একের পর এক হিন্দু সম্পত্তি দখল করছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকঃ

লিখেছেন লিখেছেন তহুরা ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৪৩:৫১ সকাল



তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক। অথচ দলীয় প্রচারণার খবর নেই। তিনি এখন ব্যস্ত হিন্দু সম্পত্তি লিজ বাণিজ্য নিয়ে। এই ব্যস্ত মানুষটি হলেন এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা নূহ-উল আলম লেনিন। 'অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন' নামের একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে তিনি একের পর এক লিজ নিয়ে চলেছেন হিন্দু সম্পত্তি। জমিদারবাড়ি, হিন্দুবাড়ি, পুলিশ ক্লাব, এমনকি সরকারি খালও তিনি নামমাত্র মূল্যে লিজ নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত কতগুলো বাড়ি তিনি লিজ নিয়েছেন, এর সুনির্দিষ্ট হিসাব প্রশাসনের কাছে নেই। তবে অগ্রসর বিক্রমপুরের সাইনবোর্ড-সংবলিত কিংবা সাইনবোর্ডবিহীন সাতটি বাড়ি ও স্থাপনার ছবি রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে। মুন্সীগঞ্জের প্রতিটি থানায় তার নেওয়া লিজের বাড়ি আছে। এ কারণে মুন্সীগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ তাকে আড়ালে-আবডালে ডাকেন 'লিজ লেনিন' নামে। তবে ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেন না। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক নেতা লেনিনের দখল আতঙ্কে তটস্থ জেলার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। কারণ ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান আর খননকাজের নামে আওয়ামী লীগের দাপট খাটিয়ে জেলার বেশ কয়েকটি হিন্দুবাড়ি এরই মধ্যে দখলে নিয়েছেন লেনিন। লেনিন লৌহজংয়ের যে বাড়িটিতে বর্তমানে বসবাস করছেন, সেটিও রেণু বালা নামে এক হিন্দু নারীর। কৌশলে বাড়িটি তিনি দখলে নেন। এখানেই শেষ নয়, এর পর থেকে তিনি একের পর এক হিন্দু সম্পত্তি দখল করে চলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি শ্রীনগরের রাঢ়িখাল ইউনিয়নের বালাশুর গ্রামের জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়িটি দখল করেন। শুধু সেই বাড়ি দখল করেই ক্ষান্ত হননি লেনিন, দখলদারির শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে চলেছেন দিন দিন। তিনি এবার হাত দিয়েছেন খোদ জেলা শহরে। শহরের মালপাড়ায় কে বি ব্যানার্জির দোতলা বাড়িটি লিজের নামে দখলে নিয়ে সেখানে টাঙিয়েছেন 'অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন'-এর সাইনবোর্ড। সদর থানার কাছে অবস্থিত ভবনটি পুলিশ অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। বর্তমানে লিজের রীতি না থাকলেও জেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাকে হাত করে দখলে নিয়েছেন ওই বাড়ি।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের অভিযোগ, প্রাচীন বাংলার রাজধানী রামপালে পুরাকীর্তি খননের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন লেনিন। খনন প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না থাকলেও সরকারি অর্থ উত্তোলন করে আত্দসাৎ করছেন তিনি। একই সঙ্গে কনকসার এলাকায় শ্রীনগরের প্রধান খালটি ভরাট করে তিনি অগ্রসর বিক্রমপুর সংগীত বিদ্যালয়ের নামে তা দখল করে নিয়েছেন। এযাবৎ যতগুলো হিন্দু বাড়ি লিজের নামে 'অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন' সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দখল করেছে, এর প্রতিটিই লেনিনের নিজ নামে লিজ নেওয়া। সম্প্রতি তিনি বালাশুরের আরও একটি দিঘি লিজের নামে দখল নিয়েছেন। দিঘিটি গত বছর প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছিল সরকার। অথচ জেলা প্রশাসক আজিজুল আলমের যোগসাজশে সেটিকে তিনি মাত্র আড়াই হাজার টাকায় নিজ নামে লিজ নেন।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট কলামিস্ট সালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'এটিকে নতুন কোনো বিষয় বলা ভুল হবে। কারণ তার (লেনিন) পুরোটা জীবনই কেটেছে চাঁদাবাজি করে। এখন তিনি দখলদারির ধরন পাল্টেছেন মাত্র। তিনি যদি মুন্সীগঞ্জের সব হিন্দু বাড়িও দখল করে নেন, আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।' এই দখল-বাণিজ্য ঠেকাতে জেলার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় এখন একাট্টা, ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে জমিদার যদুনাথের বাড়ি দখলে নিয়ে জনতার রোষানলে পড়েছেন লেনিন। সেখানে তিনি নির্মাণ করছেন ব্যক্তিগত সংগঠনের নামে মিউজিয়াম। অথচ এ এলাকায় নেই কোনো হাসপাতাল। খুব কাছেই রয়েছে অন্য একটি মিউজিয়াম। তার এ মিউজিয়াম করার পেছনে দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। কারণ মিউজিয়ামকে পুঁজি করে তিনি দেশে-বিদেশে অর্থ সংগ্রহের নামে মেতে উঠেছেন চাঁদাবাজিতে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, লেনিন বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অর্থসাহায্য কামনা করছেন। এরই মধ্যে লেনিনের জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বিক্রমপুরবাসী। জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহিন মোহাম্মাদ আমানউল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে যে দখল-বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন লেনিন, এর সহযোগী হিসেবে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। তাই এ প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে, আসলে জেলা প্রশাসন কি লেনিনের, নাকি সরকারের?

জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির এক নেতা বলেন, 'লেনিনের একের পর এক হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা জানতে পেরেছি তিনি মন্দির লিজ নিতে চান। তবে আমাদের মন্দিরে কেউ হাত দিলে বসে থাকব না।'

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সরাফত আলী সফু বলেন, লেনিনকে দখল-বাণিজ্যে সহায়তা না করে জেলা প্রশাসকের উচিত দেশের স্বার্থে অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়া।এলাকাবাসী মনে করেন, জনবিচ্ছিন্ন ও দাম্ভিক লেনিন নিজ ইউনিয়নে মেম্বার পদে যদি নির্বাচন করেন, তবুও পাস করতে পারবেন না। তাহলে কোন যোগ্যতাবলে তিনি সরকারি দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বনে গেলেন, এ প্রশ্ন এলাকাবাসীর। তারা অভিযোগ করেন, কমিউনিস্ট পার্টি করার সময় লেনিন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নানা কটূক্তি করেছেন। আওয়ামী লীগ কি তাকে সেই কাজের পুরস্কার দিল কেন্দ্রীয় পদ দিয়ে! এলাকাবাসী আরও মনে করেন, একজন মাত্র লেনিনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে অপেক্ষা করছে মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি।

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File