আমার মালিকের হাজার শোকর - রা'য়ী আলগানম।

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১০ জুন, ২০১৪, ০৪:১৮:৪৮ বিকাল

প্লাস্টিক বোতল,প্লাস্টিক চামচ আর প্লাস্টিক চেয়ারের হাতল আলাদা করছে তোফায়েল।তার সামনে বিরাট বিরাট স্তুপ।সর্ব ডানে যে স্তূপটি আছে, তার এক পাশে বসে আনমনা হয়ে কাজ করছে। আরেকটি স্তুপ কাজ করছে তার সহকর্মী জাকির।

তোফায়েল নিয়োগ পেয়েছে মাত্র তিনদিন। দেশ থেকে এসেছে ওমরায়। এসে আর যাওয়া হয়নি। ১৪০০ রিয়াল মাসিক বেতন। জমাবার কাজ করতে হয়।বেতন ছাড়া পাওয়া যায় ৪০ রিয়াল। মালিক মিসরীয়। জাকিরের সাথে তোফায়েলের বড় ভাইর খুব খাতির। জাকিরের পাশের সিটে ঘুমায় তোফায়েল। বিছানার চাদর টেনে দিয়ে বসতে দেয়া হল। আমি বসলাম।

আমাকে বসিয়ে তোফায়েল বাহিরে গেল। আমি এসেছি এই তোফায়েলের সাথে দেখা করতে। বাড়ী থেকে নির্দেশ এসেছে। যেভাবে হউক তার সাথে দেখা করতে। কারণ তার পিতা নাকি আমার বাবার খুবই প্রিয়।অবশ্য আমি তাদের বাপ বেটা কাউকেই চিনি না।

আমি আশা করিনি এই পরিবেশে দেখবো।কল্পনায়ও চিন্তা করিনি তোফায়েল এই কাজ করবে। প্রবাস জীবন বলে কথা।নিয়তি যাকে যেভাবে চায় সেভাবেই হয় প্রবাসের জীবন। এখানে গাধা ঘোড়া সব - সমান।

ময়লার স্তুপ থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা করার কাজ।হাতে কোন গ্লব্স নেই। নাক,মুখ খোলা।আশে পাশে মাছি ভন ভন করছে।মুখে সিগারেট।

আমি দৃশ্য দেখে থমকে - বাকরুদ্ধ।তার কালো চেহারায় নিজের অসহায়ত্ব দেখা যাচ্ছে।তোফায়েল আমার দিকে না তাকিয়ে বলল - আসুন ঘরে।


====================================

আমার ঠোঁট নড়ছে।আওয়াজ করতে পারছিনা।নিজ ইচ্ছায় নয়।বরং উর্দুতে বলে ‘বেসাখতা’একেবারে স্বতস্ফূর্ত বের হচ্ছে - আলহামদুলিল্লাহ।আলহামদুলিল্লাহ।

রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদীস হল - (ভাবার্থ) তুমার প্রতি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ,নেয়ামত কত - তা বুঝতে হলে তুমার নিচে তাকাও। তাহলে বুঝতে পারবে। আমি হাদীস টিকে এভাবে বুঝি - আমার ঘর আছে। আমাকে দেখতে হবে যার ঘর নেই। আমার চাকুরী আছে - দেখতে হবে যার চাকুরী নেই। আমার স্ত্রী পুত্র আছে - দেখতে হবে যার তা নেই।

এভাবে আমি আমাকে চিনতে এবং অহংকার মুক্ত রাখতে চাই। চেষ্টা করি।

ঐদিন তোফায়েলের সাথে দেখা করে এসে ঘরে বেগমকে সব বলেছি।

বলেছি মনে রাখতে হবে -

আজ যে অবস্থায় আছি তা সব আমার মালিকের একান্ত দয়া আর রহমত।একটি ঘর আছে,একটা সন্তান আছে,চাকুরী আছে। সম্মান আছে। সামাজিক পরিচিতি আছে।শরীরটা ভাল আছে।এগুলো সবই আমার মালিকের দেয়া নেয়ামত।

বলেছি - এই আমার সউদি আরবে প্রথম চাকুরীর বেতন ছিল মাত্র ৩৭০ রিয়াল। কাজ ছিল কৃষি (মাজরাতে) ফার্মে।দুই বছর পর বেতন হয় ৬০০ রিয়াল। কাজ হয় প্রায় ৩০০০ ছাগলের পরিচালক। (রায়ী আলগানম)।গাধায় চড়ে ফজরের আগে বের হতাম ফেরত আসতাম এশার সালাতের পর। তার পর পাক করা। খাওয়া ঘুম।

বলেছি - ঐ সময় আমি যত বই পড়েছি। জীবনে ততো বই পড়ার সুযোগ হয়নি।ঐ সময় শাইখ মুহাম্মদ কুতুবের বই “হাল নাহনু মুসলিমুন” পড়ি। বইটি আমার জীবনের কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করতে সাহায্য করে। ঐ সময় বসনিয়ার প্রেসিডেন্ট আলীয়া আলীর “প্রাচ্য পাশ্চাত্য ও ইসলাম” বইটি পড়ি। এই দুটি বই আমাকে লেখা পড়ার দিকে আগ্রহ বাড়ায়। আলীয়া আলী জেলে থেকে বইটি লিখেন।

বলেছি - ঐ সময়টা ভাবতাম আমার বেতন যদি ১৫০০ হত তাহলে আর কিছু চাই না। আমার মালিক আমাকে এর দ্বিগুন দিয়েছেন।

=====================================

তোফায়েলকে দেখে আমি আরো বেশী আমার অতীতকে স্বরণ করেছি।নিজে নিজের কাছে তুলে ধরেছি। এতে আমার নিজের উপকার হয়েছে খুবই বেশী।

আমার মধ্যে কোন হতাশা নেই।আমি কৃতজ্ঞতায় নত হয়েছি। মানসিক শান্তনা পেয়েছি।

আমি মনে করি আমাদের অতীত গুলো আমাদের পরিবার, সন্তানদের জানানোর প্রয়োজন।তাহলে পরিবার এবং নিজের নফস কখনো প্রশ্রয় পাবে না।আমাদের চাহিদা দুই প্রকার।একটি হল - চোখের চাহিদা। আরেকটি হল - বাস্তব চাহিদা।

যারা চোখের চাহিদা পূরণ করতে চান তাদেরকে কবর পর্যন্ত যেতে হবে। আর যারা বাস্তবিকই প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে চান তারা যেন এই হাদীস টিকে আমল করেন। তাহলে জীবনে কখনো হতাশা বা না পাবার কোন যন্ত্রণা থাকবেন না।

=====================================

আমি নিজেকে এই জায়গায় দাঁড় করিয়ে রেখেছি।

তোফায়েলের জায়গায় আমার কাজ হতে পারতো। তার মত আমাকে বিষণ্ন থাকতে হত। তার মত পরিবেশে আমি থাকতে হত।তার মত বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হত।

এই সব কিছুই সম্ভব ছিল আমার মালিকের পক্ষ্যে।তিনি দয়া করে আমাকে রক্ষা করেছেন। তাই হাজারো শুকর।

হামদান কাসীরান। শোকরু লিল্লাহ। হে আমার মালিক।

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৮ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

233346
১০ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৪
শারমিন হক লিখেছেন : ভালো লাগলো
১০ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০১
180049
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার ভালো লাগার জন্য আমার ও ভাল লাগে।
233368
১০ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৩
সালাম আজাদী লিখেছেন : إنك كادح إلى ربك فملاقيه
১০ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০৭
180052
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার মন্তব্য আমাকে উৎসাহিত করবে। মোবারকবাদ।
233372
১০ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৮
আফরা লিখেছেন : অনেক বেশী ভাল লাগল আপনার লেখাটা পড়ে সর্বাঅবস্থায় আমাদেরকে আল্লাহর কাছে শুকরান করতে হবে ।আল্লাহ তো আমাকে এর চেয়েও খারাপ রাখতে পারতেন ।
১০ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০৭
180051
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : জি - আমাদেরকে সব সময় ই আল্লাহর মাশকুর হিসাবে থাকতে হবে।
233379
১০ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫১
আহমদ মুসা লিখেছেন : চট্টগ্রামের বিখ্যাত ক্বাউমী মাদ্রাসা পটিয়া আল জামেয়া ইসলামীয়া জমিরিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রসার একজন বুজুর্গ আলেমের কথা মনে পড়লো। মরহুম মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভী (রাহ) যাকে সবাই সংক্ষেপে বোয়ালী সাহেব হুজুর হিসেবেই চিনতেন। তিনি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বলতেন যত বেশ তত শেষ, যত কম তত গম- চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা মানুষের চাহিদা যত বেশী হবে তার জন্য ততই না পাওয়ার বেদনাটা বেশী হওয়ার কারণে সব সময় হা-পিত্যেস বেড়ে যাবে। অল্প তুষ্ট থাকাতেই মানুষের জীবনে প্রকৃত সূখ নিহিত রয়েছে।
হাতে সময় একটু কম। তাই এ ব্যাপারে আরো বেশকিছু বিস্তারিত লিখার আগ্রহ থাকার সত্বেও সময়টা এ মুহুর্তে বাধা হয়ে দাড়াল।
১০ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০৯
180054
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনি যে মন্তব্য করেছেন তাতেই আমার জন্য যথেষ্ট।
যত বেশ তত শেষ, যত কম তত গম।
একেবারে সত্য।
233382
১০ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৭
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : কি মন্তব্য করবো ভেবে পাচ্ছিনা। রবের দরবারে শোকরিয়া বলে শেষ করতে পারিনা। একটা সময় গেছে তিন বেলা আহার যোগান দিতে কষ্ট হয়েছে। মায়ের জীবন যুদ্ধের সফলতায় শিক্ষার শিখর মারিয়ে ভাল একটি চাকরী করছি। জীবন যুদ্ধের সফলতার পথে হাঁটছি। তাই বলে নিকট অতীতকে কখনো ভুলে যাওয়া উচিত হবেনা।
233395
১০ জুন ২০১৪ রাত ০৮:১১
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : জি ভাই। আমাদের অতীত ভুলে যাওয়া চলবে না। অতীত দিয়ে আমাদের বর্তমানকে বিবেচ্য রাখতে হবে। মোবারকবাদ।
233399
১০ জুন ২০১৪ রাত ০৮:২০
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখটি
233476
১১ জুন ২০১৪ রাত ১২:০৮
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকে মোবারকবাদ। মাঝে মাঝে আসেন। নিয়মিত পাবো প্রত্যাশা রইল।
233541
১১ জুন ২০১৪ রাত ০৪:১৩
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ।
১০
233612
১১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১১
233995
১২ জুন ২০১৪ রাত ১২:৩০
জোবাইর চৌধুরী লিখেছেন : সবই রবের ইচ্ছা... ভালো লাগল.. অনেক ধন্যবাদ।
১২
234135
১২ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : আপনার দেখা বাস্তব ঘটনাটি দিয়ে তুলে ধরা শিক্ষনীয় পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ। ভাল লাগল পড়ে। জীবনের প্রতিটি পদে যারা অন্যদেরকে নিজের সাথে তুলনা করে, তারাই প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহকে চিনতে পারে। যাযাকাল্লাহু খায়ের।
১৩
234198
১২ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:২৮
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখটি Loser Loser Day Dreaming Day Dreaming

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File