্য নিজে ক্রেডিট না নেই বা অন্যকে পুরোটা বাহবা না দেই। আমরা কথায় কথায় বলি, আমি যদি না থাকি তোমাদের কে দেখবে? অথচ আমরা কেউই নিজ পরিবারকে রক্ষা করার সামর্থ্য রাখিনা। তিনি আল্লহ যিনি আমার এবং আমার পরিবারের দেখভাল করেন, আমাদের রিজিক দান করেন উপরন্তু আমাদের প্রত্যেকের জন্য নিযুক্ত করে দিয়েছেন একজন সার্বক্ষণিক প্রহরী। পথে-ঘাটে, টিভির পর্দায় প্রায়ই এধরণের কথা কানে আসে, ‘তুমি আজ আমায় বাঁচালে’। আমরা এধরণের পাপ করতে করতে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে যখন কেউ আমাদের কল্যাণকামী হয়ে সংশোধন করতে চায়, আমরা অগ্নিমূর্তি হয়ে তাকে প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে চিহ্নিত করে দু-চারটা কথা শুনিয়ে দেইঃ “ইসলাম সহজ ধর্ম, একে কঠিন বানাবেননা।” কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ইসলামকে তিনি কঠিনভাবে উপস্থাপন করছেন নাকি আমাদের হৃদয়ই কঠিন হয়ে গেছে যে সত্য প্রবেশ করার পথ খুঁজে পায়না!

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা সেই ধনী কৃষকের এটাকেই শরীক করার সমপর্যায় হিসেবে বলেছেন যে সে নিজের সম্পত্তিকে নিজ হাতের কামাই বলে ঘোষণা করেছিল অথচ তার প্রতি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লার নিয়ামতকে সে ঊহ্য করার মাধ্যমে অস্বীকার করেছিল। আমরা চারপাশে আল্লাহর নিয়ামত দ্বারা পরিবেষ্টিত। শায়খ বাযের (রঃ) একজন সঙ্গী বলছিলেন, শায়খ বায (রঃ) প্রতি লোকমা খাবার মুখে তোলার আগে আল্লাহর রহমতের কথা স্মরণ করতেন (আলহামদুলিল্লাহ বলতেন)। আমাদের প্রয়োজন নেই প্রতি লোকমা মুখে দেবার আগে আলহামদুলিল্লাহ বলার; তবে এটুকু যেন না বলি, “আমি ইনকাম না করলে খেতে কি?”

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা আমাদের সবাইকে বুঝ দান করুন এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাউফিক দান করুন।

[অধিকাংশ কথা বিভিন্ন শায়খের প্রদানকৃত সূরা কাহাফের তাফসীর থেকে গৃহীত]

বিষয়: বিবিধ

১৬৮২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

159757
০৬ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:২৮
নিমু মাহবুব লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
০৬ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৪৮
114287
সাজিদ করিম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদGood Luck
159770
০৬ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:০৯
ধ্রুব নীল লিখেছেন : আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা আমাদের সবাইকে বুঝ দান করুন এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাউফিক দান করুন।

একটা পিক দেয়ার ইচ্ছা ছিল। বাট আপলোড করতে পারলামনা।
159792
০৬ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৪২
গন্ধসুধা লিখেছেন : মাশাআল্লাহ,নিশ্চয়ই আমাদের কাজে লাগবে।
159802
০৭ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:১৭
মাটিরলাঠি লিখেছেন : “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।” (আল-কুরআন-২, আয়াত-২৮৬)

জাজাকাল্লাহু খাইরান।
159810
০৭ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:১২
বড়মামা লিখেছেন : ভালো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File