প্রেম ভালবাসা আর পিরিত করার অধিকার -দায়িত্ব - দায়িত্ববোধ।গত পর্বের পর।
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৫ মার্চ, ২০১৫, ০২:৫৭:৫৫ দুপুর
গত পর্বের পর
=========
মুতাওয়ার গাড়ি দেখে মনে পড়লো সেই অতীত। ভাবলাম শাইখ আমার উপর সালাত কায়েম করতে ডাকতেছেন নাতো?
চার)
গাড়ীতে বসে পরিচয় পর্ব শেষ হল। দাওয়াত করলাম বাসায়। তিনি বিনয়ের সাথে না করলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমাদের বাঙ্গালী পোলাপাইনরা সালাতের সময় হলে অন্ধকারে দাড়িয়ে থাকে কেন? মুতাওয়া বললেন - আমি প্রায় দেখেছি।তোমরা যখন সালাতে যাও তখন কেন তাদেরকে নিয়ে যাও না।
স্কুলের পাশে একটি বড় মসজিদ আছে। মসজিদটি বেশ পুরানো। এই মসজিদের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মুসল্লি বাংলাদেশী। একই পাড়ায় আমাদের কনস্যুলার অফিস। যা বাংলাদেশ এমবেসী নামে পরিচিত। সব মিলিয়ে জেদ্দার নুষলা এলাকাটি একটা মিনি বাংলাদেশ। জেদ্দার আরো অনেক এলাকা আছে যেখানে বাংলাদেশীদের অবস্থান। কিন্তু নুযলাতে যত প্রবাসী পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন - অন্য জায়গায় সেরকম নয়।
শাইখ আফসোস করে বললেন - সালাতের সময় তোমাদের ছেলেরা গাছের আড়ালে - অন্ধকারে দাড়িয়ে থাকে। তিনি স্কুলে আসতে চাইলেন। ছাত্রদের নিয়ে প্রোগ্রাম করার প্রস্তাব করলেন। বললেন - এই বয়সে যদি সালাতে অভ্যাস্থ না করা হয় - তাহলে বড় হলে আর সম্ভব হবে না।
আমি আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করলাম।তিনি বিদায় নিতে গিয়ে আমাকে তার কার্ড দিয়ে গেলেন।আমি এই শাইখের কার্ড জায়গামত পৌছালাম। জানিনা তার পর কিছু হল কি না।
বেশ কয়েকজন কমিউনিটি নেতার সাথে কথা বললাম। কিন্তু তারা সেটার তেমন গরুত্ব দেবার প্রয়োজন মনে করলেন না। আমি স্কুলের কেউ নই। জানিনা সেই শাইখ স্কুলে এসেছিলেন কি না। বিষয়টা এই পর্যন্ত।
পাঁচ)
আমার বন্ধুর জন্য সমস্যাটা অনেক বড়।নিজের পরিচয় আছে ইসলামী লেবেলের। আবার নিজে ভাল মানুষ হিসাবে একটা পরিচয় আছে। তাই সমাজে তার এই নতুন পরিচয় প্রকাশিত হলে সমস্যা হতে পারে ভেবে অস্থির।
ছেলে তার ভাল। মেয়ে পক্ষের সাথে আলোচনা করা হল তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। তাদের এক দাবী - মেয়েটা তাদের বেশী বেশী ভাল। এখন কি করা।আমার বন্ধু কি করবে?
প্রেম করবে। ভালবাসা দিবে - নিবে অথবা পিরিত করবে এটা বর্তমান ছেলে মেয়েদের নাকি অধিকার। বর্তমান সময়ে এরকম ভালবাসা না হলে একটা ছেলে মেয়ে কিভাবে চলবে?বাপ মা কেন বাধা দেবে? নতুন প্রজন্মের ছেলেদের কাছে তাদের বাপ মা আসলেই একটা ঝামেলা! পরিচিত কয়েকটা ছেলেদের সাথে কথা হল - তাদের মানসিক গঠনটা মনে হল এমনই। তারা এই বয়সে প্রেম পিরিতি একটু আধটু করবে। তার জন্য বাপ মা না বুঝে ঝামেলা তৈরী করেন।
আমরা যারা দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ চাই আমাদের নিজেদের স্বার্থে বিষয়টা ভাবতে হবে।কারন আপন সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার মধ্যে রয়েছে দুনিয়ার ও আখেরাতের নাযাত। একেবারে সহজ হিসাব। সন্তান সন্তুতি যেমন আমার চোখের শীতলতা ঠিক তেমনি আখেরাতে মুক্তির মাধ্যম।
শুধুমাত্র সন্তানদের দায়িত্ব অথবা দায়িত্ববোধ আশা করার মধ্যে সঠিক পরিবার গঠন হয় না। বরং আমাদের কিছু দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধ রয়েছে।
কেন আমাদের বর্তমান প্রজন্ম আপন বাপ মাকে তাদের জন্য ঝামেলা মনে করে।
আমার মতে কারণ তিনটি। আরো হতে পারে। কোন সমাজ বিজ্ঞানী আরো ভাল বলতে পারবেন। আমার দেখা - জানা পরিবার থেকে এই তিনটি কারন বড় মনে হয়েছে।
প্রথম কারণ। আমাদের সন্তানরা বেড়ে উঠার সময়ের পারিবারিক আবহ।
২য় কারণ। আমাদের সন্তানদের প্রকৃত জীবন সম্পর্কে ধারণার অভাব।
৩য় কারণ। অভিবাভক হিসাবে দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধ।
ছয়)
প্রথম কারণ - আমাদের কলিজার টুকরা সন্তানদের বেড়ে উঠার পারিবারিক আবহটা কেমন?
# একটু পিছনে যাই। বাংলাদেশের বয়স সমান যাদের বয়স। তারা যখন শিশু তখন তাদের বেড়ে উঠার গল্পগুলো (আবহ) মনে করুন। মনে করুন শীতের সকাল। মা'র আচলের নীচে শোয়া।চোখ খুলে দেখলেন মা' নামাজের আদিতে (পাঠিতে) বসা।হাত দুখানা বুকের সমান করে কাকুতি করছেন মহান আল্লাহর কাছে। এটা একটা দৃশ্য।
একটু পর আপনার মা আপনাকে কাপড় পরিয়ে মাথায় টুপি পরিয়ে মক্তবে পাঠালেন। আপনি মক্তবে যাচ্ছেন আপনার সমবয়সী ভাই বোনদের সাথে।আলিফ - বা - তা সুর করে পড়ছেন। সকালের সূর্য মামা একটু তেজি হবার সাথে সাথে আবার বাড়ি ফেরা। মা অপেক্ষা করছেন আপনার জন্য।
আবার স্কুলে যাবার জন্য মা’ আপনাকে কাপড় পরিয়ে দিচ্ছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। বলেছেন - বাবা স্কুলের শিক্ষকেরর কথা শুনবা। দুষ্টামী করবা না।সত্য কথা বলবা। আরো কত উপদেশ।মা আপনাকে দেখা যায় পর্যন্ত জানালার ফাঁক দিয়ে কলিজার টুকরাকে দেখছেন।
এভাবেই আপনি বেড়ে উঠেছেন। এভাবে আপনার মা বাবা আপনাকে সময় দিয়েছেন। এভাবেই আপনার প্রথম পরিচয় হয়েছে মা - বাবা - আল্লাহ - রাসূল - কোরআন - শিক্ষকদের সাথে।
এই ছিল আপনার বেড়ে উঠার আবহ।
এবার আসুন - আজকের দিনে আমি আর আপনি সন্তানদের কি পরিবেশ দিচ্ছি।
# ফজরের নামাজে মা কে দেখছে না। বাপকে মসজিদে যেতে দেখছে না।
# সকালের মা বা বাবার কুরাআন পড়ার দৃশ্য কখনো দেখার সৌভাগ্য তার হচ্ছে না।
# বরং সে যখন একটু কথা বলতে শুরু করছে তখন সে টিভিতে কার্টুন দেখছে। কার্টূনে কি দেখছে। দেখছে - কিভাবে প্রতারণা - ধোকা দেয়া যায়।
# একটু বড় হলে তাকে গেইম খেলতে হয়। সেগুলোতে শুধু খতম করা - টার্গেট ফিনিস করার প্রশিক্ষণ।আপনি এমন গেইম পাবেন না - যেগুলোতে কোন নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
তার পরের বয়সে সে টিভি সিরিয়াল বা ফিল্ম। মা বাবা বসে ভালবাসা - প্রেম - পিরিতির পারিবারিক আয়োজন।
=======
আগামী পর্বে
(একটি কৈফিয়ত - প্রথম পর্বে আমার বন্ধুর নাম লিখেছিলাম জিয়া। এটা নিয়ে বেশ কয়েকজন ভাই ইমেইল করেছেন।এই নামটা ছিল সম্পুর্ণ ছদ্ম নাম। যে বন্ধুর এই সমস্যা তার নাম যেমন জিয়া নয় তেমন আমার পরিচিত শ্রদ্ধেয় জিয়া ভাই ও নন।আশা করছি কেউ ভুল বুঝবেন না।)
বিষয়: বিবিধ
১৭১৫ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সে দিনগুলোকে কি আর ফিরিয়ে আনা যায় না ?
ভুলে গেছি নয় - বরং নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে তা করছি।
তথাকথিত আধুনিকতার নামে বেহায়াপনার পরিবেশ পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠছে আজকের কিশোর কিশোরীরা যা সত্যিই পরিতাপের এবং অগ্রহণযোগ্য।
আত্নীক যোগাযোগের চাইতে ইলক্ট্রিক যোগাযোগ বাড়ছে এর প্রভাব তো পড়বেই!
চমৎকার লিখাটির জন্য শুকরিয়া!
বাস্তব কথা বলেছেন।
আত্নীক যোগাযোগের চাইতে ইলক্ট্রিক যোগাযোগ বাড়ছে এর প্রভাব তো পড়বেই!
আপনার পর্যবেক্ষণগুলি খুব দামি। জাযাকাল্লাহ খাইরান।
যা ইনভেষ্ট করবো তাইতো পাবো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন