সাংবাদিকতার পরিবর্তে নতুন সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১৮ মার্চ, ২০১৩, ০৪:১৯:২৫ বিকাল
আমরা যারা প্রবাসে আছি তাদের জন্য প্রিয় দেশের খবর বার্তা পাওয়ার সোর্স হল, সংবাদ মাধ্যম গুলো। প্রিন্ট মিডিয়া,স্যটালাইট মিডিয়া,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,আর নিজের আহরিত মাধ্যম।
নিজের আহরিত মাধ্যম বলতে আমি বলতে চাচ্ছি আপন আত্মীয়স্বজনের সাথে মোবাইলের মাধমে আলাপচারিতা।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা কিছুদিন আগ পর্যন্ত ও স্যটালাইট মিডিয়াগুলোর উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু গত ৫ তারিখ (ফেব্রুয়ারী) থেকে দেশের চ্যনেলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর উপরই বেশী নির্ভরতা বেড়েছে। যা বলা যায় গানিতিক হারে। শাহবাগের গণজাগরণের সরকারী প্রকল্প এবং ডাক্তার এইচ এম সরকারের নতুন সরকারের আদেশ নিষেধ যে ভাবে আমাদের মুখ চেনা মিডিয়া পিক করেছে। তাতে প্রবাসী সহ দেশের মানুষ আর আস্থায় রাখতে পারছেন না গণমাধ্যমগুলোকে।
আমার আশে পাশের সবাই এখন ফেইসবুক,টুইটার,সামাজিক ব্লগ ইত্যাদিতে আইডি করেছে দেশের বর্তমান খবর জানার জন্য।
তথ্য জানার অদম্য আগ্রহ থেকেই এখন প্রবাসীরা মুলত মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মুলধারার দাবীদার গণমাধ্যমগুলো থেকে।এর জন্য দায়ী কারা? এবং কিভাবে তার কয়েকটি উদাহারণ পেশ করছি কয়েকটি পর্বে।
কেইস নাম্বার এক)
নাম ফয়জুল ইসলাম। লেখাপড়া করেছেন জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনার্স শেষ করে আসতে পারেন নি প্রবাসে। দীর্ঘ দেড় দশক থেকে আছেন সউদি আরবের জেদ্দাতে। প্রথম দিকে অল্প বেতনে চাকুরী করতেন। ২০০১ সালে কফিল পরিবর্তন করে নতুন কোম্পানীতে চাকুরী নিয়েছেন। বেতন সহ সুযোগ সুবিধা ভাল। এক সন্তানের জনক তিনি। চার ভাই বোনের সাথে মা বাবার সংসারের সব দায়ীত্ব জনাব ফয়জূল ইসলাম সাহেবের উপর।
তিনি তার আশে পাশের সবার কাছে প্রিয় এবং রাজনীতি নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। ছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগের সাথে তার উঠাবসা ছিল।প্রবাসে এসে জীবন সংগ্রামে তিনি এখন আর রাজনীতির সাথে কোন যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তবে সউদিতে এসে নতুন করে নামাজ ধরেছেন এটা তার জীবনের একটি বিরাট পাওনা মনে করেন।
আমার সাথে তার সম্পর্ক গত কয়েকদিন হল।গত ২৮ ফেব্রুয়ারীর ঘটনা তাকে আমার সাথে আরো সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছে।২৮ তারিখ তিনি রাতে আমার বাসায় আসেন এবং ফেইসবুকের একটি আইডি করে দিতে দিতে বলেন।জিজ্ঞেস করলাম কেন ভাই, নতুন করে ফেইসবুকের আইডি করছেন।আপনার সময়ই বা কোথায়?
জবাবে বললেন।
আমি চ্যনেল আই এবং বাংলাভিশন এর খবরই দেখতাম। কিন্তু আজকের ২৮ তারিখের খবর যেভাবে পরিবেশন করেছে তাতে এদেরকে আর বিশ্বাস করি না।
এরা সম্মিলিত ভাবে দেশের এত বড় একটি গণজাগরণকে আড়াল করতে চাচ্ছে।ঢাকার সাথে আক্ষরিক অর্থে দেশের বিভিন্ন জেলার কোন সংযোগ ই ছিল না।অথচ এই মিডিয়া হাউসগুলো সেগুলোর কোন গ্রহনযোগ্য কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে জামায়াত শিবিরের উপর চাপিয়ে দেবার নানান কৌশল গ্রহণ করেছে। নুন্যতম সাংবাদিকতার এথিক্স এরা মানতে চাচ্ছে না। এদের খবর পরিবেশনায় রয়েছে পরিকল্পিত একটি উদ্দোগ। তারা চাচ্ছে যে ভাবে ই হউক দেশে একটি গৃহ যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে। আমি এদের কাইকে বিশ্বাস করি না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন আপনার এই চিন্ত? আপনি দেশের সব চ্যনেলের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন?
