প্রেসিডেন্ট জিয়ার ফাঁসি হওয়া উচিত -আফতাব ভাইর দাবী
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৯ জুন, ২০১৪, ০৪:২৯:০০ বিকাল
গত পরশু জেদ্দার কিলো আরবাতাশ এ গিয়েছিলাম। আমার দুর সম্পর্কে এক চাচা দেশ থেকে এসেছেন। হঠাৎ করে এই চাচা সউদিতে আসা ছিল খুবই চমকের। কারন তার সামাজিক যা অবস্থান ছিল- তাতে প্রবাস করার কোন প্রয়োজন ছিল না। যাই হউক দুই দিন সময় দিয়ে পরের দিন গেলাম দেখতে। সালাতুল মাগরিবের পর দেখা হল। কথা হল। সুখ দু:খ অনেক কিছুই আলোচনা হল। অনেক কিছু জানলাম। কিন্তু বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল চাচার বর্ণনা।
ভাবছিলাম গ্রামের অবস্থা কেন এমন হল? এরকম তো কখনোই ছিল না। যাদের কারনে তিনি দেশ ছাড়া হয়েছেন এই পড়ন্ত বেলায়। তাদের কাউকে কেউ চেনে না।এই উঠতি নব্য বাকশালীদের কোন সামাজিক পরিচয় ও নেই।আগাছার মত সমাজের সবচেয়ে খারাপ চরিত্রের মানুষগুলোর হাতে এখন সকল ক্ষমতা।
তাদের শক্তি,সাহস এবং রাজনৈতিক খুটির জোর চাচাকে দেশ ছাড়া করেছে।
================================
কি নান্দনিক গনতান্ত্রিক! শাসন ব্যবস্থা।অখ্যাত একটি গ্রামের অরাজনৈতিক পরিবার যদি এত অসহায়বোধ করে। তাহলে বিএনপি,জামায়াতের পরিচিত পরিবারগুলোর অবস্থা কী? এই মানুষগুলো কেমন করে আছে। কিভাবে তাদের দৈনন্দিন কাজ করছে? পরকালে কিয়ামত হবে এটা সবার জন্য এবং মহাসত্য।চাচার কাছে যা শুনলাম তাতে মনে হল - জামায়াতের জনশক্তি ফ্যাসিষ্ট বাকশালীদের চাপিয়ে দেয়া - কিয়ামত পার করছে। এই মজলুম মানুষগুলোর জন্য একমাত্র মহান আল্লাহই সহায়।
====================================
এবার আসি মুল প্রসঙ্গে।
নাম আফতাব মিয়া। পরিবারের বড় সন্তান। সউদিতে এসেছেন সেই ৮০ এর দশকে। এসেছিলেন যখন, তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর।বর্তমানে বয়সের ভারে নুয্য। পাঁচ ভাই বোন - সবার বিয়ে শাদি হয়েছে। আফতাব মিয়ার বড় ছেলে মারা গেছেন গত ৩ মার্চ ২০১২তে।ছেলে মারা গেছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। নিজেই তারিখ ঠিক করেছেন ৩ মার্চ।তার ছেলে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর ভাষায় 'হারিয়ে গেছে'।ডিজিটাল সরকারের গুম হওয়ার তালিকায় আছে।
==================================
আফতাব মিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক হল সেই ১৯৯৬ ইংরেজী থেকে। তিনি একটি দোকান করেন। এ পর্যন্ত তার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে মোট ৩৪ জনকে সউদিতে এনেছেন। এদের মধ্যে অনেকে আছেন। আবার অনেকে চলে গেছেন দেশে। কয়েকজনের নাম নিলেন যারা এখন কোটিপতি। যখন তারা সউদিতে আসেন তখন তাদের পরিবারের কোন আয় ছিল না।
এক আফতাব মিয়া নিজের পরিবার সহ মোট ৩৫ টা পরিবারকে স্বাবলম্বী করেছেন।এতে আমাদের সরকার বাহাদুরদের কোন কৃতিত্ব নেই।প্রত্যেকেই তাদের ঘরবাড়ী সহ জমি জিরাত সব করেছেন।
এরাই আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। বিষয়টা এমন নয় যে - মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা শুধু গ্রামীণ অর্থনীতিকে বাচিঁয়ে রেখেছে। বরং আজকের নতুন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো হল এরা।সরকার এই উন্নয়নের কথা বলে ডুগডুগি বাজান।
আসল সত্য হল - শহর কেন্দ্রীক যে সব উচুঁ উচুঁ দালান দেখা যায় - তার সবের কৃতিত্ব হল এই আফতাব মিয়াদের।
যে পুলিশ বা র্যব আফতাব মিয়ার বুকের মানিককে গুম করেছে - তাদের গায়ের পোশাক অথবা তাদের মাসিক বেতনটার মাধ্যম হল প্রবাসী রেমিটেন্স।
================================
বেশ কয়েক বছর পর দেখা হল আফতাব মিয়ার সাথে। তার সেই দোকান,সেই ঘর,আগের মতই মেহমানদারী।
কিভাবে জিজ্ঞেস করবো ছেলের কথা।তিনি কিভাবে নিবেন। ভাবী এবং একমাত্র মেয়েটার অবস্থা ই কেমন। আমার বলা লাগলো না। বরং তিনিই বললেন -অনেক দেরী করে আসলে। তুমার কাছে গাড়ী আছে। সময় ও আছে। তুমি আসতে পারতে।আরো অনেক অভিযোগ।
আমি চুপ চাপ আছি। আমার কিছু বলার নেই। যা বলছেন সবই সত্যি।আমি ই অপরাধি।
বললেন - তুমি তো লেখা লেখি কর। লিখবা - প্রেসিডেন্ট জিয়াকে যেন ফাঁসি দেয়ার ব্যবস্থা করে সরকার।
আমি বললাম আপনি কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন করছেন।
তিনি রাগ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন - দেখ - এই জিয়ার আমলেই (১৯৭৮) মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশীরা আসা শুরু করে।এটা তার অপরাধ।আমি ৩৪টা পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। এটা আমার অপরাধ।আমার ও ফাঁসি হওয়া উচিত। মনে হল গলা ভারী হচ্ছে। আমি হালকা করার জন্য বললাম - যাক রাজনীতির বিষয়। বলূন ভাবী কেমন।
বললেন - আমার সংসারের বয়স ২৮ বছর।এই এত বছরে তিন মাস ও শুশুর বাড়ী ছিলাম না।প্রবাস থেকে ছুটিতে গিয়ে দুদিন বা একদিন শুশুরবাড়ী থাকতাম। এখন বুড়ো বয়সে ঘরজামাই হয়েছি। এই তো আছি।স্থানীয় থানার ওসী সাহেবের নির্দেশ - এলাকায় থাকতে পারবো না। কারন - আমার মরা ছেলে। সে নাকি শিবির করতো। আর আমি সউদিতে জামায়াত করি।
তুমি তো জান আমি আওয়ামীলীগ সমর্থন করতাম। জিজ্ঞেস করলাম এখন কি আওয়ামীলীগ সমর্থন করেন না। বললেন - ওরা আমাকে জামায়াতী বানিয়েছে।এলাকার রাজাকারের ছেলে এখন আওয়ামীলীগের সভাপতি।সে আমার পরিবারকে জামায়াতী পরিবার বানিয়ে ছেড়েছে। মনে হয় আল্লাহর ফায়সালাটা এমনই। নতুবা আমার ছেলে কেন সাঈদী সাহেবের জন্য শহীদ হতে যাবে।
আমি বললাম - ছেলেতো আপনার শিবির করতো।আপনি জানতেন। বাধা দিলেন না কেন? বললেন - বাধা দিয়েছি অনেক। কিন্তু পারিনি। তার রেজাল্ট ভাল ছিল। ভদ্র বিনয়ী ছিল। তার মা' সন্তুষ্ট ছিল। গ্রামের কেউ আমার ছেলে সম্পর্কে কোন খারাপ কিছু বলে নাই।
আফতাব মিয়া আনমনা হয়ে বলতে থাকলেন - ছেলে গুম হয়ে যাবার পর অনেক হা হুতাশ করেছি।অনেক কেঁদেছি।গালাগালি করেছি অনেক।
তবে সত্য বলছি এখন আর দু:খ নেই।বরং ভরসা আছে।বিশ্বাস করি পরকালে এই ছেলেকে দিয়ে রাসূলের সুপারিশ করাবো।আমার ছেলে একজন সত্যিকার ভালো মানুষের জন্য এবং বিশ্ববিখ্যাত কোরআনের খাদেমের জন্য জীবন দিয়েছে। শহীদরা তো তার পরিবারের ৪০ জনকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। অবশ্যই আমি তার হকদার হব।
বললেন - জিয়া যদি মধ্যপ্রাচ্যের সহজ ও সস্তা শ্রমের দরজা না খুলে দিতেন।আমি আসতে পারতাম না। আমার মত লাখো লাখো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতনা। এই একটি অপরাধে জিয়ার ফাঁসি হওয়ার দাবী করি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৬ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
I will make politics difficult to the politician
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস - এখন পলিটিশিয়ানরাই তাকে নিয়ে পলিটিক্স করছেন ।
আসলে আমাদের সবাইকেই ফাসি দেওয়া হোক। আমরা এমন কিছু করছি যার জন্য আল্লাহতায়লা এই জালিমদের আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন।
আমি কি ভয়ংকর কাজ করলাম!!!!!: :
মন্তব্য করতে লগইন করুন