আল কোরআনের সম্মোহনী শক্তি ও আমাদের বিচারক সমাজ - পর্ব ৩।
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:০৬:১২ দুপুর
২য় পর্বের পর -
==========
আল কোরআন শুনে বা পড়ে শুধুমাত্র মক্কার তাগুত (স্যেকুলার) নেতা ওয়ালীদ বিন মুগিরা নয়। এরকম আরো বেশ কয়েকজনের কথা আমরা ইতিহাসে পাই। সত্য গ্রহনে তাদের জন্য বাধা ছিল দুটি। একটি ছিল অহংকার আর দাম্ভিক জীবন বোধ। আরেকটি ছিল সামাজিক নেতৃত্ব ও প্রভাব। এই বিষয়টা গত শতাব্দীর মুজাদ্দীদ আল্লামা মওদুদী (রঃ) বলেছেন খুবই চমতকার করে। “তিনি বলেছেন – মানুষ গোমরাহ হয় তিনটি কারনে – ১) নিজের নফসের গোলাম হওয়া। ২) সামাজিক রসম রেওয়াজ - যা নিজেদের ঐতিহ্য বা সংবিধানের নামে করা হয়। ৩) মানব রচিত মতবাদ। ওয়ালীদ বা আবু জেহেল অথবা বর্তমান সময়ে যে সমস্ত বিজ্ঞজন আল কোরআনের শিক্ষা গ্রহনে পিছনে আছেন তারা এই তিনটি কারনে ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহন করেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়। ব্যক্তি জীবনে আল কোরআনের প্রশংসা করেন। কিন্তু আল কোরআনকে জীবনের সামগ্রিক অঙ্গনে গ্রহন করতে পারেন না। ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব (সম্মানিত পীর সাহেবরা) তারা তাদের কয়েমী স্বার্থের কাছে পরাজয়বরণ করেন। আর রাজনৈতিক নেতৃত্ব মানব রচিত মতবাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকেন অথবা অনুসারীদের জিম্মি করেন।
নাস্তিকতা নিজেই একটি বিশ্বাস। ধর্মনিরপেক্ষতা অথবা জাতীয়তাবাদ (ভাষা বা ভৌগলিক দৃষ্টিতে) পূর্ণাঙ্গ মতবাদ নয়। এগুলো মানুষের জীবনবোধকে সংকীর্ণ করে। চিন্তাধারা, আচার আচরণ, বোধ বিশ্বাসকে চরমভাবে সাম্প্রদায়িক করে। মানুষ হিসাবে তার দায়িত্ব পালনে অযোগ্য করে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানুষকে মুনাফিক বানায়। আমাদের বিগত ৪৩ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই সত্যটি বেরিয়ে আসবে।
যারা আওয়ামীলীগ অথবা বিএনপির রাজনীতি করেন তারা সবাই কাফের বা মুশরিক এই প্রান্তিক মন্তব্য করা মোটেই সম্ভব নয়। কারন তারা প্রায় সবাই ব্যক্তি জীবনে কোন না কোন ভাবে ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত। নিজেরা মসজিদ মাদ্রাসায় দান খায়রাত করেন। পীর ফকিরদের আস্তানায় যাতায়াত করেন। নির্বাচন মওসুমে তাদের সবার ধর্মের প্রতি ভালবাসা এদেশের জনগন প্রত্যক্ষ করে। তখন এই শ্রেনীর মুনাফিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব সবাই ধর্মনিরপেক্ষতা বা কমিনিষ্ট অথবা চরম প্রগতিশীলতা ভুলে যান।
একই ধরনের চরিত্র ছিল মক্কার আবু জেহেল, ওতবা, শায়বাদের। তারা নিজেরা হারাম শরীফের খাদেম ছিল। বিভিন্ন জন বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতো। তারা মোহাম্মদ (সাঃ) এর ধর্মীয় নেতৃত্ব মানতে এক পায়ে খাড়া ছিল। মোহাম্মদ (সাঃ) যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম, ভাল মানুষ - মক্কার সবাই ছিল সর্বসম্মত।
আসল সমস্যা ছিল – মোহাম্মদ (সাঃ) কে তাদের জীবনের সামগ্রিক আদর্শ মানতে।তাদের আল কোরআনকে ব্যক্তি জীবনে মানতে কোন সমস্যা ছিল না। বড় বাধা ছিল – আল কোরআনের সামাজিক নির্দেশনা। তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয় আশয় নিয়ে কথা বলা মোটেই সহ্য করতো না। বিরোধ বা কাশমাকাশ ছিল এই জায়গায়।
আমাদের সমাজেও ঐ একই কারণ। আওয়ামীলীগের প্রধান শেখ হাসিনা নিজেকে একজন খাটি মুসলমান হিসাবে প্রচারে আনন্দ পান। শুধু নিজে নয় জাতিকে তার ধর্মীয় পরিচয়টা জানাবার জন্য একবার হাতে তসবি, একবার মাথায় পট্টি, মাজার জিয়ারত,ওমরা ইত্যাদি মুনাফিকি করেন। মদিনার সনদে দেশ শাসন করছেন এমন কথাও তিনি বলেছেন পবিত্র সংসদে। আমি মনে করি - এটা তার ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি।রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার তার ব্যক্তিগত কৌশল। তিনি খুবই চমতকার ভাবে ধর্মকে ব্যবহার করেন।
কিন্তু ঐ একই মানুষ রাজনৈতিক জীবনে প্রকৃত আল কোরআনের অনুসারীদেরকে হত্যা করছেন- নিজ দলের কর্মী অথবা আইন শৃংখলা বাহিনী দিয়ে। ক্যঙ্গারু আদালত, কসাই মানসিকতাসম্মন্ন বিচারপতি, ফরমায়েশী রায় দিয়ে আল কোরআনের বাহকদেরকে শতাব্দীর চরম নিন্দনীয় কাজটি করেছেন।
এখানে বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হল – কোনটা সত্য। আল কোরআনের প্রভাব বা মানার দিকটা কতটুকু মানতে পারছেন আমাদের সম্মানিত রাজনীতিবিদগন। একই উদাহরণ হল বিএনপির প্রধান নেতৃত্বের। বিষয়টা হল আল কোরআনের আদেশ নিষেধ মানা। আচরণই প্রকাশ করে মানুষের চরিত্র। আল কোরআনের সাথে আওয়ামীলীগ বা বিএপির আচরণ বা চরিত্র প্রায় সম পর্যায়ের।এক দল প্রকাশ্যে আর অন্য দল গোপনে। আওয়ামীলীগ প্রকাশ্যে আল কোরআনের ধারক বাহকদের হত্যা করার সমস্ত আয়োজন করেছে - অন্য দল বিএনপি সেই আয়োজনে নিশ্চুপ থেকে সহযোগীতা করেছে। দুই দলের পার্থক্য এই জায়গায়।
উপসংহার হল - যে কয়টি কারনে ওয়ালীদ বিন মুগিরা মক্কার স্যেকুলার নেতৃ্ত্ব আল কোরআনের সাথে,ইসলামের সাথে – দ্বীনের দ্বায়ীদের নির্যাতন করেছিল। ঐ একই কারনে আজকের মানব রচিত কুফরী মতবাদের নেতৃত্বরা তাই করছে।
মক্কায় যে বিলাল ইবনে রাবাহকে উত্তপ্ত বালূকায় চিত করে বুকের ওপর প্রকান্ড পাথর চাপা দিয়ে যারা সেদিন আনন্দ পেত। আজ বাংলাদেশে আইন, আদালত,বিচারকের আসনে বসে সেই বিলালের যোগ্য উত্তরসুরী দেলাওয়ার বা ডঃ মাসুদকে রিমান্ড দিয়ে একই আনন্দ পায়।
=======
আগামী পর্বে - ৪
বিষয়: বিবিধ
১৭২০ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বর্তমান অধিকাংশ নেতারা স্বীয় স্বার্থে নফসের গোলামীর পাশা-পাশি প্রচলিত ঐতিহ্য বাচানোর অজুহাতে মানব রচিত মতবাদের বিস্তার ঘটায় সমাজে। উপস্হাপনার আকর্ষণীয়তায় আকৃষ্ট হয়ে সাধারণ জনতাও সম্মোহিত হয়ে যায়।
ইসলামী আন্দোলনে নিবেদিত ব্যক্তিবর্গ কে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্হা এখনো ই গ্রহন করতে হবে।
অসাধারণ সুন্দর লেখনীর জন্য অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ জানাচ্ছি.....।
আপনার কলম তীক্ষ্ণতর হচ্ছে দিন দিন-
আল্লাহতায়ালা আরো তীক্ষ্ণধার করুন
জাযাকাল্লাহ
আবার সাহাবী রাঃ রা আল্লাহর সুক্ষাতিসুক্ষ বিচার করার যে ক্ষমতা এবং সে প্রেক্ষিতে অবাধ্যতার জন্য আল্লাহ যে ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন - তাও আমরা হৃদয়ংগম করতে যেন পারছি না। আমরা যেন তা ঠিক ঠিক আমলে নিচ্ছি না। মূলতঃ ঠিক ঠাক ভাবে নিলে - করা অপরাধের জন্য - ব্যার্থতার জন্য রীতিমত কাঁপতে থাকার কথা।
আমার মনে হয় আমরা মুসলমানরা ইসলামের যথাযথ শিক্ষাকে যথাযথভাবে আমাদের জেনারেশানের কাছে পৌছাতে পারিনি বা পারছিনা - সো আমরা জেনারেশান টু জেনারেশান দিনকে দিন - লিটারেলী একধরনের 'লস্ট জাতি'র মত হয়ে যাচ্ছি। আমরা ট্রু ইসলাম হারিয়ে ফেলছি।
যার জন্য আমরা আমাদের নেতৃবৃন্দের কাছ হতে অমন অজ্ঞ, মূর্খ ও অর্বাচিন এর মত লাগা কথা, কর্ম ও আচরন দেখতে পাচ্ছি।
আল্লাহ আপনার এই লিখাকে - এই পরিশ্রমকে - আগামী নেতৃত্বের চিন্তা ও ভাবনায় শক্তি জাগাতে এবং কোরান অধ্যায়নে ও বুঝতে উৎসাহিত করার - উছিলা করুন এটা আজকে আমার প্রার্থনা।
---------------------------------
তবে আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুই দলকেই ক্ষমতার মসনদে বসানোতে জামাতের বেশ অবদান আছে।
৯৬ তে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনতে জামাতের সমর্থনের খেসারত এখন বোধহয় আওয়ামীলীগের হাত থেকেই পাচ্ছে জামাতে ইসলামী। সাথে সাথে মুসলিম উম্মাহও খেসারত গুণছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন