ছবির হাটে গাঁজাবতী মেয়ের সাথে!

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ আরিফ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৩৮:৪২ রাত

ভ্যালেন্টাইন ডে এর পরদিন চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়ুয়া ফ্রেন্ড মাহিরের সাথে গিয়েছিলাম ছবির হাটে।মাহিরের কাছে ছবির হাটের অনেক গল্প শুনলেও কখনো যাওয়া হয়নি।

ছবির হাটে গিয়ে পুরা টাস্কিত।হালকা আলো-আধাঁরির মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছেলে-মেয়েরা দলে দলে আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডায় কেউ ব্যস্ত রাজনীতি নিয়ে;কেউবা ব্যস্ত কবিতা নিয়ে কাব্য সমালোচনায়।সবার চেহারার মধ্যে বেশ বুদ্ধিজীবি বুদ্ধিজীবি একটা ভাব।তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঢং দেখে মনে হল,দেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে সাহিত্য সবকিছুরই দিকনির্দেশনা যায় ছবির হাট থেকে।ছবির হাটের বুদ্ধিজীবিরা না থাকলে দেশের গনতন্ত্র এতদিনে ধ্বংস হয়ে যেত।বাংলা সাহিত্য ইঁদুরে খেয়ে বঙ্গপোসাগরে ঝাঁপ দিত!

গিটারে সুর তুলে নিজেদের বাথরুম সিঙ্গার অপবাদ মুছতে মরিয়া ননস্টপ ভ্যা ভ্যা করে যাওয়া ৬-৭জনের একটা দলের পাশ দিয়ে হেঁটে একটু সামনে যেতেই দেখলাম টেলিভিশনের উঠতি আর্টিষ্টদের অনেকেই চায়ের কাপ হাতে বসে আছে।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একপাশে বসতে না বসতেই মাহিরের ফ্রেন্ড মনিরা হাজির।প্রথম দর্শনে ছেলে না মেয়ে এই নিয়ে ব্যাপক কনফিউজড হলেও পরে সিওর হলাম মেয়ে!

-ঘরকুনো ফ্রেন্ডটাকে শেষ পর্যন্ত বাসা থেকে বের করতে পারলি তাহলে?

-কিভাবে বুঝলি ও-ই আমার ঘরকুনো ফ্রেন্ডটা।

-ওর চেহারায় ‘মায়ের ছেলে,মায়ের ছেলে’ টাইপের মার্কা একটা ভাব আছে কিনা।

-হা..হা..হা।ইসরে ভুলেই গেছি।জরুরী একটা কাজ আছে।কাজটা সেরে আসছি।তুই ততক্ষন ওর সাথে আড্ডা দে।

-জো হুকুম বস।

মাহির চলে যেতেই মনিরা বলল,অফিস থেকে বাসায় গিয়ে তো বসেই থাক।এখানেও বসে থাকবা?তার চাইতে চল হাঁিট।

-তুমি এতকিছু কিভাবে জানলে?

-মাহির আড্ডায় প্রায় তোমার কথা বলে।

-আচ্ছা,এদিকে এমন উৎকট গন্ধ কেন।মাথা কেমন ঝিমঝিম করছে।

-গাঁজার।

-বল কি?

-ঠিকই বলেছি।

-কখনও গাঁজা খাওনি?

-না।

-খাবা ক্যামনে?মায়ের আঁচলের নিচ থেকে বের হলেই তো খাইতে পারতা।

-গাঁজা খেলে কি হয়?

-গাঁজার আদুরে আরেকটা নাম হইতাছে সিদ্ধি।সিদ্ধি খেলে বুদ্ধি বাড়ে জাননা?

-নাতো।সত্যি কি বুদ্ধি বাড়ে?

-আবার জিগায়।একটান দিলেই বুঝতে পারবা বুদ্ধি কিভাবে বাড়ে।যত টান দিবে ততই বুদ্ধি বাড়বে।আমার কাছে গাঁজা আছে।খাবা?

-হায়!হায়!!বল কি?তুমি গাঁজা খাও?

-শোন,গাঁজা খাইলে শুধু বুদ্ধি-ই বাড়ে না।গলার জোরও বাড়ে।মিটিং-মিছিল করি,কবিতা লিখি,ছবি আঁকি।গাঁজা না খেলে গলায় জোরও আসেনা মাথায় শৈল্পিক বুদ্ধিও আসে না।এখন বল খাবা কিনা?

-না,না।আম্মু জানলে আমাকে ঘর থেকে বের করে দেবে।

-আরে জানবে না।বাসায় গিয়ে মাথা ব্যাথার ভান করে শুয়ে পড়বা।

-যদি পুলিশে ধরে?

-তুমি শুধু মায়ের ছেলে না।আস্ত একটা মাথা মোটা ছেলেও।পুলিশকে টুপাইস দিয়েই গাঁজার ব্যবসা হয় ঢাকা শহরে।

মনিরা ওর পাস থেকে সিগারেট বের করে আমার ঠোঁটে গুজে দিয়ে লাইটার জ্বালালো।সিগারেটের ভেতর ঢুকানো গাঁজায় কয়েকটান দিতেই মাথা ভৌঁ ভৌঁ করে উঠল।

-আশপাশ ঘুরে,তোমাকে ডাবল দেখছি।এমন হচ্ছে কেন?

-আশপাশ ঘুরছে আর আমাকে ডাবল দেখছ মানে তোমার বুদ্ধি একটু একটু করে বাড়ছে।যখন দেখবা সারা পৃথিবী ঘুরছে তখন তোমার বুদ্ধির ষোল আনা পূর্ন হবে।

-বুদ্ধির ষোলকনা পূর্ন হলে আমাকে কেউ মাথামোটা বলে বকা দিবে নাতো?

-দিলে পিঠের চামড়া তুলে নেবা।

-মনিরা....

-বল।

-সামনের রাস্তাটা আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে কেন?

-তাই নাকি?

-হু..হু...আকাশের দিকে উঠে চাদেঁর সাথে লেগে গেছে।

-চাঁদে যাবা?

-হ্যা,চাঁদে যাব।

-তাহলে হাঁটা শুরু কর।

-কয়দিন লাগবে যেতে।

-হেঁেট গেলে একদিন।আর যদি এক দৌড়ে যাও তাহলে ১০মিনিটেই পৌছে যেতে পারবা।

-গাঁজাবতী মেয়ে,চাপা মারছ নাতো?

-না,চাপা মারছি না।তুমি আমাকে গাঁজাবতি মেয়ে বললে কেন?

-যে মেয়েরা লজ্জাবতী তাদের বলে লজ্জাবতী মেয়ে।

-তো?

-একদম সোজা।তুমি গাঁজা খাও।তাই তুমি গাঁজাবতী মেয়ে।

-বাহ!তোমার বুদ্ধিতো দেখি ষোলকনা পূর্ন হয়ে গেছে।

-এ্যাই গাঁজাবতি মেয়ে,আমার সাথে চাঁদে যাবে?

-আরেকদিন যাব।তুমি গিয়ে আমার জন্য চাঁদটা নিয়ে আসো!

১০মিনিটে চাঁদে যেতে খিচ্চা দৌড় লাগাতে গিয়ে কারো উপর আচঁড়ে পড়লাম।এরপর আর কিছুই মনে নেই।পরদিন নিজেকে আবিষ্কার করলাম মাহিরের বিছানায়।সারা শরীর ব্যাথা।মাথা এত ভারী যে মনে হচ্ছে ১০মনি বস্তা মাথার উপর।

গাঁজা।সাধু বাবা থেকে শুরু করে সমাজপতি,রাজা-বাদশাদের নেশায় মাতাল করে দেওয়া কুলীন গাঁজা এখন আমজনতার নেশার খোরাক।বড়লোকের হাত দখল করে নিয়েছে হেরোইন,আফিম,হুইস্কি,রাম,বিয়ার সহ নামীদামী ব্র্যান্ডের নেশাদ্রব্য।তাই ‘গাঁজা’ জাত খুইয়ে অলি-গলিতে,ফুটপাতে,স্টেশনে,শিক্ষাঙ্গনে জায়গা করে নিয়েছে।ব্যর্থপ্রেমিকদের হাত থেকে শুরু করে রাজনীতিচর্চা,শিল্পচর্চারত তরুন-তরুনীদের হাতে গাঁজা এখন আধুনিকতার প্রতীক!গাঁজা না খেলে ভাব,আবেগ,শিল্প কিছুই আসেনা!

সেদিন হয়ত বেশী দূরে নেই ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও,আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব‘ দার্শনিক নেপোলিয়নের জগৎ খ্যাত এই বাক্যাটি নকল করে কেউ বলে উঠবে ‘আমাকে নেশামুক্ত একটা মা দাও,আমি তোমাদের নেশামুক্ত একটি জাতি উপহার দেব’!

বিষয়: বিবিধ

২৫৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File