আল কোরআনের সম্মোহনী শক্তি ও আমাদের বিচারক সমাজ। পর্ব - ৬

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:৩৪:০৭ দুপুর

পর্ব ৬

২০০৯ এর নির্বাচনের মাধমে ঐ শক্তিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে যে শক্তি আমার দেশকে একবার তলাবিহীন ঝুড়ি বানিয়েছিল। এই ফ্যাসিষ্ট পরিবারের (বাকশাল অর্থে) জন্য বড় বিপদ ছিল সত নেতৃত্ব। "লুটে পুটে খাই”র রাজনীতির দিন শেষ হয়ে যাবে। জনগণ বিদায় জানাবে নির্বাচনের মাধ্যমে। আল কোরআনের রাজনীতির ব্যাপ্তি ও সুফল একবার জনগন পেলে মানব রচিত মতবাদগুলোকে বিদায় সালাম জানাবে। এই আতঙ্কেই আল কোরআনের ধারক বাহকদের বিতর্কিত করার একটি মোক্ষম হাতিয়ার হল ১৯৭১। ১৯৭৩ সালের যে আইনটি ছিল – প্রথমে ছিল তা যুদ্ধাপরাধ এ্যক্ট। তারপর তা হল শেখ মুজিবের ই আমলে দালাল আইন। কারন শেখ মুজিবের চাচা ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য। ২০১০ সালে প্রথম প্রথম বলা হল যুদ্ধাপরাধের বিচার। তার পর যখন আর্ন্তজাতিক সমাজ এটাকে চ্যলেন্জ করলো তখন তা হয়ে গেল মানবতাবিরোধী অপরাধ। বার বার যেমন বিচারের শিরোনাম পরিবর্তন হয়েছে - ঠিক তেমনি উদ্দেশ্যও পরিবর্তন হয়েছে। আর আমাদের মহান! আদালতের বিচারপতিরাও তাদের বিবেক বন্ধক দিয়ে রায়ও পরিবর্তন করেছেন। যখন যা প্রয়োজন। উদ্দেশ্য হল – গত ৪৩ বছর থেকে বাংলাদেশের গণমানুষের কাছে যারা ইসলাম, মুসলমানদের আইকন, আল কোরআনের একনিষ্ঠ আহবানকারী তাদেরকে বিতর্কিত করা। তাদেরকে ফরমাইশী আদালতের একটা সীল লাগানো।

আজকের রায়গুলো আগামীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়। আমাদের উচ্চ আদালতের কালো গাউন পরা মানুষ সেই পুরানো দিনের ঐতিহাসিক রায়ের উদাহরন দেন। মাননীয় বিচাপতিরা সেগুলো ভাল করে পড়ে আসার জন্য তাগিদ দেন। আল্লামা সাঈদী সাহেবের রায় দেয়া হল। পাঁচ জনের পাঁচ রায়। এরকম চমতকার রায় পৃথিবীতে আরেকটা হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত অনাগত দিনে আজকের বিচাপতিদের সন্তানরাও দিতে পারবে না। বর্তমানে ও ভবিষ্যতে তা অবশ্যই একটাই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আলোচনার শুরুতে আল কোরআনের সম্মোহনী শক্তির দুটি ঘটনা বর্ননা দিয়েছিলাম। সেই ফারুকে আযম (রাঃ) খিলাফতে আসলেন। তখন বিচার ব্যবস্থা – আদালতের স্বাধীনতা কেমন ছিল। অবশ্য তিনি নিজে খলীফাতুর রাসূল (সাঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ) খিলাফতকালে প্রধান বিচাপতি ছিলেন। খলিফা হবার পরই যে কাজটি প্রথম করেন – সেটা হল বিচার ব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পুর্ন আলাদা ও স্বাধীন করা। ঐতিহাসিক ইবনে খলদুন (রঃ) মতে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম শাসক হলেন হযরত ওমর (রাঃ) যিনি সর্বপ্রথম বিচার বিভাগকে শাসনবিভাগ থেকে সম্পুর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বাধীন করেন। মানব ইতিহাসে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফাকে বলা হয় – মহাকালের সফল রাষ্ট্রনায়ক, সত্য – মিথ্যার পার্থক্যকারী।

হযরত ওমর (রাঃ) এর আমলে বিচার ব্যবস্থার একটি তুলনামূলক আলোচনার পূর্বে ইসলামী বিচার ব্যবস্থার উদ্দেশ্য বলা উচিত। কেননা বর্তমান আমাদের বিচার ব্যবস্থার স্বরূপ বুঝতে হলে এটা জরুরী।

“ইসলামী বিচার ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল – অপরাধীকে দমন করা নয়-বরং অপরাধকে দমন করে সুস্থ ও সুন্দর সমাজ ফিরিয়ে আনাই ইসলামী বিচার ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ-উদ্দেশ্য। মানবরচিত আইনে শুধু শাস্তির বিধানই রাখা হয়েছে বা অপরাধীর শাস্তি প্রদানই মুখ্য। ইসলামী আইনে শাস্তিই মুখ্য নয়। বরং মানুষকে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের প্রতি পুন:বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে অপরাধের প্রতি ঘৃণা জন্মানোর প্রচেষ্টা করে। ইসলামী বিচার ব্যবস্থা আত্মার পবিত্রতা সাধন, মন মানসে মলিনতা, শোষণ এবং জৈবিক ও পাশবিক পঙ্কিলতাসমুহ প্রক্ষালন করে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদাকে পুনরুদ্ধার করা। এ লক্ষ অর্জনে দন্ড নয় বরং সংশোধনের প্রযোজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দেয়। হাত, পা ও মাথাকে নত করার আগে মানুষের মনে ব্যকুলতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা। শারীরিক বশ্যতার আগে আত্মার আনুগত্যশীলতাকে উজ্জীবিত করে।”

আমাদের বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় এই দিকগুলোর কোন গুরুত্ব নেই। তাই আইন আছে তার বাস্তবায়ন নেই। আর যা আছে তার সঠিক এবং সমান বাস্তবায়ন নেই। মানব রচিত আইনের দুর্বলতার দিকটি হল এই জায়গায়। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ বড় গলায় অনেক নীতি কথা বলে। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ১৪টি কেইস সবই খালাস পেয়ে গেলেন। একই আদালতে অন্যজনের শাস্তি হয়। তিনি ২০০৯ এর বিতর্কিত নির্বাচনের পূর্বে প্যরোলে মুক্তি প্রাপ্ত আসামী ছিলেন। আমি আদালতের ভাষায় বলছি। প্যরোলে মুক্তি পাওয়া আসামী দেশের প্রধান মন্ত্রীর চেয়ার দখল করে নিলেন। সংবিধানের অভিভাবক যদি আমাদের বিচারপতিরা হন – তাহলে ইতিহাসের কাছে তাদের অবশ্যই জবাব দিতে হবে। আইন ছিল – উচিত ও ছিল – তাকে আগে ১৪টি মামলা থেকে আদালতের মাধ্যমে সমাধান করে শপথ দেয়ার ব্যবস্থা করা।

আগামী পর্ব - ৭

==========

বিষয়: বিবিধ

১২১২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

275976
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৪৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : পিলাচ ভালো লাগলো
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৪
219911
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : প্রথম মন্তব্যকারী হিসাবে আপনাকে পিলাচ দেয়া যায়।
275983
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৫১
আবু ফারিহা লিখেছেন : যথার্থ বলেছেন। ধন্যবাদ।
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৪
219912
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকে ও ধন্যবাদ।
275990
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৯
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


ইসলামী বিচার ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলঅপরাধীকে দমন করা নয়-বরং অপরাধকে দমন করে সুস্থ ও সুন্দর সমাজ ফিরিয়ে আনাই ইসলামী বিচার ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ-উদ্দেশ্য।

মানবরচিত আইনে শুধু শাস্তির বিধানই রাখা হয়েছে বা অপরাধীর শাস্তি প্রদানই মুখ্য।

ইসলামী আইনে শাস্তিই মুখ্য নয়।
বরং মানুষকে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের প্রতি পুন:বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে অপরাধের প্রতি ঘৃণা জন্মানোর প্রচেষ্টা করে।

ইসলামী বিচার ব্যবস্থা আত্মার পবিত্রতা সাধন, মন মানসে মলিনতা, শোষণ এবং জৈবিক ও পাশবিক পঙ্কিলতাসমুহ প্রক্ষালন করে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদাকে পুনরুদ্ধার করা।

এ লক্ষ অর্জনে দন্ড নয় বরং সংশোধনের প্রযোজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দেয়। হাত, পা ও মাথাকে নত করার আগে মানুষের মনে ব্যকুলতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা। শারীরিক বশ্যতার আগে আত্মার আনুগত্যশীলতাকে উজ্জীবিত করে।”



চিন্তাশীল পাঠকের জন্য অনেক খোরাক রয়েছে এতে

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ

276005
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৪
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ ।
276009
১৯ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:০২
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক মোবারকবাদ জানাই।
276064
১৯ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখাটি
276085
১৯ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১০
শেখের পোলা লিখেছেন : " হাত, পা ও মাথাকে নত করার আগে মানুষের মনে ব্যকুলতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা। শারীরিক বশ্যতার আগে আত্মার আনুগত্যশীলতাকে উজ্জীবিত করে।”
ইহাই ইসলামী চিন্তা ধারা৷ আপনাকে ধন্যবাদ৷
276191
২০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৪৪
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ইসলামিক বিচার ব্যবস্থা নিয়ে শেষ প্যারার আগের প্যারার বক্তব্য খুব ভালো লেগেছে।
276234
২০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:২৪
কাহাফ লিখেছেন :
ইসালম ও প্রচলিত বিচার ব্যবস্হা সম্পর্কে অসাধারণ নান্দনিক উপস্হাপনা! মহান আল্লাহ আমাদের কে ইসলামী বিচার ব্যবস্হা সহ প্রতিটা জায়গায় তার আইন বাস্তবায়ণ করার তাওফিক দিন,এই দোয়া।

অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ আপনাকে....। Rose Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File