আওয়ামীলীগারের ছেলেরা যদি শিবির করে তাহলে দায় কার?

লিখেছেন লিখেছেন বিদ্রোহী রণক্লান্ত ২৫ মে, ২০১৩, ০৫:১৯:৪৫ বিকাল



শিবির কর্মী সন্দেহে আটক একজনকে ছাড়িয়ে নিতে পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের পাশাপাশি হাতাহাতি করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগ-ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এসময় হাসান মুরাদ বিপ্লব নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতেও দেখা গেছে।

বুধবার দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় এ ঘটনার পর শিবির কর্মী সন্দেহে আটক একজনকে পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা সবাই নগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

পাঁচলাইশ থানায় পুলিশের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনার সময় সেখানে হাসান মুরাদ বিপ্লব ছাড়াও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য আব্দুল মান্নান ফেরদৌস, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিদারুল আলম, নগর ছাত্রলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন, কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ওসমান গণিকে দেখা গেছে। হাসান ‍মুরাদ বিপ্লব নগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক সদস্য।

শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার সামনে কিং অব চিটাগং নামে একটি কমিউনিটি সেন্টারে সদ্য এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে শিবির কর্মী সন্দেহে কমপক্ষে ৪০ জনকে আটক করে পুলিশ।

থানায় অবস্থান করে দেখা গেছে, দুপুর ১টার দিকে দিদারুল আলম নামে একজন থানায় ঢুকে নিজেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে উচ্চস্বরে আটক একজনের নাম উল্লেখ করে তাকে থানায় আনা হয়েছে কেন জানতে চান। এসময় তিনি নির্দেশের ভঙ্গিতে অবিলম্বে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ওসি’র উপর চাপ সৃষ্টি করেন।

ওসি প্রদীপ কুমার দাশ আটককৃতদের যাচাই বাছাই করা হচ্ছে বলে দিদারুল আলমকে জানালে তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওসি’র সঙ্গে বাকবিতন্ডা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি ওসি’র দিকে তেড়ে যাবারও চেষ্টা করেন। এসময় ওসি’র বডিগার্ড দিদারুল আলমকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। ওসি’র নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা দিদারুল আলমকে ডিউটি অফিসারের রুমে নিয়ে বসিয়ে রাখেন।

এসময় দিদারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের পটিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মফজল ভাইয়ের ছেলেকে ধরে এনেছে শুনে আমি থানায় এসেছি। সে আমার ভাতিজা। এবার মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছে। আমি থানায় আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আমার গায়ে হাত দেয়। বিএনপি-জামায়াতের আমলেও আমরা কোনদিন পুলিশের কাছ থেকে এমন আচরণ পাইনি।’

আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে কি শিবির করতে পারেনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নিরুত্তর থাকেন নিজেকে সরকারী কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পরিচয় দেয়া দিদারুল আলম।

এদিকে দিদারুল আলমকে আটকে রাখার পর থেকে নগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থক নেতাকর্মীরা থানার সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। দুপুর দেড়টার দিকে এক যুবক নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে থানা কম্পাউন্ডে ঢুকতে চাইলে ফটকে দাঁড়ানো কনস্টেবলরা তাকে বাধা দেয়। এসময় ওই যুবক এক কনস্টেবলের উপর চড়াও হয়ে তার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন কনস্টেবল তাকে ধরে পিটুনি দিয়ে থানা হাজতের পাশের একটি রুমে আটক করে রাখে। এসময় কনস্টেবলরা তার মোবাইল ফোন নিয়ে ডিউটি অফিসারের কাছে জমা রাখে।

পরে ওই যুবক সাংবাদিকদের জানান, তার নাম ওসমান গণি। তিনি নগরীর বাকলিয়ায় কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটের সাবেক সহ-সভাপতি। এছাড়া তথ্য ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের চট্টগ্রাম শাখার যুগ্ম সম্পাদক।

ওসমান গণি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে আসিনি। তথ্য ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘটনা দেখতে থানায় এসেছিলাম। পুলিশ আমাকে পিটিয়ে আমার মোবাইল কেড়ে নিয়েছে।’

দুপুর ২টার দিকে অনুসারীদের নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে থানায় আসেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসান মুরাদ বিপ্লব ও যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নান ফেরদৌস। তাদের সঙ্গে ‍আসা অনুসারী নেতাকর্মীরা মিলে পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দিয়ে হইচই করতে করতে থানা কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়ে।

থানায় ঢুকেই চীৎকার, চেঁচামেচি এবং পুলিশকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন যুবলীগ-ছাত্রলীগের এসব নেতাকর্মী। বিপ্লব, হেলাল এবং আব্দুল মান্নান ফেরদৌস শুরুতেই হাজতখানার সামনে উপ-পরিদর্শকদের রুমে গিয়ে ওসমান গণিকে ছিনিয়ে নেন। ডিউটি অফিসারের কক্ষ থেকে দিদারুল আলম পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দ্রুত বের হয়ে চলে আসেন।

এরপর হাসান মুরাদ বিপ্লব, দিদারুল আলম এবং আব্দুল মান্নান ফেরদৌস হট্টগোল করতে করতে ওসি’র রুমে ঢুকে যান। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ তাদের দেখে চেয়ার ছেড়ে বাইরে বের হয়ে যেতে চাইলে বিপ্লব তাকে হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দেন। এরপর ওসি’র বডিগার্ড দরজা বন্ধ করে দেন এবং সাংবাদিকরা ঢুকতে চাইলেও তাদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে বাইরে থেকে ওসি’র কক্ষে চীৎকার, চেঁচামেচি শোনা গেছে।

এর মধ্যে থানার সামনে জড়ো হওয়া সবাইকে পুলিশ সদস্যরা সরিয়ে দেন। আর যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের দাবিমত পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেসহ কয়েকজনকে ছেড়ে দেন।

এদিকে প্রায় আধাঘণ্টা পর ওসি’র কক্ষ থেকে বের হয়ে হাসান মুরাদ বিপ্লব উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। শিবির ধরলে আমাদের তো কোন আপত্তি নেই। কিন্তু একজন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকেও ধরে এনেছে বলে আমরা এসেছিলাম।’

পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট নাশকতার অভিযোগে আমরা শিবির কর্মী সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এসময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের কয়েকজন নেতা এসে আটক হওয়া কয়েকজনকে ছেড়ে দিতে আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি শুরু করেন। কয়েকজন আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেছেন। অবশ্য পরে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন।





বিষয়: বিবিধ

২২৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File