শহীদ জিয়ার ৩২ তম শাহাদত বার্ষিকীতে শ্রদ্ধান্জলী ।

লিখেছেন লিখেছেন বিদ্রোহী রণক্লান্ত ৩০ মে, ২০১৩, ০৫:১২:৫৮ সকাল







প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি

ক. জিয়াউর রহমান। ডাক নাম: কমল। জন্মঃ ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। কোন বোন নেই।

খ. পিতামহ: মৌলভী কামাল উদ্দীন। পিতামহী মিসিরন নেসা। মাতামহ: জলপাইগুড়ির বিখ্যাত ‘টি ফ্যামিলি’র জনাব আবুল কাশেম। মাতামহী: রহিমা খাতুন। বাবা: জনাব মনসুর রহমান। মা: জাহানারা খাতুন ওরফে রাণী। সাত ভাই দুই বোনের মধ্যে জনাব মনসুর রহমান ছিলেন মৌলভী কামাল উদ্দীন-এর পঞ্চম পুত্র।

গ. স্থায়ী নিবাস বগুড়া জেলার বাগবাড়ি গ্রাম।

ঘ. জনাব মনসুর রহমান ছিলেন একজন কেমিষ্ট। ১৯৪৭ সালের আগে কলকাতায় এবং দেশ বিভাগের পর করাচীতে চাকরি উপলক্ষে বাস করেন। মা জাহানারা খাতুন ওরফে রাণী ছিলেন একাšভাবে একজন গৃহিণী। এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সঙ্গীত শিল্পী। প্রধানত গাইতেন নজরুল সঙ্গীত। করাচী বেতারে এক সময় প্রায় নিয়মিত সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে অনুষ্ঠান করতেন। বাবা-মা দুজনেই পরলোকগত।

ঙ. জিয়াউর রহমানের স্কুল জীবন শুরু হয় কলকাতায় ‘হেয়ার স্কুলে’। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় প্রায় দু’বছর বগুড়ার গ্রামের স্কুলে পড়াশুনা করেন। ছাত্রজীবনে তাঁর ইচ্ছা ছিল ভবিষ্যতে ডাক্তার হবেন। ১৯৫২ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন ‘করাচী একাডেমী স্কুল’ (বর্তমানে তাইয়েব আলী আলভী একাডেমী) থেকে। ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই তিনি এই স্কুলে ভর্তি হন। ম্যাট্রিক পাশের পর তিনি ভর্তি হন করাচীর ‘ডি,জে কলেজে’। ১৯৫৩ সালে ‘পাকি¯ান সামরিক একাডেমী’তে একজন অফিসার ক্যাডেট হিসেবে তিনি ‘কমান্ডো ট্রেনিং’ও লাভ করেন। এছাড়া, তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ প্যারাট্রূপার। বিদেশে তিনি উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

চ. ১৯৬৩ সাল থেকে বেশ কয়েক মাস তিনি চাকরি করেন ডিএফআই অর্থাৎ ‘সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে’।১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি ছিলেন ‘খেমকারান’ রণাঙ্গনের ‘বেদিয়ান’-এ যুদ্ধরত ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’-এর একটি ব্যাট্যালিয়নের কো¤ক্সানি কমান্ডার। তাঁর কো¤ক্সানির নাম ছিল ‘আলফা কো¤ক্সানি’। এই ব্যাট্যালিয়ন এবং জিয়া’র আলফা কো¤ক্সানি যুদ্ধে প্রচুর বীরত্ব দেখায়। অর্জন করে প্রভত সুনাম। একজন বীর, বুদ্ধিমান ও অমিততেজী সেনানায়ক হিসেবে জিয়া সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এই ব্যাট্যালিয়ন পুরস্কার লাভ করেছিল পাক সেনাবাহিনীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক বীরত্ব পদক। ব্যাট্যালিয়নের পুরস্কার বিজয়ী কো¤ক্সানি ছিল জিয়া’র আলফা কো¤ক্সানি।

ছ. ১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি ‘পাকিস্তান সামরিক একাডেমী’তে একজন প্রশিক্ষকের দায়িত্ব লাভ করেন।

জ. ১৯৬৯ সালের এপ্রিলে জিয়াউর রহমান ঢাকার অদরে জয়দেবপুর সাব-ক্যান্টনমেন্টে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাট্যালিয়নে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্যে তিনি চার মাসের মেয়াদে পশ্চিম জার্মানী যান।

ঝ. ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে জিয়াউর রহমানকে চট্রগ্রামে বদলী করা হয়। নিযুক্ত হন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাট্যালিয়নে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। এই অষ্টম ব্যাট্যালিয়ন ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তরুণতম ব্যাট্যালিয়ন। চট্টগ্রামে জিয়া ব্যস্ত ছিলেন এই ব্যাট্যালিয়নকে গড়ে তোলার কাজে। এর ঘাঁটি ছিল ষোলশহর বাজারে।

ঞ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতের পর তাঁর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও বিডিআর-এর জোয়ানরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ২৬/২৭ মার্চ কালুরঘাট ট্রান্সমিটিং সেন্টার থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

ট. স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান প্রথমে ১নং সেক্টর কমান্ডার এবং পরে ছিলেন “জেড ফোর্স”-এর অধিনায়ক। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর নিযুক্ত হন কুমিল্লার ব্রিগেড কমান্ডার। ১৯৭২ সালের জুন মাসে নিযুক্ত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীফ-অব-স্টাফ।

ঠ. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর্যায়ে সে বছর ২৫ আগস্ট তাকে সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে স্বল্পস্থায়ী অভ্যুত্থানের সময় জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। বঙ্গভবনে গৃহবন্দি করে রাখা হয় প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদকে। এ পর্যায়ে বিচারপতি সায়েমের কাছে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার হস্তান্তর করে খন্দকার মোশতাক আহমদ পদত্যাগ করেন। ৭ নভেম্বর ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানকারীরা পরাভূত হয়, খালেদ ও তার কয়েকজন সঙ্গী নিহত হন; দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়, বন্দিত্ব থেকে মুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান জিয়াউর রহমানকে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন।

ড. ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছ থেকে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর ৪০ দিন পর অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’-এর মাধ্যমে আস্থা ভোট। শতকরা ৯৯ ভাগ ‘হ্যাঁ’ভোট তিনি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালের ৩ জুনে বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের ঐক্যমোর্চা “গণতাšিক ঐক্যজোট” (গজ)-এর মনোনীত প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এম এ জি ওসমানী। জিয়া’র কাছে তিনি এক কোটি দশ লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

ঢ. প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তাঁর অনুপ্রেরণায় গঠিত হয় “জাতীয়তাবাদী গণতাšিক দল” (জাগদল)। পরে আরও কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় “জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট”। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বিভিন্ন দলের মোর্চা এই ফ্রন্ট “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল” নামে একটি একক রাজনৈতিক দল হিসেবে আতœপ্রকাশ করে। জিয়াউর রহমান নির্বাচিত হন দলের চেয়ারম্যান। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি বা ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করে। প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে রায় গ্রহণ ছিল বিএনপি-র একটি অন্যতম নির্বাচনী ইস্যু। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি-র পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে ১৯ দফা কর্মসচি পেশ করেন।

ণ. দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপযোগী পরিবর্তন এবং জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়া তাঁর ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসচির প্রেক্ষাপটে দেশে “শাšিপর্ণ বিপ্লবের” ডাক দেন এবং পর্যায়ক্রমে বিপ্লবের কর্মসচি বা¯বায়ন শুরু করেন।

ত. আšর্জাতিক দরবারে বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক আসনে সমাসীন করা এবং তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে বাংলাদেশের ভূমিকাকে অর্থবহ করে তোলার জন্যে প্রেসিডেন্ট জিয়া নিরলস ও অভূতপর্ব ভূমিকা পালন করে গেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি লন্ডন ও লুসাকায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ রাষ্ট্রপ্রধানদের আঞ্চলিক সম্মেলন; কলম্বোয় অনুষ্ঠিত জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলন; মক্কায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনসহ বিভিন্ন সম্মেলনে যোগ দেন এবং গুরুত্বপর্ণ কার্যকর অবদান রাখেন। পৃথিবীর ৩০টিরও বেশি দেশে তিনি রাষ্ট্রীয় সফর করেন। ১৯৮০ সালে জাতিসংঘের বিশেষ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন। ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে তৃতীয় ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে তিন সদস্য বিশিষ্ট “আল-কুদ্স” কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ইরাক-ইরান যুদ্ধাবসানের উদ্দেশ্যে গঠিত নয় সদস্যবিশিষ্ট ইসলামী শাšি মিশনের তিনি ছিলেন গুরুত্বপর্ণ সদস্য। মিশনের কাজে তিনি এককভাবেও ইরাক ও ইরান সফর করেন।

থ. ১৯৮১ সালের ২৯ মে দিবাগত রাতে ৩০ মে সোবেহ্সাদেকের আগে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কুচক্রীর হাতে তিনি নিহত হন।

বিষয়: বিবিধ

১৮০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File