দাড়িটুপি পরিহিত তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ এবং বোরকা পরিহিতরা নাজেহাল হচ্ছেন ।
লিখেছেন লিখেছেন বিদ্রোহী রণক্লান্ত ০২ জুন, ২০১৩, ০৩:৩২:১৩ দুপুর
: আতঙ্কে দিন কাটছে সারাদেশের তৌহিদী জনতার : মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে পুলিশের বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট : ধর্মের প্রতি সহমর্মী আওয়ামী লীগ সম্পর্কে খারাপ মেসেজ পাচ্ছে মানুষ : বোরকা দাড়িটুপি দেখলেই কিছু পুলিশের গাত্রদাহ
চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। দেশের প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে একই অবস্থা। একদিকে সরকারের জুলুম-নির্যাতন, সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের হামলা এবং পুলিশের মামলা। অন্যদিকে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে পুলিশের অর্থ আদায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে চলছে পুলিশের রমরমা গ্রেফতার বাণিজ্য। ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ (দাড়িটুপি পরিহিত তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ এবং বোরকা পরিহিত পর্দানশীল মহিলা) কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। পুলিশ বাহিনীতে অনেক ধর্মপ্রাণ কর্মকর্তা থাকলেও অধিকাংশের ভূমিকা যেন ১৯ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ শাসনামলে হিন্দু রাজা জমিদারদের অধিনস্ত ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীর মতো। তারা যেমন মুসলমানদের জুলুম-নির্যাতন করে দাবিয়ে রাখত এবং খাজনা আদায় করত অনেকটা সেরকম মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে বাণিজ্য করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে পথে-ঘাটে ধর্মপ্রাণ মুসলমান নারী-পুরুষদের ব্যাগ দেহ তল্লাশির নামে হয়রানি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে টেলিভিশনের টকশোতে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, অজ্ঞাত আসামি থাকতেই পারে। কিন্তু যখন বলা হয়, ৩ হাজার বা ১০ হাজার তখন বুঝতে হবে, এত আসামি নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যমূলক, হয়রানি বা বাণিজ্যের জন্য। বিচার বিভাগের উচিত হাজার হাজার অজ্ঞাত আসামি সংবলিত এফআইআর সন্দেহের চোখে দেখা। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সেক্রেটারি আইনজীবী আদিলুর রহমান খান বলেন, সারাদেশে পুলিশ গণগ্রেফতারের সুযোগ রেখে মামলা দায়ের করছে। এতে করে পুলিশ আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পথ সৃষ্টি করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা পুলিশের সাবেক আইজিপি এএসএম শাহজাহানের মতে, পুলিশ আইনসিদ্ধভাবে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে। কিন্তু এটি যদি অপব্যবহার করে, তা হবে অন্যায়। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন।
দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ চলাফেরা করতে ভয় পায়। কখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নাজেহাল হতে হয় সে আতঙ্কে থাকেন। বাসে, পথে-প্রান্তরে দাড়ি-টুপি পায়জামা পাঞ্জাবি পড়া কাউকে দেখলেই পুলিশ ব্যাগ তল্লাশি করেন। বোরকা পরিহিত মহিলা দেখলেই বোরকা খুলে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যত্রতত্র এভাবে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, পুলিশের আচরণ দেখে তাদের সন্দেহ হয় আসলে এরা স্বাধীন এ দেশে জন্ম নেয়া মানুষ কিনা। যুগ যুগ ধরে সবধর্মের মানুষ একত্রে এদেশে বসবাস করছে। কিন্তু তৌহিদী জনতা এবং ধর্মপ্রাণ মানুষ দেখলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কিছু পুলিশ সদস্যের যেন গাত্রদাহ হয়। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়া ১৮ দলীয় জোটের এক নেতা বললেন, পুলিশের অবস্থা দেখে মনে হয়, হিন্দুস্থানীরা বাংলাদেশে এসে পুলিশের চাকরি করছেন। তা না হলে দাড়ি-টুপি, পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত মানুষ দেখলেই তেড়ে আসবেন কেন? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু সাধারণ ঘরের ধর্মপ্রাণ নারী আর মাদরাসা পড়–য়া মেয়েরাই নয়; কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়–য়া ছাত্রী ও শিক্ষিকা সামাজিক আচার-আচরণ রক্ষার কারণে বোরকা পরতে অভ্যস্ত। তারা কর্মজীবনের বাইরে এখানে-সেখানে ও মার্কেটে গেলে বোরকা পরিধান করে থাকেন। তাদের নানাভাবে হেনস্তা হতে হচ্ছে পুলিশের হাতে। স্কুলের এক শিক্ষিকা জানালেন, শুক্রবার মিরপুর ১০ নম্বরে পুলিশ তার পথরোধ করে। অতঃপর তার বোরকা খুলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে স্কুলের শিক্ষিকা পরিচয় দিলে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় বোরকা পরার কারণ। পরে ছেড়ে দেয়া হলেও মহিলাকে জানানো হয় উপর থেকে বোরকা দেখলেই তল্লাশির করার নির্দেশ রয়েছে। পুরান ঢাকার এক কলেজ শিক্ষিকাও একই বিড়ম্বনার কথা জানান। তিনি বললেন, ১৫/১৬ বছর বয়সী মেয়েকে বোরকা পরার কারণে পুলিশ রীতিমত কৈফিয়ত চায়। শুধু বোরকা পরার অপরাধে (!) ডেমরায় এক মহিলাকে থানায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং শতকরা ৮৮ ভাগ মুসলমানের দেশে এধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় অঞ্চলভেদে মুসলমান পরিবারের মেয়েরা বাইরে বের হলে বোরকা পরিধান করেন। নামাজ-রোজা ইসলাম ধর্মের মূল স্তম্ভের অন্যতম। আর দেশের মসলমান সমাজে নামাজ-রোজা করা বিশেষ করে শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়া এবং রমজানে রোজা রাখার রেওয়াজ শত শত বছর ধরে চলে আসছে। শুধু সাধারণ মুসলিম পরিবার, রাজনৈতিকভাবে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের পরিবার নয়; আওয়ামী লীগের রাজনীতির করেন এমন অনেক নেতার পরিবার নিয়তিম ধর্মকর্ম পালন করে থাকেন। আওয়ামী লীগের শত শত সিনিয়র নেতা ও মাঠপর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়েন। একসময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বর্তমানে গণফোরামের রাজনীতি করেন এমন এক নেতার আত্মীয় জানান, তাদের (ওই নেতার স্ত্রীসহ) পরিবারের মেয়েরা বাড়ির বাইরে খুব কম বের হন। পর্দা ছাড়া তারা চলাফেরা করেন না। আওয়ামী লীগের মোজাফ্ফর হোসেন পল্টুসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং এমপি নামাজ কাজা করেন না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফজরের নামাজ পড়ে প্রতিদিন কর্মদিবস শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর ইসলাম প্রীতির কারণে ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প অব্যাহত রয়েছে। সারাদেশের মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে ৩৮ হাজার কেন্দ্রে আরবি, বাংলাসহ সব ধরনের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের। এসব প্রকল্পে শতকরা ৫ ভাগ মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত ৫ বছরে প্রায় সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে এই প্রকল্পে। অথচ মহাজোট সরকারের শাসনামলে দাড়ি-টুপি আর বোরকা পরিধান করা মহিলা দেখলেই পুলিশের তেড়ে আসা; এবং তল্লাশির করার ঘটনায় ধর্মপ্রাণ মানুষ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভুল মেসেজ পাচ্ছে।
টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়া সবখানে ধর্মপ্রাণ মুসলমান চরম দুর্গতিতে জীবনযাপন করছেন। নানাভাবে হয়রানি, জুলুম-নির্যাতন এবং পুলিশের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকেন। রংপুরের একটি কলেজে দীর্ঘ ২০ বছর থেকে অধ্যাপনা করেন এমন একজন শিক্ষক জানালেন, তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। নিজ দেশে যেন পরবাসী হয়ে রয়েছেন। সময় যেন কাটছে না। একটি দিন তাদের কাছে এক সাপ্তাহ আর সাপ্তাহ যেন মাস। পুলিশের মামলায় জড়ানোর ভয়ভীতিতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন পাক বাহিনীর ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত থাকতেন এখন অনেকটা সেরকমভাবে সময় পার করছেন। তিনি জানালেন, মসজিদে মসজিদে আগে যে তাবলিগ জামায়াত আসত এখন পুলিশের ভয়ে সেটা কমে গেছে। ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার পর তরুণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই তাবলীগ জামায়াতে যেতেন। শিবির হিসেবে পুলিশ হয়রানি করতে পারে সে আশঙ্কায় তাদের মধ্যে তাবলীগে যাওয়ার হার কমে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত চার মাসে সারাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয় ৩৮৬টি। এসব মামলার বাদী পুলিশ। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪২ জনকে। মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৩২ হাজার ৯৬৭ জনকে। এসব মামলার অধিকাংশতেই ১০ থেকে ১ হাজার আসামি করা হলেও কয়েকজনের নাম দিয়ে বাকি ‘অজ্ঞাত’ উল্লেখ করা হয়। এই অজ্ঞাত আসামির ফাঁদে ফেলে পুলিশ সাধারণ মানুষকে মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। দাড়ি-টুপিওয়ালার পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষকে রাস্তা থেকে সন্দেহজনকভাবে আটক করে থানায় নেয়া হচ্ছে। অতঃপর শুরু হয় টাকা আদায়ের কৌশল প্রয়োগ। চাহিদামত টাকা আদায় হলেই খালাস। আর টাকা না দিলে আদালতে চালান। ‘অজ্ঞাত’ আসামির তালিকায় জড়ানো হচ্ছে মামলায়। ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল এলাকার অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী এজাজুর রহমান (১৮) পুলিশের এমনই গ্রেফতার বাণিজ্যের শিকার হন। আটকের পর তাকে বলা হয় টাকা দিতে হবে। নইলে নাশকতাকারী হিসেবে চালান দেয়া হবে। আসামি করা হবে বিস্ফোরক ও বোমাবাজির মামলায়। আর বাড়াবাড়ি করলে পুলিশের ওপর হামলাকারী জঙ্গি গ্রুপের তকমা লাগিয়ে দেয়া হবে। এমন হুমকির পর তিনি ৪৫শ’ টাকা দিয়ে ছাড়া পান। তিন মাসে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ২৮টি মামলায় ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১২০০ জনের নাম উল্লে¬খ আছে এবং গ্রেফতার মাত্র ৩৩ জন। এর মধ্যেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। স্থানীয় থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে বেলকা বাজারের পরিবহন ব্যবসায়ী আনিছুর রহমানকে কাপড়ের দোকান ভাঙচুরের একটি মামলায় আসামি করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো দলের লোক নন। গত ২২ মার্চ রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলায় আসামি করা হয় এনামুল হককে। এনামুল বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে স্ত্রীকে তালাক দেই। ওই ঘটনা পুঁজি করে রাজপাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার শরিফুল হক আমাকে জামায়াত-কর্মী আখ্যা দিয়ে মামলার আসামি করেন। ১১ মার্চ হরতালের আগের রাতে তারেক নামের এক যুবককে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আটক করে লালমাটিয়ার ডি-ব্ল-ক থেকে। আটকের পর পুলিশ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে ১০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। গত দু’মাসে হরতালে নাশকতায় পল্ল¬বী থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। একইভাবে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্ল¬বী, সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অর্ধশতাধিক মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জামায়াত-শিবির ও হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের তালিকা তৈরি এবং নানা অযুহাতে দেশব্যাপী গ্রেফতার অভিযান চলছে। রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের অভিযানে সাধারণ মানুষ, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, মুসুল্লী এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কোনো ধরনের জবাবদিহিতা না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিথ্যা মামলায় লোকজনকে আটক করে মোটা অংকের উৎকোচ নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে পূর্বশত্রুতার জের ও রাজনৈতিক বিরোধে ফায়াদা হাসিলের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহজেই ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আদালত ও থানা পুলিশ এবং ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কারাগারের সামনে প্রতিদিন এধরনের মামলায় আটক হওয়া স্বজনদের ভিড় বাড়ছে। জানা যায়, ৫ মে হেফাজতের সমাবেশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় লক্ষাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মতিঝিল, পল্টন ও শাহবাগ থানায় ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় হেফাজতে ইসলামের মহাসচবি মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ৩১ দিনের রিমান্ডে আনা নেয় পুলিশ। তিন মামলায় ২২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে তাকে হত্যা মামলায় ৯ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। পরে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যুর শঙ্কা দেখা দিলে ফোন করে তার সংগঠনের নেতাদের আদালতের গিয়ে জামিনের আবেদন করতে বলা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় বাতিলের দাবিতে সহিংসতার পর বগুড়া, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে সংঘটিতসহ বিভিন্ন ঘটনার ৮৭ মামলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে নাম উল্লে¬খ আছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। আটক দেখানো হয়েছে ৩৪০ জনকে। কিন্তু মাঠের চিত্র ভিন্ন। আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি পুলিশের সোর্স নামধারী চক্র, থানাকেন্দ্রিক দালালরা চষে বেড়াচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আসামি করার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না পেলে আসামির তালিকায় নাম দেয়া হচ্ছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্থানে শাসক দলের তৃণমূল নেতারা পুলিশের কাছে আসামিদের তালিকা দিচ্ছেন। আসামিদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে পুলিশ ক্ষমতাসীন দল ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ওপর নির্ভর করছেন। এতে করে ব্যক্তিগত শত্রুতার বদলা নিতেও অনেকের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কক্সবাজারে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে সাঈদী মুক্তি পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে গুলিবর্ষণের সহিংস ঘটনায় কয়েকটি থানায় ৬টি মামলায় অজ্ঞাত অন্তত ১০ হাজার জনকে আসামি করে মামলা হয়। পুলিশ এসব মামলায় গণগ্রেফতার ও হয়রানি করে ওই এলাকার মানুষকে। মামলা দায়েরের পর থেকে এলাকাগুলো পুরুষশূন্য হয়ে যায়। গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। সারাদেশে প্রায় একই অবস্থা বিরাজ করছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুযায়ী বিচারকের অনুমতি নিয়ে তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তার হেফাজতে নিতে পারবে। আইনের এ ধারার সুযোগেই পুলিশ আসামিকে হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন চালায়। কিন্তু পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় যেন কোনো অভিযুক্তকে নির্যাতন করা না হয়, সেজন্য হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দেন ২০০৩ সালে। ‘ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ’ মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রিমান্ড মঞ্জুরের আগে এবং রিমান্ড থেকে ফেরার পর নিম্ন আদালতকে মেডিকেল রিপোর্ট পরীক্ষা করতে হবে। অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর তার আত্মীয়স্বজনদের খবর দিতে হবে। অভিযুক্তকে কথা বলতে দিতে হবে তার নিযুক্ত আইনজীবীর সাথে। আইনজীবীর উপস্থিতিতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া এমন একটি ঘরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে, যেখানে বাইরে থেকে অভিযুক্তকে দেখা যাবে। কিন্তু পুলিশ উচ্চ আদালতের এ নির্দেশ মানছে না। নিম্ন আদালতও রিমান্ড মঞ্জুরের আগে ও রিমান্ড থেকে ফেরার পর মেডিকেল রিপোর্ট দেখছে না। গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে থানার সবচেয়ে কাছের আদালতে হাজির করার নির্দেশনা আইনে থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। একজন প্রখ্যাত আইনজীবী বর্তমান পুলিশের য্দ্ধুংদেহী আচরণ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতেই পুলিশের কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি এমন কা- করছেন। এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। তাদের জামায়াত-শিবিরের মামলায় জড়ানোর ভয় দেখানোর কৌশল গ্রহণ করায় গোটা দেশকে অস্থিরাবস্থা বিরাজ করছে। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকারের সময় এধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীতে যারা চাকরি করেন তারা এদেশের সন্তান। তাদের পরিবার আত্মীয়-স্বজন এদেশেই বসবাস করেন। দেশের কৃষ্টি কালচার এবং ধর্মীয় অনুভূতি থেকে তারা দূরে নয়। কিন্তু কিছু কিছু পুলিশ সদস্যের মামলায় জড়িয়ে অর্থ বাণিজ্য সরকার ও গোটা পুলিশ বাহিনীর ইমেজ নষ্ট করছে। দেশের স্বার্থেই পুলিশ বাহিনীর ইমেজ রক্ষা করা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নৈতিক দায়িত্ব ।
বিষয়: বিবিধ
১২৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন