ডালমে কুচ কুচ কালা নেহি, পুরা ডালই কালা হ্যায় !

লিখেছেন লিখেছেন বিদ্রোহী রণক্লান্ত ১৪ মে, ২০১৩, ০১:৪২:২৫ রাত



সংবাদ সম্মেলনটি ডাকা হয়েছিল সাভারের আলোচিত গার্মেন্ট শ্রমিক রেশমাকে নিয়ে। ধারণা করা হয়েছিল, রেশমাকে উদ্ধার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব কথাবার্তা প্রচারিত হচ্ছে সেখানে তার জবাব মিলবে। কিন্তু তা আর হলো না। রেশমা অথবা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর মিলল না বরং সংবাদ সম্মেলনে রেশমার উদ্ধারকাহিনী নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হলো।

গতকাল বেলা ১টার দিকে রেশমার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরা এবং তার বেঁচে যাওয়ার কাহিনী শোনানোর জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএইচএম) সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করা হয়। সেখানেই চিকিত্সাধীন আছেন রেশমা।

তবে সংবাদ সম্মেলন হলেও সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। অর্ধশতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত হলেও প্রশ্ন করার সুযোগ পায় আগেই বাছাই করা মাত্র তিনজন সাংবাদিক।

তবে বেলা ১টায় সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও বিকাল ৩টা পর্যন্ত আবদুর রউফ গেটে অর্ধশতাধিক সাংবাদিককে অপেক্ষায় রাখা হয়। এরপর তিন দফা সময় পরিবর্তন করা হয়। শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলনের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় বিকাল ৫টা।

তবে বিকাল ৩টায় সিএমএইচের সামনে খোলা মাঠে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মেজর মো. তৌহিদ-উজ জামান সাংবাদিকদের কাছ থেকে কে কোন প্রশ্ন করবেন তার তালিকা তৈরি করেন। মেজর জামান সাংবাদিকদের বারবার সতর্ক করে দেন কেউ একটার বেশি প্রশ্ন করতে পারবেন না। এমনকি বিব্রতকর প্রশ্নও করা যাবে না বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন এত লাশের সারির মধ্যে শুধু রেশমাকে নিয়ে এত তত্পরতা? কেন রেশমাকে স্বাভাবিকভাবে জনসম্মুখে নেয়া হচ্ছে না?

এ প্রশ্নের ব্যাপারে মেজর তৌহিদ-উজ জামান সাংবাদিকদের জানান, এটা খুব ডিফিকাল্ট (কঠিন) প্রশ্ন । এ প্রশ্নের জবাব তিনি সংবাদ সম্মেলনে দিতে পারবেন না। ওই প্রশ্নের জবাব সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখা আইএসপিআর আলাদাভাবে বসে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে জানাবেন। এ ব্যাপারটি জানে শুধু আইএসপিআর।

পরে বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে হুইল চেয়ারে করে সিএমএইচের বারান্দায় রেশমাকে আনা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় রেশমার মা, বাবা বা কোনো আত্মীয়-স্বজনকে আনা হয়নি।

এ সময় রেশমার শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দেন ৭ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ডের প্রধান কর্নেল ডা. আজিজুর রহমান।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রেশমাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় স্যালাইন বাদ দিয়ে তাকে এখন অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেয়া হচ্ছে। সে খুব পাজল বা হতবিহ্বল অবস্থায় রয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর সে ভীত হয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে। এ জন্য তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে। তবে সে এখন খুব ভালো রয়েছে। শিগগিরই তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হবে।

এরপর রেশমা তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তাতে সকালে বাসা থেকে কি করে আসছিল, কাকে কি বলেছে সে বিষয়ে বর্ণনা দেয়।

এ সময় একজন সাংবাদিক ভবনধসের সময়ের ঘটনার বর্ণনা জানতে চাইলে জবাবে সেনা কর্মকর্তাদের পাশে হুইল চেয়ারে রেশমা বলেন, হঠাত্ মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জ্ঞান হারায় সে। এরপর আর কিছু মনে নেই তার। ঠিক কখন জ্ঞান ফিরেছে নিশ্চিত করে তাও তার মনে নেই। তিনি জানান, তিনি কোথায়ও আটকে পড়েননি। তার সামনে চিত্কার চেঁচামেচি করতে করতে অনেকেই মারা গেছেন। সঙ্গে থাকা অনেককেই মৃত অবস্থায় দেখেছেন তিনি।

এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, রেশমা কোথায়, কীভাবে আটকে পড়েছিল? তার সামনে কোনো ফাঁকা জায়গা ছিল কিনা? সে কীভাবে নতুন জামা কাপড় পরল, কোথায় পেল? কি খেয়েছে? যে ৪ পিস বিস্কুট ও পানি খেল তা সে কোথায় পেল, কীভাবে পেল? রেশমা যদি চাপা পড়েই থাকে বা জ্ঞান হারানোর পরে সে মাটিতে শুয়ে থাকে তাহলে তো তার হাতে টিফিন বক্স থাকার কথা নয়।

অতি নিচু কণ্ঠে এসব প্রশ্নের জবাব দেয় রেশমা। কেউ তা শুনতে না পেলেও একজন সেনা কর্মকর্তা লিপসিং করে সাংবাদিকদের জানান, রেশমা তিন তলায় আটকে ছিল, সেখান থেকে সে নিচে এসেছে। হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরেই চলাচল করত সে। মাত্র ৪টি বিস্কুট ও পানি পান করেই পার করে দেন ১৭ দিন।

ওই কর্মকর্তা জানান, দোতলায় থাকা একটি রেডিমেট কাপড়ের দোকানের সামনে একটি বান্ডিল থেকে কাপড় সংগ্রহ করে একাধিকবার পরিধেয় কাপড় পরিবর্তন করেছেন বলেও সাংবাদিকদের জানান তিনি।

রেশমা জানান, একপর্যায়ে উপরের দিক থেকে আলো দেখতে পাওয়ায় নতুন জীবনের আশার সঞ্চার হয় তার। তখন সে বাঁচার আশায় উদ্ধারকর্মীদের কাছে উদ্ধারের আকুতি জানায়। কাছে থাকা একটি পাইপ ভবনের ফুটো দিয়ে উঁচু করলে উদ্ধারকর্মীরা তার কাছে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে যখন রেশমাকে আনা হয় তখন বারবার সেনা কর্মকর্তারা জানান, রেশমা অসুস্থ। সে ভীত হয়ে পড়েছে।

কিন্তু অতটা ভীত মনে হয়নি রেশমাকে। পেছন থেকে তাকে থামানোর জন্য তার ঘাড় ও মাথায় হাত রেখে চাপ দিচ্ছিলেন নার্স আইরিন। যাওয়ার সময় সে হাত নেড়ে সাংবাদিকদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যায় বেশ হাসিখুশি অবস্থায়।

রেশমা জানান, তিনি ৪ পিস বিস্কুট খেয়েছেন, পানি খেয়েছেন, জামা কাপড় পরেছেন। এমনকি তৃতীয় তলায় তার পাশে আটকাপড়া অবস্থায় আরও এক ভাইয়া (শ্রমিক) পানি খেতে চেয়েছিল! পানি না পেয়ে সে মারা যায়।

তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তার সামনে আরও অনেক প্রাণ গেল। সেগুলো উদ্ধারও হলো। কিন্তু ওই সময়ে সে চিত্কার করতে পারল না কেন? ১৭টি দিন ওখানে কি করেছিল? রেশমা জামা কাপড় পরতে পারল ম্যাচিং করে অথচ এই ১৭ দিনেও বাঁচাও বলার ক্ষমতাটাও তার ছিল না? কিন্তু এসব প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি।

১৭ দিনের না খাওয়া মানুষের চোখের সঙ্গে রেশমার চোখের কোনো মিল নেই। তার চোখে কোনো মলিনতাও ধরা পড়েনি। এমনকি সে ভীতও ছিল না।

২৪ তারিখ তাকে উদ্ধারের সময় যে সতেজতা ছিল বরং এখন চোখ, মুখ ও হাত আরও বির্পযস্ত দেখানো হয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

৩৬৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File