আল কোরআনের সম্মোহনী শক্তি ও আমাদের বিচারক সমাজ - পর্ব - ৮।

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২২ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:৫৭:৪৪ দুপুর

আগের পর্ব - ৭

সাহাবী হযরত নাফে (রাঃ) বলেন, খলিফা হযরত উমার (রাঃ) যায়িদ ইবন সাবিত(রাঃ) কে বিচারক পদে নিযুক্ত করেন। তার বেতন ভাতা নির্ধারণ করেন।

বেশ কিছুকাল পর এই বিচারকের (হযরত যায়িদ ইবন সাবিতের) আদালতে একটি মামলা পেশ হয়। মামলাটা হল একটি বাগানের মালিকানা নিয়ে। এক পক্ষ খলিফা ওমর (রাঃ)। অন্য পক্ষ হলেন মদিনার সম্মানিত সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ)। আদালতের নিয়ম অনুযায়ী উভয় পক্ষকে বিচারপতির সামনে হাজির হতে হল।

বিচারক যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) তাঁর জায়গা হতে সরে গিয়ে খলিফাকে সেখানে বসতে অনুরোধ করেন।

হযরত উমর (রাঃ) বললেন, যায়েদ, আপনি শুরুতেই অবিচার করলেন। আপনি আমাকে আমার সঙ্গীর সাথে বসান।
হযরত উবাই ইবন কা’ব তাঁর দাবী পেশ করলেন। বিচারক সাক্ষী তলব করলেন।

সাক্ষী দিতে অপারগ হলে বিচারক বললেন – আমীরুল মোমিনীন আপনাকে শপথ করতে হবে। তবে বিচারক হযরত কা’বকে বললেন দেখ ভাই তুমি আমীরুল মোমিনীনকে শপথ করতে বাধ্য করো না।

হযরত ওমর (রাঃ) বিচারককে বললেন – আপনি কি সবার মামলা এভাবে ফায়সালা করেন। বিচারক বললেন – না। খলিফা বললেন – তাহলে আমার জন্য কেন এই সুযোগ। আপনি অন্যদের মাঝে যেভাবে ফায়সালা করেন ঠিক সেভাবে ই করেন। তখন বিচারক খলিফা হযরত উমর (রাঃ) কে শপথ করার আদেশ দিলেন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে হযরত উমর (রাঃ) একটি ঐতিহাসিক উক্তি করেন – যা বিচারকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে একটি উত্তম উদাহারণ। তা হলো – “যতক্ষণ বিচারকের কাছে একজন সাধারন বিচার প্রার্থী এবং রাষ্ট্রের প্রধান সমান না হয়, ততক্ষণ কোন বিচারক সে পদের যোগ্য হতে পারে না।” আমাদের চিত্রটা কেমন। দেশের বিচারপ্রার্থী মানুষ মনে করে - ডিজিটাল বাকশালী আদালতের বিচারপতিদের যোগ্যতা হল –রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর মন পড়ে রায় দেয়া। এক ট্রাইবুনাল বিচারপতি যিনি এখন সব মামলায় ফাঁসির আদেশ শোনান। তিনি বিতর্কিত ট্রাইবুনালেরও বিচারপতি ছিলেন। এই মহান! বিচারপতি আদালতের চেয়ারে বসে বিচারপ্রার্থীকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন “উপরে আল্লাহ আর নিচে শেখ হাসিনা”।জনগণ হাত তালি দেয় আর বলে - ডিজিটাল যুগের বিচাপতিদের এই হল যোগ্যতা।

হযরত উমর (রাঃ) বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে চারটি বিষয় আহলুর রায় সাহাবী দ্বারা নিশ্চিত করতেন।

এক) ন্যায়নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততা ভালভাবে যাচাই করতেন।

দুই) নিয়োগের পরে তাদের কর্মততপরতা পর্যবেক্ষণ করতেন।

তিন) বিচারপতিদের যুক্তিসঙ্গত বেতন নির্ধারণ করতেন।

চার) জনগনের প্রতি সাধারণ নির্দেশ ছিল – প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বিচারকদের দ্বারা কেউ কষ্ট পেলে সরাসরি ও নির্ভয়ে তা জানাতে।

স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নিয়ে যে সমস্ত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ডিজিটাল বাকশালীরা মিডিয়াতে প্রতিনিয়ত বিড়বিড় করেন - তারা মানুষের মৌলিক অধিকার,গনতন্ত্রকে হত্যা করে উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ানোর রবিন্দ্রগীত করেন। রিমান্ড নামক ভয়ঙ্কর হাতিয়ার ব্যবহারে আদালতের বিচারপরিতরা বর্তমান সময় সুপারসনিক গতিতে রায় দিচ্ছেন। বিনা বিচারে আটকের জন্য আমাদের সম্মানিত বিচাপতিরা ফ্যাসিজমের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করছেন।

যে দেশের বিচারপতিরা প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষের জন্য রায় প্রদান করেন - সঙ্গত কারনেই এই বিচার, বিচার ব্যবস্থা, বিচারপতিদের প্রতি সাধারণ মানুষের কোন বিশ্বাস থাকে না। দেশের সচেতন মানুষের এখন বদ্ধমূল ধারণা হল - দেশের খরায় পড়া গনতন্ত্রকে বাইপাস করে ফ্যাসিষ্ট বাকশাল কায়েমের পথে প্রধান বাধা হল – স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা। েসই অঙ্গনে এখন কাদের বসবাস। ইনশাআল্লাহ একদিন এর হিসাব দিতে হবে।

আগামী পর্ব - ১০

===========

বিষয়: বিবিধ

১৩০০ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

277084
২২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৭
মামুন লিখেছেন : লেখাটি খুব ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর। Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৫৪
221175
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : প্রথম মন্তব্য করেছেন। আপনাকে অসংখ্য মোবারকবাদ।
277086
২২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪২
আবু ফারিহা লিখেছেন : সেদিন বেশী দূরে নয় ইনশা অাল্লাহ। সেদিন শেখ হাসিনা ওদের রক্ষা করা দূরে থাকুক নিজের কৃতকর্মের হিসাব দিয়েই শেষ করতে পারবেনা।
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৫৩
221174
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার প্রত্যাশার সাথে সম্পুর্ণ একমত। সেদিনের আশা আমাদেরকে কাজ করতে হবে।
277111
২২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৪
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : আপনার তথ্যপুর্ন জ্ঞানগর্ব পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। সত্যিই দারুণ। এটিকে বই হিসেবে লিখার খেয়াল করে কিছু বিষয় এড়িয়ে চললে ভাল হয়। চালিয়ে যান। ধন্যবাদ।
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৫২
221173
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার পরামর্শ গ্রহন করলাম। আরো স্পষ্ট কিছু পরামর্শ চাই। আপনাকে ধন্যবাদ।
277133
২২ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
ইসলাম যখন তার মুল আদর্শকে অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছিল তখনও যেটুকু অবশিষ্ট ছিল তা হলো ন্যায়বিচার। সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ এর ঘটনা আছে। এমনকি জাহাঙ্গির এর মত ইসলাম এর বাইরে থাকা বাদশাহও ন্যায়বিচার মেনে নিতেন। উমাইয়া বা আব্বাসিয় খলিফাগনও কথনও বিচারকাজে হস্তক্ষেপ করেননি। একমাত্র বাদশাহ আকবর ছাড়া কেউ ইসলামে কাজির পদ নিয়ে কোন অনিয়ম করেননি। আকবর কাজি ছাড়াও মির-ই-আদল পদ তৈরি করেছিলেন মূলত কাজিদের ক্ষমতা খর্ব করতে। আর আমরা এখন ইংরেজদের প্রনিত আইনকেই ন্যায়বিচারের শ্রেষ্ঠ উপায় মনে করছি। শাহ আবদুল হান্নান সাহেবের লিখায় পড়েছি তাকে নাকি এক প্রধান বিচারপতি জোড় করে বুঝাচ্ছিলেন যে এই আইন ই সবচেয়ে ভাল কেবল তার প্রয়োগ এ সমস্যা হয় বলে মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। শাহ আবদুল হান্নান সাহেব অনেক কষ্টেও তাকে বুঝাতে পারেননাই যে যে আইন সহজে প্রয়োগ করা যায় সেটাই শুধু ভাল আইন হতে পারে।
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৫১
221172
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : এটা মানে সবাই - কিন্তু প্রয়োগের ব্যাপারে সবাই আতঙ্কিত হয়। কারন যারা চেয়ারে বসে আছেন তাদের সমস্যা হবে বেশী।
277151
২২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৩৮
শেখের পোলা লিখেছেন : হিসাব নিতে হলে হজরত ওমর রাঃ এর মত শাসক চাই, নয়তো চক্রাকারে এ রীতিই চলতে থাকবে৷৷
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৪৯
221171
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার সাথে একমত। বদলাতে হবে।
277173
২২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:৩৮
আফরা লিখেছেন : তথ্যপুর্ন জ্ঞানগর্ব লেখার জন্য ধন্যবাদ ।
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৪৮
221170
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
277222
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:৫৫
কাহাফ লিখেছেন :
আল্লাহ ভীতি ও জবাবদিহীতার প্রশ্ন মানুষ কে ন্যায় পরায়ণ করে তুলে, আর ইসলামী সমাজ ব্যবস্হা কায়েম হলেই তা সম্ভব।
তথাকথিত ডিজিটাল যমানার বিচারক রাই তো সব চেয়ে স্বেচ্ছাচারী।
বরাবরের মত ই নান্দনিক উপস্হাপনায় জাযাকাল্লাহু খাইরান আপনাকে শ্রদ্ধেয় ইবনে আহমাদ ভাই। Rose
২৩ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:১০
221302
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : ভাই আমি আপনার শ্রদ্ধেয় হতে চাই না। ভাই হতে চাই। আপনাকে অসংখ্য মোবারকবাদ।
২৩ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:১৪
221305
কাহাফ লিখেছেন :
আসলে শ্রদ্ধার মানুষরা এমন ভাবে অনুভূতি প্রকাশ করেন বলেই তারা শ্রদ্ধেয় হন।
অনেক শুকরিয়া বড় ভাই ইবনে আহমাদ কে।
Good Luck Good Luck
277243
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:৪৮
ভিশু লিখেছেন : খুব ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck
২৩ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:১১
221303
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : ভিশু সাহেবের ভাল লেগেছে। আলহামদুলিল্লাহ। মোবারকবাদ।
277252
২৩ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৬:২২
বুড়া মিয়া লিখেছেন : বিচারব্যবস্থা নিয়ে আপনার লেখা অনেক ভালো লাগলো।
২৩ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:১১
221304
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার লিখাও ভাল লাগে। মন্তব্য করি। দোয়া প্রাথী। মোবারকবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File