সিলেটের রাজনীতির সালতামামি মামলায় দিকভ্রান্ত বিএনপি-জামায়াত নিরুত্তাপ আওয়ামীলীগ ॥ বৈঠক নির্ভর জাতীয় পার্টি
লিখেছেন লিখেছেন কলকআ ০৪ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:৪৮:৩৮ রাত
শাফি উদ্দিন আহমদঃ বিএনপি-জামায়াতের সহস্রাধিক বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, মানববন্ধনসহ রকমারি কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে ২০১২ সাল। বিদায়ী বছরে সিলেটের রাজপথ ছিল উত্তপ্ত। ইলিয়াস আলী এবং দিনারের গুম, কেন্দ্র ঘোষিত হরতাল, অবরোধ, সুরঞ্জিত সেনের ঘুষ কেলেংকারি, জাতীয় পার্টি নেতার পুত্র খুন সহ নান ঘটনায় আলোচনাসুখর হয়েছে সিলেট। বিশেষ করে নেতা-কর্মীদের উপর শতাধিক মামলা এবং ধরপাকড়ে কোনঠাসা ছিল বিএনপি-জামায়াত। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনার সিলেট সফর ছাড়া অন্য কোন বড় কর্মসূচীতে ছিল নানা ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। বছরের শুরুর দিকে লংমার্চ আর কয়েকটি ঘরোয়া বৈঠক ছাড়া দৃশ্যত কোন দলীয় তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি জাতীয়পার্টির। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। এছাড়া আওয়ামীলীগ নেতা ইফতেখার হোসেন শামীম ও জাসদ নেতা হাবিবুর রহমান হিরনের মৃত্যুতে বছর জুড়ে সিলেটের রাজনীতিতে আলাদা একটি শূণ্যতা দেখা দেয়।
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল কেন্দ্র নির্ভর। কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে এলে তাদেরকে ঘিরেই চলে সাংগঠনিক কার্যক্রম। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ ৬ বছর আগে জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০০৩ সালের পর প্রায় এক দশকেও সিলেট যুবলীগের কোন সম্মেলন হয়নি। তৃণমূল নেতাকর্মীরা চান নতুন নেতৃত্ব। তারা অবিলম্বে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় ও সাংগঠনিক দিবস উদযাপন ছাড়া নিরুত্তাপ সিলেট আওয়ামী লীগ দলকে শক্তিশালী করতে তেমন কোন কর্মসূচি পালন করেনি। এমনকি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। নতুন কমিটি হলেও ছাত্রলীগের কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে তাদের নেতৃত্বের পারদর্শিতা নিয়ে। অভিযোগ ওঠেছে বড় ভাইদের পরামর্শ ছাড়া তারা কিছু করতে পারে না। ছাত্রলীগের কিছু কর্মকাণ্ডে সিলেটে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও বিতর্কিত হয়েছে। এর মধ্যে ছালিয়ায় ভূমি দখল করতে গিয়ে অস্ত্রসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ ক্যাডার গ্রেফতার হওয়া অন্যতম। শতবর্ষের বিদ্যাপিঠ এমসি কলেজের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসটি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায়ও অভিযোেগর আঙ্গুল ছাত্রলীগের দিকে।
পক্ষান্তরে মহাজোট সরকারে থাকা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থাও একই রকম। বিদায়ী বছরে কেন্দ্র নির্ভর জাতীয় পার্টির সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা ভেঙে দিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জেলায় সেলিম উদ্দিন ও মহানগরে বাবরুল হোসেন বাবুলকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তাদের কর্মকান্ড অনেকটা বৈঠক নির্ভর।
বিদায়ী বছরে একের পর এক মামলায় বিপর্যস্ত প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও তাদের শরিক জামায়াতের নেতাকর্মীরা। গত বছর এপ্রিল মাসে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সিলেটের রাজপথ। সেই উত্তাপ সিকিভাগ প্রশমিত না হতেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের গুম হওয়া যেন সিলেট বিএনপির রাজনীতির জন্য আরেক ট্রাজেডি। সিলেট বিএনপির পক্ষ থেকে পর পর হরতাল সহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয় দিনার সহ ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে। বিশেষ করে ইলিয়াস আলীর নিজ নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচীতে ঘটছে সহিংস ঘটনা। বছরের মাঝামাঝি সময়ে টানা তিন দিন হরতাল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিশ্বনাথে ৩ যুবক মারা যায়। এই ঘটনায় স্থানীয় একাধিক নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করা হয়। আসামি করা হয় কয়েক হাজার বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীকে।
এদিকে সিলেটে বছর জুড়ে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় প্রায় দেড় ডজন মামলায় জামায়াত-শিবিরের ২ সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েক’শ নেতাকর্মীকে। গ্রেফতারকৃতদের অনেকেই এখন জামিনে আছেন। জামায়াতের অভিযোগ, তাদের নেতাকর্মীরা বাসাবাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। গ্রেফতার আতংকে অনেকেই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সর্বশেষ, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. শফিকুর রহমানের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ডাকা হরতালও সফল করতে পারেনি এক সময়ে প্রথম সারির রাজনৈতিক দল হওয়ার স্বপ্নে বিভোর জামায়াত। বছরজুরে এই ইস্যুতে পুলিশের গ্রেফতার বানিজ্যের অভিযোগও রয়েছে অসংখ্য।
শুরু হয়েছে নতুন আরেকটি বছর। জন্ম নিয়েছে নতুন স্বপ্ন। দেশবাসীর মতো সিলেটের মানুষও প্রতিক্ষার প্রহর গুনছে নতুন সূর্যদয়ের। আাশায় বুক বাধছে, কবে শুরু হবে সুস্থ রাজনীতির চর্চা। ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দল যদি নতুন বছরে তাদের কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন না ঘটায়, তবে হয়তো আগামী নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া খুব একটা সহজ হবে না কোন দলেরই।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন