ইস!যদি মেয়ে হতাম !!

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ আরিফ ০২ জুলাই, ২০১৩, ০৯:১০:৫৯ রাত

অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি।সিএনজি আসে সিএনজি যায় আমি শুধু হাত উঠায় ।আরো ২০মিনিট পর দাড়াঁনোর পর একটি সিএনজি এসে দাড়াঁল।মংগ্রলগ্রহে বাড়ি বানানোর সুযোগ পেলেও যতটা না খুশি হতাম তার চাইতে কোটি গুন বেশী খুশি হয়ে আনন্দে গদগদ করে সিএনজিওয়ালা ভাইকে বড় করে সালাম দিলাম।অন্য সময় শুধু আসসালামু ওয়ালাইকুম বললেও আজ আসসালামু ওয়ালাইকুম ওয়া রহমতাল্লাহে ওয়া বারাকাতু বলে সিএনজির দরজা খুলে উঠতে যাব এমন সময় ড্রাইভার ভাই হুংকার দিয়ে বললেন,আরে উঠেন ক্যান?আপনার জন্য কে দাড়াঁয়ছে ?আফারে উঠতে দেন। পিছন ফিরে দেখি আমার নাক বরাবর দাড়িঁয়ে পাশের বাসার সুন্দরী তানিয়া মিটমিট করে হাসছে।সুন্দরী মেয়েদের হাসিতে নাকি মুক্তা ঝরে।কিন্তু,এই প্রবাদটি যে কতবড় মিথ্যা সেদিন বুঝতে পারলাম।তানিয়ার কয়েক সেকেন্ডের মিটমিটি হাসি তার চাইতে বেশী লজ্জা পেলাম।লজ্জায় নাকি ফর্সা মানুষের মুখ লাল হয় আমার শ্যামলা মুখ কি বেগুনী হয়েছে ভাবতে ভাবতে তানিয়াকে সিএনজিতে উঠার যায়গা দিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম পরিচিত কেউ এই দৃশ্য দেখে ফেলেনিতো? উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি পাশের বাসার সোহানা ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।চোখাচোখি হতেই মুচকি হাসি অট্রহাসি হয়ে তিনতলার উপর থেকে আমার কানেও ভেসে এল।

তানিয়ার মিটমিটি হাসি আর সোহানা ভাবির অট্রহাসির লজ্জায় ইচ্চা হল পরিচিত এক র‌্যাব বড় ভাইকে ফোন দিয়ে বলি,ভাইয়ারে শুধু শুধু নিরাপরাধ মানুষকে আপনার পঙ্গু করে দেন পারলে এর চাইতে আমার মানসম্মানের তেরটা বাজানোর অপরাধে এই সিএনজিওয়ালা ভাইকে ক্রসফায়ারে দেন।মোবাইলের ব্যালেন্স না থাকায় মনের ইচ্ছাকে মনে রেখে সিএনজিওয়ালার ১৪গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে হাঁটতে শুরু করলাম ।আফুর গায়ের রঙ ফর্সা তাই সুযোগ পেলেই শ্যামলা এই আমাকে খোটাঁ দিয়ে বলবে,বেশী রোদে হাটিঁস না তাহলে কালো ভূত হয়ে যাবি।এই নিয়ে আফুর সাথে ঝগড়া করলেও আড়ালে আফুর উপদেশ ঠিকই মানি।কালো হয়ে যাব বলে ক্রিকেট খেলিনা,রোদে ঘুরিনা এমনকি ফ্রিতে টিকেট পেয়েও স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখিনা শুধু কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে।অথচ আজ সেই আমি লজ্জাময় ক্ষোভের যন্ত্রনায় হাটতেঁই থাকলাম।অনেক সিএনজির ড্রাইভার হর্ন বাজিয়ে যেতে চাই কিনা জিজ্ঞাসা করেছে।কিন্তু কারো দিকেই তাকালাম না।পাক্কা ৫৫মিনিট হাঁটার পর ব্যাংকের দরজায় পা রাখলাম।ব্যাংকের ভিতর ঢুকে দেখি ট্রেনের মত লম্বা সিরিয়াল।সিরিয়ালে দাড়িঁয়ে সামনের জনকে জিজ্ঞাসা করলাম-আচ্ছা ভাই,ডিজিটাল এটিএম মেশিনের যুগে পাবলিক কেন ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁিড়য়ে টাকা তোলে?প্রথমে বেশ রাগ নিয়ে আমার দিকে তাকালেন।কয়েকসেকেন্ড চেয়ে থেকে হাসি দিয়ে বললেন,ভাইরে এটিম মেশিনগুলো চরম ভোগান্তি দেয়।কখনো কার্ড আটকে যায় কখনো টাকা কম আসে কখনো জাল টাকা আসে ইত্যাদি ইত্যাদি।তা আপনি কেন লাইনে দাড়িঁয়েছেন? বেশ করুন হাসি দিয়ে বললাম, আমার মত একটা বেকার থাকতে বাবা কখনোই এটিএম কার্ড বানিয়ে বাৎসরিক চার্জ দিবেনা।বাবা কষ্ট করে টাকা কামাই আর আমাকে প্রতি মাসে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িঁয়ে তুলতে হয়।

লাইনে দাড়িঁয়ে থাকতে থাকতে এক সময় ফ্লোরেই বসে পড়লাম।হঠাৎ হাইহিলের ঠকঠক আওয়াজে পিছনে ফিরে দেখি আমাদের ক্লাসের সব চাইতে সুন্দরী চৈতি আমাকে পাশ কাঠিয়ে গেল।কিছু উঠার আগেই লম্বা লাইনটাকে পাশ কাঠিয়ে সোজা কাউন্টারে ।এক মিনিট,দুই মিনিট,তিন মিনিট,চার মিনিট... এবং ৭মিনিটের মাথায় টাকা তুলে চৈতি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হাটাঁ শুরু করতেই আমার দিকে চোখ পড়তেই পাশে এসে দাড়িঁয়ে জোরে জোরে সবাইকে শুনিয়ে বলল,কিরে তোরে এমন কাটুর্নের মত দেখাচ্ছে কেন?চৈতির কথা শুনে ব্যাংক শুদ্ধু মানুষ আমার দিকে তাকাল।বাংলা সিনেমার নায়িকা দেখলেও আজকাল পাবলিক যতক্ষন তাকিয়ে থাকেনা তার চাইতে বেশীক্ষন তাকিয়ে রইল। যে চৈতি কারো সাথে ক্লাসে নিজ থেকে কথা বলেনা সে চৈতি নিজেই কথা বলে আমাকে সবার সামনে কার্টুন বানিয়ে দিল।উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ফ্যান আছে কিনা।যদি ফ্যান থাকত তাহলে চৈতির ওড়না নিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়তাম।আমাকে সবার সামনে কার্টুন বানিয়ে চৈতি ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেল। ব্যাংকের ভেতর রেখে গেল পারফিউমের কড়া ঘ্রান আর একটা রক্তে মাংাসের কার্টুন যার দিকে একটু পর পর সবাই তাকিয়ে কার্টুনের মিল খুজঁতে লাগল। করুন হাসি হেসে সামনের জনকে বললাম, ইস যদি মেয়ে হতাম কতই না ভাল হত!অবাক হয়ে এমন ভাবে পিছনের দিকে তাকালেন যেন পৃথিবীর সব চাইতে আশ্চার্যজনক প্রানীটি এই প্রথম দেখছেন।প্রায় ১মিনিট পর বললেন,ভাই মাথা ঠিক আছেতো?

- আছেরে ভাই আছে।একদম ঠিক আছে।

--তাহলে এমন আজব ইচ্ছা কেন?

বাসা থেকে বের হওয়ার পরের ঘটনা বলে বললাম,আমরা কতক্ষন ধরে দাড়িঁয়ে আছি আর চৈতি ৭মিনিটে টাকা তুলে নিয়ে গেলো।মেয়ে হলেতো আমিও এ সুবিধা পেতাম নাকি?আমার দিকে ফিরে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িঁয়ে দিয়ে বললেন,ভাই আপনার মেয়ে হওয়ার ইচ্ছার কথা শুনে প্রথমে আমি আপনাকে পাগল ভেবেছিলাম।কিন্তু আপনার কথা শোনে আমার ভুল ভেঙে গেল।আমাকে মাপ করে দিয়েন ভাই।ব্যাপার না বলে উনার সাথে হ্যান্ডসেক করে দুজন মিলে মেয়ে হওয়ার সুবিধাগুলো নিয়ে গবেষনা শুরু করে দিলাম..।

বিষয়: বিবিধ

১৬৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File