১৫ই আগষ্টের পটভুমি । ধারাবাহিক পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন বিদ্রোহী রণক্লান্ত ১৪ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:১৬:৩২ সকাল
ঐ সমস্ত স্ববিরোধী নীতিসমূহ জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। সংক্ষেপে ঐ সমস্ত নীতিগুলোকে তুলে ধরা হল পাঠকদের সুবিধার্থে।
ভারতে দাসখত লিখে দিয়ে, ভারতীয় শাসনতন্ত্রের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্র গলধঃকরণ করে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগ সরকার স্ববিরোধী ঐ চার নীতিকে শাসনতন্ত্রের চার স্তম্ভে পরিণত করে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। উল্লেখিত গণবিরোধী নীতিগুলোর ককটেল ফর্মুলা দিয়ে দেশ শাসন করে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা ও সুষম সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টার ফলে দেশ ও জাতির অবস্থা কি হয়েছিল সেটা অনুধাবন করার জন্য নীতিগুলোর কিছুটা বিশ্লেষন দরকার। জনাব তোফায়েল আহ্মদের দাম্ভিক বক্তব্য, “সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র একসাথে কায়েম করে মুজিববাদকে বিশ্বের তৃতীয় রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।” এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞানুযায়ী বলতে হয়, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র দু’টো সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দর্শন। গণতন্ত্রে মূল প্রেরনা এসেছে মানুষের মৌলিক অধিকার, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র ও ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে। “Man is born free and shall die free.” রাষ্ট্রকাঠামোর Basic structure that is economics এবং super structure that is politics এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষের থাকবে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, থাকবে তাদের মেধা ও কর্মশক্তির বিকাশের অবাধ পরিবেশ, থাকবে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা। এ নীতির উপরই গড়ে উঠেছে পশ্চিমা দেশগুলোর ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ও তাদের কৃষ্টি এবং সভ্যতা। বিকশিত হয়েছে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। গণতান্ত্রিক সভ্যতার anti thesis হিসেবেই কার্ল মার্কস উপস্থাপন করেন সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের রাজনৈতিক দর্শন। ধনতন্ত্র থেকে সাম্যবাদে উত্তরনের Transitionary phase -কে বলা হয় সমাজতান্ত্রিক অধ্যায়। সমাজতন্ত্রকে কার্যকরী করার জন্য কেড়ে নেয়া হয় ব্যক্তি স্বাধীনতা। জাতীয় পরিসরে চাপিয়ে দেয়া হয় একটি বিশেষ শ্রেণীর একনায়কত্ব। রাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে উৎপাদন যন্ত্রগুলোর ভাগ্য বিধাতা হয়ে উঠেন দলীয় নেতারা। উৎপাদন শক্তির স্বাভাবিক বিকাশের সব সম্ভবনা ও পথ রূদ্ধ করে দেয়া হয়। Incentive হীন উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদনের মাত্রা কমে যায়। অস্বাভাবিকভাবে মানুষকে রূপান্তরিত করার চেষ্টা চালানো হয় যন্ত্রে। যান্ত্রিক জীবনের বিভীষিকার চাপে জনগণের কর্মস্পৃহা লোপ পায়। সাধারণ জনগণের শ্রমের ফলে অর্জিত সম্পদের ভোগী হয়ে উঠেন রাজনৈতিক পার্টির নেতারা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের আমলাতন্ত্র। জনসাধারনের জীবনযাত্রার মান কমে যায় ক্রমান্বয়ে। ফলে ঘনীভূত হয়ে উঠে সামাজিক ক্ষোভ। তারই বর্হিপ্রকাশ সামাজিক বিপ্লবের স্রোতে ঠুনকো তাসের প্রাসাদের মত ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায় রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সমাজ ব্যবস্থা। সমাজতন্ত্রের নিঃসাড়তা আজ বিশ্ব পরিসরে প্রমাণিত হয়েছে পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর বিপর্র্যয়ের ফলে। সাবেক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর প্রতিষ্ঠাতা এবং নেতারা আজ সমাজতন্ত্রের আদর্শকে আস্তাকুড়েঁ ফেলে দিয়ে গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতির নীতিকে গ্রহণ করে অতীত ভুলেরই শুধু প্রায়শ্চিত্ত করছেন তা নয়; তারা এটাও পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করেছেন গণতন্ত্রকে গ্রহণ করলে সমাজতন্ত্রকে বর্জন করাটা হয়ে উঠে অপরিহার্য। এ দু’য়ের সহাবস্থান বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব। প্রতিটি মানুষ তার আপন স্বাতন্ত্রে বিকশিত। এ প্রাকৃতিক নিয়মকে মেনে নিয়ে গড়ে উঠেছিল ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দর্শন। তাই আজও মানুষের কাছে আবেদন রয়েছে এ দর্শনের। পক্ষান্তরে প্রাকৃতিক নিয়মকে অস্বীকার করে মানুষকে যন্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা এবং যন্ত্র হিসেবে মূল্যায়ন করার ফলেই সমাজতন্ত্র দর্শন হিসেবে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেনি। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের জনগণ ও ঠিক একই কারণে মেনে নেয়নি সমাজতন্ত্রের চাপিয়ে দেয়া নীতি। বিশ্বাস করেনি আওয়ামী লীগের জগাখিচুড়ী মুজিববাদী আদর্শের ভাওতাবাজী।
এবার আলোচনা করা যাক ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে। ধর্মনিরপেক্ষতার আক্ষরিক মানেটা আজ অব্দি আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে যদি বোঝানো হয় সব ধর্ম থেকে সমদূরত্ব বজিয়ে চলা, তাহলে সেটা হয়ে পড়ে ধর্মহীনতারই শামিল। বর্তমান আধুনিক বিশ্বেও প্রতিটি মানুষ কোন না কোন আদর্শ এবং বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই বেঁচে থাকে। তারা বাঁচার উৎপ্রেরনাও পেয়ে থাকে সে সমস্ত বিশ্বাস এবং আদর্শ থেকে। কেউ কি কোন আদর্শ কিংবা বিশ্বাস ছাড়া এ পৃথিবীতে জীবনধারণ করতে পারে? হয়তো বা পারে। তবে আমার জানা মতে তেমন কোন ব্যক্তির সাক্ষাত আজঅব্দি আমি পাইনি। বিশ্বাস অনেক প্রকার হতে পারে। যেমন:- ধর্মীয় বিশ্বাস, মানবতাবাদ, এথিজম বা নিরশ্বরবাদ, এনিমিজম, পৌত্তলিকতাবাদ প্রভৃতি। যে যাই বিশ্বাস করুক না কেন সেটা ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপার। প্রত্যেকের কাছে তার বিশ্বাস তার জীবন ধর্ম। রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা জণগণের উপর চাপিয়ে দেয়ার অর্থ দাড়িয়েছিল জনগণকে তাদের নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস থেকে জোর করে নিরপেক্ষ রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা। এ ধরণের প্রচেষ্টা অবশ্যই মানবাধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থী। ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সরকারিভাবে শাসনতন্ত্রের স্তম্ভ হিসাবে গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু উভয় সম্প্রদায়ের লোকের ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বাসের অবমাননা করেছিল। বাংলাদেশের ধর্মভীরু জনতা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের এ অবমাননা কিছুতেই মেনে নেয়নি। প্রত্যেকের নিজস্ব ধর্ম পালন করার পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে এসেছে এ দেশের মানুষ চিরকাল। তাছাড়া ধর্মীয় সহনশীলতার এক গৌরবময় ঐতিহ্য বাংলাদেশী জনগণ আদিকাল থেকে বহন করে এসেছে। উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে ধর্মীয় আদর্শের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক হিংসাত্বক হানাহানি এমনকি ধর্মীয় যুদ্ধও হয়েছে। বর্তমান ভারতেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটছে বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে বিভিন্ন ধর্মের সম্প্রদায় শান্তিতে বসবাস করেছে যুগ যুগ ধরে, নির্ভয়ে, আপন ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে। এটা ঐতিহাসিক সত্য এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গৌরব। এ গৌরবকে কলুশিত করার জন্য সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিয়ে কায়েমী স্বার্থ এবং রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে অনেকেই। কিন্তু তাদের সব চক্রান্তই ব্যর্থ করে দিয়েছে বাংলাদেশের সচেতন জনতা। বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে সংখ্যাগুরু মুসলমান সম্প্রদায়। ধর্ম বাঙ্গালী মুসলমানদের কাছে শুধুমাত্র একটি আধ্যাত্মিক বিশ্বাসই নয়, ধর্ম হচ্ছে তাদের জীবন আদর্শ (Way of Life)। তারা মনেপ্রানে ধার্মিক কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। ইসলাম ধর্মের অনুশাসন তাই তারা পালন করে বিচার বিবেচনা করে। ইসলাম ধর্মে অন্য ধর্মালম্বীদের ধর্ম পালনের সম্পূর্ণ অধিকার দেয়া হয়েছে শুধু তাই নয়; সংখ্যালঘু ধর্মালম্বীদের প্রতি মুসলমানদের কিংবা মুসলমান রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব সে সম্পর্কেও পরিষ্কার নির্দেশ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে। সে অবস্থায় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি শাসনতন্ত্রে গ্রহণ করা ছিল নিঃপ্রয়োজন। বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানদের জীবনধারার আলোকে প্রণীত হবে স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র এটাই ছিল জনতার আশা ও আকাঙ্খা।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতীয় পরিচিতি এবং জাতীয়তাবাদ নিয়ে শোরগোল তুলল। কিন্তু তারা পূর্বতন ঐতিহাসিক বাংলাদেশের এই মানবগোষ্ঠির জাতীয়তার মূল ও ভিত্তি সম্পর্কে কিছুই বলল না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের সুযোগে অনেকেই আবার সরবে মেতে উঠল। তারা বলে বেড়াতে লাগল, “মুসলিম লীগের দ্বি-জাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে যে রাজনীতি উপমহাদেশে সংগঠিত হয়েছিল এবং পরিণতিতে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়েছিল, সেই দ্বি-জাতি তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হয়েছে।” অর্থাৎ পক্ষান-রে তারা এটাই বলার চেষ্টা করল যে, ১৯৪৮ সালে ভারত বিভক্তি অন্যায়ভাবে করা হয়েছিল।
এ ধরণের উক্তি নেহায়েত অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরণের বক্তব্যে অখন্ড ভারতের প্রবক্তাদের প্রচারণারই মিল খুঁজে পাওয়া যায়। উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামকালে কংগ্রেস অনুসৃত অখন্ড ভারত এবং মুসলিম লীগের দ্বি-জাতি তত্ত্ব এই বিষয় দুইটির একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে।
প্রাগঐতিহাসিক যুগ থেকেই এই অঞ্চলে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠি তাদের স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বাধীনভাবে বসবাস করে এসেছে। শুধুমাত্র বহিরাগত বিজাতীয় শক্তিরাই তাদের শোষণ পাকাপোক্ত করার জন্য অস্ত্রের বলে দেশীও বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে নিজেদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই উপমহাদেশে একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। বৈদিক যুগে আর্য্য ভাষীদের আগমনের কাল থেকে বৃটিশ ঔপনিবেশবাদের শাসনকাল পর্যন্ত ইতিহাস ঘাটলে এই সত্য অতি সহজেই অনুধাবন করা যায়।
আদিকালের বর্ণ হিন্দুরা রামরাজ্য কায়েমের ধুঁয়া তুলে অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়নি আফগান এবং মুঘল শাসকরাও। একমাত্র বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদই আধুনিক উচ্চুতর মানের সমরাস্ত্র এবং বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির বদৌলতে পুরো উপমহাদেশকে একটি প্রশাসনিক রাষ্ট্রের রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিল। অতএব যুক্তিসঙ্গত কারণেই বলা যায় যে, একক রাষ্ট্র হিসাবে ভারতের ইতিহাস অতি সাম্প্রতিক।
উনিশের দশকে বৃটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির আন্দোলন যখন দানা বেধেঁ উঠছিল তখনই পাশ্চাত্য ধ্যানধারণায় দীক্ষিত বর্ণ হিন্দুদের নেতৃত্বে সৃষ্টি করা হয় কংগ্রেস পার্টি বৃটিশ প্ররোচণায়। মূল উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন জাতি সত্ত্বার স্বাধীনতার দাবিকে উপেক্ষা করে বৃটিশ সৃষ্ট Indian Union -কে অটুট রেখে স্বাধীনতার পর তাদের ক্ষমতায় বসানো। এর ফলে বর্ণ হিন্দুরা দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন অখন্ড ভারতে রাম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার সম্ভাবনা দেখতে পায়। তাদের প্রতি বৃটিশ সহযোগিতার কারণ ছিল মূলতঃ দু’টি।
বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদকে উপমহাদেশ দখল করতে হয়েছিল মুসলমানদের বিরোধিতার মুখে। ফলে মুসলমানরা হয়ে উঠে তাদের চোখের বালি। প্রতিহিংসার রোষানলে বৃটিশ সরকার মুসলমানদের ঘৃনা ও সন্দেহ করতে থাকে। পক্ষান্তরে হিন্দুরা বৃটিশদের সাথে হাত মিলিয়ে তাদের সাহায্যই করেছিল মুসলমানদের পরাস্ত করে ক্ষমতা দখলের ব্যাপারে। পুরস্কার স্বরূপ মুসলমানদের ধনসম্পদ হিন্দুদের হাতে তুলে দেয়া হয়। পর্যায়ক্রমে বৃটিশ অনুকম্পা ও মদদপুষ্ট হিন্দুরা সমাজের সর্বক্ষেত্রে বিত্তশালী এবং প্রভাবশালী হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সমর্থ হয়। মুসলমানরা হয়ে পরে নিঃস্ব ও ক্ষমতাহীন। সুদীর্ঘ দুই’শ বছরের বৃটিশ গোলামীর ইতিহাসে হিন্দু সম্প্রদায় বরাবরই ছিল বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির সহযোগী মিত্রশক্তি আর মুসলমানরা পরিণত হয় নিগৃহ ও করুণার পাত্রে। পাশ্চাত্য শিক্ষা এবং ধ্যানধারণায় গড়ে উঠা উচ্চবিত্ত বর্ণ হিন্দু সমপ্রদায়ের আনুগত্য সম্পর্কে বৃটিশ শাসক গোষ্ঠি ছিলেন নিশ্চিত (Convinced)। তাই তারা চেয়েছিলেন স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ঐ শ্রেণীকেই অধিষ্ঠিত করতে, যাতে করে সমগ্র উপমহাদেশে তাদের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ কায়েম রাখা সম্ভব হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কংগ্রেসকে জাতীয় দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কাজটি ছিল তাদের সমগ্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দাবিদার বানাবার পূর্বশর্ত। সেটা অর্জন করার জন্য ধর্মীয় চেতনাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। অতি কৌশলে ‘বন্দে মাতরম’, ‘ভারতমাতা’, ‘হিন্দুস্তান’, ‘জয় হিন্দ’ ইত্যাদি শ্লোগান তুলে জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থন ও আনুগত্য লাভ করে কংগ্রেসকে একমাত্র জাতীয় দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন ‘নব্য চানক্যরা’। but every action has an equal and opposite reaction. বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতার আন্দোলনের গায়ে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী কংগ্রেস যখন হিন্দু ধর্মের নামাবলী একতরফাভাবে চাপিয়ে দিল তখন সংখ্যালঘু জাতি-গোষ্ঠিগুলো নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে শংকিত হয়ে হয়ে উঠে।
এই অবস্থায় উপমহাদেশের বিভিন্ন জাতিসত্ত্বায় বিভক্ত মুসলমান সম্প্রদায় নিজেদের স্বাতন্ত্র বজায় রাখার জন্য ভিন্ন রাষ্ট্রের দাবিতে সোচ্চার হয়ে জোর আন্দোলন গড়ে তোলে। এই প্রেক্ষাপটেই কংগ্রেসের মোকাবিলায় মুসলমানদের দাবিকে রাজনৈতিক রূপ দেবার জন্যই গঠন করা হয়েছিল রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম লীগ এবং কংগ্রেসের অখন্ড ভারত তত্ত্বের মোকাবিলায় মুসলিম লীগ প্রচার করেছিল দ্বি-জাতি তত্ত্ব। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে হিন্দুদের জন্য হিন্দুস্তান এবং মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান, এই দু’টো দাবিতে হিন্দু-মুসলমান এই দুই ধর্ম গোষ্ঠির মেরুকরণ ভয়াবহ সংঘাতের রূপ ধারণ করে। সংঘর্ষে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে দু’পক্ষেই। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান সৃষ্টির দাবি বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হয়েছিল বৃটিশ সরকারকে। তর্কের খাতিরেও যদি ধরে নেয়া হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা দ্বি-জাতি তত্ত্বকে খন্ডিত করেছে তবে যুক্তিগত কারণেই মেনে নিতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অখন্ড ভারত তত্ত্বকেও খন্ডিত করেছে একইভাবে।
কিন্তু আমার মনে হয় ১৯৭১ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের অসাড়তা নয় বরং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে ভারত একটি বহুজাতিক দেশ। একই সাথে এটাও প্রমাণিত হয় যে, শুধুমাত্র বিশেষ একটি উপাদানের উপর ভিত্তি করে কোন জাতিসত্ত্বা গড়ে উঠতে পারে না। জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশে মূল ভূ-খন্ড, ভাষা, নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, সাহিত্য-সংস্কৃতির ঐতিহ্যের সাথে ধর্মীয় মূল্যবোধও একইভাবে প্রভাব রাখে। নিদির্ষ্ট ভূ-খন্ডে ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠি, সমপ্রদায়, জাত, কুল নির্বিশেষে যখন কোন জনগোষ্ঠি এক সামগ্রিক চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে উঠে তখনই জাতীয়তাবাদ প্রাণ পায়। জাতীয়তাবাদ মূলতঃ এক ধরণের অনুভূতি, এক ধরণের মানসিকতা, এক ধরণের জাগ্রত চেতনা, যার সৃষ্টি হয় জনসমষ্টির প্রবাহমান ঐতিহাসিক জীবনধারায়। জাতীয় সংগ্রামের ধারায় গতিশীলতা অর্জন করার জন্য কখন কোন উপাদানটা বিশেষ ভূমিকা রাখবে সেটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে সময়, বাস্তব পরিস্থিতি, জনগণের প্রত্যাশা এবং নেতাদের উপর।
অতীত সম্পর্কে গৌরববোধ, বর্তমানের উপভোগ বা বঞ্চনা আর ভবিষ্যতের রঙ্গীন স্বপ্ন জাতীয়তাবাদের চেতনা জাগ্রত করে এবং জনমনে গড়ে তোলে ঐক্যবদ্ধ সুরের মূর্চ্ছনা। এ ধরণের ঐক্যবদ্ধ চেতনা যখন কোন জনসমষ্টিকে একত্রিত করে তখন সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। সামগ্রিক সত্ত্বা হিসাবে তা বিভিন্ন মাত্রায় প্রকাশিত হয় আর তারই ফলে একটি জাতি সবরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আদর্শিক ও দৈহিকভাবে প্রস্তুত হয়।
বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে এখনও প্রচুর বিভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ বিভ্রান্তিকে আরো জটিল করে তুলেছেন তাদের ক্ষণস্থায়ী রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য। এ বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য বুদ্ধিজীবিদের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রয়োজন তাও প্রায় অনুপস্থিত। পরিষ্কারভাবে সত্যকে আমাদের জানতে হবে। আমাদের জাতীয়তাবাদ কি? বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ? না বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ?
প্রাচীন বঙ্গ অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন ভূ-ভাগ যে ভারতীয় উপমহাদেশে একটি প্রাচীন এবং সুপরিচিত স্ব-বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল অঞ্চল ছিল তার অসংখ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে বিধৃত রয়েছে। (খ্রীষ্টপূর্ব ১৪০০-১০০০ সালের মধ্যে) ঐতরেয় অরণ্যকে বঙ্গের কথা রয়েছে। মহাভারত ও হরিবংশেও দেখা যায় বঙ্গ প্রসঙ্গ। সুতরাং বঙ্গ জনপদকে নেহায়েত অর্বাচীন বলে আখ্যায়িত করার কোন কারণ নেই। রামায়নেও বঙ্গের উল্লেখ রয়েছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে প্রাচীন জনপদ হিসেবে বঙ্গের উল্লেখ রয়েছে। এ দেশের দু’কুল পাত্রোর্ন ক্ষৌম কার্পাসিক বস্ত্র বয়ন শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল বলেও কৌটিল্য বয়ান করেছেন। বরাহ মিহির (৫০০-৫৫০ খ্রীষ্টাব্দে) তার বৃহৎ সংহিতা গ্রন্থে পূর্বাঞ্চলীয় দেশ অর্থাৎ বঙ্গ দেশ, পরবর্তিকালে বাংলাদেশের অর্ন্তগত যে কয়টি জনপদের নাম করেছেন সেগুলো হল: হরিকল, গৌতক, পৌন্ড্র, বঙ্গ, বর্ধমান, তাম্রলিপ্তি, সমতট ও উপবঙ্গ। সতীশচন্দ্র মিত্র মহাশয় যশোর, খুলনা সংলগ্ন দক্ষিন বঙ্গের কিছু অংশকে উপ-বঙ্গরূপে শনাক্ত করেছেন। এ ছাড়া বর্তমান বাংলাদেশের আর একটি প্রাচীন জনপদ সুহ্ম্রের কথাও ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশের এবং আদিকালের বঙ্গ দেশের পশ্চিম এলাকার নাম ছিল সুহ্ম্র, অঙ্গ, বর্তমান মিথিলা ও কলিঙ্গ উড়িষ্যা প্রদেশের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের তথা বঙ্গ দেশের অন্তর্ভূক্ত ছিল।
হিম যুগের পর থেকে বাংলাদেশ কখনও জনশূন্য থাকেনি। পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের মানবগোষ্ঠির মতো বাংলাদেশেও আদিম মানব সভ্যতার বিবর্তন ঘটেছিল। কারণ, এখানেও প্রত্ন ও নব্য প্রস্তর এবং তাম্র যুগের অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পোদ, বাউড়ী, কোল, ভীল, মুন্ডা, সাওঁতাল, সাবর, পুলিন্দ, হাড়ি, ডোম, চন্ডাল, রাজবংশী সমুদয় অন্তজ জাতির সমষ্টিই বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীগণের বংশধর। ভাষার ও আকৃতির মূলগত ঐক্য হতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, এই সমুদয় জাতি একটি বিশেষ মানবগোষ্ঠির বংশধর। এই মানবগোষ্ঠির সাথে অষ্ট্রেলিয়ার অদিবাসীদের চেহারার এবং ভাষার মিল পাওয়া গিয়েছিল বলে এদের বলা হয় অস্ট্রো-এশিয়াটিক অথবা অষ্ট্রিক।
বাংলাদেশের দোরগোড়ায় রাজমহল পাহাড়। সেখানে বন-জঙ্গলের অধিবাসী পাহাড়ীদের ছোট্ট-খাট্টো গড়ন, চেহারা, গায়ের রং মিশমিশে কালো, নাক থেবড়া। বেদ এবং নিষাদে যে বর্ণনা আছে তার সঙ্গে হুবহু মেলে সিংহলের ভেড্ডাদের। ফলে এদের নৃ-তাত্ত্বিক নাম হয় ভেড্ডিড। নিষাদ জাতি বলেও তারা আখ্যায়িত হয়েছে। প্রাচীন বাংলাদেশের নানা জায়গায় নানারকম পরিবেশে এবং জল হাওয়ায় নানান দলে ভাগ হয়ে মানুষ বসবাস করত। পরে তাদের রক্তে বহিরাগতদের নানা রক্তের ধারা এসে মিশেছে। বাচঁবার আলাদা আলাদা ধরণের দরুন এবং রক্তের মেশামেশি হওয়ায় স্থানভেদে চেহারায় নানারকম ধাঁচ সৃষ্টি হয়েছে। মনের গড়নে, মুখের ভাষায়, সভ্যতার বাস্তব উপাদানে তার প্রচুর ছাপ আছে। বাংলাদেশের মাটির গুন আর সেই মাটিতে নানা জাতের মেলামেশা এরই মধ্যে বাংলাদেশী জনপ্রকৃতির বৈচিত্র আর ঐক্যের গোড়া খুঁজে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীগন আর্য্য জাতির বংশগত নন। বাংলা ভাষার বিশ্লেষন করে পন্ডিতগণ এ সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছেন। উপরন্তু দ্রাবিড় বা আর্য্য আসলে নরগোষ্ঠির নাম নয়, ভাষাগোষ্ঠির নাম মাত্র। একই নরগোষ্ঠির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ভাষার চলন থাকতে পারে। কাজেই শুধুমাত্র ভাষা দিয়ে কোন নরগোষ্ঠির নামকরণ সঠিক নয়।
আসমুদ্রহিমাচল আমাদের এই দেশের নাম বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশ। প্রশ্ন দেখা দেয় বাংলা অথবা বাঙ্গালা এবং বাঙ্গালী শব্দের উৎপত্তি হল কি করে? বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পটভূমিকায় এই সমস্ত শব্দের ইতিহাস অতি সাম্প্রতিক। জনাব আবুল ফজল আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে বাংলা, বাঙ্গালা, বাঙ্গালী শব্দের উৎপত্তির যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা হল:- প্রাচীন বঙ্গ শব্দের সাথে আল শব্দ যুক্ত করে সুলতান শামসুদ্দিন বাঙ্গালী শব্দের চয়ন করেন। আল শব্দের অর্থ পানি রোধ করার ছোট-বড় বাঁধ। অন্যদিকে সুকুমার সেনের অভিমত হল প্রথমে বঙ্গ থেকে বাঙ্গালাহ্র সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম শাসন আমলে পারসিক বাঙ্গালাহ্ উচ্চারণ থেকে পুর্তুগীজরা বানিয়েছে বেঙ্গল এবং ইংরেজদের হাতে পড়ে বঙ্গ পরিণত হয়েছিল বেঙ্গলী বা বাঙ্গালীতে।
বাংলাদেশী জনগণের বাসভূমির রয়েছে একটি ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক সীমানা। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সীমা সংক্ষেপে বলতে গেলে, উত্তরে হিমালয় ও তার গায়ে নেপাল, সিকিম ও ভূটান রাজ্য, উত্তর-পূর্ব দিকে ব্রহ্মপুত্র নদ ও উপত্যকা, উত্তর-পশ্চিম দিকে দ্বারভঙ্গ পর্যন্ত ভাগীরথীর উত্তর সীমান্তবর্তী সমভূমি, পূর্ব দিকে গারো, খাসিয়া, জৈন্তিয়া, ত্রিপুরা, আসাম, চট্টগ্রামের শৈলশ্রেণী বেয়ে দক্ষিনে সমুদ্র পর্যন্ত। পশ্চিমে রাজমহল, সাওঁতাল পরগনা, ছোট নাগপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পশ্চিমবঙ্গের অঞ্চলসমূহ, বিহারের বীরভূম, মানভূম, ধলভূম, কেওজ্ঞর, ময়ুরভজ্ঞের অরণ্যময় মালভূমি, দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর। এই সীমারেখার মধ্যেই প্রাচীন বাংলাদেশের বা বঙ্গের গৌড়, পুন্ড্র, বারেন্দ্র, রাড়, সুহ্ম্র, তাম্রলিপ্ত, সমতট, বঙ্গ, বাঙ্গাল, হরিকল প্রভৃতি জনপদ গড়ে তুলেছিল বঙ্গবাসী বা বাংলাদেশীরা। কোল, ভীল, শবার, পুলিন্দ, হাড়ী, ডোম, চন্ডাল, সাওঁতাল, মুন্ডা, ওরাঁও, ভূমিজ, বাগদী, বাউড়ী, পোদ, মালপাহাড়ী প্রমুখ অস্তজ জনগোষ্ঠির মিলন এবং তাদের রক্তের সাথে বহিরাগত নানা রক্তের ধারা এসে মিশে এক হয়ে সৃষ্টি হয় বঙ্গবাসী অথবা বাংলাদেশী জাতিসত্ত্বার। সময়ের স্রোতে রাষ্ট্র বিধাতাদের হাতে বাংলাদেশীদের আবাসভূমি বাংলাদেশ খন্ড-বিখন্ড হলেও তার ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক সীমারেখা মুছে ফেলতে পারবে না কেউ কোনদিন। রাষ্ট্রীয় সীমারেখা অপরিবর্তনীয় নয়। আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রাচীন বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ জনপদগুলো গড়েছেন। রাষ্ট্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন, জন্ম দিয়েছেন বিস্ময়কর সংস্কৃতি ও শিল্প ঐতিহ্যের। এ ঐতিহ্য আমাদের জাতীয় অধিকার। আজ রাষ্ট্রীয় পরিসীমা এবং জাতীয়তাবাদ নিয়ে গোষ্ঠি স্বার্থে অযথা যতই যুক্তিহীন বিতর্কের অবতারনা করা হোক না কেন, বাংলাদেশের সচেতন জনগণকে বোকা বানিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা সম্ভব হবে না বেশি দিন। তারা তাদের অতীত ঐতিহ্য এবং ন্যায্য অধিকার ভবিষ্যতে একদিন না একদিন আদায় করে ছাড়বেই ইনশাল্লাহ্। পূর্ণ মর্যাদায় একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে প্রকৃত বাংলাদেশ এবং আমরাও বিশ্বের সামনে মাথা উচুঁ করে দাড়াতে সক্ষম হব গর্বিত বাংলাদেশী হিসাবে।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের কোন কোন পর্যায়ে বাংলা ভাষা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে এ কথা সত্যি। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদকে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বললে সেটা হবে বিভিন্ন নরগোষ্ঠির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হাজার বছরের ঐতিহ্যে গড়ে উঠা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের উপর একটি ভাষাগোষ্ঠির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করা। কারণ, বাঙ্গালী কোন নরগোষ্ঠির নাম নয়, ভাষাগোষ্ঠির নাম মাত্র।
বিষয়: বিবিধ
১৮৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন