সিলেটের শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে চলছে মূর্তি নির্মাণের কাজ

লিখেছেন লিখেছেন আজিজ মওলা ১০ জানুয়ারি, ২০১৩, ১০:৪৮:৩৫ সকাল

আধ্যাত্মিক নগরীর কর্ণধার ইসলামের মহান খাদেম হযরত শাহজালাল ইয়ামনি (র.) নামে প্রতিষ্ঠিত হযরত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলচত্বরে মূর্তি নির্মাণের প্রতিবাদে বিভাগীয় নগরী সিলেটে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মানুষ ফুঁসে উঠেছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে সিলেটের রাজপথ প্রতিদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মূর্তি নির্মাণের প্রতিবাদে সিলেটের রাজপথ উত্তপ্ত করে রেখেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম তাদের ছাত্র সংগঠন, সিলেটের ফুলতলীর পীর সাহেব আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (র.) নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ আঞ্জুমানে তালামিযে ইসলামিয়া, ইমাম সমিতি সিলেট, ভাস্কর্য প্রতিরোধ আন্দোলন সিলেট, ইসলামি সমমনা ১২ দলসহ বিভিন্ন সংগঠন মূর্তি নির্মাণের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন তারা কখনও শাবি ভিসি বরাবরে স্মারকলিপি দিচ্ছেন আবার কখনও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে সিলেটে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়ে সরকারকে জানিয়ে দিচ্ছেন আধ্যাত্মিক নগরীর মানুষ মূতি নির্মাণ করতে দেবে না শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলফটকে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেও শিক্ষকদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত আছে। সিলেটের সর্বদলীয় আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত ভাস্কর্য প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কর্মসূচির অংশহিসেবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলেমদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার শাহজালাল (র.) ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এরপরও বন্ধ হচ্ছে না মূর্তি নির্মাণের কাজ। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে চলছে মূর্তি নির্মাণের কাজ। মূর্তি নির্মাণের প্রতিবাদে এককাতারে এসেছেন সিলেটের শিক্ষক-জনতা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের নামে মূর্তি নির্মাণের প্রতিবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে রাখতে ভাস্কর্যের পরিবর্তে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক সিনিয়র শিক্ষক। গত সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাসের বরাবরে ৩ দফা দাবীতে স্মারকলিপি দেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক ফোরামের আহবায়ক ড. সাজেদুল করিম। বিতর্কিত হয় এমন কোন কিছু মহৎ স্থাপনার ক্ষেত্রে পরিহার করতে হবে, একক কোন গোষ্ঠীর নয় বৃহত্তর সিলেটবাসীর অনুভূতি চেতনা ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যমন্ডিত স্থাপনা হতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা থেকে গোলচত্বরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হবে মর্মে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে ৩ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দেয়া হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করছি না। ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণের নামে, মূর্তি নির্মাণ করার চেষ্টা চলছে। আমাদের দেশে সিলেটকে দল মত বর্ণ নির্বিশেষে হযরত শাহজালাল (রহ) এর পুণ্যভূমি আধ্যাত্মিক নগরী হিসেবে দেখা হয়। এই নগরীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী এই পুণ্যভূমির সন্তান। এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের উন্নত চেতনা অনুভূতি গোটা সিলেট জুড়ে বিরাজমান। এ বিশ্ববিদ্যালয় বৃহত্তর সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের ত্যাগ ও আন্দোলনের ফসল। বিশ্ববিদ্যালয়ে মহৎ কোন স্থাপনার ক্ষেত্রে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অনুভূতি চেতনা ও সংস্কৃতিতে আঘাত দেয়া মোটেও কাঙ্ক্ষিত হবে না বলে আমরা মনে করি। সিলেটবাসীর সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান দেখিয়ে তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। এসময় সিলেটের বিভিন্ন ঐতিহ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম, অধ্যাপক ড. গোলাম আলী হায়দার চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ম্যানেজমেন্ট এন্ড বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্র্যাশন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, শাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মোজাম্মেল হক, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, ড. মোঃ তাজ উদ্দিন, সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিজানুর রহমান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনযুর উল হায়দার সুমন, গণিত বিভাগের রেজোয়ান আহমদ প্রমুখ।

১৯৯৯ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি হলের নামকরণ বিরোধী আন্দোলনে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল সিলেটের রাজপথ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র মজিলস, ছাত্র জমিয়তসহ বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে। তখন নেতৃবৃন্দ সোচ্চার হয়ে উঠেন রাজপথে, সিলেটের রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদ মিছিলে প্রকম্পিত হতো আধ্যাত্মিক নগরী সিলেট। দক্ষিণ সুরমার আলোকিত সন্তান আব্দুল মুনিম বেলাল বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শাহাদত বরণ করেছিলেন। তৎকালীন সরকার অবশেষে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিলো। স্থগিত করলো হলের নাম। আন্দোলনও স্থগিত করা হলো। আবার ওলিকুল শিরোমনি শাহজালাল (রহ.) এর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে মূর্তি নির্মাণ করে সিলেটে শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছেন অতি উৎসাহি কিছুসংখ্যক বামধারার শিক্ষক। সিলেটের বিশিষ্টজনরা মনে করছেন শাবির প্রশাসনের একপেশে সিদ্ধান্ত অপরদিকে সিলেটের ধর্মপ্রাণ সর্বস্তরের মুসলমান ও উলামা মাশায়েখদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় আবারো ‘৯৯' এর নামকরণ বিরোধী আন্দোলনের মত গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

শাবি ক্যাম্পাস সূত্রে আরো জানাযায়, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির সম্মানার্থে বাংলাদেশের সর্ববৃহত্তর মূর্তিটি সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত হচ্ছে। ভাস্কর্যের ডিজাইন, বেদীর নকশা নির্বাচন করা হয়েছে। সোয়া কোটি টাকা মূল্যের এই মূর্তিটি ৪৫ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র গোলচত্বরে স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। উক্ত মূর্তি নির্মাণ বাস্তবায়ন ও অর্থ কমিটি দুটোর আহবায়ক ড. জাফর ইকবাল।

http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=106219

বিষয়: বিবিধ

১২৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File