গায়ে হলুদের রাতে সুন্দরীর রূপের ফাঁদে

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ আরিফ ০৩ জুলাই, ২০১৩, ১১:৩১:৫৯ রাত

আমার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে আম্মু কয়েকদিন পর পর হুমকি দেয়,‘ঘরে বসে বসে একে খোঁচাবি ওকে খোচাঁবি।খালি বাঁদরামী আর বাঁদরামী। কোন কাজ করতে বললেই পারবিনা। তোর যন্ত্রনায় আমি একদিন বনে চলে যাব।সেদিন বুঝবি মা কি জিনিস’।

বিপরীতে বন্ধুদের মায়ের কাছে আমার মত সুবোধ,ভদ্র,লক্ষী,দায়িত্ববান ছেলে আর একটিও নেই।বন্ধুদের ঘরে কোন অনুষ্ঠান হলেই আমার কাঁধে অনেক দায়িত্ব দিয়ে আন্টিরা নিশ্চিন্তে থাকেন।

অরন্যের ছোটবোন অনন্যার বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যাওয়ার পরদিন ডাক পড়ল।আন্টি আমাকে ‘আব্বু’ ছাড়া কথাই বলেন না।বাইরের কারো বোঝার সাধ্য নেই আমি উনার ছেলে না।প্রথমে পায়েস খাওয়ালেন।এরপর হাতে মোটা অংকের টাকা ধরিয়ে দিয়ে পুরো গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান আমার ঘাড়ে চাপিয়ে জানিয়ে দিলেন,টাকার চিন্তা না করতে।তবুও যেন সুন্দর ভাবে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

আন্টির কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে অরন্যের রুমে যেতেই দরজা বন্ধ করে বলল-দোস্ত,অনেকদিন পর ভাল একটা ইনকামের সুযোগ আসলো।

-মানে কি?

-মানে হইতাছে তোকে আম্মু যে টাকা দিয়েছে আমরা সে টাকাই পুরো অনুষ্ঠান শেষ করে ফেলব।কিন্তু বাজেট দেখাব আরো বেশী।ঐ টাকা থেকে তোর অর্ধেক আমার অর্ধেক।

-তুই তো আস্ত একটা হারামী।নিজের ঘরের টাকা মারতে আরেকজনকে উৎসাহিত করিস!

-আর তুই বুঝি সাধু পুরুষ?২০০টাকা দিয়ে মাছ কিনে আন্টিকে হিসাব দিস ২৪০টাকা।২০টাকা দিয়ে আলু কিনে বলিস ২৫ টাকা!

-এইসব বলে কোন লাভ নাই দোস্ত।এক টাকাও এদিক সেদিক হবেনা তুইও ভাগ পাবিনা।এখন আমার সাথে চল।হাতে সময় মাত্র ২দিন।

টাকা মারতে না পারার দুঃখে হতাশ অরন্যকে নিয়ে দুইদিনেই পুরো গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের শুরু থেকে খাওয়া-দাওয়া কখন কি হবে সব ঠিক করে ফেললাম।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে দোস্তরা যখন সুন্দরী পরীদের সাথে মোবাইল নাম্বার,ফেসবুক বিনিময়ে ব্যস্ত আমি তখন সব ঠিকমত হচ্ছে কিনা এদিক-সেদিক ঘুরতে ঘুরতে অবস্থা কেরোসিন।সুন্দর ভাবেই সব শেষ হল।

অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ায় অরন্যেদের ঘনিষ্ট আত্মীয় স্বজন আর আমাদের গ্রুপটা ছাড়া বাইরের কেউ নেই।ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে বসেছি এমন সময় সামনের চেয়ারে বসা মেয়েটি পেছন ফিরে তাকাতেই চমকে উঠলাম।দুধে আলতা রঙ! অদ্ভুত সুন্দর মায়াবী চোখ,বাঁশির মত নাক। পুরা ‘পড়েনা চোখের পলক কি তোমার রূপের ঝলক’ অবস্থা। আবেগায়িত হয়ে আনমনেই বেশ জোরে গেয়ে উঠলাম ‘তোমারে দেখিলো পরানো ভরিয়া আসমান জমিন ধরিয়া..চলিতে চলিতে আমিও দেখিব তোমারে আমিও..রূপে দিলা তুমি পাগল করিয়া’।

সবাই চমকে উঠে আমার দিকে তাকাল।চারদিক থেকে একটায় দাবী,গান গাইতে হবে!অরন্য টাকা মারতে না পারার প্রতিশোধ নিতে হাত ধরে একরকম টেনে নিয়ে গেল স্টেজের উপর।উপস্থাপনার ভঙিতে বলল,‘হ্যালো দর্শক,এখন আপনাদের সামনে গান পরিবেশন করবেন আমাদের আড্ডার প্রাণ,যার গান শুনে স্কুলের মাঠেই ঘুমিয়ে পড়ি সেই বিশিষ্ট গায়কে গায়কিষ্ট।’

যে সুন্দরীর রূপের ঝলকে আমার মত বাথরুম সিঙ্গার গায়ে হলুদের স্টেজে দাঁড়িয়ে পায়ের কাঁপন ঠেকাতে মরিয়া সেই সুন্দরী তানিয়া শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,‘অরন্য তোমার বন্ধুর গান শুনে আমরা হব ধন্য।কিন্তু বিশিষ্ট গায়কে গায়কিষ্টের পা যেভাবে কাপঁছে তাতে স্টেজেই না প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন করে দেয়!’

তানিয়ার কথায় তমুল হাসির ঝড় উঠল।সুন্দরী হওয়ার অহংকারে সুন্দরীদের পা মাটিতে পড়তে চাইনা এতদিন তা জানতাম।কিন্তু এমন করে কাউকে ‘কথার বাঁশ’ দিতে পারে জানা ছিল না।জানলে কি আর গান গেয়ে উঠতাম!

সাহস করে চোখ বন্ধ করে গেয়ে উঠলাম ‘ গা আ গা আন আ্যাঁ আ্যঁ মি গেএএএএএ য়ে ’।কেউ একজনের ‘পঁচা ডিম চাই,পচাঁ ডিম’ শুনে আর গাওয়ার সাহস পেলাম না।

‘পঁচা ডিমের জন্য দেরী না করে আসেন যার হাতে যা আছে ছুঁড়ে মারি’-বলে দোস্ত ইমরান ওর হাতের গ্লাসে থাকা পানি ছুঁড়ে মারল!চরম কমেডি পরিবেশ থেকে আন্টি এসে সবাইকে ধমক দিয়ে আমাকে উদ্ধার করে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলেন! বললেন,‘তা আব্বু,তুমি কোন গানটা গাইতে চেয়েছিলে?’

-তুমি এতক্ষন ধরে দেখছিলা।আমাকে আগে উদ্ধার করো নাই কেন?

-আমি কি জানতাম পাগলা ছেলেটা সব গুলিয়ে ফেলবে?এখন বলোতো কোন গানটা?

-‘গান আমি গেয়ে যাব এই আসরে তোমাদের মন আমি নেব কেড়ে’ এইটা।

তানিয়া রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,‘যেভাবে গেয়েছেন এভাবে যদি মাইকে গান তাহলে যতদূর পর্যন্ত মাইকের আওয়াজ যাবে সব কুকুর বেড়াল ছুটে এসে দর্শক হবে!’

‘তুই ছেলেটাকে আবার ক্ষেপাতে এসেছিস?এখান থেকে যাবি নাকি মাইর খাবি’ বলে তানিয়াকে আদূরে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন আন্টি।মিষ্টি,রসমালাই এনে খেতে দিয়ে অন্য কাজে চলে গেলেন।আন্টি বের হতে না হতেই তানিয়া আবার হাজির।রসমালাই এর প্লেটটা তুলে নিয়ে ‘মিষ্টি জাতীয় জিনিষ বেশী খেতে নেই চান্দু’ বলে নিজেই খাওয়া শুরু করল।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে কাজের মেয়েটা একটা পিচ্চিকে কোলে করে নিয়ে এল।ঘুম জড়ানো চোখে পিচ্চিটা তানিয়াকে ‘মাম্মি’ বলে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল।

বিবাহিত প্লাস এক বাচ্চার মা!প্রেমে পড়ার দিনই ছ্যাকা এইটা নিয়ে যে বন্ধুরা কত হাসবে!সবাইকে ফাঁকি দিয়ে সোজা ছাদে!আকাশের দিকে তাকিয়ে কাব্য প্রতিভা ঝাড়ার চেষ্টা করলাম!মাগার কাব্যের ‘ক’ ও বাহির হলনা!আকাশের তারাকে সাক্ষী রেখে প্রেমের কপালে উষ্টা মারতে যাব এমন সময় তানিয়া হাজির!ফোঁড়ন কেটে বলল,‘আকাশের ঐ মিটিমিটি তারার সাথে কইব কথা নাইবা তুমি এলে-গাইতে হবেনা এসে গেছি।বোনের ছেলেরা যে খালাদের আদর করে মাম্মি ডাকে এটাও বুঝে না!বুদ্ধু কোথাকার!’

নাহ!প্রেমের কপালে উষ্টা মারা আর হল না!

বিষয়: বিবিধ

২৮৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File