আমি ও আমার ফেসবুক প্রেমিকা !

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ আরিফ ২৬ জুন, ২০১৩, ১২:১৮:১৯ রাত



‘ তুই ব্যাটা একটা পুরুষ হইলি যে আজ পর্যন্ত একটা প্রেম করতে পারলিনা / ২৮ বছরেও প্রেমহীন তুই বন্ধুমহলের কলংক ’ টাইপের ডায়লগ আমাকে প্রায় শুনতে হয়। বন্ধুরা যতবারই ওদের প্রেমিকাদের বান্ধবীদের সাথে আমাকে ফিট করে দেবার চেষ্টা করেছে ততবারই আমি কাউকে হয় বোন , না হয় বন্ধু বানিয়ে ফেলেছি । একজন কে তো রীতিমত খালা বানিয়ে ফেলেছিলাম দেখতে আমার খালার মত হওয়ায় ! খালা বানানোর ঘটনা ফাঁস হয়ে যাবার পর ইজ্জতের চাকা এমন ভাবে পাংচার হয়েছে যে সেই থেকে কোন বন্ধুর প্রেমিকার বান্ধবীর সাথে প্রেম করার প্রস্তাব আসলেই আমাকে কয়েকদিন আর খুঁেজ পাওয়া যায়না । সামনা - সামনি কোন মেয়ের সাথে দেখা করে , মোবাইলে রাত জেগে কথা বলে প্রেম করা আমাকে দিয়ে হবেনা। তাই বিকল্প হিসেবে কিছুদিন আগে বেছে নিলাম ফেসবুককে।

ফেসবুকে নাকি ফেস না দেখিয়েও ডজন ডজন প্রেম করা যায় আর আমি একটা প্রেম করতে পারবনা এটা কি হয় ! কিন্তু ফেসবুকের ‘ ফ ’ ও যে জানিনা ! শেষে একছোট ভাইকে পেটপূজা করানোর শর্তে বন্ধুদের না জানিয়ে গোপন মিশন ‘ ফেসবুক প্রেম ’- এ একটা ফেসবুক আইডি খুলে শিখে নিলাম ফেসবুকে কি ভাবে এড করতে হয় , চ্যাট করতে হয়। এরপর থেকে আন্দাজী সব নাম লিখে সার্চ করে সুন্দর সুন্দর মেয়েদের প্রোপাইল পিক দেখে দেখে গনহারে মেয়েদের এড রিকোয়েষ্ট পাঠাতে শুরু করে দিলাম। ২দিন পর গনহারে এড পাঠানোর পর শাস্তি হিসেবে ফেসবুক কৃর্তপক্ষ ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠানো ব্লক করে দিল। এড পাঠানো বন্ধ হওয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি এড হওয়া কোন মেয়ে অনলাইনে আসে কিনা। আসলেই নক করি। কিন্তু , কেউই জবাব দেয়না ! একদিন ফারহানা নামের একটি মেয়ে নিজ থেকেই নক করতেই আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মত করে শুরু করে দিলাম চ্যাট । কেমন আছো , কি করো, খাইছো , কি খাইছ থেকে আস্তে আস্তে ব্যাক্তি জীবনের প্যাঁচাল । অসম্ভব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলত ফারহানা। মেয়ে তো নয় যেন মধুর ডিব্বা !

কোন কারণে ফারাহানা একদিন ফেসবুকে না এলে গলায় খাবার আটকে যেত। জিদ্দের ঠেলায় ফারহানার সাথে কতবার যে কথা না বলার প্রতিজ্ঞা করেছি ! কিন্তু ফারহানা অনলাইনে এসে ‘ এই ছেলে আমাকে কি মিস করেছো / লক্ষী ছেলেটা কি আমাকে ভুলে গেলে ’ বললেই আবেগে চোখে পানি এসে যাবার অবস্থা ! একদিন আমাকে অবাক করে ফারহানা ওর ফেসবুক থেকে সব ছেলেকে রিমুভ করে দিয়ে জানাল , আমি থাকতে ফেসবুকে কেন রিয়েল লাইফেও কোন ছেলের বন্ধুর দরকার নেই ! শুনে খুশিতে হাত পা ছুঁড়তে গিয়ে চেয়ার উল্টে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলি। ভাঙা হাত নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চলে চ্যাট ! কয়েকদিন পরপর ফারহানা আমার জন্য নতুন নতুন পিক আপলোড করে আর আমি লাইক দেয় । খুশিতে গদগদ হয়ে কমেন্টে চুল , কপাল , চোখ , ভ্রু , নাকের প্রশংসা করি। ফারহানা ‘ যাহ ! দুষ্ট ’ বলে লজ্জায় লাল , নীল হয়।

মাঝে মাঝে ফারহানা মোবাইলের কার্ড রিচার্জ কার্ড চাইত । ৫০টাকার কার্ড চাইলে ১০০টাকার কার্ড দিতাম। একদিন চ্যাট এ ফারহানাকে বিষন্ন দেখে অনেক জোরাজুরির পর জানাল , ভার্সিটি থেকে ট্যুরে যাচ্ছে কক্সবাজার । কিন্তু টাকার কারণে ফারহানা যেতে পারছেনা তাই মন খারাপ । কত লাগবে জানতে চাইতেই জানাল , হাজার দশেক হলেই চলবে ! আমার মোবাইল ২টা । একটা মোবাইল কোন কাজেই আসেনা । আর আসলেই বা কি ? ফারহানার খুশির চাইতে মোবাইল বেশী না তাই পরদিন মোবাইল বিক্রি করে ৭হাজার আর আপুর কাছ থেকে ৩হাজার টাকা নিয়ে ১০হাজার টাকা পাঠালাম কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে!

ফারহানা কথা দেয় মোবাইল থেকে কক্সবাজারে গেলে লগইন করে চ্যাট করবে। কিন্তু ফারহানা কথা রাখেনা । টাকা পাঠানোর সময় যে মোবাইল নাম্বার দিয়েছিল সে নাম্বার বন্ধ ! নিরুপায় হয়ে দোস্ত সাকিবকে বাসায় এনে ফারহানার ফেসবুক থেকে সেভ করা ছবিগুলো দেখিয়ে বললাম , দোস্ত এই মেয়ের সাথে বেশ কিছুদিন ধরে প্রেম চলছিল। কিন্ত হঠাৎ করে গায়েব হয়ে গেছে। দেখতো ছবি দেখে কিছু বের করতে পারিস কিনা ! সাকিব আমার কথা শুনে বলল , ‘ এই মেয়ে তোর মত আবুলের সাথে প্রেম করবে আর এটা আমি বিশ্বাস করব ? এই মেয়ে কে তুই চিনিস ? বললাম , ‘ চিনবনা কেন ? ওর নাম ফারহানা । একটা প্রাইভেট ভাসির্টিতে পড়ে ’। সাকিব হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে ফ্লোরে বসে বলল , ‘ এই মেয়ে একটা হিন্দী সিরিয়ালের নায়কের বোন ! ’ এককান, দুইকান হয়ে বন্ধু মহলে আমার কীর্তি ছড়িয়ে পড়ল ! আর আমি ? ব্যর্থ ফেসবুক প্রেমের লজ্জা নিয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি এখন পর্যন্ত !

বিষয়: সাহিত্য

২১৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File