রিমান্ডে নির্যাতন বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে শুধুই চেয়ে থাকেন আল্লামা বাবুনগরী ।।

লিখেছেন লিখেছেন বিদ্রোহী রণক্লান্ত ৩১ মে, ২০১৩, ০৫:১০:১৬ সকাল



রিমান্ডে নির্মম নির্যাতনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে শুধুই চেয়ে থাকেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। স্বজনেরা জানতে চাইলেই মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলছেন। আর উপরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে দোয়া করতে বলছেন তিনি। আইসিইউ’র প্রধান সহকারী ডা. আরিফুল হাসান জানিয়েছেন বাবুনগরীর অবস্থা এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। সুস্থ হতে বেশ সময় লেগে যাবে। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি বুধবারের তুলনায় স্বাস্থ্যের অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। এখনও তিনি শঙ্কামুক্ত নন। রিমান্ডে অবর্ণনীয় নির্যাতনের পর এখন বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন এই ইসলামী ব্যক্তিত্ব। স্বজন ও হেফাজত কর্মীরা জানিয়েছেন, বাবুনগরীর অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত আছে। তাকে লাইফ সাপোর্টেই রাখা হয়েছে। কোন কিছু জানতে চাইলে তিনি শুধু মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলছেন। আর উপরের দিকে তাকিয়ে সকলকে দোয়া করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। পায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ডান পা প্লাস্টার করা আছে। আর বাম পায়ের পুরোটা জুড়েই কালো কালো আঘাতের দাগ রয়েছে। আঙুল থেকে পুরো পা ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে।

ডান পায়ে আঘাতের বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুনগরীর এক ঘনিষ্ঠজন জানান, প্রথম দিকে রিমান্ডে নেয়ার পর আমি তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সে সময় তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। ওষুধ কিংবা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছিলেন ডিবি কার্যালয়ে চিকিৎসক ও ওষুধের ব্যবস্থা থাকলেও তারা আমাকে কিছুই দিচ্ছে না। এরপর আমি তাকে নিজে থেকে ওষুধ কিনে দিয়েছিলাম। এর কিছুদিন পর যখন আবার দেখা করতে যাই তখন দেখলাম তিনি একা একা হাঁটতে পারছেন না। দু’জন মানুষের ওপর ভর করে হাঁটছেন। আমি তার সাথে দেখা করতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আমার সাথে এবং তার সাথে খুব খারাপ আচরণ করে। সেদিন তিনি আমার সাথে কি যেন বলতে চাইছিলেন। আর আদালতে যখন তোলা হয় তখন তো তাকে অসুস্থ অবস্থায় জোর করে ওঠানামা করানো হয়েছে।

বাবুনগরীর ভাগ্নে সাহাবুদ্দিন বলেন, চিকিৎসা চলছে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। ডাক্তাররা মাঝে মাঝে আশার বাণী শোনাচ্ছেন। কিন্তু মামার অবস্থার তেমন উন্নতি এখনও হয়নি। তিনি বলেন, ডাক্তাররা জানিয়েছেন, যে অবস্থা তাতে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে না। কিছুটা সময় লাগবে।

বাবুনগরীর জামাতা মাওলানা আবদুল্লাহ জানান, অবস্থা খুব একটা উন্নতি হয়নি। তবে আজকে (গতকাল) কথা বলেছেন। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। আইসিইউ’তে বাবুনগরীর সাথে দেখা করে আসা মাওলানা আলতাফ হোসাইন জানান, অবস্থা কখনও কিছুটা উন্নতি মনে হচ্ছে আবার কখনও অবনতি মনে হচ্ছে। তবে আজ (গতকাল) তার কথা শুনে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তিনি যেভাবে কথা বলছেন তা অস্বাভাবিক। তার মানসিক কিছুটা সমস্যা হয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া দেশবাসীর কাছে তিনি দোয়া চেয়েছেন।

চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, তার প্রেসার গতকাল বেড়ে গিয়েছিলো। রাতে তাকে ডায়ালোসিস দেয়া হয়। এদিকে গতকাল দুপুরে হেফাজত মহাসচিবের চিকিৎসার বিষয়ে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং-এ আইসিইউ’র প্রধান সহকারী পরিচালক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফুল হাসান বলেন, বাবুনগরীর অবস্থা এখন অনেকটা ভালো। তাকে নিয়ে আশঙ্কার তেমন কিছু নেই। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাবুনগরীর পায়ের আঘাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এই আঘাত রিমান্ডের না। এটি সমাবেশের দিনে তিনি পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছিলেন। তবে ডা. আরিফুল হাসান আশ্বস্ত করলেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না বাবুনগরীর পরিবারের স্বজনেরা। স্বজনদের দাবি হেফাজত মহাসচিবের স্বাস্থ্যের অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। তেমন কোন উন্নতি হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন বাবুনগরী সুস্থ হলেও তিনি আর আগের মতো স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবেন না। তিনি রিমান্ডে নির্যাতনে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছেন। যা আর কখনও তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না। এদিকে গতকাল বারডেম হাসপাতালের আইসিইউ কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে দেখা যায় সকাল থেকে রাত অবধি অসংখ্য মানুষ বাবুনগরীর সাথে দেখা করতে আসছেন। নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকায় স্বজন ও খুব কাছের কাউকে ছাড়া ভেতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও সাধারণ মানুষরা ভিড় জমিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। সবার আগ্রহ কেমন আছেন বাবুনগরী? ভেতর থেকে কেউ বের হলেই তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করছেন কেমন আছেন তিনি। মোহাম্মদপুর থেকে আসা ফল বিক্রেতা বেলাল হোসেনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পত্রিকা পড়ে জানতে পারলাম হেফাজতের হুজুর অসুস্থ। তাই তাকে দেখতে এসেছি। ভেতরে যাওয়া যাবে না শুনেও তিনি সেখানে দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন বলে জানান।

গত ৬ মে গ্রেফতারের পর দুই দফায় ৩১ দিন পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবুনগরীর সমস্ত শরীরে কালো দাগ, পায়ে পচন ও ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। রিমান্ডে তার ওপর অমানবিক-বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। নির্যাতনে পায়ে খতের সৃষ্টি এবং অপারেশনের পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত আইসিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে গত বুধবার তাকে তড়িঘড়ি করে জামিনও দেয়া হয়।

বাবু নগরীর কিছু হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ

সিলেট অফিস : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত আমীর মাওলানা নেজাম উদ্দীন বলেন, মিথ্যা মামলায় রিমান্ডের নামে বর্বরোচিত নির্যাতন করে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবু নগরীর জীবন আজ সংকটাপন্ন। একজন হক্কানে আলেমও আজ সরকারের হিংস্র নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। বাবু নগরী আন্দোলন করেছিলেন ঈমান ও ইসলাম রক্ষার জন্য। একজন নিবেদিত প্রাণ ধর্ম গুরুকে এভাবে নির্যাতন করার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আছে কি না সন্দেহ? যদি বাবু নগরীর অনাকাক্সিক্ষত কিছু হয়ে যায় তাহলে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় নগরীর লালদিঘীরপারস্থ জেলা কার্যালয়ে সিলেট জেলা খেলাফত মজলিস আয়োজিত ‘দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট কওমী মাদরাসা ও উলামায়ে কেরামের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন।

জেলা সভাপতি মাওলানা রেজাউল করিম জালালীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালি’মের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বাছিত বরকতপুরী, মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আতাউর রহমান পীর, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লে: কর্নেল অব. সৈয়দ আলী আহমদ, গহরপুর মাদরাসার মুহতামীম মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহানগর সভাপতি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, যুক্তরাজ্য খেলাফত মজলিসের যুগ্ম সেক্রেটারী আলহাজ আতাউর রহমান, বিশিষ্ট সমাজসেবক খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির।

অসুস্থ বাবুনগরীকে দেখতে হাসপাতালে ইসলামী নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার : হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ শিক্ষক হেফাজতের মহাসচিব অসুস্থ জুনায়েদ বাবুনগরীকে গতকাল বিকেলে বারডেম হাসপাতালে দেখতে যান ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিবসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। চিকিৎসায় বিঘœতার আশংকায় ডাক্তারগণ বাবুনগরীর কাছে কাউকে যেতে না দেয়ায় নেতৃবৃন্দ বাবুনগরীর জামাতা মাও. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র কাছ থেকে বাবুনগরীর স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। তিনি জানান, বাবুনগরীর অবস্থা সামান্য উন্নতির দিকে। পরে নেতৃবৃন্দ আল্লামা জুরায়েদ বাবুনগরীর পূর্ণ রোগমুক্তির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন।

এসময় অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মাও. ইমতিয়াজ আলম, মাও. আহমদ আবদুল কাইয়ুম ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম।

নেজামে ইসলাম পার্টি

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব অসুস্থ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বারডেম হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন নেজামে ইসলাম পার্টির প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন মাওলানা আব্দুল রশিদ মজুমদার, অধ্যাপক আবদুল করীম, মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা ডা. শওকত আমীন, অধ্যাপক এহতেশাম সারোয়ার, মাওলানা ইসমাঈল বোখারী, মাওলানা ইলিয়াস আতহারী। নেতৃবৃন্দ আল্লামা বাবুনগরীর সুস্থতা কামনা করে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করেন।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File