মেয়েটি বলল,আপনার পোস্ট অফিস খোলা
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ আরিফ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:২২:৪৫ রাত
পড়ালেখায় ফার্স্টক্লাস টাইপের ছাত্র না হলে বাঁদরামি, ঝগড়া, ঢিসুম ঢিসুম মারামারিতে আমি আর চাচাত ভাই রবিন পিচ্চিকালে ফার্স্টক্লাস ছিলাম। আমাদের দুজনের সঙ্গে ক্লাসের মেয়েদের ঝগড়া লেগেই থাকত। কিছু হলেই দুই ভাই বীরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তাম। ক্লাসের অনেক মেয়েকে মাইর দিলেও মিনি সাইজের হাতির বাচ্চা নীলার ধারে-কাছেও ঘেঁষতাম না। ওর হাতে কয়েকটা ঘুষি খেলে ভর্তা হয়ে অক্কা পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল কিনা!
ক্লাস ফোরে তখন। চেয়ারে বসতে গিয়ে নীলার বান্ধবী রিতার পায়ের সঙ্গে রবিনের পা লেগে যাওয়াকে কেন্দ্র করে তুমুল ঝগড়া লেগে গেল। মোটাসোটা নীলা বান্ধবীর পক্ষ নিয়ে আমাদের দুজনের পিঠে দুম দুম করে বেশ কয়েকটা কিল বসিয়ে দিতেই একদম চুপ হয়ে গেলাম।
টিফিন পিরিয়ডে রবিন বলল, কঠিন প্রতিশোধ নিতে হবে।
—তুই আক্রমণ কর। আমি নাই। আর একটু হলে মরে যেতাম।
—মরে যাওয়ার ভয়ে একটা মেয়ের হাতে মাইর খেয়ে চুপ থাকলে ক্লাসের আর কেউ আমাদের ভয় পাবে?
—তাছাড়া উপায় কি?
—উপায় একটা আছে। একটা তেলাপোকা ধরে নীলার গায়ে ছেড়ে দিলে ওর বাঁদর নাচও দেখতে পারব, প্রতিশোধ নেয়া হবে।
ভালো প্রস্তাব! টিফিন খাওয়া বাদ দিয়ে স্কুলের টয়লেট থেকে তেলাপোকা ধরে আনলাম।
বিরতির পর ক্লাস শুরু। সবাই স্যারের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে রবিন টেবিলের নিচ দিয়ে নীলার দিকে তেলাপোকাটা ছুঁড়ে দিল। নীলার গায়ে না পড়ে পড়ল ক্লাসের সবচাইতে ভীতু অবন্তীর পিঠে। ফিসফিস করে অবন্তীকে ডাকতেই তাকাল। চোখ টিপে ইশারা করে বোঝাতে চাইলাম ওর জামায় তেলাপোকা পড়েছে। কিন্তু গাধীটা চোখের ইশারার অর্থ বুঝতে না পেরে জোরে বলে বসল, আরেকবার চোখ মারলে কিন্তু স্যারকে বলে দেব!
হায়রে গাধী! স্যারকে বলার আর বাকি আছে কি!
‘লাফাঙ্গা’ উপাধি দিয়ে স্যার খিচ্চা ধোলাই শুরু করে দিলেন। ধোলাইয়ের চাপের কাছে প্রাকৃতিক চাপ হার মানায় প্যান্ট ভিজিয়ে ফেললাম! কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দ্বিতীয় বারের মতো ইজ্জতের চাকা পাংচার!
সেদিনের পর ওই স্কুলে আর যাইনি। চোখ বন্ধ করাকেও যদি চোখ মারা ভেবে বসে কোনো মেয়ে, এই ভয়ে বয়েজ স্কুলে ভর্তি হলাম। বাঁদরামির ষোলকলা পূর্ণ করে বেশ ভালোই কেটেছে এসএসসি পর্যন্ত।
এসএসসি পরীক্ষার পর বড় ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখতে সবার সঙ্গে আমিও গেলাম। নাস্তা পর্ব শেষ হতেই হবু ভাবী মুনিয়া উনার ছোট বোন সোনিয়ার সঙ্গে এসে বসতেই সবার দৃষ্টি দুইজনের দিকে গেল। আম্মু,আপুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হবু ভাবীকে ভালো করে দেখতে গিয়ে সোনিয়ার চোখে চোখ পড়ে গেল। সেকেন্ডের দৃষ্টি বিনিময়ে টুক করে সোনিয়া চোখ টিপে দিল। মনকে বেশ শাসন করেও না তাকিয়ে পারলাম না। যতবার তাকাই ততবারই, সোনিয়া চোখ মারে!
সুন্দরী একটা মেয়ে এমন করে চোখ মারছে! নিশ্চয় প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়েছে! হবু ভাবীকে দেখতে এসে হবু বেয়াইনের প্রেমে সাড়া না দেয়ার বোকামি করলাম না! দিলাম টুক করে চোখ মেরে। দুইবার চোখ মেরে তিনবার মারার পর আচমকা সোনিয়া দাঁড়িয়ে বলল, কত্ত বড় সাহস আমাদের ঘরে বসে আমাকে চোখ মেরে ভেঙায়! মাইরা তক্তা বানায়া দেব!
সোনিয়ার হুমকিতে সব গোলমাল হয়ে গেল। আর পাত্রী দেখা! কোনো রকম জান নিয়ে ফিরে এলাম। পরে জানতে পেরেছি সোনিয়ার একটা চোখে সমস্যার কারণে এমনিতেই ওঠানামা করে। দেখলে মনে হয় চোখ মারছে! বাপজান হুমকি দিল, চোখের ইশারা অথবা চোখ মারা বিষয়ক কেলেঙ্কারি আরেকবার ঘটলে ঘর থেকে বের করে দেবে। বাপজান আবার এক কথার মানুষ। তাই বাসা থেকে বের হওয়ার আগে চোখে কালো চশমা দিয়ে বের হই!
কিন্তু, বিধি বাম। অভাগার পোড়া কপাল বলে কথা! আবারও চোখের ইশারা! এবার চোখ হারানোর ভয়! দোস্ত রুমানের বোন নিশিতার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের ঘটনা। রাতের অনুষ্ঠানে কালো চশমা পড়ে গেলে সবাই ‘ক্ষ্যাত পাবলিক’ ভাববে তাই চশমা ছাড়াই অনুষ্ঠানে গিয়েছি। হঠাত্ লক্ষ করলাম, একটু দূরে দাঁড়ানো রুমানদের এলাকার সুন্দরী মিথি চোখের ইশারায় কিছু বোঝাতে চাচ্ছে! আবার না কোনো কেলেঙ্কারি ঘটে যায়, সে ভয়ে দ্বিতীয়বার তাকালাম না।
একটু পর মিথি হেঁটে এসে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আস্তে করে বলল, আপনার পোস্ট অফিস খোলা! চমকে উঠে হাত দিয়ে দেখি ঘটনা সত্য। তড়িঘড়ি করে প্যান্টের জিপার বন্ধ গায়ে-হলুদ অনুষ্ঠানের গোষ্ঠী কিলিয়ে পালিয়ে এলাম।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন