ইজরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আওয়ামী সরকারের উদ্যোগ!
লিখেছেন লিখেছেন তহুরা ০৬ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:০৮:৩৯ রাত
২০১৩ ছবি: ম্যানিলায় ইজরায়েলী রাষ্ট্রদূতের সাথে বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
২০১৩ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের কথা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবু ধাবিতে অনুষ্ঠেয় উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহের নিরাপত্তা সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল ও আরব লিগভুক্ত ২৯টি মুসলিম দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপন আলোচনা করেন। এই গোপন বৈঠকের আয়োজক-সংগঠকদের আগেই এ শর্তও দেয়া হয়েছিল যে, পেরেজের বক্তব্য ফাঁস বা প্রকাশ করা হবে না এবং কেবল এ শর্তেই তিনি ওই গোপন সভায় বক্তব্য রাখবেন, যদিও বিষয়টি ইজরায়েলী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি অংশগ্রহণ করেন বলে ইজরায়েলী দৈনিক পত্রিকা ‘ইয়েদিয়োথ অহরোনোথ’ জানিয়েছে। সভায় শিমন পেরেজকে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারী তেরজে রোয়েড লারসেন এবং ইজরায়েল-ফিলিন্তিন বিষয়ক বিশেষ দূত মার্টিন ইনদাইক বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এ বৈঠকে ইরান ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। পত্রিকাটি আরো জানায়, ইজরায়েলী প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকালীন কোন দেশের মন্ত্রী সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন যান নি বরং বক্তব্য শেষে সকলে করতালিতে মুখর হয়ে ওঠেন।
সংবাদটি অনেক পুরানো এবং হয়তো অনেকেরই চোখ এড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে এ সংবাদটি বাংলাদেশের কোন পত্রিকা গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করে নি। কিন্তু সংবাদটিতে একটি বিষয় পরিস্কার, ইজরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জোর প্রচেষ্টা চলছে। ডা. দিপু মনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
ইজরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি যে একেবারে অনুমান নির্ভর নয় তা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে জুলাই মাসে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব জন গোমেজ পিএসসি-র বাসভবনে ইজরায়েলী রাষ্ট্রদূত মেনাশে বারের সম্মানে নৈশ ভোজ আয়োজনের খবরে। এ নৈশ ভোজটি এমনই এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় যখন ইজরায়েলী জঘন্য বর্বর হামলায় ফিলিস্তিনি শত শত শিশু নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল। জন গোমেজ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘হ্যা, ওনাকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। উনি আসলে মুরুব্বি শ্রেণীর এবং এখানে সকলের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। সকল রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার খুব ভালো সম্পর্ক। আমার সঙ্গেও তার খুব ভালো সম্পর্ক। মেনাশে বার (Menashe Bar) খুব ভালো কূটনীতিক। তাই তাকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।" ইতোপূর্বেও জন গোমেজকে ইজরায়েলী রাষ্ট্রদূতের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় মশগুল দেখা গেছে। প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিনি ভূখন্ড অবৈধভাবে জবরদখলকালী ইজরায়েলের সাথে বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের সম্পর্কের যে দেয়াল তৈরী হয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকে ম্যানিলাস্থ বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত সে বিশ্বাসে বিশ্বাসী নন, কারন তিনি একজন খৃষ্টান এবং খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের দেশ ফিলিপাইনে তিনি বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে ধর্মীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন। উল্লেখ্য এশিয়ার সর্বপ্রথম দেশ হিসেবে ফিলিপাইন ইজরায়েল রাষ্ট্রকে ২৯ নভেম্বর ১৯৪৭ সালে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাই জন গোমেজ তার স্বজাতীয়দের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশের সংবিধানকে লঙ্ঘন করে ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।
তবে এক্ষেত্রে জন গোমেজ যে নিতান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমনটি করেছেন তা মনে করার কোন কারন নেই। কেননা ইতোমধ্যে আওয়ামী সরকার ইজরায়েলের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ফেলেছে এবং বিগত কয়েকটি বছর সামান্য হলেও আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্য সেরে ফেলেছে। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে বাংলাদেশ ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২২,৪৩৫ মার্কিন ডলার, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৮,৩৬৪ মার্কিন ডলার২০১০-১১ অর্থবছরে এ যাবত সর্বোচ্চ ৩০,৫৪৫ মার্কিন ডলার এবং ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ১৭৮৬১ মার্কিন ডলার মূল্যের অজ্ঞাত পণ্য রপ্তানী করেছে। অর্থাৎ সারাবিশ্বের মুসলমানরা যখন ইজরায়েলকে অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করে চলেছে তখন আমরা ইজরায়েলের অর্থনৈতিক মিত্রে পরিণত হতে চলেছি।
প্রকৃতপক্ষে ইজরায়েলের সাথে বাংলাদেশের সরাসরি অর্থনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সহায়তায় ইজরায়েলের সাথে দলীয়ভাব দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক স্থাপন করে। এর ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে। পাকিস্তানকে শুরু থেকেই ইজরায়েল শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে আসছে। এ দিক থেকে ইজরায়েল ও ভারতের কমন শত্রু পাকিস্তান। তাই পাকিস্তানকে দূর্বল করতে, পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সুকৌশলে পূর্বপাকিস্তানের বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ কেন্দ্রীক আন্দোলনকে সামনে রেখে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে ইজরায়েল ও ভারত। ২০১৩ সালে হিন্দুস্তান টাইম পত্রিকায় "Israel helped India in 1971 war, reveals book" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, “গবেষণা উঠে এসেছে যে, তৎকালীন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার একজন দূতের মাধ্যমে গান্ধীর উদ্দেশ্যে হিব্রু ভাষায় একটি নোট পাঠান। সেখানে অস্ত্র সরবরাহের বিনিময়ে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার কথা বলা হয়। ১৯৭১ সালের ৬ জুলাই ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি নোটের মাধ্যমে জানানো হয়, ‘ইজরায়েল থেকে পাওয়া সহায়তা প্রোপাগান্ডা, অর্থায়ন এবং এমনকি অস্ত্রশস্ত্র ও তেল কেনার জন্য হবে ‘অমূল্য’। ইন্দিরা গান্ধী দ্রুত এইপ্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর মাধ্যমে লিচেস্টাইনের মধ্য দিয়ে ইজরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন।”
ফিলিস্তিনের গাজায় ইজরায়েলী বর্বর হামলার পরে শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ এবং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ইজরায়েলের যেভাবে সমালোচনা করেন তাতে অনেকের মতো আমারো "অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ" বলে সন্দেহ হয়েছিল। যারা ৫ মে শাপলা চত্তরে আধাঘন্টার অপারেশনে আড়াই হাজার আলেমকে হত্যা করতে পারে তারা ইজরায়েলি বর্বরতায় অশ্রুপাত করবে তা কেমন যেন বেমানান মনে হয়। মূলত: আওয়ামী সরকার তলে তলে যে ইজরায়েলের সাথে সম্পর্কের জাল অনেকদূর বুনে ফেলেছে তা আপাতত ঢেকে রাখার জন্যই শেখ হাসিনা এমন কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন।
যে ইসলামী মূল্যবোধের কারণে শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়ার সাহস পায় নি এমনকি ইজরায়েল ৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ তা প্রত্যাখ্যান করে। মূলত শেখ মুজিব তখন সারা বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিলেন যে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হলেও মুসলিম বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে যায় নি এবং ইজরায়েল নয় বরং মুসলিম বিশ্বের স্বীকৃতি বাংলাদেশের দরকার। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের সরকার, এরশাদের সরকার, খালেদা জিয়ার সরকার কেউই ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়ার সাহস পায় নি। তাহলে শেখ হাসিনা কেন ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে চায়? উদ্দেশ্য একটাই, এদেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া, প্রকৃত ইসলামী চেতনাকে চীরদিনের জন্য মিটিয়ে দেয়া এবং একমাত্র ভারত কর্তৃক অনুমোদিত বিকৃত ও অনুষ্ঠান সর্বস্ব ইসলামকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চায়। কারণ, বাংলাদেশে যতদিন ইসলামী চেতনা সমুন্নত থাকবে ততদিন বাংলাদেশ ভারতের দাসত্ব মেনে নেবে না, ইহুদীদের ক্রীড়নকে পরিণত হবে না।
যে সকল সাংবাদিক ও লেখক এতোদিন ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে দেশে ও বিদেশে এমনকি ইজরায়েলী পত্র-পত্রিকায় নিবন্ধ লিখেছে এবং যে সকল মাজারপূজারী আলেম রয়েছে তারা নিশ্চিত ইজরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে শেখ হাসিনার উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে। আর এ কথা সত্য, শেখ হাসিনা যা চান তা তিনি বাস্তবে রূপায়ন করে দেখান। তিনি ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী, তাই এটা নিশ্চিত শীঘ্রই বাংলাদেশের ইজরায়েলী দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হবে, যদি না দেশের আপামর দেশপ্রেমী জনসাধারণ ও তৌহিদী জনতার মাধ্যমে আল্লাহ তা'য়ালা শেখ হাসিনাকে স্তব্ধ করে দেয়।
আসুন, সময় থাকতে সচেতন হই, দেশ বাঁচাতে, ঈমান বাঁচাতে আওয়ামী জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই।
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৫ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার সাথে"বাংলাদেশে যতদিন ইসলামী চেতনা সমুন্নত থাকবে ততদিন বাংলাদেশ ভারতের দাসত্ব মেনে নেবে না, ইহুদীদের ক্রীড়নকে পরিণত হবে না"ইনশাাল্লাহ!
জাযাকাল্লাহ খায়ের
মন্তব্য করতে লগইন করুন