গভীর রাতে বউয়ের সাথে :P আবিয়াত্যারা দূরে গিয়া চানাচুর খান
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ আরিফ ২৬ জুন, ২০১৩, ১০:১৯:৪০ রাত
এ্যাই জানু,জানুরে কি হল?উঠছ না কেন?উঠনা চাঁদসোনা
-গত ৬মাস ধরে প্রতিদিনতো আমি উঠি।আজকে কষ্ট করে তুমি উঠ।
-আমার পা ব্যাথা করছে।প্লিজ,উঠনা সোনা পাখি আমার।
-এখন উঠার সময় হয়েছেতো তাই জানু,সোনা পাখি বের হচ্ছে মুখ দিয়ে।আর অন্য সময় পারনা আমাকে খুন্তি দিয়ে ছ্যাকা দাও।তোমরা বউয়েরা না আজব স্বার্থপর।
-কি এতবড় অপবাদ আমি নিজের স্বার্থে তোমাকে ভালবাসা দেখায় আর বাকী সময় নির্যাতন করি?এমন অপবাদ দেবার আগে একবারও তোমার বুক কাঁপেনি? এতদিন ধরে তোমার সংসার করে এই অপবাদ ছিল আমার পাওনা!
-একদিন তোমার পা ব্যাথা তো আরেকদিন হাত ব্যাথা,একদিন মাথা ব্যাথা তো একদিন বুক ব্যাথা।খাওয়া আর সারাদিন বসে বসে হিন্দী সিরিয়াল দেখা ছাড়া আর কি কাজ কর যে তোমার শরীরে শুধু ব্যাথা থাকে।আল্লাহর তিরিশটা দিনই একটা না একটা বাহনা আছেই।
-কি বললে,ঘরে বসে শুধু খায়।শেষ পর্যন্ত আমার খাওয়া নিয়ে খোঁটা দিলে! তোমার সংসারে আসার আগে আমার ওজন কত ছিল আর এখন কত সেটা কি একবারও খেয়াল করেছে? কেমন ফর্সা গায়ের রঙ নিয়ে এসেছিলাম আর এখন কেমন হয়েছে সেটা তুমি না দেখলে বাইরের মানুষ দেখে।বন্ধুরা আমাকে দেখলে চিনতেই পারেনা।হায়,হায় করে উঠে বলে,একিরে নাদিরা তুই এমন কালো,এত শুকনা হয়ে গেছিস কি করে।গত ২টা বছর ধরে গাধার খাটুনি খাটছি তোমার সংসারে।বাবুটা হবার পর থেকে ঠিকমত খাবারের সময়টাও পায়না আর তুমি আমার খাওয়ার খোঁটা দিলে।থাক তুমি তোমার সংসার নিয়ে আমি আব্বুর বাসায় চলে যাব।
-এখন রাত ২টা।এতরাতে সিএনজি পাবেনা যেতেও পারবেনা।উল্টো রাস্তায় বেরুলে পুলিশ ধরবে।তোমার মা পুলিশ অফিসার এই পরিচয় দিলেও পুলিশ ছেড়ে দেবেনা।কারণ,এখন পুলিশ আর ছিনতাইকারীর মধ্যে কোন ব্যবধান নেই।এর চাইতে বরং এখন সবকিছু গুছিয়ে রাখ সকালে আমি সিএনজি ডেকে দেব।
-কি বললে তুমি,আমাকে চলে যেতে বললে? আমাকে তাড়াতে পারলেই তো অফিসের ঐ শয়তানীটাকে বাসায় উঠাতে পারবে তাই না?
-শায়লা আমার বস।বসকে নিয়ে একদম বাজে কথা বলবেনা।
-ওরে আমার বসরে।দুনিয়ার আর বুঝি কারো বস নেই? তা বস রাত ১২টায় কল করে কেন জিজ্ঞাসা করে খেয়েছ কিনা,ঘুমাবে কখন।
-কারণ,পরদিন অফিসে বিদেশী ভায়ারাদের সাথে অনেক বড় একটা কন্টাকের ডিল ছিল।এবং পুরো ডিলটা আমার উপর ছিল।ফ্রেশ ঘুম দিয়ে না গেলে আমাকে ফ্রেশ দেখাবেনা তাই নিজের স্বার্থেই বস কল দিয়েছে যেন ঠিক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
-তুমি এত সুন্দর ভাবে বানিয়ে মিথ্যা বলো যে যদি জানতে পারতাম তাহলে চিরকুমারী থাকলেও তোমাকে বিয়ে করতাম না।তা গত পরশু যে সুন্দরী বসের সাথে দুপুরের লাঞ্চ করতে গিয়েছ সেখানেও কি কোন বিদেশীর সাথে মিটিং ছিল? অফিসে কি কর তা বুঝি আমি জানিনা? আমার কাছে সব খবরই আসে।এক বাচ্চার বাবা হওয়ার পরও অফিসের সুন্দরী কলিগদের দিকে হাঁ করে চেয়ে থাক।
-জ্বী,সেদিন লাঞ্চের কথা ছিল।কিন্তু যাদের আসার কথা ছিল তার না আসায় আমি আর বস লাঞ্চ শেষ করে অফিসে একসাথে ফিরেছি।আর ভাল করে শুনে রাখ ,আজকের পর পিয়ন বাসায় আসলে গোয়েন্দাগিরি করলে পরিনাম ভাল হবেনা বলে রাখলাম।
-কি,আমার গায়ে হাত উঠানোর হুমকি! দাঁড়াও এক্ষুনি মাম’কে কল দিচ্ছি।
নাদিরার কথা শুনে একদম ব্যাকুব বনে গেলাম।বললাম কি আর বলে কিনা,গায়ে হাত উঠানোর হুমকি দিয়েছি।বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল পুলিশ অফিসার শ্বাশুড়ির চেহারা।আদরের মেয়ের গায়ে হাত উঠানোর কথা শুনলে এই গভীর রাতেই পুলিশ পাঠাবে।এমনিতেই বিয়ে করার পর থেকে আশপাশের প্ল্যাটের মানুষগুলোর কাছে ইজ্জতের তেরটা বেজেছে।এখন যদি পুলিশ আসে তাহলে নারী নির্যাতনের কেলেংকারী হয়ে যাবে।পত্রিকায় ছবি ছাপা হলে চাকরিও যাবে।তড়িঘড়ি করে নাদিরার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে দুই হাত ধরে বললাম,তুমি না আমার কুতুকুতু,পুতুপুতু লক্ষী সোনা বউ।আজকে থেকে আর কখনই তোমাকে উঠতে বলবনা।প্রতিদিন আমি উঠব।তুমি আরাম করে ঘুমাও সোনা বউ আমি গিয়ে বাবুর কাঁথা পরিষ্কার করে আসছি।তবুও তুমি মা’কে কল করিও না।
নাদিরা গাল ফুলিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল,মনে থাকে যেন।আমার বয়স যখন আমাদের লক্ষী বাবুটার মত ছিল না তখন থেকে আব্বু আমাদের সবকিছু দেখা শোনা করত।শুধু কি তাই?আমি আবার রাতে অনেক কান্না করতাম।কান্না করলেই আম্মুর ঘুমের যেন ডির্স্টাব না এইজন্য আব্বু আমাকে নিয়ে ছাদে গিয়ে হাঁটত আর চাঁদ দেখাত।বুঝলা?
-জ্বী বুঝেছি।এত সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলে কি না বুঝে পারা যায়।আমার শত্রুদের যদি তোমার মত করে একটা বউ থাকত তাহলে আমার কোন শত্রুই থাকত না।
-কি বললে আবার বল তো দেখি।
-না মানে বোঝাতে চেয়েছি,আমার শত্রুদের যদি তোমার মত এত লক্ষী বউ থাকত তাহলে তারা অন্য কারো সাথে শত্রুতা করত না।কারণ,এত সুন্দর করে যাদের বউ বুঝিয়ে দেয় তারা কারো সাথে শত্রুতা করার কথা চিন্তাই করতে পারেনা।
-আমি অনেক লক্ষী বউ তাইনা মন পাখি?
-হু তুমি অনেক অনেক সুইট সুইট লক্ষী বউ।
-থ্যাংকু কলিজার টুকরা।এখন জলদি যাও।অনেকক্ষন ধরে বাবু কাঁধছে।বাবুর হিসুর কাঁথা পাল্টে ফিডার বানিয়ে খাইয়ে দাও।আর শোন,বাবুকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে তুমিও ঘুমাবে।তোমার না আবার সকালে অফিস আছে।
ওকে টুনটুনি বউ বলে বিছানা ছাড়ার আগে ইচ্ছা হল..না,থাক।ইচ্ছার কথা বলে কাজ নেই।বউ যদি পড়ে তাহলে..
বিষয়: বিবিধ
৬৬০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন