আল কোরআনের সম্মোহনী শক্তি ও আমাদের বিচারক সমাজ - পর্ব - ৭।

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২১ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:৫৩:৫৭ দুপুর

৬ষ্ঠ পর্বের পর -

===========

খলিফা নিযুক্তির পর ফারুকে আযম (রাঃ) আবু মুসা আশআরী (রাঃ) কে বসরার বিচারক এবং আব্দুল্লহ ইবন মাসঊদ (রাঃ) কে কুফার বিচারক নিযুক্ত করেন। সাথে সাথে বিচারকার্য পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান করে খলিফা একটি ফরমান পাঠান। হযরত ওমরের লিখা আবু মুসা আশআরীর নিকট সেই নির্দেশনাটি বিচার বিভাগের ইতিহাসে মাইল ফলক হিসাবে আছে।

“আল্লাহর বান্দা উমর ইবনুল খাত্তাব আমীরুল মুমিনীনের পক্ষ থেকে আবু মুসা আশআরীর নামে।

আস্সালামু আলাইকুম।

অত:পর বিচার একটি অপরিহার্য কর্তব্য ও চির অনুসৃত পন্থা। সুতরাং তোমার নিকট কোন মামলা পেশ করা হলে ভালভাবে বিষয়টি বুঝে নিবে। কারণ সত্য প্রকাশ করে কোন লাভ হয় না, যদি বাস্তবে তার প্রতিষ্ঠা না হয়। তোমার আদালতে এবং লোকদের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা করবে। যেন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি তোমার নিকট থেকে পক্ষপাতিত্বের আশা না করে এবং কোন দুর্বল ব্যক্তি তোমার সুবিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা না করে। কোন অসহায় যেন তোমার ভয়ে ভীত না হয়। ফরিয়াদীর ওপর তার দাবি প্রমাণ করার দায়িত্ব এবং অস্বীকারকারী আসামীর জন্য শপথ গ্রহণই যথেষ্ট। মুসলমানদের আপোষ মীমাংসা বৈধ। কিন্তু এমন মীমাংসা নয়, যা হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে। গতকাল যে বিষয়ে তুমি বিচার করেছ তার পূনর্বিচারে কোন দোষ নেই। আজ আবার নতুনভাবে চিন্তা –ভাবনা করে তুমি সত্যে উপনীত হও

তাহলে নির্দ্বিধায় সত্যের দিকে ফিরে যেতে পারো। কারণ, সত্যই শাশ্বত। কোন বস্তুই তাকে বাতিল করতে পারে না। মনে রেখো,

মিথ্যাকে আঁকড়ে থাকার চেয়ে সত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করাই অধিক শ্রেয়।

যে সব বিষয়ে আল কোরআন-সুন্নাহে কোন দিক নির্দেশনা নেই এবং তোমার অন্তর দ্বিধাদ্বন্দ্বে আবর্তিত হতে থাকে সে বিষয়ে ভাল করে বুদ্ধি খাটাও এবং চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাও। অত:পর জেনে নাও আল কোরআন ও হাদীসে অনুরুপ কোন দৃষ্টান্ত মেলে কিনা, অত:পর বিষয়টিকে ঐ দৃষ্টান্তের উপর অনুমান কর। তারপর তোমার মতে যে সমাধান আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়, তার সন্তষ্টির অধিকতর নিকটবর্তী এবং সত্যের সাথে অধিকতর সামজ্ঞস্যশীল, তা গ্রহণ করো। যে ব্যক্তি তোমার নিকট এসে দাবী করে যে, তার অবস্থানের স্বপক্ষে সত্যতা রয়েছে, তবে ঐ মুহুর্তে প্রমাণ পেশ করতে সে অক্ষম। এমতাবস্থায় তাকে এতটুকু অবকাশ দাও, যেন সে প্রমাণ উপস্থিত করতে সক্ষম হয়। ইতেমধ্যে সে যদি তার প্রমাণ উপস্থিত করে তবে তার ভিত্তিতে সে তার হক আদায় করে নেবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করতে তোমার কোন বাধা নেই। এতে করে তার আপত্তি পেশ করারও কোন সুযোগ থাকবে না। বরং তার অদুরদর্শিতা প্রমাণিত হবে।

----------- মানুষের গোপন বিষয়গুলোর দায়দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা নিজের উপর রেখেছেন। তোমার দায়িত্ব শুধু উপস্থিত প্রমানের ভিত্তিতে ফায়সালা প্রদান করা। স্পষ্ট ও সুদৃঢ় প্রমাণ কিংবা স্বীকারোক্তিমূলক শপথ ব্যতীত হদ্দ বা বিধিবদ্ধ দন্ড প্রদান করা যায় না। আল্লাহ এর মাধ্যমে মুসলমানদেরকে হদ্দ জারীর কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন।

আদালতের কক্ষে ক্রোধ, সংকীর্ণতা ও অস্থিরতা থেকে নিজেকে রক্ষা কর। লোকেরা মামলা নিয়ে এলে কষ্ট ও বিরক্তিবোধ করো না। কেননা এটাই তো সত্যকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করার স্থান। এ কাজে তোমার জন্য রয়েছে আল্লাহর নিকট বিরাট পুরস্কার আর পরকালের উত্তম সঞ্চয়। (আব্দুর রহামন ইবন খালদুন – আল-মুকাদ্দামা, বৈরুত প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা ৮২)

বিচারপতিদের জন্য হযরত ওমর (রাঃ) এর অসংখ্য নির্দেশনা রয়েছে। আমরা একটি মাত্র পেশ করলাম। আমাদের সম্মানিত বিচারপতিদের অবস্থা, বিচারিক মামলার রায়, বিচারপতিদের আচরণ ইত্যাদি পর্যালোচনা করুন। এক মজলূম মাহমুদুর রহমানের সাথে যে আচরণ করেছেন আমাদের সম্মানিত বিচারপতিরা তার তুলনা করুন। আদালতের বিচারপতিদের দরজা থেকে অভিযুক্ত আসামীর সাক্ষী গায়েব হয়ে যাওয়া, আইন মন্ত্রনালয় থেকে রায় লিখে পাঠানো অথবা বিদেশ থেকে রায়ের কপি সরবরাহ করা, সেইফ হোম করে মিথ্যার নাটক সাজানো করা ইত্যাদি সব হয়েছে বিচারের নামে।

এত জালিয়াতির পর ও আমার সরকার ও তার সুশীল বান্ধব মিডিয়া মনে করছে তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করছে।দেশের তাবৎ মিডিয়ার সিনিয়র মানুষগুলোর বিবেক কিভাবে বন্ধক নিয়েছে সরকার তার প্রকৃষ্ঠ উদাহরন হল বর্তমান বিচার ব্যবস্থা।

তবে জনগন ঠিকই বুঝতে পারছে আমাদের মহান! বিচারপতিরা কতৃত্ববাদি তথা ফ্যাসিষ্ট শাসন প্রতিষ্ঠার গার্ডিয়ানের ভুমিকা পালন করছেন।সামগ্রিক ভাবে ইসলাম পন্থীদের দমন করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করছে জালিম সরকার।আমার বিশ্বাস এবং মনে করি সেদিন খুব বেশী দুরে নয় - যেদিন এই জনগনই বিচার করবে তাদের যারা ফ্যাসিষ্ট সরকারের সহযোগী বা দালালী করেছেন।সময়ের পরিবর্তনে সবই সম্ভব।মহান আল্লাহ সময়ের পরিবর্তন করেন। তার সিদ্ধান্ত ই হয় চুড়ান্ত। আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে।

আগামী পর্ব – ৮

==================

বিষয়: বিবিধ

১৩১৬ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

276749
২১ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:২১
আফরা লিখেছেন : আমার বিশ্বাস এবং মনে করি সেদিন খুব বেশী দুরে নয় - যেদিন এই জনগনই বিচার করবে তাদের যারা ফ্যাসিষ্ট সরকারের সহযোগী বা দালালী করেছেন।সময়ের পরিবর্তনে সবই সম্ভব।মহান আল্লাহ সময়ের পরিবর্তন করেন। তার সিদ্ধান্ত ই হয় চুড়ান্ত। আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে।

আমার ও তাই বিস্বাস ।

২১ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৪
220766
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা বাড়লে দেখবেন দালালদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
276752
২১ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমাদের দেশে ন্যায়নিতির ঠিক উল্টাই প্রচলিত। এখানে নিজেকে নির্দোশ প্রমানের দায়িত্ব অভিযুক্তের। বিশেষ করে যে ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগকারি। তথাকথিত ভ্রাম্যমান আদালত কোন ন্যায়বিচার ছাড়াই মানুষ কে শাস্তি দেয়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে দেখা যায় বাদি ও বিবাদি উভয়ই আদালতের সামনে একই সমানে বসে। অথচ আমাদের দেশে আসামিকে দাড়াতে হয় কাঠগড়ায়। যে বিচারক বাদি ও বিবাদিকে একই সমতলে দেখেন না তিনি কি ভাবে ন্যায় বিচার করবেন?
২১ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৫
220768
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার এই মন্তব্য আগামী পর্বে আলোচিত হবে ফারুকে আযমের ইতহিাস থেকে। দাওয়াত রইল।
276790
২১ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৭
আবু ফারিহা লিখেছেন : এসব দালালদের বিচার যেনো মহান অাল্লাহ অচীরেই সমগ্র জাতীকে দেখার ব্যবস্হা করে দেন এই প্রত্যাশাই করছি।
২১ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৬
220770
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : এই প্রত্যাশাই একদিন অবিচারের সকল বালির বাধ ভেঙ্গে দিবে ইনশাআল্লাহ।
276824
২১ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২২
জহুরুল লিখেছেন :
মিথ্যাকে আঁকড়ে থাকার চেয়ে সত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করাই অধিক শ্রেয়।
276831
২১ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
আপনাকে মোবারকবাদ।
276837
২১ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

সময়ের হিসাবটা একটু অন্যরকমও হয়-
আল্লাহতায়ালার হিসাবে "একটু ঢিল দেয়া"
দুনিয়ার হিসবে কয়েক যুগ বা শতাব্দীও হয়ে যেতে পারে!


দোয়া করি, জাযাকাল্লাহ..
276849
২১ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : সত্য বলেছেন। আমাদের কাজ হল - আমাদেরকে সকল বিভাগে যোগ্য প্রমান করা। সময় এবং সুযোগের সঠিক ব্যবহার করা। আপনাকে অনেক অনেক মোবারকবাদ।
276852
২১ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
শেখের পোলা লিখেছেন : আমরা সেই মহান আল্লাহর সিদ্ধান্তের জন্য চেষ্টা করেই চলেছি৷ ধন্যবাদ৷
২২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:১৫
221065
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আমাদের চেষ্টা করা প্রয়োজন।
276863
২১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৪৭
মুিজব িবন আদম লিখেছেন : সত্যকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে তা কেবল প্রকাশ করে কোন লাভ হয় না। তাই সত্য প্রকাশের লক্ষ্য হতে হবে তার প্রতিষ্ঠা।
২২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
221068
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার সাথে একমত। মোবারকবাদ।
১০
276865
২১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৪৮
মুিজব িবন আদম লিখেছেন : লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
১১
276912
২১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩৯
আবু জারীর লিখেছেন : অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের বিচারক বানিয়ে ইতিহাসের জঘন্য মিথ্যাচারের ব্যাসাতি করা হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছে। আল্লাহ্‌ হলেন বিচারকদের বিচারক। মিথ্যা নাটকের জন্য আল্লাহর আদালতে মিথ্যাবাদীদের কঠিন মূল্যা দিতে হবে।
২২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪১
221072
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : ভাই শুধু আখেরাতে নয় - এই ‍দুনিয়াতেও এদের বিচার হবে। একটু সময় লাগবে। এই যা। আপনি মন্তব্য করার জন্য আপনাকে মোবারকবাদ।
১২
276926
২২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:৪৪
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ইসলামিক বিচার ব্যবস্থার উদাহরণগুলো অনেক ভালো লাগলো। দেশেরগুলো তো দেখেতেই পাচ্ছি সবাই ...

মাহমুদুর রহমানের লেখা আমার ভালো লাগতো, একটু রস-কষ লাগালেও শফিক রেহমানের পিনমারা লেখাও ভালো লাগে।
২২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪২
221073
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : মাহমুদুর রহমান আর শফিক রেহমানের মধ্যে লেখাতে হয়তো তুলনা করা যেতে পারে। তবে তাদের দুজনের বিশ্বাস সম্পূর্ন আলাদা।
উভয়ের লেখা ভাল লাগে।
১৩
276948
২২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৫:৩১
কাহাফ লিখেছেন :
নান্দনিক উপস্হাপনায় অনেক জানতে পারছি।
ভাল লাগা রেখে গেলাম সাথে সাথে অজস্র জাযাকাল্লাহু খাইরান....... Rose Rose Rose
২২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৪
221077
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনি নিয়মিত পড়েন আর মন্তব্য করেন - তাতে অনেক অনেক মোবারকবাদ। আপনার সহযোগিতা আমাদেরকে উৎসাহিত করে।
১৪
276991
২২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:১৪
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
২২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৫
221078
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকে ও ধন্যবাদ।
১৫
277014
২২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:০৬
সাইফুল সাইমুম০১ লিখেছেন : চমৎকার লিখেছেন, জাগ্রত এই লেখার জন্য আপনাকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করু
২২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৫
221079
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকে ও আমার মালিক উত্তম প্রতিদান করুন । আমীন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File