হেফাজতে ইসলাম,আহলে হাদীস এবং দরদি বন্ধু সেকুলার রাজনীতি।পর্ব - (পাঁচ)
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৫ মে, ২০১৪, ০৩:৩৬:১৯ দুপুর
চতুর্থ পর্বের পর -
নয়)
তার কাছে ওহী নাযিল হয় -
এই শব্দগুলো আমার না। এটা হল মরহুম শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজূল হক সাহেবের।
ঘটনা বলি।
সময়টা হল গত বাকশালী আমল। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশের ফ্যাসিষ্ট পরিবারের বড় মেয়ে। ক্ষমতায় বসেই যতটা দেশের জন্য কাজ করেছে তার চাইতে বেশী সদয় ছিলেন ভারতের জন্য। ইসলাম,মুসলমান,শত শত বছরের মুসলিম ঐতিহ্যগুলোর বিপরীতে ভারতীয় মুশরীকি সাংস্কৃতির একটি নিরাপদ আবহ তৈরী করে।
বৃষ্টি হলে যেভাবে নালা ডোবায় চিৎকার শুনা যায় মৌসুমী ব্যঙের - ঠিক তেমনী সেকুলার এবং ভারতের প্রোডাক্ট ফ্যাসিষ্ট পরিবার (শেখ পরিবার) ক্ষমতা বসার সাথে সাথে চলে নাস্তিক মুরতাদদের আস্ফালণ, হাইব্রিড ফলণ।বাকশালীদের জন্মের সাথে এই চরিত্র একাকার। তা সেই ১৯৭১ পরবর্তীতে যেমন - ১৯৯৬ একই ছিল। আর বর্তমানে তা বহুরুপে বিকশিত।
তখন (১৯৯৬) দেশের আলেম ওলামা ইসলামী দলগুলো রাজপথের আন্দোলনে নামে। আমাদের শাইখুল হাদীস জীবনের ৫২টি বছর বোখারী পড়ানো অভিজ্ঞতা। হাজার হাজার ছাত্র তার।বয়সের শেষ প্রান্তে এসে নিজেকে সরকারের বিরুদ্ধে বড় জিহাদে শরীক করলেন।
এরকম কর্মকান্ড যেহেতু তাগুত সরকারের গায়ে লাগে।তাই ফল ও পেতে শুরু হল।বাকশালীরা তাকে খুবই বেইজ্জত করে গ্রেফতার করলো এবং জেলে ওজুর পানি সরবরাহ করতো নিয়ন্ত্রিত। এই বিষয়গুলো গোটা জাতীর সামনে সিংহ শার্দুলের মত উচ্চকন্ঠে তুলে ধরেন বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় মজলূম আলেমেদ্বীন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
ইতিহাসে এভাবেই ঈমানদাররা যখনই শি’য়াবে আবুতালীবের (বন্ধী জীবন যাপন) এই বড় সুন্নাতটি পালন করতে এগিয়ে আসে তখনই তাদের ঈমানের পরীক্ষা হয়।এই পরীক্ষায় যারা বিজয়ী হবার হিম্মত রাখেন তাদের জন্য ইতিহাস লিখা হয়। হতে পারে তারা দুনিয়ার দৃষ্টিতে বিজয় বা সফলতা অর্জন করতে পারেননি।
(দশ)
আল্লামা আজিজুল হক সাহেব জেল থেকে বের হয়েই জেদ্দায় এসেছিলেন। তিনি আমাদের দাদা হুজুর। তার ছাত্রদের কাছে আমাদের তালিম। দাওয়াত খেতে দাদা হুজুরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হুজুর আমাদের ক্কাওমী মাদ্রাসার হাজারাত সবাই কেন একই প্লাট ফরমে আসেন না।এর কারন কি হতে পারে। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন জাবাবটা কি তোমার জানা নাই। আমি চুপ চাপ আছি দেখে বললেন আমরা ক্বাওমী নিসাবের সবাই যদি এক হতাম তাহলে তো আমি জেলে যাওয়া লাগতো না।
আমি মসজিদের ভিতর মানুষ খুন করেছি - এই অপবাদে দিতে পারতো না জালিমরা।
তার পর চারদিকে তাকিয়ে তিনি বললেন - দেশে যত কওমী মাদ্রাসা আছে সেগুলোর উস্তাদরা যদি আগামী কাল ময়দানে আসে তাহলে বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার থাকবে না।
কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। উনি কয়েকটা উদাহারন দিলেন কিভাবে আমাদের কাওমী হাজরাতদের নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থের কাছে বৃহত স্বার্থ উপেক্ষীত হয়।উপস্থিত সবাই বিমর্ষ হলেন। আফসোস করলেন।
তাকে প্রশ্ন করা হল - বর্তমানে (১৯৯৬) সব পক্ষের আলেমরা মোটামোটি আপনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। অথচ আপনার সরাসরি ছাত্র চরমোনাইর পীর সাহেব (বর্তমান পীর সাহেবের পিতা) চারদলীয় জোটের সমালোচনা করছেন।আপনারও সমালোচনা করছেন।আপনি ওস্তাদ হিসাবে তাকে ডেকে নিয়ে কিছু বললে হয়তো তিনি মানবেন বা মানতে পারেন।
জাবাবে দেশের এই বয়োবৃদ্ধ সম্মানীত আলেম বললেন - ওর কাছে ওহী আসে - আমাদের কাছে ওহী আসে না।খুবই রাগ করলেন। মনে হল প্রশ্নটা এভাবে না করাই উত্তম ছিল।তবে তিনি খুবই যে বিরক্ত এবং বিবৃত তা বুঝা গেল।
তার কয়েক বছর পরই সেই বাকশালীদের সাথে চুক্তি করলেন। বলা হয় তাকে প্রভাবিত করেছেন কোন এক মুফতি শহীদ। এর পর তিনি দেশের মানুষের মন থেকে একবারে উদাও হয়ে গেলেন। বছরের পর বছর বিছানায় পড়ে ছিলেন। কেউ কোন খোজ খবর নিয়েছেন এমন তথ্য পাইনি। অনেক পরে তখনকার সোনারবাংলা ব্লগে একজন লিখেছিলেন কিছুটা। এইতো একজন দেশ বিখ্যাত শাইখুল হাদীসের ইতিহাস।
(এগার)
ঐ পীর সাহেব একই কান্ড করেছেন হেফাজতের উত্থানের সময়। তিনি নিজেই একা সব করবেন,তার নেতৃত্ব সবাই মানতে হবে।
অনেকে বলেন - ইত্তেহাদুল উম্মাহ থেকে জামায়াতের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পিছনে এই মরহুম পীর সাহেবের বড় অবদান। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ইখতেলাফ মা'য়াল ইত্তেহাদ স্লোগান দিয়ে শুরু হয়েছিল - যদি তা ঠিকে থাকতো। তাহলে বাংলাদেশের আলেমদের উস্তাদ আল্লামা শফি সাহেবকে ইনু মেননরা তেতুল হুজুর বলতে পারতো না। আজ যদি আল্লামা সাঈদি সাহেব বাহিরে থাকতেন। তিনি তার তাফসীর মাহফিল গুলো করতে পারতেন। তাহলে খুই যুৎসই জবাব দিতে পারতেন এই রাজনৈতিক ভাওড়াদের।অতীতে তিনি কে ক্বাওমী আর কে আলীয়ার বা কে কোন পীরের মুরীদ এগুলো বিবেচনা আনেননি। বরং ইসলাম,মুসলিম এবং আলেম ওলামাদের পক্ষে উচ্চকন্ঠ ছিলেন।প্রতিবাদ করেছেন বজ্রকন্ঠে। তিনি কখনো বিবেচনা করতেন না কে তার বিরুদ্ধে অতীতে ফতোয়া দিয়েছিলেন।
প্রায় ৪২ বছর যে মানুষটি যাদের পক্ষে কথা বললেন জীবন বাজি রেখে - সেই মানুষটি আজ কারাবন্দি। তার পক্ষে কথা বলা বা বিবৃতি দেয়ার জন্য ক্বাওমী হাজারাতের কোন সময় নেই।অন্যরাতো সবাই বাকশালের খোয়াড়ে লালিত পালিত আশ্রিত।তারা তাদের রুটি রুজির ধান্ধায়।
গত বাকশালী ১৯৯৬ থেকে ২০০০)আমলে যখন নজিবূল বাশার মাইজ ভান্ডারীকে জেলে পুরে - ডিম থেরাপি দিয়েছিল - তখন তাফসীর মাহফিল গুলোতে আজকের মজলুম মোফাস্সিরে কোরআন আল্লামা সাঈদী সাহেব ই কথা বলেছিলেন। নির্মম পরিহাস হল - এই নজিবুল বাশার মাইজভাইন্ডারী আর অখ্যাত এবং সেকুলারদের দালাল চাঁদপুরী নামক ভন্ড এক ব্যক্তির দায়ের করা কেইসে সাঈদী সাহেব সহ বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলনে নেতৃবৃন্দ জেলে।
ক্কাওমী হাজারাতের অনেকের সহ্য সীমার বাহিরে হল জামায়াতে ইসলামী।এই হজরতদের সব কিছু হজম হয়। সবার সাথে বসতে পারেন।একমাত্র ব্যতিক্রম হল জামায়াত।
(বারো)
অবশ্য দেওবন্দের হাজারাতদের নতুন ফতোয়ার লক্ষ্য হলেন - বিশ্ব বিখ্যাত ইসলামী স্কলার ডাঃ জাকির নায়েক। বিগত বছরব্যাপী সেকুলারপন্থী মিডিয়া,বাকশালী মন্ত্রীপরিষদ,বামপন্থী রাজনৈতিক কাঙালরা আল্লামা শফি সাহেবকে তেতুল হুজুর বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছিল - তখন বর্তমানের খুবই পরিচিত ওয়াইজ মাওলানা ওলীপুরী সহ ক্বাওমী হাজারাতরা ডাঃ জাকির নায়েককে কাফির বানানোর অসংখ্য ফতোয়া দিয়েছেন। এর জন্য বই লিখেছেন মাওলানা ওলীপুরী সহ অনেকে।এরকম বালখিল্য আচরণকে করে মনে করেন মহান দ্বীনি খেদমত আনজাম দিচ্ছেন।
অথচ এখনকার সময়ের দাবী ছিল - বিচার দাবী করা শাপলা চত্তরের শহীদদের।সম্মিলীত আওয়াজে বিচার চাওয়াটার হিম্মত হয়নি গত একটি বছর। কেউ লন্ডনে আর কেউ দেশে আছেন বহাল তবিয়তে মাদ্রাসা নিয়ে।
আজব বিষয় হল - কি এক মহা রহস্যে ক্কাওমী হাজারাত শাপলা চত্তরের শহীদেরকে ভুলে গেছেন। বা যা বাতাশে শুনা যায় - খুব অল্প দামে শহীদদের বেচাকেনা সম্পন্ন হয়েছে সেকুলার বন্ধুদের সাথে।
হেফাজতের ঢাকার বড় এক নেতা যিনি এইচ টি ইমামের খুবই কাছের মানুষ।প্রাডো গাড়ি সহ অনেক কিছু নাকি হুজুরকে দিয়েছেন খন্দকার মোশতাক সরকারের সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও শেখ মুজিব সাহেবের বেয়াই বর্তমানের এইচ টি ইমাম।
আগামী কাল ছয় তারিখ। মনে আছে রাতের আধারে কি পৈশাচিকতা,নির্মমতার সাথে হাফিজে কোরআন ও আলেম ছাত্রদেরকে হত্যা করা হয়েছিল। অথচ যার ডাকে এসে জীবন দিল - সেই আল্লামা শফি সাহেব নতুন করে বন্ধুত্বের ঘোষণা দিয়েছেন চট্রগ্রামের লালদিঘির ময়দানে? এটা হেকমত - আত্মসর্পণ - না বেচাকেনা। কোনটা সত্য। এত অল্প দামে গোটা জাতীর আবেগ,এত মানুষের রক্তকে বিক্রি করার জবাবটা কি দিতে হবে না।পরকাল তো এজন্য ই আল্লাহ রেখেছেন। বড় বড় তকমা লাগিয়ে কি পার পাওয়া যাবে?
আগামী পর্ব (ছয়) - পাচঁ দিন পর।
=====================================
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৪ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে ধন্যবাদ।
হেফাজতে ইসলাম উল্টা চলো
বীর জনতা রক্ত ঢালো।
হেফাজত নেতার বয়ান হুনেন। বহুত বহুত ফায়দা হবে। এ বয়ান হুনিলে নিশ্চিত বেহেস্তে যাইতে পাইরবেন।
অত্যন্ত দামী ও সময়োপযোগী সব প্রশ্ন। আমিও উত্তর খুঁজি এ প্রশ্নগুলির।
দিন শেষ তাদের যারা নির্বাচন আসলে তাসবীহ হাতে নেয়।
দিন শেষ তাদের যারা নির্বাচন আসলে মাথায় পট্টি বাধে।
আমাদের আল্লামারা সেই সাহস দেখাতে পারেন না। ৯৫ বছরের পরও আরো বাঁচার আকুতি তাঁদের ভীত করে তুলেছে......। আমাদের পথহারা করেছে.......
একজন দুষ্ট ব্যক্তি বলেছিল,
দশটি ব্যাঙ ধরে যেভাবে এক খাঁচায় একতে রাখা যায় না,
সেভাবে দশজন কওমী আলেমকেও এক স্থানে রাখা যায় না।
আমাদের আল্লামারা সেই সাহস দেখাতে পারেন না। ৯৫ বছরের পরও আরো বাঁচার আকুতি তাঁদের ভীত করে তুলেছে......
কিন্তু এই মুখলিস মানুষ গুলকে যারা হত্যার জন্য জড়ো করলেন,এর পর সবকিছু ভুলে গিয়ে হত্যাকারীদেরক নিজেদের বন্ধু বানালেন।এক্টি বারের জন্যও শহীদ সাথী,তার বিধবা স্ত্রী,নাবালক সন্তানের আহাজারী তাদের মনের দোয়ারে আঘাত করলোনা। এইসব আল্লামারা কারা? তাদেরকে কি নামে ডাকবেন? অবশ্যঈ আমরা তেতুল বলবো না, তবে গোলাপ জাম বল্লে কি তারা মাইন্ড খাবেন?
শায়খুল হাদিস তার যে ভুল বুঝতে পেরে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত এর সাথে কাজ করেছিলেন নির্বাচনের পরে আবার সেই ভুল করে ফেলেন। প্রথম আলোর মত পত্রিকার রিপোর্ট থেকে মাদ্রাসার বই কেনা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। একেবারে শেষে এসে বয়সের কারনে নিশ্চুপ হয়ে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্য কওমি আলেমরা এখনও তার জিবন থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন না।
হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সময়ের প্রয়োজনে ইবলিশী আজমায়েশ ও বাতিলের আস্ফালনের বিরুদ্ধে আবারো কোন রাহবারের জন্ম নিবে, তার ডাকে সাড়া দিয়ে সহজ সরল ঈমানদার মানুষ ঝাপিয়ে পড়বে শয়তানের কর্মসূচীকে বানচাল করার জন্য। সফলতার ধারপ্রান্তে এসেই হয়তো আবার রাহবারের ভূলপথে গাড়ী চালানোর ফলে সবকিছু বিফলে যাবে। উপমহাদেশের অতীতের সমস্ত আন্দোলন-সংগ্রাম তো সেদিকেই ইঙ্গিত বহন করে।
আশা আর প্রত্যাশার জায়গাটা এমনই। তবে খান সাহেব চিন্তা হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন