নির্বাচন ১৯৭৩ থেকে সিটি নির্বাচন ২০১৫ = তুলনা পিতার সাথে কন্যার।
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৫ মে, ২০১৫, ০২:০২:১৮ দুপুর
এক)
দেশ স্বাধীন হল। পিতা পাকিস্তান থেকে লন্ডন তার পর ভারত হয়ে স্বাধীন বাংলার ক্ষমতার মসনদে। দির্ঘদিনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা তিনি। এবার জনগণের সামনে পরীক্ষা দেবার সময় পিতার। যিনি সারাটি জীবন গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য আন্দোলন করলেন। তিনি ক্ষমতায় থেকে কেমন নির্বাচন করলেন। কেমন ছিল সেই নির্বাচন। স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় নির্বাচন।
আমার নিজের কথা বা অভিজ্ঞতা নয়। অলি আহাদ। বাংলাদেশের সচেতন গণমানুষর কাছে নিজের নামে ই পরিচিত। তার লেখা বহুল পঠিত "জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫"। ৫৬৬ পৃষ্ঠার বইটি বাংলাদেশের রাজনীতি বুঝার জন্য খুবই জরুরী একটি আকর গ্রন্হ।আগামীর নির্মোহ ইতিহাস রচনায় এই বইটি সত্যিকার ঐতিহাসিকদের কাজে লাগবে। বর্তমানের প্রজন্মকে এই বইটি পড়তে বলবো।
কারন - ২০০৯ সালের পর থেকে যে ইতিহাস শিখানো হয়েছে - তাতে আমার অভিজ্ঞতা হল - আমাদের নতুন একটি প্রজন্মকে বিকৃত ইতিহাস শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বর্তমান শিক্ষানীতি ও বামপন্হীদের নাস্তিক হবার প্রকল্প ফলপ্রসু হয়েছে। বিএনপি বা তার সহযাত্রীরা এই বিষয়টা কতটা বিবেচনায় নিয়ে রাজনীতি করেন তা আল্লাহ মালুম।
দুই)
শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের কাছে একজন জাতীয় নেতা। কোন সন্দেহ নেই। এই বিষয়ে কোন দ্বিমতের সুযোগ নেই। কিন্তু শেখ সাহেব মানুষ ছিলেন। তিনি মাঠের রাজনীতিতে যত দক্ষ ছিলেন - ক্ষমতায় বসে তিনি ততটা অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এজন্য শেখ সাহেবের যোগ্য কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পিতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে এত কসরত করতে হচ্ছে। আদালত থেকে শুরু করে নির্বাহী বিভাগকে ব্যবহার করেছেন হাসিনা ওয়াজেদ। এত প্রচেষ্টার পর সকল ক্ষমতা ব্যবহার করে শেখ সাহেবের চরিত্র মেরামত সঠিক ভাবে করতে পেরেছেন? প্রশ্নটা পাঠকের কাছে। তবে মাঝে মধ্যে বর্তমান স্বাধীন আদালতের রায় প্রমান করে এখনো শতভাগ সফল হননি শেখ হাসিনা। আদালতের হাত অনেক লম্বা। অজপাড়াগায়ের বালক বা বালিকা কি লিখলো তার জন্য বিচারপতিরা রায় দিয়ে রিমান্ডে পাঠাচ্ছেন।
আমার মতে শেখ সাহেবকে নিয়ে আগামীতে ইতিহাস সঠিক বিচার করবে। বর্তমানে শেখ হাসিনা যা করছেন - কন্যা হিসাবে তারও বিহীত হবে আগামীতে। এই ক্ষেত্রে দালাল আর ভারতীয় পয়সায় পালিত মিডিয়া আর বাকশালী চেতনার (যা ৭১ এর চেতনা বলা হয়) বুদ্ধিজীবিদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
মানুষ হিসাবে শেখ সাহেবের মানবীয় দুর্বলতা অবশ্যই ছিল। তাকে মানূষত্য থেকে ফেরেশতাতুল্য করে জাতীর সামনে পেশ করার রাষ্ট্রীয় সকল আয়োজনে সমস্যার মূল।
যে নেতার জন্য মানুষ জীবন দিল। সেই নেতার করুণ মূত্যুতে ইন্নালিল্লাহ না পড়ার কারনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। বর্তমান রাজনীতিকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে হলে ৭৫ পূর্ব রাজনীতির সমালোচনা - পর্যালোচনা করতেই হবে। নতুবা আমরা সময় পার করবো - নেতা বদল হবে - প্রজন্ম আসবে। জাতি সেই তিমিরেই রয়ে যাবে।
স্বাধীন হবার পর যে ভুল রাজনীতি শুরু হয়েছিল তার নির্মোহ পর্যালোচনা হওয়া প্রয়োজন। এই প্রয়োজনটা আমাদের জাতি নির্মানের জন্য। প্রয়োজনটা আগামীর জন্য। প্রয়োজনটা ১৭ কোটি মানুষের জন্য। কিছু ভারতীয় দালালরা এই ক্ষেত্রে বড় বাধা। তাদেরকেও চিহিৃত করা এখন সময়ের দাবী। দেশ প্রেমিক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিন)
স্বাধীন দেশের প্রথম নির্বাচনটা কেমন ছিল। আসুন আমরা জাতীয় রাজনীতির দিকপাল জনাব অলি আহাদের জবানীতে জেনে নেই।
"গণপরিষদ ১৯৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর গৃহীত সংবিধানটি সত্যায়ণ করে। গৃহীত এই সংবিধান মোতাবেক ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরিতাপের বিষয় নির্বাচন অবাধও হয় নাই। সুষ্ঠও হয় নাই।
নির্বাচন পরিচালনায় পূর্তগালের সারাজার,স্পেনের ফ্রান্কো আর বাংলাদেশের শেখ মুজিবরের মধ্যে গুণগত কোন পার্থক্য পরিদৃষ্ট হয় নাই। (ঐসময় ঐ দুটি রাষ্ট্রের প্রধানরা বিশ্বময় ফ্যাসিষ্ট শাসনের প্রতিক ছিল। শেখ মুজিব আদর করে নাম রেখেছিলেন বাকশাল।)
১৯৭৩ এর মার্চের এই সাধারণ নির্বাচনে প্রশাসনিক ক্ষমতার মারাত্মক অপব্যবহার, চরম দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ, মিডিয়া ক্যু,দলীয় বাহিনীর যথেচ্ছ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও ঢালাও হুমকির সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন দখল করেন।সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল জঘন্য কারসাজি,কারচুপি আর মিডিয়া ক্যু'র মাধ্যমে উলট-পালট করিয়া তাহাদের অনুকূলে কব্জা করে। আমি যেখানে ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে নিশ্চিত জয়ের পথে তখন বেতার ও টেলিভিশন এর মাধ্যমে আমাকে ১০ হাজার ভোটে পরাজিত ঘোষনা করা হয়।পরে আমি ঢাকায় ফিরে এলে শেখ মুজিব টেলিফোনে আমাকে বলেন - "কিরে অলি আহাদ,ইলেকশনে পাস করলি না?" ইহা দ্বারা সাংবিধানিক গণতন্ত্র,নীতি ও আদর্শ তথা ঘোষিত রাষ্ট্রীয় আদর্শসমুহ লংঘনের জ্বলন্ত উদাহরণ।" জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫। অলি আহাদ। পৃষ্ঠা ৪৬৩- ৪৬৫।
আরো অনেক কথা রয়েছে অর্পিত হাজার বছরের পিতার। নতুন প্রজন্ম শুধু দেখছে বর্তমান আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনার ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার রুপ। কিন্তু এ কথা বলার মানুষ আমার দেশে এখন অনেক কমে এসেছে। " আওয়ামীলীগ দল,নেতা,প্রধান হিসাবে তুলনা বাংলাদেশে আর কেউ নেই। তারা একজন আরেকজনের ই তুলনা। এই জায়গায় বড় মিল। পিতার বাকশাল - তার তুলনায় শুধু - কন্যার ডিজিটাল বাকশাল।
জনাব অলি আহাদের বইটি পড়ুন। হাজার বছরের পিতার শাসন আমল আর বর্তমান গনতন্ত্রের মানষকন্যার? শাসন মুদ্রার এপিট আর ওপিট হিসাবে পাবেন।
সদ্য হয়ে যাওয়া সিটি নির্বাচন আর ৭৩ সালের নির্বাচন পদ্ধতি এক। সময় ও ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয়নি।
গনতন্ত্র - মানবিক মূল্যবোধ - সম্মান - সভ্যতা - লজ্জা শরম এগুলো যাদের আছে তারা আর যাই হউক - তারা আমাদের মহান স্বাধীনতার ব্যবসায়ী হবেনা। যারা এই পর্যায় নামতে পারবে তারাই আওয়ামীলীগার হবে।
সিটি নির্বাচনে সেটা ই প্রমান করেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। যা আজ থেকে অনেক বছর আগে প্রমান রেখেছিলেন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।
বিষয়: রাজনীতি
১৮৯৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জিয়া যে বাংলাদেশকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে পৃথিবীর মাঝে পরিচিত করে তুলেছিলেন - সেই রাষ্ট্রের ক্রমান্বয়ে বিবর্তনের রাস্তা ধ্বংস করে পিছনের দীকে টেনে হুতু তুতসির রুয়ান্ডা, উগান্ডার মত পরিস্থিতি তৈরী করছে।
অপার সম্ভাবনাময়ী এই অর্থনীতিকে পঙ্গু করার মানসিকতা নিয়ে হিটলারী স্টাইলে ছেলে জয়কে দিয়ে ডিজিটালের নাম করে লক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন প্রজেক্টের নাম করে।
দুঃখজনক হলেও সত্য এরা নিজেদের পরিণতি জোর করেই মুজিবের পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ।
একটু পার্থক্য আছে। পিতার ছিল নিজের একনায়কত্ব। কিন্তু কন্যার আছে অন্য দেশের দালালি। সমস্যা তাই পিতার চেয়ে কন্যার সময় দেশের বেশি।
বইটা কোন প্রকাশনীর বা ঢাকায় কোথায় পাওয়া যাবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন