প্রচারপত্র বিলি করায় বিচারপতি মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
লিখেছেন লিখেছেন বিদ্রোহী রণক্লান্ত ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:১৩:৫৪ রাত
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. মিজানুর রহমান ভূঁঞার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। মঙ্গলবার অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের দাবির মুখে তিনি এ কথা জানান।
এরআগে ইসলাম ধর্ম এবং নবী মুহাম্মদকে (সা.) কটাক্ষ করে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের লেখা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন কপি করে বিতরণ করায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. মিজানুর রহমান ভূঁঞার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানান আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নেই। তবে এরআগে হাইকোর্ট বিভাগের অপর এক বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অবিচারকসুলভ আচরণের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন করেন দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত তার অগ্রগতি নেই।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার ওই বিচারপতির জমাদার ও কোর্ট পিয়ন প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের কাছে পত্রিকায় প্রকাশিত ধর্মকে কটাক্ষ করে লেখা প্রতিবেদনটি বিতরণ করেন বলে জানান রেজিস্ট্রার এ কে এম শামসুল ইসলাম।
মঙ্গলবার এ ঘটনার প্রতিবাদে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে সমিতির দক্ষিণ হলে এক জরুরি সাধারণ সভা থেকে এ দাবি করা হয়।
প্রতিবাদ সভায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলে তিনি আর কোনো দলে থাকেন না। শপথের পর তাকে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হয়। যারা পদে আসীন হয়ে দলের প্রতি আনুগত্য দেখান তাদের পদে থাকার অধিকার নেই।
ওই বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অবিলম্বে যদি পদ ছেড়ে দেন। তাহলে বিচার বিভাগ বাঁচবে।
আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এএফএম মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি (বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূঁঞা) বিচারপতি হওয়ার যোগ্য কিনা সেটা এখন প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। পত্রিকার কপি করে বিতরণ করা দলীয় আনুগত্যের প্রকাশ করেছেন। এখন তার বিচারপতির পদে থাকার যোগ্যতা তার নেই।
বিচারপতি মিজানুরের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের পর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার কোর্ট বর্জন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, এই খবর পড়ে আমি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। স্বাধীন বিচার বিভাগকে কলুষিত করার জন্য একটা কুখ্যাত কাজ করেছেন। এর মাধ্যমে দলের আনুগত্য প্রকাশ করেছেন তিনি। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার।
এ বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন- সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি কেএম সাঈফুদ্দিন আহম্মেদ। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম ও সাবেক সহ-সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব।
এরআগে দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলাম বলেন, সোমবার বিচারপতিগণ আমাকে জানিয়েছেন ব্লগার রাজীবের বিরুদ্ধে কুৎসামূলক রিপোর্ট কপি করে বিতরণ করছেন একজন বিচারপতি এবং আমাকে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে বললো। এ কপি ওই বিচারপতি জমাদার ও পিয়ন প্রধান বিচারপতির দপ্তরেও দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বিচারপতির নাম মিজানুর রহমান ভূঁঞা। তার জমাদারের নাম হচ্ছে সিদ্দিকুর রহমান হাওলদার ও কোর্ট পিয়নের নাম নুরুল আলম। আমি তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছি। ওরা স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, চিফ জাস্টিসকেও এটা দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূঁঞা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালের ২৯ জুলাই হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। দুই বছর পর ২০০৪ সালের ২৯ জুলাই তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজীব হায়দার তার বাড়ির কাছে নৃসংশভাবে খুন হন। এরপর থেকে তার নামে লেখা ব্লগে ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে লেখা সম্বিলিত কিছু প্রতিবেদন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। তাতে তিনি ইসলাম ধর্মর প্রবর্তক মোহাম্মদ (সা.) এবং ইসলামের বিধিবিধান নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১২৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন