আমি মুসলিম কি বাম কিংবা ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পারি? এদের মার মার কাট কাট রবে কি বসে থাকতে পারি?

লিখেছেন লিখেছেন হায়পোথিসিস ২২ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:৫৭:৪৩ দুপুর

ক্ষমতায় বাম ও ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার। বাম রাজনীতির ধারক বাহক গন ধর্ম কে রাজনীতি থেকে ত বটেই নিজের জীবন থেকে ও নির্বাসিত করেছেন। তাদের কাছে ধর্ম হল আফিম। অর্থাৎ, আফিমের মত ই ধর্ম ও পরিহার যোগ্য। তাদের গুরুদের দেশে মসজিদ মাদ্রাসা ত নয়, কোরান শরীফ রাখা ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আর ধর্ম নিরপেক্ষতার মশালধারি গনের মতে রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মীয় বিধানের কোন ভুমিকা থাকতে পারে না। রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্ম নিরপেক্ষতার মশালধারীদের চিন্তা প্রসুত নীতিমালায় হবে আইন। মার্কস, লেনিনের আইন এও অসুবিধা নাই এদের। কিন্তু আল্লাহর আইনে ভয়ঙ্কর আপত্তি। আপত্তি ই শুধু নয়, প্রয়োজনে যড়যন্ত্র, অত্যাচার, মিথ্যাচার সব কিছুই এর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে এরা পিছপা হয় না।

রাষ্ট্রের ব্যাপারে এই দুই গ্রুপের চিন্তাধারা একেবারে এক। শুধু পার্থক্য ব্যক্তি জীবনে ধর্ম মেনে চলা নিয়ে। ধর্ম নিরপেক্ষবাদিরা ধর্মের যে অংশ ঘরের ভিতর চুপে চুপে তাসবিহ, তাহলিল করার কথা আছে, বা মসজিদ-মাদ্রাসায় কোরান-হাদিস পড়ার কথা আছে। আছে, নামাজ, রোজার কথা তা অস্বীকার করেনা। তবে এর বাইরে চুরি, ডাকাতি, খুন, খারাবি, ভেজাল, মাপে ঠকানো, ইত্যাদীর ব্যাপারে ধর্মের কোন বিধান থাকলে ও তা নিজেরা ত মানবেই না এমন কি অন্য কেউ এ নিয়ে চেষ্টা করলে ও তাকে সর্বচ্চ উপায়ে বাধা দিবে।

প্রথমতঃ মুসলিম কি নিরপেক্ষ থাকতে পারে? না পারেনা। কারন ইসলামের পক্ষে হলেই একজন মানুষ কে মুসলিম বলে। বিপক্ষে থাকলে ত নয় ই, এমন কি নিরপেক্ষ থাকলে ও নয়। নিজেকে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সঁপে দেয়ার ওয়াদা করলেই একজন লোক মুসলিম হবে। অর্থাৎ, মুসলিম যদি জানতে পারে একটি (যে কোন ব্যাপারে) ব্যপারে আল্লাহর হুকুম, তবে তা সেই ভাবে না মেনে নিজের খেয়াল খুশি মত মানলে সে মুসলিম থাকল না। অন্তত সেই কাজের ব্যাপারে ত নয়।

আল্লাহর নবী (স) কি ধর্ম নিরপেক্ষ ছিলেন? তিনি ব্যক্তি জীবনে ত নন, রাষ্ট্রীয় জীবনে ও নিরপেক্ষ ছিলেন না। “আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন-যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন (৫/৪৯)।“ তাহলে রাসুল (স) আল্লাহর দেয়া হুকুম ছাড়া কোন হুকুম চালু করেন নি। ইহুদী-খ্রীষ্টান, আবু জেহেল (তৎকালিন বুদ্ধিজীবি) কারো পরামর্শ নেন নি। তাহলে তিনি ও ধর্ম নিরপেক্ষ ছিলেন না। ছিলেন আল্লাহর দেয়া ধর্মের পক্ষে।

ধর্মের ব্যপারে আল্লাহ কি নিরপেক্ষ? আল্লাহ বলছেনঃ “ওয়া রাদিতু লাকুম ইসলামা দ্বীনা।“ আল্লাহ (সুবহানু ওয়া তা’য়ালা) ইসলাম কে জীবনে আমরা কোন কাজ কি নিয়মে করব তার গাইড বুক হিসাবে ঠিক করেছেন। আল্লাহ আরো বলেছেনঃ “যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম (দ্বীন) তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত।“ তাহলে জানা গেল যে, আল্লাহ ধর্ম নিরপেক্ষ নন।

এখন দেখা যাক তাদের এ কথা কতটুকু গ্রহনযোগ্য, যে রাজনীতি নোংরা তাই ধর্মকে রাজনীতি তে আনা ঠিক নয়। রাজনীতি হচ্ছে নীতির রাজা। মানে, ভাল নীতি। এখন রাজনীতি কে নোংরা করেছে অসৎ রাজনীতি বর্গ। রাজনীতি নিজে নিজে খারাপ হয়ে যায় নি। রাজনীতি কি ফেরাউনের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন নবী মুসা (আঃ)? না তা তিনি করেন নি। কোরান মজিদে আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ

“ফেরাউনের সম্প্রদায়ের র্সদাররা বলল, তুমি কি এমনি ছেড়ে দেবে মূসা ও তার সম্প্রদায়কে। দেশময় হৈ-চৈ করার জন্য এবং তোমাকে ও তোমার দেব-দেবীকে বাতিল করে দেবার জন্য। সে বলল, আমি এখনি হত্যা করব তাদের পুত্র সন্তানদিগকে; আর জীবিত রাখব মেয়েদেরকে। বস্তুতঃ আমরা তাদের উপর প্রবল (৭/১২৭)।“

এ থেকে বোঝা যায় যে মুসা (আঃ) এমন কিছু করছিলেন যাতে মানুষ ফেরাউনের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছিল। ফেরাউনের নেতারা সেই কিছু একটা কে মুসার কর্তৃত্তের উপর হুমকি মনে করছিল। ফেরাউনের হুকুম যারা মানতে চাইত না তাদের পুত্র সন্তান হত্যা এবং কন্যা সন্তান জীবিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

এ থেকে বুঝা যায় যে, রাজনীতি থেকে ফেরাউনি শক্তি কে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাতে হবে। তাতে রাজনীতি সঠিক পথে আসবে। তাছাড়া, আল্লাহ তার সৃষ্টিকে ভালবাসেন, তাই চান কর্ত্তৃত্ত থাক আল্লাহ ভিরুদের হাতে। আর আল্লাহর পরীক্ষায় যারা পাশ করবে তারাই ক্ষমতা পাবে, আলাহর হুকুম অনুযায়ী ফায়সালা করার জন্য।

এখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফেরাউনি শক্তি (আল্লাহর হুকুমের বিরোধি শক্তি)। তারা ফেরাউনের মতই সেই সব লোক কে বিভিন্ন অভিযোগে কারাগারে রেখে শাস্তি দেয়ার অপেক্ষায়; যারা আল্লাহর হুকুম আহকাম নিজে মেনে চলে আর অন্যদের আল্লাহর দিকে আহবান জানায়। আর ছাত্রলীগের মত শক্তিকে মানুষ গুম- খুন করার খোলা লাইসেন্স দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। ছাত্রলীগের হাত থেকে নিরিহ পথযাত্রী এমন কি শিশু ও রেহায় পাচ্ছে না। কিন্তু ফেরাউনি সরকার তাদের বাচানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।

গত ৪০ বছরে মানুষ যাদের খুন, ধর্ষন, ইত্যাদী তে নিয়োজিত দেখেনি। দেখেছে আল্লাহর হুকুমের দিকে আহবান কারি হিসাবে। ওয়াজ, নসিহত ও লেখনীর মাধ্যমে মানুষ কে আল্লাহর হুকুম আহকাম বুঝানোর চেষ্টায় রত। তাদের কে এই বাম ও ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তি ৪০ বছর আগের বায়বীয় খুন, ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত করছে। আর ধর্ষনে সেঞ্চুরী কারি মানিক কে পুরষ্কৃত করছে। হিজাব পরা নারীদের অন্তরীন করে রিমান্ডে নিচ্ছে, আর হিন্দুস্তান থেকে প্রায় উলঙ্গ নাচনে ওয়ালীদের নিয়ে এসে আসর জমাচ্ছে। ইডেনের ছাত্রীদের উপঢৌকন স্বরুপ যারা নেতাদের কাছে পাঠানোর জন্য দায়ি তাদের কাজ চালিয়ে দিতে আর যে সব ছাত্রী নামাজ ঘরে কোরান হাদিস নিয়ে আলাপ করে তাদের হল থেকে বাহির করে দিতে দেখা যাচ্ছে এই সরকারকে।

শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন, কবির চৌধুরী দের সবাই জানে যে এরা রাষ্ট্রীয় ভাবে কোরান চালু হোক তা ত চায় না। ব্যক্তি জীবনে ও এরা ইসলাম বিরোধি হিসাবে পরিচিত। মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ, এমনি তর বাম পন্থীরা দেশ থেকে ইসলাম কে তাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরা ঠিক করছে কাকে শাস্তি দিতে হবে আর কাকে মানুষ মারার লাইসেন্স দিতে হবে।

এদের প্রচেষ্টায় আজ যার ফাসির আদেশ হল সেই মাওলানা আবুল কালাম আজাদ “Sovereignty of Allah (আল্লাহর সার্বভৌমত্ব) বুঝাতে গিয়ে তিনি যে উদাহরণটা দিয়েছিলন তা আজ এত দিন পরে আমার নিজের ভাষায় আপনাদের সামনে পেশ করছি, 'আজ যদি বিশ লক্ষ লোক ঢাকা শহর থেকে মার্চ করে তুরাগ বা বুড়ি গঙ্গা বা শীতালক্ষার পাড়ে গিয়ে মোনাজাত করে তাতে গাছের একটা পাতাও নড়বে কিনা জানিনা তবে ক্যান্টন মেন্ট থেকে যদি মাত্র দুই হাজার আর্মি মার্চ শুরু করে তাহলে দিল্লির অন্তরে কাপন ধরে যাবে। আর সেই দুই হাজার সৈন্য যদি হয় তৌহীদের পতাকাবাহী তাহলে সেই ঢেউ দিল্লি মস্ক হয়ে ওয়াসিংটনে গিয়ে হোয়াইট হাউজের উপড় আছড়ে পড়বে।“ (সুত্রঃ http://sonarbangladesh.com/blog/Abujarir/145650)

আল্লাহ বিরোধি শাহরিয়ার কবির গং আল্লাহ ভিরু আবুল কালাম আজাদ দের ৪০ বছর আগের বায়বীয় অভিযোগে শাস্তির সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করে ফেলেছে তখন আমরা যারা মুসলমান তাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকা কি উচিৎ ? তাই মাহমুদুর রহমান যথার্থ ই বলেছেন, সর্বত্র প্রতিরোধ চাই। আর তাই তার কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, “আসুন, পূর্বপুরুষদের সেই দেশপ্রেম ও সাহস হৃদয়ে ধারণ করে আজকের লুটেরা, জালিম শাসকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে অবতীর্ণ হই। আমার প্রিয় কবি সুকান্ত’র ‘বিদ্রোহের গান’ কবিতা থেকে খানিকটা অংশ উদ্ধৃত করে লেখায় ইতি টানছি।

বেজে উঠলে কি সময়ের ঘড়ি?

এসো তবে আজ বিদ্রোহ করি,

আমরা সবাই যে যার প্রহরী

উঠুক ডাক।

..............................

..............................

খ্যাতির মুখেতে পদাঘাত করি,

গড়ি, আমরা যে বিদ্রোহ গড়ি,

ছিঁড়ি দু’হাতের শৃঙ্খল দড়ি,

মৃত্যুপণ।

দিক থেকে দিকে বিদ্রোহ ছোটে,

বসে থাকবার বেলা নাই মোটে,

রক্তে রক্তে লাল হয়ে ওঠে,

পূর্বকোণ। “ (আমার দেশ , ০৯/০১/২০১৩)

বিষয়: বিবিধ

২৩৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File