জবাবে এই প্রবাসী বললেন।
দেখুন আমর পরিবারের একজন কে পুলিশ হত্যা করেছে। তার নাম হারুন। সে আমার দুর সম্পর্কের আত্মীয়। তাকে পুলিশ প্রথমে ধরেছে বড্ডা এলাকা থেকে। সে বড্ডাতেই চাকুরী করতো একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে।জামায়াতের সাথে তার দুরতম কোন সম্পর্ক নেই। তার পরিবার বরং আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে। তার পিতা মাতা বড় ভাই গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়েছে।
অথচ তাকে পুলিশ ধরে পুলিশের গাড়ীতেই গুলি করে পায়ে। তার পর রমনা থানার পাশে ই ফেলে দেয় গাড়ী থেকে। ছেলেটি পড়ে যাবার পর আবার গুলি করে তার বুকে।এবং সেখানেই সে মরে পড়ে থাকে। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে তার পরিবার জানতে পারে তাদের ছেলেকে শিবির করার অপরাধে জনগণ পিঠিয়ে মেরে ফেলে। এবং পুলিশের দেয়া এই তথ্যই হজম করতে হয় তার পরিবারকে।
স্থানীয় সাংবাদিক (চ্যনেল আই,সময় এবং ৭১ টিভি) কে ছেলেটির বড় ভাই চেষ্টা করেছিলেন খবরটা আসল তথ্য প্রচারের। কিন্তু যেহেতু পুলিশ বলেছে শিবির করে তাই তারা সে খবরটা আর দেয় নাই। বরং পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জামায়াত শিবিরের তান্ডবে মারা গেছে বলে পরিবারকে বুঝাতে চায়।
তিনি বললেন,এই সত্যকে অস্বীকার করতে বলছে সুশীলবান্ধব মিডিয়াগুলো। বলুন, আমি কোনটা গ্রহন করবো? আমি কি ভাবে বিশ্বাস করবো এই মিডিয়াগুলো গণমানুষের স্বার্থে কাজ করছে?কিভাবে আস্থার জায়গা তৈরী হবে আমার পরিবারে। যা তারা দেখলো তা সরাসরি অস্বীকার করতে বলছে, এই এক চোখা তথাকথিত মুলধারার মিডিয়া। এবং তা সম্মীলীত প্রয়াসে।
আমি জনাব ফয়জূল ইসলাম সাহেবের বর্ণনা শুনে বললাম এর জন্য কি? ফেইসবুকে একাউন্ট করতে চাচ্ছেন। তিনি বললেন, হ্যা।
বললাম ভাই ফেইসবুকেও তো মেলোডি খবর থাকে। তিনি বললেন তাও আমি জানি।
তবে কিছুটা হলেতো সঠিক খবর পাবো।এখানে সবাইতো অন্ধ বা বিবেকহীন নয়। সত্য ও আসল ঘটনা বর্ণনা তো পাবো।
ভাবলাম হয়তো পাবেন।পেতেও পারেন।
তার একাউন্ট করে দিয়ে বিদায় হলে ভাবছিলাম আমাদের মিডিয়ার এই আচরণ কিভাবে ব্যখ্যা করবো? আগামীতে এই সমস্ত মিডিয়া কি জবাব দিবে গণমানুষের কাছে?
জাতীর প্রতি তাদের নুন্যতম দায়ীত্ববোধের জায়গাটা এদের কবে হবে?
আমরা গণমানুষের মিডিয়া হওয়ার দাবী করি, আসলে কি আমাদের মিডিয়া গুলো সেই দাবী পূরণ করার জন্য নুন্যতম সাংবাদিকতার এথিক্স মেনে চলছে? কি হবে আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলোর এবং সাংবাদ কর্মীর বা সাংবাদিক নেতাদের?
সাধারণ গণমানুষের বিশ্বাসে যে চিড় ধরেছে তা কিভাবে উদ্ধার করা হবে? এই চিন্তা বোধদয় কি হবে না।
আগামী পর্বে কেইস নাম্বার দুই পড়ার আমন্ত্রন রইল
বিষয়: বিবিধ
১৩৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন