রিকশায় ইয়াবা সুন্দরীর পাল্লায়
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ আরিফ ২৯ জুন, ২০১৩, ১১:২৯:৩৩ রাত
বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ইরাক-আফগানিস্তান দখল, বিশ্ব হারামি ইসরাইলিদের যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখলের জন্য ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র যেমন ব্যবহার করা লাগে, তেমনি আমাদের দেশের সরকারের পদলেহী, থুক্কু ‘সরকারসেবী’ পুলিশেরও ভয়ঙ্কর সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাবলিকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজপথ দখলে নেয়া লাগে। যাদের কাছে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হয়ে পুলিশ হয়েছে, সেই শিক্ষক সমাজের কাছ থেকে রাজপথ দখলে নিতে পুলিশ হরেক রকম অস্ত্র ব্যবহার করেই ক্লান্ত হয় না, অসভ্য ভাষায় গালি দিয়ে জানিয়ে দেয়—আমজনতা, বিরোধী দল কিংবা শিক্ষক সবই এক কাতারে!
হাজার হাজার মাইল দূরের বিশ্ব মোড়ল আর বিশ্ব হারামিরা থেকে শুরু করে বাকশালী ডাইনির বাকশালী পুলিশ—সবারই দখলে থাকা হাতিয়ার হিসেবে আছে হরেক রকম মারণাস্ত্র। কিন্তু পুরুষের মন দখলের জন্য নারী জাতির কোনো মরণাস্ত্র ব্যবহার করা লাগে না। মেয়েদের মধুর কণ্ঠের ‘ভাইয়া’ ডাকই পুরুষের মনে এমন ভাবে দোলা দেয় যে, মন দখল হয়ে যায় কয়েক সেকেন্ডে। ‘আল্লাহ! ভাইয়া, আপনার কণ্ঠ যা সুইট না!’; ‘ভাইয়া, আপনি এত্ত এত্ত ভালো যে কী বলব’; ‘জানেন ভাইয়া, আপনার মতো ভদ্রছেলে আমার জীবনেও একটি দেখিনি’; ‘ওফ! ভাইয়া, এইমাত্র আপনার কথা ভাবছিলাম আর আপনি এসে গেলেন!’—টাইপের ডায়লগ দিয়ে স্বার্থ উদ্ধারের কোনো জুড়ি নেই মেয়েদের।
জীবনে প্রথম ‘ভাইয়া’ ডাকের খপ্পরে পড়ি ঢাকার একটি সিনেমা হলে। ঢাকায় তখন আমি একেবারেই নতুন। বাংলা সিনেমার কঠিন ভক্ত রুমমেট মাসুমের একদিন শখ জাগল আমার সঙ্গে ছবি দেখবে। নাছোড়বান্দা মাসুমকে কোনোভাবেই বোঝাতে পারলাম না, ৩ ঘণ্টা নষ্ট করে বাংলা সিনেমার জলহস্তিনীদের নাচুন-কুদন দেখতে মোটেও আগ্রহী নই। নিরুপায় হয়ে ৬টা-৯টা শো দেখার জন্য সিনেমা হলে গেলাম। টিকিটের জন্য কাউন্টারের দিকে যাব, অমনি পেছন থেকে বেশ মিষ্টি সুরে ‘ভাইয়া’ ডাক শুনে দেখি, পেছনে দাঁড়ানো বেশ সুন্দরী দু’টি মেয়ে। একজন বেশ আহ্লাদি সুরে বলল, ‘ভাইয়া, এই প্রথম হলে ছবি দেখতে এসেছি। কী করব বুঝতে পারছি না। টাকা দিচ্ছি, আমাদের জন্যও দু’টি টিকিট নিন প্লিজ।’
সুন্দরীদের আবদার বলে কথা! মাসুম মেয়ে দুটোর কাছ থেকে টাকা নিয়ে চারটি টিকিট আনল। ছবি শুরু হতে বাকি পনেরো মিনিটের মধ্যে দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে পরিচয়পর্ব হয়ে গেল মিতু ও নিতুর সঙ্গে। একসঙ্গে হলের ভেতর ঢুকলাম। মাসুম আমাকে বাঁ পাশে রেখে মিতু, নিতুর পাশে বসতে চাইলেও সুযোগ পেল না। উল্টো আমাদের দু’জনকে দু’পাশে রেখে মাঝখানে বসে পড়ল মিতু ও নিতু। সিনেমা শুরু হলে নায়কের রিকশার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে বড় হয়ে যাওয়া এবং নায়িকার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে প্রেমে পড়ে যাওয়া পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে দেখলেও আর দেখতে ইচ্ছা হলো না। পরিচালকের ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করার কষ্টটুকু না করে এর চেয়ে একটু ঘুমিয়ে নেয়া অনেক ভালো। তাই চোখ বন্ধ করলাম। সিটে বসে শীতল পরিবেশের বেশ আয়েশি ঘুম নিতুর খোঁচায় ভেঙে গেল। সিনেমা শেষ কিনা জানতে চাইতেই নিতু জানালো বাসা থেকে কল এসেছে, তাই তাদের চলে যেতে হচ্ছে। মিষ্টি হাসি উইথ ধন্যবাদ দিয়ে ওরা চলে গেল।
সিনেমা শেষে বাইরে বেরিয়ে চা খেয়ে মানিব্যাগ বের করতে গিয়ে দেখি মানিব্যাগ নেই। মাসুমেরও একই দশা! বুঝতে বাকি রইল না ‘ভাইয়া’ ডেকে আমাদের সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে! সেই থেকে কোনো মেয়ে ‘ভাইয়া’ ডাকলে বুক ধক করে উঠত। কিন্তু, আজকে ‘ভাইয়া’ ডাক শুনে মনটা ত্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেল। যার জানের জান, প্রাণের প্রাণ, কলিজার টুকরা ছিলাম, সেই রুমু ওর স্বামীর সামনে আমাকে ‘ভাইয়া’ না ডেকে অন্তত ‘বন্ধ’ু পরিচয় দিতে পারত! কত সহজভাবে চার বছরের প্রেমিককে দু’মাসের স্বামীর সামনে ‘ভাইয়া’ বানিয়ে দিল রে দোস্ত!
—আধ ঘণ্টা ধরে তোর বকবক সহ্য করেছি। ‘ভাইয়া সমাচার’ নাম দিয়ে তুই ব্যর্থ প্রেমের উপন্যাস লেখ, আমি গেলাম।
রাজুর বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি রাত ৮টা। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী রোডে এই সময়টায় যানজট আর গাড়িতে প্রচণ্ড ভিড় থাকে। তার ওপর ২০১২ সালের অন্যতম সেরা জোকস ‘আমি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সফল’—সাহারা খালার সফল বাংলাদেশে টিউশনি করে পাওয়া চার হাজার টাকা নিয়ে গাড়ির মধ্যে ওঠার সাহস পেলাম না পকেটমারের ভয়ে। এসি বাসের কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো রিকশাকে ‘মামা যাত্রাবাড়ী যাবা?’ বলা শেষ হওয়ার আগেই টাইট জিন্স আর টি-শার্ট পরা একটা মেয়েও একই রিকশাকে ডাক দিল। আশপাশে তাকিয়ে দেখি আর রিকশা নেই। সুন্দরী মেয়েকে রিকশায় না উঠিয়ে আমাকে রিকশায় ওঠাবে তরুণ রিকশাওয়ালা? এমন স্বপ্ন না দেখে হাঁটা শুরু করতেই মেয়েটি বলল, ‘এক্সকিউজ মি ভাইয়া, আমিও যাত্রাবাড়ী যাচ্ছি। আপনি আমার সঙ্গে আসতে পারেন। একা যেতে ভয় করছে। আর ভাড়াটা শেয়ার হলে আপনারও লাভ, আমারও লাভ!’
রিকশায় সুন্দরী মেয়ের পাশে বসা ছেলেকে দেখে কত-শত বার যে হিংসায় জ্বলে-পুড়ে মরেছি! আর সেই সুযোগ এসে গেল! মেয়েটি কোনো কারণে যদি আবার মত পাল্টে ফেলে—এই আশঙ্কায় তড়িঘড়ি রিকশায় উঠে বসলাম। রিকশায় উঠে আমার শরীর ঘেঁষে বসে বলল, আমি ঊর্মি। আপনি?’ এভাবেই শুরু হলো আলাপ। একটু পর রাস্তার আলোতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, সেকি, ত্বকের যত্ন নেন না? কেমন ছিটছিটে দেখাচ্ছে আপনার ত্বক।’
এরপর কীভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে, এ নিয়ে ব্যাপক জ্ঞান দেয়া শেষে ঊর্মি বলল, ‘আপনি তো স্টুডেন্ট। অত সময় নেই ত্বকচর্চার। তাই সহজ বুদ্ধি দিচ্ছি। ইয়াবা খাবেন। ত্বক ফর্সা আর উজ্জ্বলই হবে না শুধু, যৌবনশক্তিও বাড়বে বলে আচমকা হাত ধরে চাপ দিতেই বুঝতে পারলাম ইয়াবাকন্যার খপ্পরে পড়েছি। কিন্তু বুঝতে বেশ দেরি হয়ে গেছে! একটা অন্ধকার গলির ভেতর রিকশা ঢুকে যেতেই রিকশা ঘিরে দাঁড়াল ৩টি ছেলে। মানিব্যাগ-মোবাইল কেড়ে নিয়ে ঊর্মি ভাংতি ৫০ টাকা আর সিমটা খুলে দিয়ে বলল, ‘সাবধানে যাবেন, ভাইয়া, আবার কোনো ইয়াবা গ্রুপের খপ্পরে পড়লে এই ৫০ টাকাও থাকবে না!’
পাঠক, যে দেশে এমপির এপিএস ইয়াবা ব্যবসা করে, সে দেশে ইয়াবা সুন্দরীর ‘ভাইয়া’ ডাকের খপ্পরে আপনিও পড়তে পারেন। সাবধান হওয়ার কথা বলার দরকার আছে কি?
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন