আল কোরআনের সম্মোহনী শক্তি ও আমাদের বিচারক সমাজ - পর্ব - ১

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১২ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:২৯:৪৮ দুপুর

পর্ব - ১

ফারুকে আযম হযরত উমর ইবনূল খাত্তাব (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহন সম্পর্কে ইতিহাসে দুটি ঘটনা পাওয়া যায়। এই দুটি বর্ণনার মূল বক্তব্য একটি। তা হচ্ছে হযরত উমর (রাঃ) কুরআনের কিছু অংশ পড়ে অথবা শুনে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেন। এটা আল কোরআনের মোজেজা। মোজেজা হল – যা সমকালীন অবস্থাকে একেবারে আজীজ (তা’জব) করে দেয়। এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রেরিত নাবী রাসূলদের মিশন বাস্তবায়নের জন্য সহকারী শক্তি হিসাবে দেয়া হত। নাবী রাসূল ছাড়া পৃথিবীর কাউকে এই শক্তি দান করা হয়নি। অবশ্য প্রত্যেক নাবী রাসূলকে তিনটি বিষয় সমান ভাবে দেয়া হয়েছিল।

এক হল – হুসনে খুলক বা সমকালীন সময়ে সবচেয়ে উত্তম চরিত্র।

দ্বিতীয় হল – ওহী যা রুহুল আমীনের (জিব্রাইল আঃ) মাধমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য জীবন ব্যবস্থা। বা সৃষ্টির জন্য সৃষ্টার পক্ষ থেকে জীবন পরিচালনার বিধি বিধান।

তৃতীয়টি হল – মোজেজা।

মানবতার বন্ধু বিশ্ব নবী মুহাম্মদকেﷺ (সাঃ) প্রায় তিন হাজার মোজেজা দেয়া হয়েছিল। এটা ইমাম গাজ্জালী (রঃ) এর মত। তবে তিনি তার তথ্য সুত্র দেননি। অতীতের সকল নবী রাসূলদেরকে যে সমস্ত মোজজা দেয়া হয়েছিল। তা তাঁদের জীবদ্দশায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে লাগাতে পেরেছেন। কিন্তু তাঁদের ইন্তিকালের পর উম্মতরা আর সেই মোজেজা কখনো ব্যবহার করতে পারেননি। যেমন হযরত মুসা (আঃ) এর লাঠি। অথবা হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মান্ধ ব্যক্তির চিকিতসা। এই দুই নবী ও রাসূলের যত উম্মতের দাবীদার আছেন। তারা এখন সে সমস্ত মোজেজা ব্যবহার করতে পারেন না।

পৃথিবীতে একমাত্র ব্যতিক্রম হল আল কোরআন। আল কোরআন নাযিলের সময় যেমন মোজেজা ছিল ঠিক অবিকল আজ ও আছে। এটা থাকবে চিরকাল তথা কিয়ামত পর্য়ন্ত। এই চ্যালেন্জ আল কোরআন নিজেই দিয়ে রেখেছে।

আল কোরআন মানুষের হৃদয়কে সরাসরি আলোড়িত করে। আল কোরআনের পাঠক শ্রোতা উভয়কে সমান ভাবে সত্যের কাছে নিয়ে আসে। এই সত্যকে পাওয়া এবং সে অনুযায়ী আ’মাল করার বিষয়টা হল মূল বিবেচ্য। আমরা যারা মুসলমান তাদের সমস্যা হল – কোরআনের সাথে বাস্তব আচরণ। আজ প্র্যাকটিক্যাল এবং থিওরিটিকাল মুসলমানদের সমান চরিত্র। নিয়মিত কোরআন পড়েন অথবা শুনেন এমন মুসলমানরা আল্লাহর এই আখেরী কালামের বাস্তবতা নিয়ে নানা মত - নানান চিন্তা।বিতর্ক তো আছেই।

আমরা ফারুকে আযমের ইসলাম গ্রহনের ঘটনা জীবনে কতবার শুনেছি। আমরা নিজেরাও বলি। কিন্তু হযরত ওমর (রাঃ)এর পরিবর্তন কি কারণে হল, তা কারোর দৃষ্টি আকর্ষন করে না। অথবা আমাদের সম্মানিত ওয়াজিন অথবা আলোচক কখনো এই পয়েন্ট অব ভিউতে ওয়াজ নসিহত করেন না।

আল কোরআনের আকর্ষণও অপ্রতিরোধ্য, সম্মোহনী শক্তি আমাদের বাস্তব জীবনে আলোচিত, চর্চিত হয় না। এর ফল হল - আল কোরআন থেকে ব্যক্তি ও সামাজিক উপকার পাই না। আল কোরআনকে আমরা একটি পঠিত ধর্মগ্রন্থ হিসাবে গ্রহন করেছি। কখনো এর সামাজিক বাস্তবতা এবং তার বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তা করিনি। আর যারা এর চিন্তা করেন তারা যত না থিওরিটিকাল ততটা প্রাকটিকাল নয়। এটা বাস্তবতা।

আমাদের এই লেখায় দুটি ঘটনা আলোচনা করতে চাই। যা সম্পুর্ণ বিপরীত ফলাফল। দুইজনই সমাজের নেতা। দুইজনের চিন্তাধারা স্যেকুলার। দুইজনই তাদের সময় সমাজের আলোচিত এবং বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। দুইজনই কোরআন শুনেছেন। কিন্তু এর বাস্তবায়ন, আ’মাল সম্পূর্ণ বিপরীত।

একজন হলেন ফারুকে আযম হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)। আরেক জন হলেন – ওয়ালিদ বিন মুগীরা।

# হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) =

ফারুকে আযম (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণ প্রসঙ্গে হরযত আতা ও মুজাহিদ এর রিওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন, ইবনে ইসহাক আব্দুল্লাহ বিন আবু নাজীহ থেকে সংকলন করেছেন, যা ফারুকে আযম (রাঃ) নিজে বলেন –

‍‍‌আমি সেদিনও ইসলাম থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছিলাম, শরাব পানে মত্ত থাকতাম। আমাদের এক অডিটরিয়াম ছিলো, যেখানে কুরাইশগণ এসে জমায়েত হতো। সেদিন আমি তাদের সন্ধানে গেলাম কিন্তু কাউকে সেখানে পেলাম না। চিন্তা করলাম অমুক শরাব বিক্রেতার নিকট যাবো, হয়তো সেখানে তাদেরকে পেয়েও যেতে পারি। কিন্তু সেখানেও তাদের কাউকে আমি পেলাম না। তখন আমি সিন্ধান্ত নিলাম, মসজিদে হারামে গিয়ে তাওয়াফ করিগে। সেখানে এলাম। দেখলাম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সালাতে মশগুল। তিনি সিরিয়ার দিকে মূখ করে সালাতে দাঁড়িয়েছেন। কা’বা তাঁর ও সিরিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত। তাঁকে দেখে আমি ভাবলাম, আজ আমি চুপি চুপি শুনবো যে, তিনি কি পড়েন। আবার এটিও মনে হলো, যদি শোনার জন্য কাছে চলে যাই তবে তো আমি ধরা পড়ে যাবো। এজন্য আমি হাতিমের দিক থেকে এসে খানায়ে কা’বার গেলাফের নিচে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার ও তাঁর মাঝে একমাত্র কা’বার গেলাফ ছাড়া অন্য কোনো আড়াল ছিলো না। যখন আমি নবী করীম (সাঃ) এর তিলাওয়াত শুনলাম তখন আমার মধ্যে এক ধরনের ভাবান্তর পরিলক্ষিত হলো। আমি কাঁদতে লাগলাম। এরি পরিণতিতে ইসলাম সৌভাগ্য আমার হয়।



আগামী পর্বে ।

বিষয়: বিবিধ

১৫৮৭ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

273491
১২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:১০
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : চমৎকার শিক্ষণীয় পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। যাজাকাল্লাহু খাইর Praying
১২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:২১
217529
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য মোবারকবাদ। আগামী পর্বে মন্তব্য পাবো ইনশাআল্লাহ।
273498
১২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:২০
আফরা লিখেছেন : অনেক ভাল পোষ্ট । জাজাকাল্লাহ খাইরান !
১২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:২২
217531
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকেও জাজাকাল্লাহ খাইরাহ। সাথে থাকবেন।
273534
১২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৬
সাদাচোখে লিখেছেন : You are right. We Muslim know about this 'mujeja', read about it, talk about it - but failed immensely to explot this gift of Allah sw to benefit us personally, socially, politically.

It would be always nice and beneficial - if somehow we can sincerely submit ourselves on this aspect of Qur'an - and look into the solution of any problem of any nature - believing its meraculous power - we will surely be benefited insaallah.

Thanks for wring on this issue. (Sorry for using english kewboard)
273545
১২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৪
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকে মোবারকবাদ। ইংরেজী হলেও পড়তে পারছি।আপনার লেখা পড়ে অন্যরা উপকৃত হবে।
ইংরেজীতে মন্তব্য করার জন্য আবারও মোবারকবাদ।
273550
১২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৫
মুিনর লিখেছেন : আমরা মুসলমান হিসাবে অনেকে বিশ্বাস করি পবিত্র কোরআন একটি মোজেজার গ্রন্থ, কিন্তু সেই মোজেজা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণে আমাদের মুসলমানদের এ দুর্দশা। আপনার লেখা অনেক চমতকার। আশা করি আমরা যদি সব কয়টি পর্ব পায় এবং পড়তে পারি উপকৃত হব।
273555
১২ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০০
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আমার প্রত্যাশাও এরকম। ইদানিং দেখছি আপনি ব্লগে আসেন কম। আপনার অর্থপূর্ণ মন্তব্য আর লেখা থেকে আমাদেরকে মাহরুম করছেন। আশা করছি আপনি নিয়মিত হবেন।
273594
১২ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা আলকুরআন এর এই মুজিজা কে স্রেফ রোগ মুক্তির উপায় হিসেবে মনে করছি।
অনেক ধন্যবাদ
১৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৪৬
217734
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার সাথে একমত। এটাই আমাদের দুভার্গের কারন। মোবারকবাদ।
273617
১২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:০৬
শেখের পোলা লিখেছেন : হঠাৎ শেষ করলেন৷ সাথে আছি৷ জাজাকাল্লাহ৷
১৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৪৭
217735
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : সাথে আছেন তাই সাহস পাই। আশা করছি আগামী পর্বেও মন্তব্য পাবো। মোবারকবাদ।
273628
১২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:১৭
বুড়া মিয়া লিখেছেন : হযরত উমরের (রা.) এই ঘটনাটা বেশ মজার; নিজের মনে মনে তার প্রশ্ন, আর রাসূল (সা.) এর তিলাওয়াতে প্রশ্নের উত্তর ...

খুব ভালো লাগলো
১৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৪৮
217736
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার ভাল লেগেছে এটা আমার বেশী ভাল লাগলো।
১০
273636
১২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:২৫
ফেরারী মন লিখেছেন : শেখের পোলা লিখেছেন : হঠাৎ শেষ করলেন৷ সাথে আছি৷ জাজাকাল্লাহ৷

আমার প্রশ্ন তাই হঠাৎ শেষ।
১৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৪৯
217737
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : হঠাৎ শেষ করিনি। আগামী পর্বের জন্য আপনাকে আমন্ত্রন। সাথে থাকার জন্য আন্তরিক মোবারকবাদ।
১১
273647
১২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৩৭
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : মাশআল্লাহ ! বেশ ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৫০
217738
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ। দোয়া চাই। এবং সাথে থাকার প্রত্যাশা।
১২
273664
১২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৫৮
আবু ফারিহা লিখেছেন : যাযাকাল্লাহ..................। অাগামী পর্বের অপেক্ষায়............।
১৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৫০
217739
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার জন্য যাজায়ে খায়ের কামনা। আগামী পর্বে পর্যালোচনামূলক মন্তব্য কামনা করি।
১৩
273669
১২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:১১
জহুরুল লিখেছেন : ভালো লাগলো
১৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৫১
217740
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : ধন্যবাদ। আগামী পর্বে আপনাকে আমন্ত্রণ রইল।
১৪
273792
১৩ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:০১
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : সহমত
১৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:০৩
217888
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : মোবারকবাদ।
১৫
273932
১৩ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৯
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শিক্ষনীয় পোস্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
১৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:০৩
217889
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য মোবারকবাদ।
১৬
274102
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৩৫
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


পড়লাম, জাযাকাল্লাহ.. দোয়া করি
১৭
274247
১৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:১৮
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : মোবারকবাদ। আপনার দোয়া আমাদের সবার জন্য প্রয়োজন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File