লোডশেডিংময় রাতে বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ আরিফ ২৭ জুন, ২০১৩, ১০:১৪:৩৫ রাত
মাটির মানুষ বলতে যা বোঝায় বাড়ির মালিক আলমগীর চাচা একদম তাই।বাসা ভাড়া নেবার কয়েকদিন পর একদিন বললেন, তুমি আমাকে আংকেল না চাচা ডাকবা।চাচা বললে আপন আপন লাগে।শুধু তাইনা উনি আমার ২রুমের প্ল্যাটের ভাড়া একদম অর্ধেক করে দিলেন।ব্যাপারটা দোস্ত রাকিবকে বলতেই বেশ কিছুক্ষন ভেবে বলল,ঢাকা শহরে যেখানে ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়ায় মিলেনা সেখানে তোকে শুধু বাসা ভাড়ায় দেয়নি ভাড়াও অর্ধেক করে দিয়েছে।এর পেছনে বেশ গভীর কারণ থাকতে পারে।অনেষ্টলি বলতো বাড়িওয়ালার যে মেয়েটা তোর সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করে সে মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী না মোটামুটি সুন্দরী।বললাম,এটার সাথে বাসা ভাড়া কমানোর সম্পর্ক কি ?রাকিব হেসে উঠে বলল-শোন, আমার ফুফাতভাই মাসুম যে বাসায় ভাড়া থাকত ঐ বাড়িওয়ালার মোটামুটি সুন্দর একটা মেয়ে ছিল।বাড়িওয়ালা ঐ মেয়েটাকে মাসুমের ঘাড়েই ঝুলিয়ে দিয়েছে।এখন বলে ফেল যথেষ্ট সুন্দর না মোটামুটি সুন্দর।
বাড়িওয়ালার মেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী জানাতেই বেশ হতাশ হল রাকিব।বেচারা ধারণা করেছিল মোটামুটি টাইপের সুন্দরী। মোটামুটি টাইপের সুন্দরী হলে আমার বাড়িওয়ালার হবু জামাই হবার সুযোগটা নিয়ে কম ভাড়ায় থাকার একটা সুযোগ নেবে!বাড়িওয়ালার মেয়ে তামান্না।যেদিন বাসা ভাড়া নিতে যায় সেদিনই তামান্নার সাথে ঝগড়া বেঁধে যায়।বাসা ভাড়া নিতে আলোচনা করতে যাবার দিন ভুলে জুতা না খুলেই ওদের ডয়িংরুমে ঢুকে গিয়েছিলাম।বাসার কথা ফাইনাল হতেই কাজের বুয়াকে ঢেকে আমাকে চা দিতে বলে ভেতরের রুমে চলে গেলেন আলমগীর চাচা।চায়ের জন্য অপেক্ষা করছি এমন সময় তামান্না বাইরে থেকে ঘরে ঢুকেই আমার পায়ে জুতা দেখে বলল,‘নবাবে শাহাজাদার নামটা কি জানতে পারি?’ আমার চেহারায় নবাব পরিবারের শাহজাদার ভাব এসেছে কিনা দেখতে আশপাশ খুঁেজ দেখলাম কোথাও আয়না আছে কিনা।চারপাশে কোথাও আয়না দেখতে না পেয়ে তামান্নাকে বললাম,আপনার মোবাইলে ক্যামেরা আছে? আমার প্রশ্ন শুনে তামান্না অবাক হয়ে বলল,আমার মোবাইলে ক্যামেরা আছে না নাই তা দিয়ে আপনি কি করবেন ?বললাম,থাকলে আমার একটা ছবি তুলে দেখানতো।দেখি আমাকে সত্যি সত্যি নবাবে শাহজাদার মত লাগছে কিনা।আমার সহজ-সরল মনের কথাকে তামান্না টিটকারী ভেবে বলল,আমার সাথে ফাজলামী?জানেন আমি কে?আমি এই বাসার একমাত্র মালিক।এই বাসা আব্বু আমার নামে করেছে।
তামান্নার কথা শুনে কলিজা শুকিয়ে গেল।এই মেয়ের নামে বাড়ি না হউক এই মেয়ের বাবার বাড়ি হলেও এত কষ্ট করে পাওয়া বাসাটা হাতছাড়া হয়ে যাবে।তড়িঘড়ি করে বললাম,আপু আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি চিনতে পারিনি আপনাকে।আর কোনদিন এমন ভুল.. বলা শেষ হওয়ার আগেই তামান্না মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছেন?আমাকে কি আপনার চেয়ে বড় আর বড় বোনের বয়সী মনে হয়? ভাল’র জন্য বোন বলে সম্বোধন করলাম অথচ ফলাফল আরো বেশি ক্ষেপিয়ে দিলাম।ধুর! আর কিছুই কমুনা।আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আরো বেশী রেগে গিয়ে বলল,কথা কানে যায়নি বুঝি? বললাম,কি বলে বিপদে পড়ি তাই চুপ করে আছি।আসলে আমি আপনাদের বাসা ভাড়া নিয়েছি।এখন আপনি যদি আংকেলকে আমাকে বাসা ভাড়া নিতে নিষেধ করে দেন তাহলে বিপদে পড়ে যাব।তামান্না অবাক বিষ্ময়ে বলল,আপনার মত ছেলেকে আব্বু বাসা ভাড়া দিয়েছে! যে কিনা এখনো জানেনা জুতা বাহিরে রেখে ঘরে প্রবেশ করতে হয়।তামান্নার কথা শুনে তাড়াতাড়ি জুতা খুলে হাতে নিয়ে বললাম,এই যে দেখেন।আমি জুতা খুলে হাতে নিয়েছি।দরকার হলে পুরো ডয়িংরুমের ফ্লোর মুছে দিতেও রাজী আছি তবুও আপনি আংকেল মানা করবেননা প্লিজ।
আমার কথা শুনে ব্যাপক খুশি হয়ে তামান্না ফ্লোর মোছানোর জন্য বালতিতে করে পানি আনার জন্য যাবার প্রস্তুতি নিয়েছিল।ভাগ্যিস আলমগীর চাচা আমাকে উদ্ধার করেছিলেন নিজের দজ্জালনী মেয়ের হাত থেকে।সে থেকে তামান্নাকে এড়িয়ে চলি।যদিও এড়িয়ে চললেও কোন লাভ হয়না।নানারকম ছলচাতুরী করে কয়েকদিন পর পর গায়ে পড়ে ঝগড়া করে।
গতকালকের কথা।গরম আসতে না আসতেই শুরু হয়ে যাওয়া নতুন যন্ত্রনা লোডশেডিংয়ের কারণে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় রুম থেকে বেরিয়ে লোডশেডিংয়ের ১৪গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে ছাদে গিয়ে দেখি তামান্না দাঁিড়য়ে।চুপচাপ ছাদের একপাশে গিয়ে রেলিং এ হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম।মিনিট খানেক পর আমাকে অবাক করে দিয়ে তামান্না পাশে এসে দাঁিড়য়ে বলল, চাঁদটা অনেক সুন্দর তাইনা।
- হু, অনেক সুন্দর।গ্রাম থেকে আসার পর রাতের আকাশের চাঁদ ভাল করে দেখার সুযোগ হয়নি।
- কেন?
-সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে ঝানজটে আটকে বাসায় এসে খেয়ে সোজা ঘুম।
-আচ্ছা ,একটা মেয়ে কখন একটা ছেলের সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করে জানেন?
-আপনার আগে কেউ আমার সাথে করেনিতো তাই জানিনা।
-যখন একটা ছেলেকে অনেক পছন্দ করে ফেলার পর পছন্দের কথাটা বলতে পারেনা তখন। আজকের পর থেকে যখনি ডাকব এভাবে পাশে দাঁিড়য়ে চাঁদ দেখতে হবে।যদি দেখতে না আস তাহলে তোমাকে বাসা ছাড়া করব বলে আমার হাতের মোবাইলটা নিয়ে ওর নাম্বার ডায়াল করে দিয়ে হনহন করে ছাদ থেকে নেমে গেল।একটু আগেও লোডশেডিংয়ের ১৪গুষ্টি উদ্ধার করা আমি লোডশেডিংয়কে ব্যাপক ধইন্যাপাতা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম।আশ্চার্য্য! আগের চাইতেও চাঁদটাকে অনেক বেশী সুন্দর লাগছে!
বিষয়: বিবিধ
৩৮৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন