ভারতের সাথে গোলামীর সেই ৭ দফা ও আজকের বাস্তবতা।
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:১৩:২৪ দুপুর
সাংবাদিক মানিক মিয়ার বড় ছেলে ব্যরিষ্টার মঈনুল সাহেব বলেছেন - শেখ হাসিনা স্বাধীনতা চেতনার ফেরী করে জাতিকে ভারতের গোলমে পরিণত করেছেন। বাস্তবতা কতটুকু।
আমরা পতাকা ছাড়া আর কোন কোন বিষয়ে স্বাধীন? আজ দেখলাম আমরা যখন ৪৪ তম বিজয় দিবস পালন করছি তখন খবর বের হয়েছে সেই বিজয়ের দলীল আমাদের কাছে নেই।
আত্মসমর্পনের দলীল আছে ভারতের কাছে। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কতৃপক্ষ জেনারেল আরোরার কাছ থেকে কপি সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করছেন। কত বড় আকারে আমাদের স্বাধীন চেতনা ?
কেন? -
আমার দেশের বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক দলীলটি ভারতের কাছে কেন?
আর কেন আমার রাষ্ট্র ভারতের কাছে চাইতে পারছে না। সমস্যাটা কোথায়?
মিলিয়ন ডলারের এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে ১৯৭১ সালের সেই ৭ দফা গোলামী চুক্তির মধ্যে। দেখুন সেই ৭ দফাতে কি ছিল। আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা কী?
১৯৭১ সালের অক্টোবর। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রায় শেষ দিক।প্রতিটি সেক্টর ও ফোর্স সমূহের অধিনায়কদের সুযোগ্য নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী হানাদারদের প্রায় কাবু করে আনে।দেশের অনেক জায়গায় পাকিস্তানী বাহিনীর যাত্রা ব্যারাকমুখী।রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী অদম্য সাহসীকতার পরিচয় দিচ্ছে। ভারত তখন ঠিক তখনই নেতৃত্ব ও স্বার্থ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে - এই ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে একটি ৭ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে।
চুক্তিগুলো -
এক) যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, শুধু তারাই প্রশাসনিক কর্মকর্তাপদে নিয়োজিত থাকবে। বাকীদের চাকুরীচ্যূত করা হবে এবং সেই শূণ্যপদ পূরণ করবে ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
দুই) বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাস থেকে আরম্ভ করে প্রতিবছর এ সম্পর্কে পূনরীক্ষণের জন্য দু’দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
তিন) বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সোনবাহিনী থাকবে না।
চার) অভ্যান্তরীণ আইন- শৃংখলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যরামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে।
পাঁচ) সাম্ভাব্য ভারত - পাকিস্তন যুদ্ধে অধিনায়কত্ব করবেন ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়কত্বে থাকবে।
ছয়) দু’দেশের বাণিজ্য হবে খোলাবাজার এর ভিত্তিতে। তবে বাণিজ্যের হিসাব হবে বছরওয়ারী এবং যার যা পাওয়না তা ষ্টার্লিং এ পরিশোধ করা হবে।
সাত) বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংগে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রশ্নে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ভারতীয় পরারাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে এবং ভারত যতদূর পারে এ ব্যাপারে বাংলাদেশেকে সহায়তা দেবে।
(প্রবাসী সরকারের দিল্লী মিশন প্রধান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর উপস্থিতিতেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং স্বাক্ষরদানের পরপরই সৈয়দ নজরুল ইসলাম মূর্চ্ছ যান।)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সি আই এ - মাসুদুল হক। পৃষ্ঠা ৬৬)
আমার নিজের কোন পর্যালোচনা নেই। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই সাত দফার কোন দফাটা বাস্তবায়ন হয়নি।
তার পরও তিনি মহান স্বাধীনতার স্বপক্ষ একমাত্র শক্তি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৭ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটা যে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আত্মসমর্পনের অনুষ্ঠান সেটা কিভাবে প্রমানিত হবে ?
ধন্যবাদ আপনাকো।
সৈয়দ আলি আহসান এর লিখায় পড়েছি রেডিও বাংলাদেশ এ তার কলকাতার এক বন্ধু এসেছিলেন। কিন্তু রেডিওর বাঙ্গালি কর্মচারিরা তাকে পিটিয়ে ভারতিয় দূতাবাসে পাঠিয়ে দেয়।
হুজুগে বাংগালীর আরেকটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ সামনে আনলেন শ্রদ্ধেয় ইবনে আহমাদ ভাই!
মাকাল ফলের 'উপরি সৌন্দর্য্যে' বিমুগ্ধ গভীরতার যাওয়ার আগ্রহ কোথায় পাবে!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন