তারেক জিয়ার নতুন ককটেল ও পিতার ধর্মযাত্রার শানেনুযুল।
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:৪৪:১১ সন্ধ্যা
এক)
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গত সোমবার ইস্ট লন্ডনের একটি মিলনায়তনে জনাব তারেক জিয়া বক্তৃতা করেছেন।তার অনেক বোমা ফাটানো এবং একই সাথে বিতর্কিত বক্তৃতার মধ্যে একটি ছিল ------ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে প্রান্তিক মন্তব্য।
তারেক জিয়ার বক্তৃতা শুনে, পড়ে যতটুকু বুঝতে পেরেছি -তাতে মনে হয়েছে তারেক জিয়া নতুন ইতিহাস চর্চা শুরু করেছেন।তার এই ইতিহাস চর্চাকে কেউ কেউ স্বাগতও জানাচ্ছেন। দেশের সাধারণ পাবলিক মনে করছে-দেরীতে হলেও বাকশালী পরিবারের বড় সন্তান শেখ হাসিনার সমকক্ষ একজন তৈরী হতে যাচ্ছেন-বহুদলীয় গনতন্ত্রের বড় ছেলে তারেক রহমান। তবে রুচিহীন, অভদ্র, ঝগড়াটে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনো শেখ হাসিনার সমান হতে পারেন নি তারেক জিয়া। আরো কিছু দিন হয়তো লাগবে।
ইতিহাস নিয়ে এই ঠেলাঠেলির বক্তৃতার মধ্যে তারেক জিয়া ধর্মকে নিয়ে আসলেন।
যারা তাকে এই পরামর্শ দিয়েছে, তারা ভাল পরামর্শ দেয়নি। বরং হাওয়া ভবন করার মত আরেকটি বড় ভুল করলেন তারেক জিয়া। এক হাওয়া ভবন করে তাকে পরম খেসারত দিতে হয়েছে। আর এবার যে মন্তব্য করেছেন - তাতে তারেক জিয়ার রাজনৈতিক কবরও হতে পারে।
====================
দুই)
তারেক জিয়া যা বলেছেন তা কি সত্যি বলেছেন? এটা তার নতুন উপলব্ধি? তারেকের রাজনীতি আগামীতে কেমন হবে, কি হবে, কিভাবে হবে ইত্যাদি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে।
লন্ডনে তারেক জিয়া যেখানে বসবাস করেন- যারা তার বন্ধুবান্ধব, শুভাকাংখী-সবার পরিচয় না জানলেও কয়েকজন সম্পর্কে বেশ খবর আছে। এটাতে কোন রাজনীতি নেই। বরং এগুলো আপন আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে যারা নিজে থেকেই তারেক জিয়া সম্পর্কে বলেন।
হাওয়া ভবন আমলের খবর জানা যেত তার কাছের একজনের কাছ থেকে। তিনি ১/১১ এর সরকারের আমলে আশ্রিত ছিলেন লন্ডনে।
এই দুই সুত্রের খবরে অনেকে নিশ্চিত ছিলেন - তারেক জিয়ার কপাল বোধহয় অনেকটা মা’ খালেদা জিয়ার ভাগ্যের মত। বেগম খালেদা জিয়া গৃহিনী থেকে দেশনেত্রী তারপর প্রধানমন্ত্রী।
তারেকের ব্যাপারে এমন আশা করেন অনেকে।
তবে আমি সন্দেহবাদিদের দলে ছিলাম।এখনো আছি।
আমাদের অনেক পরিচিতজন অনেক কথাই বলতেন এবং এখনও মাঝে-মধ্যে বলেন-তারেক জিয়া পরিবর্তিত হয়েছেন।
তিনি তার পিতাকে জানতে পেরেছেন।
জেনারেল জিয়াকে তিনি আত্মস্থ করতে পেরেছেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে তিনি ভাল করে পড়তে পেরেছেন।
লন্ডনের একাকিত্ব জীবনের এটা তার বড় সফলতা।তাই বিএনপির ভবিষ্যৎ উজ্জল।আরো অনেক আশাবাদ।
==================
তিন)
আমার কাছে প্রমাণ নেই-তবে বলতে পারি। ডিগ্রি অর্জন করা এক বিষয় আর পড়ালেখা করা আরেক বিষয়। বড় ডিগ্রি অর্জন করেছেন আমাদের আরেক যুবরাজ। জয় হাসিনার কথা বলছি। তার ডিগ্রি কম না। মা’ হাসিনা থেকে অনেক উচ্চ এবং বেশী। কিন্তু আসিফ নজরুলের মত বিশ্লেষকের সন্দেহ হল-জয় হাসিনা আসলেই লেখাপড়া করেছেন-কি না?
তারেক জিয়া লন্ডনে কি করেছেন - তা প্রকাশিত হচ্ছে, হয়েছে আলোচিত বক্তৃতায়।
তারেক জিয়া সত্যি পরিবর্তিত হয়েছেন?
তার গর্বিত পিতাকে কতটুকু আত্মস্থ করতে পেরেছেন।
এক নজরে জেনারেল জিয়াঃ
(এক) মেজর ছিলেন। (দুই) জেনারেল ছিলেন।(তিন)শহীদ প্রেসিডেন্ট হলেন।এই হয়ে উঠার গল্প তারেক জিয়ার ভাল করে পড়া প্রয়োজন এবং উচিত। কারন তারেক জিয়া বাংলাদেশ নামক দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান। বাবার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হতে চান।
আমি মনে করি তারেক রহমানের পিতাকে বাংলাদেশের সাধারণ গণমানুষ যে কয়টি কারনে স্মরণ, বরণ, মর্যাদা দিয়ে থাকে তা হচ্ছেঃ
এক) মেজর জিয়া ক্ষমতায় এসে-৫৬ হাজার বর্গমাইলের মৌলিক বোধ বিশ্বাসের রাজনীতি করেছেন। আরো স্পষ্ট করে বললে - দেশের অধিকাংশ মানুষের ঈমান আকিদাকে ধারণ করে রাজনীতির সুচনা করেছিলেন। অবশ্য শেষের দিকে জিয়ার রাজনীতিতে বামপন্থী, রামপন্থীরা প্রভাব বিস্তার করে। প্রাক্তন মুসলিম লীগার সহ তখনকার জিয়ার বিএনপি ছিল একটি ককটেল পার্টি। তাই তাকে রাজনৈতিক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল।
দুই) রাজনীতিতে মাইনর এক জিয়া আজ পর্যন্ত মেজর জিয়া রইলেন। তার আরেকটি কারন হলো - তার সততা। সততার ক্ষেত্রে আপনার পিতা দেশের মানুষের কাছে এখনও সমান জনপ্রিয়। দেশের মানুষ জেনারেল জিয়াকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া বলার অন্তর্নিহিত কারণ হল এই জায়গায়।
অথচ আপনার রাজনীতিতে অভিষেক হতেই দুর্নিতির বরপুত্র হিসাবে পাবলিক পারসেপশান তৈরী করেছেন। সত্য-মিথ্যা যাই হোক। রাজনীতিতে পারসেপশান কিন্তু একটা বড় ফ্যাক্টর।
==================
চার)
আলোচিত এই বক্তৃতায় তারেক জিয়া-বলেছেন -
“রাজনীতিতে ধর্মের অবদান থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দল হতে পারে না।”
আপনি রাজনীতিতে নবাগত। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আবহে আপনার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। বর্তমানে অবসর, সরকার বলছে পলাতক। যাই হোক।
বাংলাদেশের রাজনীতি করতে হলে আপনাকে বিষয়টি পরিস্কার করতে হবে - কারন -
প্রদত্ত বক্তব্যটি ইসলামের সাথে যায় না। অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে এটা চলে। কারন খৃস্টান, হিন্দু, ই্য়াহুদী, জৈন, পারসিক ইত্যাদি এগুলো ধর্ম।
কোরআন, সুন্নাহতে কোথাও ইসলামকে ধর্ম বলা হয়নি। বরং আরবীতে বলা হয় আদদ্বীন। আর দ্বীন শব্দের অর্থ হল জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম এবং অন্য ধর্মের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হল এই পয়েন্টে। এজন্য অন্যান্য ধর্ম রাজনীতিতে ব্যবহৃত হয়। এটা স্বাভাবিক। কারন তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো যা বলেনি তা তারা কেন করবে।
এই চিন্তাধারার (ধর্ম হিসাবে) ঠিক বিপরীত হল ইসলাম। লন্ডনে অনেক সময় পেয়েছেন। কোরআন-সুন্নাহ চর্চা করলে এই মস্তবড় ভুলটি করতেন না। এটা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের বিপরীত। যে বা যারা এই বিশ্বাস করে, ইসলামে রাজনীতি নেই। তাদের ঈমান নেই। পরিস্কার কথা। পৃথিবীর সকল সত্যবাদি আলেমরা এ ক্ষেত্রে একমত।আর এ জন্যেই আপনার সম্মানিত পিতা পি পি আর তুলে দিয়ে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছেন।আর এতে বোঝা যায় যে, তার বোধ আপনার বক্তব্য থেকে ভিন্নতর ছিল।
একই কারনে সেক্যুলার রাজনীতি করা হারাম।ঠিক একই কারনে ভৌগলিক সীমারেখা বা শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক রাজনীতি ইসলাম অনুমোদন করে না।
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করে সুবিধাবাদিরা। যাদেরকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় মুনাফিক। যেমন সময়ে ধর্মীয় লেবাসের ব্যবহার, শুধুমাত্র ভোটের সময় ইসলামের কথা বলা ইত্যাদি।আর যারা দ্বীন ভিত্তিক রাজনীতি করে তাদের ইসলামকে ব্যবহার প্রশ্নই আসে না এবং তা করার সুযোগও থাকে না। কেননা তাদের সামগ্রীক জীবনটাই ইসলামের প্রতিচ্ছবি।
==============
পাঁচ)
পাকিস্তান ধর্মের নামে অর্জিত হয়েছিল বলে তা ব্যর্থ বলেছেন। কিন্ত জানা থাকা দরকার যে, যারা ইসলামকে পাকিস্তান অর্জনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছিল - তারা না ছিল নিজেরা দ্বীনি ব্যক্তিত্ব আর না তারা (ধর্ম)ইসলাম ভিত্তিক রাজনীতি করেছে।
তারা মুসলিম ছিল কিন্তু ইসলামী ছিল না।
আর কোরআন-হাদীস দ্যার্থহীনভাবেই আমাদেরকে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত দ্বীনভিত্তিক পরিচালিত করতে বলে।
এ বিষয়ে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা করা যায় তবে এই স্বল্প পরিসরে তা সম্ভব নয়।আমার মনে হয়-তারেক জিয়ার আরো সাবধান হওয়া উচিত এবং কোরআন ও রাসুল (সাঃ) এর জীবনী ভালভাবে অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। নতুবা যারা হাওযা ভবন করে আপনাকে লন্ডনে পাঠিয়েছে। সেই একই সঙ্গিরা মিলে আপনাকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকেও বিতাড়িত করবে। এখন সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব আপনার এবং আপনার দলের।
ইসলাম, ইসলামী রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করার আগে একটু লেখাপড়া করার প্রয়োজন হয়। আশা করছি সে সুযোগ বর্তমানে আপনার আছে।
=====================
বিষয়: বিবিধ
১৭৩২ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাহোক দৃষ্টিউন্মিলনী এ লেখাটির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আবার তাদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিও রক্ষা করেছে জামাআতের পক্ষপুটে আশ্রীত হয়ে তত্ত্বাবধায়কের সময়টাতে। তিন তিন বার সরকার গঠন করেছেন এ দলগুলোরই সমর্থন নিয়ে। সেলুকাস!!
কথার সাথে একমত। সেই সাথে প্রশ্ন - মিষ্টার তারেক জিয়া কি ইসলামী? অনেকেরই এ বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কেননা একজন সৎ ধার্মিক মানুষের গুনাবলী কী তার মধ্যে আছে? আমরা কী তুলসী পাতায় ধোয়া কোন নেতা পাবো?
মন্তব্য করতে লগইন করুন