বরাবরের মত প্রধানমন্ত্রী ঘোলা পানিতে জামাত শিবির শিকার করলেন । প্রমান দেখুন ।

লিখেছেন লিখেছেন বিদ্রোহী রণক্লান্ত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:০৬:৪৫ রাত







ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন ওরফে শুভ (৩৫) হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে। গতকাল ভোর সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর পল্লবী থানায় রাজীবের পিতা ডা. নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এদিকে রাজীব হত্যাকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহের জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দুই তরুণী ব্লগারসহ তিনজনকে মিন্টো রোডস্থ গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে গেছে।

এরা হচ্ছেন- ব্লগার তানজিলা, রাফি ও পলাশনগর প্লট মালিক কল্যাণ সমিতির সিকিউরিটি গার্ড আলমগীর হোসেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। মামলার এজাহারে নিহতের পিতা নাজিম উদ্দিন উল্লেখ করেন, গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে চা খাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন রাজীব। রাত ৯টার পর পলাশনগরের ৫৬/৩ নম্বর নিজের বাড়ির দেয়াল সংলগ্ন রোড থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। কে বা কারা পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। পল্লবী থানার ওসি আবদুল লতিফ শেখ বলেন, হত্যা রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। নিহতের পিতা নাজিম উদ্দিন আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন শাহবাগে যায়নি তার ছেলে। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে তানজিলা নামে এক ব্লগার বন্ধুর সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়েছিল। বলেছিল চা খেতে বাইরে যাচ্ছে। রাজীবের মামা খুররম হায়দারের স্ত্রী বলেন, ওই দিন দুপুরে রাজীবকে তিনি তার বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। দুপুরের খাবার খেয়ে সে বাসা থেকে বের হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, রাত ৮টার দিকে রাজীবদের বাড়ির সামনে দিয়েই হেঁটে বাসায় এসেছি। ওই সময় রাস্তায় কিছুই দেখতে পাইনি। পরে রাত ৯টার পর রাজীবের হত্যার খবর পাই।

রাজীবের বাসা লাগোয়া কিডস কেয়ার স্কুল। ওই স্কুলের বিপরীত পাশেই একটি চায়ের দোকান। এ দোকানের চা বিক্রেতা বলেন, বিকালের দিকে রাজীব তার এক বান্ধবী নিয়ে চা পান করেন। পরে বাইরে চলে যান। থানা পুলিশের পাশাপাশি চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে র‌্যাব, সিআইডি ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জব্দ করা মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে সংরক্ষিত বিভিন্ন তথ্যের সূত্র ধরে হত্যার মোটিভ ও খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তদন্ত সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের দিন বিকালে রাজীব তার ব্লগার বান্ধবী তানজিলাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হন। বাসার পাশের গলিতে চা পান করে মিরপুর ১০ নম্বরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। তানজিলার বাসা মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনে। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে তানজিলাকে ওই বাসায় পৌঁছে দিয়ে রাজীব পায়ে হেঁটে তার বাসায় রওনা দিয়েছিলেন। ওই সময় ময়মনসিংহের রাফি নামে আরেক ব্লগার বান্ধবী কল করেন রাজীবের মোবাইল ফোনে। তার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই রাজীব বাসায় ফিরছিলেন। গোয়েন্দাদের ধারণা রাত ৯টার পর রাফির সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতেই সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন রাজীব। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সূত্র জানায়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রাজীবের মুখ বিকৃত হয়েছিল। মুখের একপাশ ঝুলছিল অন্যপাশের সঙ্গে। গলায় গভীর ক্ষত ছিল। গোয়েন্দারা রাজীব হত্যার ধরনের সঙ্গে প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ডের মিল খুঁজে পেয়েছেন। এছাড়া, সমপ্রতি ব্লগার আসিফ মহীউদ্দিনের ওপর একই ধরনের হামলা হয়েছে।

রাজীবের মা নার্গিস আক্তার বলেন, আমার ছেলে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়। কারও সঙ্গে তার শত্রুতা নেই। তারপরও কেন তাকে হত্যা করা হলো। আমি এর বিচার চাই। নিহতের পারিবারিক সূত্রমতে, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে রাজীব স্থাপত্য বিভাগের ছাত্রী আনিকা ব্রোজিনকে বিয়ে করেন। আনিকার পিতার নাম আবদুর রশীদ। পুরান ঢাকার আনন্দ বেকারীর মালিক। আনিকার নামে ধানমন্ডির ৪ নম্বর রোডের পার্কের পাশে একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। সেখানেই থাকতেন স্বামী-স্ত্রী। সমপ্রতি রাজীব স্ত্রীকে ওই বাসায় রেখে নিজের পল্লবীর ৫৬/৩ নম্বর বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। তার সঙ্গে ছোট ভাই নেওয়াজ মর্তুজা হায়দার নোবেল ও খালাতো ভাই গালিব থাকতেন। তাদের পিতা-মাতা থাকতেন গাজীপুর কাপাসিয়া সদরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গ্রামের বাড়িতে। হত্যাকাণ্ডের সময় রাস্তায় কোন চিৎকার কিংবা আর্তনাদের শব্দ শুনতে পাননি কেউ। হত্যাকাণ্ডস্থলের অল্প দূরেই চারতলা ভবনের দোতলায় ভাড়া থাকেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কনস্টেবল নাজমুল হক। তিনি বলেন, রাত ৯টার দিকে বাসায় আসার সময় রাস্তায় জটলা দেখতে পাই। ভিড় ঠেলে দেখি রক্তাক্ত লাশ ঘিরে মানুষের নানা কৌতূহল। পরে জেনেছি প্রতিবেশী রাজীবের লাশ। ওই সময় বাসায় গিয়ে স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে কিছুই বলতে পারেনি। আমার কাছে শুনেই হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পেরেছে। স্থানীয় শুভ নামে এক যুবক বলেন, রাত ৯টার দিকে দুই যুবককে ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করতে দেখেছি। তারা তখন দৌড়ে গলি দিয়ে বাইশটেকের দিকে চলে গেছে। ওয়েবসাইট সূত্রমতে, নিহত রাজীব সামহোয়ারইন ব্লগে ‘থাবা বাবা’ নামে নিয়মিত লিখতেন। এছাড়া ‘আমার ব্লগ’ নামের আরেকটি ব্লগেও তিনি লিখতেন। পাশাপাশি শাহবাগের আন্দোলনের পক্ষে নানা মন্তব্য লিখেছেন ফেসবুক ও বিভিন্ন ব্লগে। এর সূত্র ধরে কোন পক্ষ এহেন হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।

তদন্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যা রহস্য উদঘাটনে সকল বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা দল নানা কৌশলে তথ্য সংগ্রহে মাঠে রয়েছে।

হত্যার নেপথ্যে: তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যুদ্ধপরাধীদের বিরুদ্ধে সারাক্ষণই লেখালেখি করতেন রাজীব। ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে ‘অশ্লীল’ বাক্য পোস্ট করেছেন ইন্টারনেটে। এ কারণে সোনার বাংলা ব্লগ থেকে অব্যাহত হুমকি পাচ্ছিলেন তিনি। এর বাইরে আরও দু’-তিনটি কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরমধ্যে স্ত্রী আনিকার সঙ্গে রাজীবের সামপ্রতিক সম্পর্ক গুরুত্ব পেয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। তাদের মতে, একদিকে দুই পরিবারের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না। অন্যদিকে ব্লগার বান্ধবীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ওইসব সম্পর্কের সূত্র ধরে হত্যার মোটিভ উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, স্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় গত মে মাস থেকে তাদের মধ্যে কোন যোগাযোগ ছিল না।

রাজীবের শরীরে ৮টি আঘাতের চিহ্ন

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ব্লগার ও স্থপতি রাজীব আহমেদ হায়দার শোভনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। বিকাল সোয়া ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. সোহেল মাহমুদ ব্লগার রাজীবের লাশের ময়নাতদন্ত শুরু করেন। ময়নাতদন্তকালে চিকিৎসক মৃতদেহে ৮টি আঘাতের চিহ্নের আলামত পান। এর মধ্যে ৬টি গুরুতর আঘাত। বাম চোয়ালে ও গলায় মিলে ৪টি, বামবাহুতে একটি ও ডান কানের পিছনে একটি এবং মাথার পিছনে দুইটি আঘাতের চিহ্ন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দেখতে পান। এছাড়া বামহাতে কিছু চুল ময়নাতদন্তকালে চিকিৎসক দেখতে পান। এ চুল ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রাজীবের উরু থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ৬টি গুরুতর আঘাতের মধ্যে একটিই রাজীবের হত্যার জন্য যথেষ্ট। হত্যার উদ্দেশ্যেই খুনিরা তাকে আঘাত করেছে।

মিরপুরে স্কুল শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

রাজীব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল দুপুরে মিরপুরে সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্কুল শিক্ষার্থী ও জনতা। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী। বেলা ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত তারা এ বিক্ষোভ করে। এ সময় মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ও এর আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভে অংশ নেয় মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, আবু তালেব স্কুলসহ মিরপুরের বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা রাজীবের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার, বিচার ও রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন দাবি লেখা ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোস্তারি আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এই কর্মসূচির প্রতি আমরা শিক্ষকেরাও সমর্থন জানিয়েছি। এর আগে রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে আন্দোলনরত জনতার সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করেছিলাম। এই দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

Click this link

বিষয়: বিবিধ

১১০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File