২০টাকার পুলিশ প্রেমিকা !

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ আরিফ ১২ মার্চ, ২০১৩, ১২:২৫:২০ রাত

ছোটবেলায় চাচাত,পাড়াত ভাই-বোনরা মিলে গোল হয়ে বসে ‘চোর-পুলিশ’ খেলতাম।৬ টুকরো সাদা কাগজে রাজা,রানী,চোর,ডাকাত,পুলিশ,বাবু লেখা থাকত।রাজা থেকে বাবুর জন্য আলাদা আলাদা পয়েন্ট।কাগজগুলো ভাঁজ করে মাঝখানে ফেলা হত।সবাই একটা করে তুলে নিতাম।রাজা,রানী যাদের হাতে পড়ত তারা নিরাপদ।চোর,ডাকাত,পুলিশ,বাবু এই চারজনের মধ্যেই ‘চোর-পুলিশ’ খেলার আসল মজা।রাজা মর্জি মত পুলিশকে নির্দেশ দিতেন তিনজনের মধ্যে থেকে চোর/ডাকাত যেকোনো একজনকে খুঁজে বের করতে।ঠিক ধরতে পারলে অপরাধী পাবে শুন্য।ধরতে না পারলে অপরাধী পয়েন্ট পাবে।পুলিশ পাবে শূন্য।আর যদি ‘বাবু’ কে চোর/ডাকাত হিসেবে ধরে তাহলে শূন্যের সাথে আগের পয়েন্ট থেকে ১০ কাটা যাবে পুলিশের।

খেলার সময় রাজা,রানী আসতনা বললেই চলে।বেশীর ভাগ সময় ভাগ্যে জুটত ‘পুলিশ’।চোর,ডাকাত,বাবু তিনজনের মধ্যে থেকে মুখ দেখে কে চোর কে পুলিশ তা বের করা কঠিন ব্যাপার।ফলাফল,চোরকে ডাকাত,ডাকাতকে চোর ভেবে ভুল করে বসতাম।কখনো কখনো চোর/ডাকাত ছেড়ে যে ‘বাবু’ তাকেই অপরাধী ভেবে আম ছালা দুটাই হারাতাম।খেলা শেষে দেখা যেত আমার চাইতে চোর,ডাকাতদের পয়েন্ট বেশী!

‘চোর,পুলিশ’ খেলার অভিজ্ঞতা থেকে ছোটবেলায় ধারনা ছিল পুলিশের চাকরিটা ভেজালের।কালো,ফর্সা,শ্যামলা রঙের কারো চেহারায় লেখা থাকে না ‘আমি চোর’;‘আমি ডাকাত’;‘আমি ভাল মানুষ’।বড় হওয়ার সাথে সাথে ধারনাটা পাল্টে গেল।পুলিশের চাকরি ভেজালের না।সহজ এবং লাভজনক চাকরি থাকলে বাংলাদেশে একটায় আছে।সেটা হচ্ছে,পুলিশের চাকরি।খেলার ‘পুলিশের’ হাতে লাটি,টিয়ারশেল,অস্ত্র নাই।এখনকার পুলিশের কাছে অস্ত্র,টিয়ারশেল,ডান্ডা আছে।তাই পুলিশ যাকে তাকে অপরাধী,বিরোধী দলীয় কর্মী বানিয়ে দিতে পারে।পুলিশী নির্যাতন হজম করতে পারলে চোরও সাধু হয়।নির্যাতন হজম করতে না পারলে নিরাপরাধ ব্যাক্তিও স্বীকার করে নেয় ‘মাই নেম ইজ অমুক,এ্যান্ড আই আ্যম চোর’।

পুলিশের হাতে পড়লে ভাল মানুষও যে নিজেকে চোর,ডাকাত সন্ত্রাসীর স্বীকারোক্তি দেয় তা নিয়ে একটা কৌতুক পাঠকের সাথে শেয়ার না করে পারলাম না। ৫তলা বিল্ডিংয়ের ৩তলায় থাকে ফ্যামিলি নিয়ে থাকে বাড়িওয়ালা।একদিন অনেক খোঁজাখুঁিজ করেও বাড়িওয়ালী বিয়ের সোনার আংটি খুঁজে না পেয়ে থানায় এজাহার দায়ের করল।সন্দেহের তালিকায় উপরতলা,নিচতলা ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা।পুলিশ এসে ২০জনকে চোর সন্দেহে থানায় ধরে নিয়ে গেল।পরদিন বাড়িওয়ালা থানায় গিয়ে বলল,যে আংটি চুরি হয়েছে বলে এজাহার করেছিলাম সে আংটিটা পাওয়া গেছে।বাড়িওয়ালার কথা শুনে পুলিশ অফিসার বলল,এজাহারের ভিওিতে আমরা যে ২০জনকে চোর সন্দেহে গ্রেফতার করেছি সে ২০জনের ১২জনই স্বীকার করেছে যে আংটিটা ওরাই চুরি করেছে।

চৌদ্দশিকের ভেতরকার নির্যাতন এখন রাজপথে।গাড়ির নিচে চাপা পড়ে রাস্তায় বেওয়ারিশ কুকুরের লাশই রাজপথে পড়ে থাকেনা।পুলিশের গুলিতে ‘মানুষ’ ও বেওয়ারিশ লাশ হয়ে পড়ে থাকে।সিটি কর্পোরেশন বেওয়ারিশ কুকুর নিধন শুরু করলে মানবাধিকারের ধ্বব্জাধারীরা জোর আওয়াজ তোলে।কিন্তু,পুলিশের গুলিতে ডজন ডজন লাশ রাস্তায় পড়ে থাকলেও কোন ‘এলিট সুশীল’ তো দূরে থাক চ্যালাফ্যালারাও আওয়াজ তোলেনা।সংখ্যালুঘু কারো গায়ে পুলিশ একটা টোকা দিলে চারদিকে নিন্দার ঝড় উঠে।প্রামান্যচিত্র,শর্টফিল্ম বানিয়ে বিদেশী প্রভুদের কাছে মায়াকান্নায় বুক ভাসায়।কিন্তু,পুলিশের সহায়তায় ৭০ বছরের বৃদ্ধের দাঁড়ি বাকশালী কুকুররা টানাটানি করার ঘটনার সমালোচনার ঝড় তো দূরে থাক ‘পদলেহী’ ৯০ ভাগ মিডিয়া ছবিও ছাপেনা!

‘থার্টিফাষ্ট’ কিংবা গভীর রাতের মদ,সিসার আসরের স্বলøবসনা মাতাল তরুনী ইভটিজারের শিকার হলে নারীবাদীরা গলা ফাটিয়ে ম্যাৎকার শুরু করে দেয়।কিন্তু শালীন পোশাকের কোন নারীকে পুলিশ গুলি করে মেরে টেনে,হিচঁড়ে অর্ধউলঙ্গ করে নিয়ে যাবার দৃশ্য দেখেও নারীবাদীদের ‘নারীপ্রেম’ জেগে উঠেনা।

বাকশাল,রক্ষী বাহিনী দেখার আফসুস (!) যাদের আছে তাদের পুলিশবাহিনী দেখলেই আফসুসের ষোলকনা উদ্ধার হয়ে যাবে।

দিন সাতেক আগের ঘটনা।চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরতে ট্রেনে উঠলাম।পাশের সিটের সহযাত্রী মহিলা।কোলে শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখা একটা ব্যাগ।মহিলার মতিগতি সুবিধার না হওয়ায় উঠে বগির শেষ সিটে গিয়ে বসলাম।কুমিল্লায় ট্রেন থামলে বগিতে উঠে ৫সদস্যের পুলিশের একটা দল।৩জন পুরুষ পুলিশ,২জন মহিলা পুলিশ।যে মহিলার পাশ থেকে উঠে এসেছি সে মহিলাকে চেক করতেই বেরিয়ে এল ব্যাগে রাখা ২০বোতল ফেনসিডিল।ট্রেনের বগির এক চিপায় মহিলাকে ডেকে নিয়ে শুরু হয়ে গেল ‘আপোস’ বানিজ্যের দফারফা।দরকষাকষি শেষে ১০০টাকার নোট পেয়ে কিছুই হয়নি এমন ভাব করে বগির অন্য যাত্রীদের চেকিং শুরু করল ‘জনতার সেবক’ পুলিশ।জনপ্রতি ২০টাকা কম কি!

আমার ব্যাগ তল্লাশি করে,চৌদ্দগুষ্টির সব খবরাখবর নিয়েও টুপাইস আদায় করার মত ‘কিছু’ না পেয়ে জিজ্ঞাসা করল,কোন দল করেন?

-কোন দল করিনা।

-প্রমাণ কি?

-আমার সাথে যার রিলেশন সে পুলিশ।সব জানে।

-কোন থানায় আছে?

-জানিনা।তিনদিন হয়েছে ফেসবুকে রিলেশন হয়েছে।

-জানেন না আর প্রেম হয়ে গেল?

-ফেসবুকের বেশীর ভাগ প্রেমই এমন।চ্যাট করতে করতেই হয়ে যায়।

-কল দিন তাকে।

মোবাইল বের করে পায়েলের নাম্বারে কল করতেই একটু দুরে থাকা এক মহিলা পুলিশের মোবাইল বেউে উঠল।কাকতলীয় ভেবে লাইন কেটে দিয়ে আবারও পায়েলের নাম্বারে কল দিতেই একই ঘটনা!কি ঘটতে যাচ্ছে বুঝে উঠার আগেই পায়েল বলল,তুমি আরিফ?কি বিচ্চিরি কান্ড দেখতো।কত করে বললাম তোমার ছবি দিতে।দিলে না।দিলে আজ এত ঝামেলায় পড়তে না।

-হু,আমি আরিফ।এবং তুমি আমার ২০টাকার ঘুষখোর প্রেমিকা।

হা,হা করে হেসে উঠে পায়েল পরে কথা বলবে বলে নেমে গেল বগি থেকে।চেহারায় লজ্জা পাওয়ার বিন্দুমাত্র আভাস নেই।পুলিশের আবার লজ্জা!

স্যাটায়ার

বিষয়: বিবিধ

১৯৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File