নতুন জামাইর আদর - কদর - এবং জীবন্ত শহীদের সাক্ষাত।

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:২৭:০৮ দুপুর

এক)

ইফতার করার পর জানতে চাইলাম আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশান কত দুর। জানলাম মাত্র কয়েক মিনিটের রাস্তা।অবশ্য আমি ক্লান্ত ছিলাম। কারন বাই রোডে যাওয়া হয়েছিল শুশুরবাড়ি।কিন্তু আল্লামা সাঈদী নামটি শোনার পর শরীরটা একেবারে সতেজ হয়ে গেল।অচেনা এক শিহরণ পেয়ে বসলো।তাই দেরী করা মোটেই ঠিক হবে না।

কামরুল কে বললাম - চল এখনই যাবো।কামরূল আমার পূর্ব পরিচিত।আগাগোড়া শিল্পী মানুষ।অনেকটা আলাভোলা টাইপের।খান পরিবারের সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর আমি তার খালূ হয়েছি। আগে ছিলাম পাবলিক আংকেল।

তিনটা মোড় পার হলেই সদর রাস্তার উপর আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন।রিক্সা থেকে নেমেই মসজিদের দিকে যেতেই চোখে পড়ল বুলবুল সাহেবের কবর(মাওলানা রফিক বিন সাঈদী (রঃ))। দাদী এবং নাতির পাশাপাশি কবর। একেবারে মসজিদের লাগোয়া ই দুটি কবর। মনে হল আরো কিছু জায়গা আছে।সবই পরিকল্পিত।

মসজিদের বারান্দার সাথেই বড় ব্যানার। যাতে লেখা কবর জিয়ারতের সঠিক ইসলামী নিয়মাবলী।এটা খুবই জরুরী বিষয়।মসজিদের পাশের কবরস্থানে এরকম ব্যবস্থা হলে কবরবাসীদের যেমন উপকার হয় - তেমন নানান বেদআত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।এই পদ্ধতিটা খুবই ভাল লেগেছে। আমার চোখে পড়েনি অন্য কোথাও। যে কয়েকটা দেখেছি সেগুলোতে মৃত মানুষটির ম্যরাথন নাম খুজতে খুজতেই যিয়ারত শেষ।

দুই)

এশার সালাতের পর তারাবীহ শুরু হল। তেলাওয়াত,মসজিদের পরিবেশ,মুসল্লী - সব মিলিয়ে একটি রুহানী পরিবেশ। বিশ রাকাতই সালাত পড়া হল।হাফেজ সাহেব দুজনই বয়সে নবীন।তাদের তেলাওয়াতের সাথে মুসল্লীরা সাথে ছিলেন বলে মনে হল।যা আমার দেশের অধিকাংশ মসজিদগুলোতে ঈমামদের ঠিকদারীতে চলে। মুসল্লিরা সালাতের শুরু আর শেষটা বুঝতে পারেন। মাঝখানের কোরআন তেলাওয়াত সবই হাফিজদের দায়িত্বে থাকে। তারা কি পড়লেন,কোথায় পড়েন, কাদের জন্য আওয়াজ করে পড়েন- তা সবই তাদের ব্যাপার। পিছনের মুসল্লিরা তাদের দুনিয়াদারীর হিসাব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। শুধু রুকুতে যাবার আগে হাফিজ সাহেব থেকে একটা সিগনাল পান। অথচ তারাবীহ শব্দের অর্থ ই হল - থেমে থেমে।

সালাতের পর মাদ্রাসার একটি রুমে দেখা হল একজন জীবন্ত শহীদের সাথে।তিনি জিয়ানগর উপজেলা নির্বাচনে ইলেকশনলীগের কিলিং মিশনের আক্রান্ত। মাথার খুলিটা (অর্ধেক) উপড়ানো ছিল। হায়াতের মালিক হলেন আল্লাহ। তিনি একা দৌড় দিয়ে পার হতে পারতেন। কিন্তু সাথীদেরকে পালাবার সুযোগ তৈরী করে দিয়ে হায়েনালীগদেরকে নিজের কাছেই রেখেছিলেন। আমি যখন শুনছিলাম - আমার কাছে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল - ওহুদ আর খন্দকের দৃশ্য। সাহাবীরা যুদ্ধের ময়দানে আপন সাথীদেরকে অগ্রারাধিকার দেয়ার ইতিহাস এতদিন প্রেরণার জন্য পড়তাম আর বলতাম। আজ তা আমার সামনে জীবন্ত হয়ে কথা বলছে।ভাইটি যদি এই কাজটা না করতেন তাহলে সেদিন ৮জন ভাইকে শহীদ হতে হত।

আমি মাথায় চুমু খেলাম কয়েকবার।ভাইটির মাথায় হাত বুলালাম কয়েকবার।এখনও মাথার মধ্যভাগে ফাকঁ রয়েছে।বিদায় নেবার সময় বুকে জড়িয়ে ধরে নিজের এবং ছেলে মা’য়ানের জন্য দোয়ার দরখাস্ত করে বিদায় হলাম।


তিন)

বাসায় এসে দেখি সবাই জামাই বাবার অপেক্ষায়। খাওয়া দাওয়ার আয়োজন চলছে। বেগমকে বললাম এখন আবার কেমন করে খাবো। বললেন - কথা না বাড়িয়ে হাত মুখ ধুয়ে আস।অনেক দেরী করেছ।

আস্ত একটা মুরগীর রোষ্ট।পাশের প্লেইটে গলদা চিংড়ি দুটো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাজা ইলিশের প্লেইট টা তখনও হাজির করা হয়নি।

মুরগী খেতে গিয়ে হল বিপত্তি। আমি জানতাম না -মুরগীর ভিতর ডিম ও থাকে। নিয়ম হল - মুরগীর ডিম বের করতে হবে এমন ভাবে যেন মুরগী টের না পায়। আমি বোকার মত মুরগীর রান ধরে টান দেয়াতে সবার হাসির খোরাক হলাম। তার পর মাষ্টার (ভাগ্নি জামাই) সাহেব আমাকে উদ্ধার করলেন। দেখলাম তিনি খুবই ভাল জানেন।


কি খাবো,কোনটা খাবো। সবই তাজা। জীবনে তাজা ইলিশ কখনো খাইনি। আর গলদা চিংড়িতো দেখিনি।সব খেতে মন চাইলেও পারছিনা। দেখছি আর আফসোস করছি।তার পরও যা পারি তার চাইতে তিন ডাবল বেশী খেলাম।

রাতে ঘুমাতে হবে। আবার সেহরী খেতে হবে।ঘুমাতে গিয়ে বুঝলাম - আমার পেটে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। কয়েকবার শান্তির ঘরে গেলাম। সেহরী আর খাওয়া হল না। বিছানা থেকে উঠবো সেই শক্তি আর রইল না। ঘরের সবাই চিন্তিত। কি হল জামাইর। এরকম কেন হল।বেগম সাহেবকে খুবই চিন্তিত মনে হল।আমি বেগমকে কারণটা বললাম।

জীবনে কখনো এরকম তাজা ইলিশ আর চিংড়ি কখনো খাইনি। আমার ষ্টমাক তাজা খেয়ে অভ্যস্ত নয়। এই বয়স পর্যন্ত যা খেয়েছি তা সবই ফ্রিজের। তাজা ইলিশ আর চিংড়ি পেঠে সয়নি। তাই এই সমস্যা।আমার বর্তমান শুশুর সাহেব সেহরীর সময় মাথায় হাত বুলালেন। একটু সেহরী খাবার জন্য ডাকাডাকি করলেন। শুধু তাকালাম তার দিকে। কিছু বললাম না।

আমার শুশুরকে আমি পাইনি। তিনি ইন্তেকাল করেছেন ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে যা ছিল পবিত্র রমজানের ১৯ তারিখ। কিন্ত শুশুরের বড় নাতি মামুনুর রশীদ খান (রাব্বি) ঠিকই শুশুরের ভুমিকা পালন করেছে।সে হয়তো তার দাদার মত হয়েছে।মন ভরে তার জন্য দোয়া আসে।

পিরোজপুরের বেড়াতে গেলে ঐতিহাসিক হাফিজের মিষ্টি না খেয়ে কেউ আসবেন না। যদি সালাতের সময় তা বন্ধ থাকে তাহলে অবশ্যই দুলাল ঘোষের মিষ্টি খাবেন।দাওয়াত রইল।

বিষয়: বিবিধ

১৪০৯ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

270206
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৫৬
নিউজ ওয়াচ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:১৭
214189
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আমারও ভাল লাগলো।
270212
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৫৯
সুশীল লিখেছেন : মাইনাস
270217
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:১৮
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : মাইনাস দেয়াতে বেশ খুশি। কারন - এ প্লাসরা ভর্তি হতে পারছে না। আপনাকে মোবারকবাদ।
270263
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:২১
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : এই ধরণের খাবার দাবারের আয়োজনে যদি আবার শরীক হতে চান...তবে দ্য স্লেভ ভাইজানকে নিয়ে যাবেন। আপনার পেট ভালো থাকবে।

এটা কবেকার ঘটনা?
০১ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:২৯
214452
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আমার পক্ষ থেকে সেই দাওয়াত দিয়ে দেন। আগামীতে যখন হবে ভাইজানকে নিয়ে যাব।
270302
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আহহা!!!
এই রকম আয়োজনের জন্য মেন হয় আপনি উপযুক্ত কাজটি করেছেন! বেশি খাইলে কিন্তু আপনাকে পেটুক উপাধি দেওয়া হতো।
তবে এইটা ঠিক যে তাজা খাবার আর আমাদের পেটে সয়না!
প্রয়োজনে আমাকে ও দ্য স্লেভ ভাইকে মুরিদ হিসাবে নিয়ে যেতে পারেন।
জিবন্ত শহিদ ভাই এর কথা শুনে শুকরিয়া আদায় করছি।
কবর জিয়ারতের সঠিক নিয়ম নিয়ে একটি পোষ্ট দেননা।
০১ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৩০
214453
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার নির্দেশ মান্য করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
270351
০১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৪৭
শেখের পোলা লিখেছেন : আগে জানলে মিষ্টি খেয়েই আসতাম৷ আবার যদি পিরোজপুর যাই চেষ্টা করব৷ তা শান্তি ঘরে কি পরেও যেতে হয়েছিল?
270508
০১ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৩১
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আমার দাওয়াত গ্রহন করার জন্য আপনাকে মোবারকবাদ।
270730
০২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৫৫
সাগর কন্যা লিখেছেন : শুকরিয়া খুব সুন্দর লেখা।
270854
০২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:১১
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকেও শুকরিয়া।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File