হেফাজতে ইসলাম,আহলে হাদীস এবং দরদি বন্ধু সেকুলার রাজনীতি।পর্ব - (এক)

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:৪৫:৪৭ দুপুর

এক)

বড় এবং পরিচিত আলেম।এক নামে চিনা যাবে।এলাকায় একটি মাদ্রাসার মুহতামীম।(প্রিন্সিপাল) আমাদের পরিচিত সেই মক্তবে পড়ার সময় থেকে। পরিচিত বলতে আমাদের পরিবারের সকলের শ্রদ্ধেয়। যদিও চিন্তার ক্ষেত্রে আমার পিতার সাথে মিল একেবারেই নেই।তবে আমরা সবাই শ্রদ্ধা করি। এলাকার সবাই সম্মান করতো।তিনি ভারতের দেওবন্দ থেকে ফারেগ হওয়া আলেমে।নাম ডাক এখনো আছে।তবে আলেম হিসাবে নয়। বরং অন্য নামে।

এরশাদ পতনের পর গনতন্ত্রের সুবাতাশ শুরু হলে তিনি বেশ নড়ে চড়ে বসেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি সোজা এমপি প্রার্থী হন।প্রার্থী হন মানে হল, তাকে করা হয়। কারন একটাই - ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা ছিল বেশী।তাকে পরাজিত করতে হবে। এটা এই আলেমের দৃষ্টিতে ইমান আকিদার বিষয়।

আওয়ামীলীগ থেকে যিনি দাড়িঁয়েছিলেন, তিনি এই হজুরকে দাঁড়াতে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করলেন। হজুর নিশ্চিত জানতেন তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। কিন্তু ঐ যে,তিনি ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে হারাবার মত বিরাট ইসলামের খেদমত করতে পারবেন। আর সাথে মাদ্রাসার নতুন একটা বিল্ডিং পাওয়া গেল।ঢাকায় সুশীল বান্ধব এই সেকুলার এমপি সাহেব পয়সা খরছ করে হজুরের মাধ্যমে জান্নাতে টিকেট নিশ্চিত করলেন। এখনো এমপি সাহেব সেই মাদ্রাসার বর্ষিক জলসায় উপস্থিত হয়ে ধণ্য হন। যদি এমপি সাহেবের দলের মাননীয় আইন (শফিক সাহেব) মন্ত্রী কওমী মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গি প্রজণণ কেন্দ্র হিসাবে মিডিয়াতে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এই হজুরের সাথে এখনো পারিবারিক সম্পর্ক আছে। নিজ মাদ্রাসা এখন তার হাত ছাড়া।তারই এক সময়ের ছাত্রের সাথে স্থানীয় সেকুলার রাজনীতির সংযোগটা বেশী।তিনি বয়সের এক প্রান্তে চলে এসেছেন।অবসর জীবন যাপনই করছেন।

দুই)

হেফাজতে ইসলামের আগমন এবং এর বিদায় বা পর্দার পিছনে চলে যাওয়া অথবা বর্তমানে সেকুলার রাজনীতির দরদি বন্ধু হওয়া - ইত্যাদি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে।ব্লগে এবং ব্লগের বাহিরে চলছে হেফাজত নিয়ে নানান সমীকরণ।

আমি সে আলোচনায় যাবার আগে নিজের অবস্থান পরিস্কার করা প্রয়োজন মনে করছি। কারন অনেকে মনে করতে পারেন হয়তো কোন আক্রোশ থেকে আমার এই লেখা।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে কওমী পরিবারের সন্তান।এটা আমার গর্ব। কারন আমার নানার বংশের সবাই নাম করা কওমী আলেম। আবার আমার চাচা ছিলেন শাইখ বদরপুরী (রঃ)।তিনি নামের চাইতে উপাধী দিয়ে বেশী পরিচিত ছিলেন। যিনি ৪৭ এর পর ভারতের আসাম প্রদেশের করিমগন্জ জেলার বদরপুর চলে যান। যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন তিনি কংগ্রেসের এমপি ছিলেন। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আসাম রাজ্যে নির্বাচনী সফরে আসলে আমার চাচার বাংলাতে থাকতেন। বাংলাটা অবশ্য ইন্দিরা গান্ধীই বানিয়ে দিয়েছিলেন। জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের কেন্দ্রিয় চার জনের একজন ছিলেন।তিনি যখন ওফাত পান - তখন জানাযায় অংশগ্রহনের জন্য বডার খুলে দেয়া হয়েছিল।খুবই জনপ্রিয় আলেম ছিলেন।সারাটি জীবন তিনি মানুষের ই খেদমত করেছেন।

আমার কওমী ওলামাদেরকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে।যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া করার সুযোগ হয়েছিল, তার আশে পাশে ছিল দেশের নাম করা দুটি কওমী মাদ্রাসা। সেই মাদ্রাসার শ্রদ্ধেয় হজুর সবাই ছিলেন আমার চাচার খুবই ভক্ত।তাই বিপরীত মেরুর সাথে অবস্থান করার পরও আমার যাতায়াত ছিল খুবই সহজ। সবাই আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। শিবির করার অপরাধে মাদ্রাসার ১৬ জনকে বহিস্কার করার সিদ্দান্ত হলে কোন এক অজানা কারনে আমাকে বহিস্কার হতে হয়নি। কারন মাদ্রাসার মুহতামীম ছাহেব ছিলেন আমার চাচার একেবারে কাছের লোক।

যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছি তখন সেখানে কওমী হাজারাতের খেদমত করার চেষ্টা করেছি। যদি তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার পরিচয় জানার পর খুবই প্রান্তিক মন্তব্য করেছেন। এটা দেশে যেমন হয়েছে তেমন সাউদি আরবেও হয়েছে।

হেফাজতের বর্তমান ইউটার্ন নিয়ে কষ্ট বা হতাশা অন্য দশজনের মত আমার একটু বেশী হবার ই কথা।

আমার এক প্রবাসী বন্ধু (তিনি ভাল আলেম) হেফাজতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে খুবই তির্ষক মন্তব্য করেছেন - ‘আল্লামা আহমাদ শফি সাহেবদের মোতাওয়াল্লী যারা - তাদেরকেই তো বন্ধু বলবেন। আপনার বা আপনাদের কষ্ট লাগে কেন?’

কওমী হাজারাতদের মোতাওয়াল্লী কারা তা আগামী পর্বে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৫ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

214370
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৫২
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : কওমী আলেমদের এসব সংকীর্ণ কর্মকান্ড খুবই পীড়া দেয়। উনারা মাছলা মাছায়েল ইস্যূতে ভিন্নমত পোষণকারী মুসলিমদের শত্রু বানিয়ে ফেলেন অথচ ইসলামবিরোধী কুফরী শক্তির জন্য হৃদয়ে তাঁদের সফট কর্ণার লালন করেন। খুবই আচানক ব্যাপার!
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:২৪
162649
ইমরান ভাই লিখেছেন : Happy Happy
২৮ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:১৫
162674
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার এই আচানক অথচ একেবারে সত্য মন্তব্যের জন্য মোবারকবাদ।
২৮ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:০১
162716
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : কথা কিন্তুক সত্য!!
214422
২৮ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৪০
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : হেফাজত নিয়ে আপনার তথ্য নির্ভর সিরিজ পড়ে অনেক কিছু জানবো সে প্রতীক্ষায় থাকলাম। তবে জানলাম আপনার পারিবারিক ঐতিহ্য। ভাল লাগল। হেফাজত কেন আসলো কেন গেল, এসব সহস্যর চেয়ে পাগলামীটাই যেন যুক্তিযুক্ত। আবেগ আর ঈমান দিয়ে সব হয়না এটি হেফাজত বুঝতে পেরেছে। মাদ্রাসার প্রিন্সিপারের ডাকে সাড়া দেয়া লক্ষাধিক লোকের জীবনের বিনিময়ে ইসলাম আসেনা।

ধন্যবাদ।
২৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৬
163104
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : যাযাকাল্লাহ - আমাদের সাথে আছেন এটা কম কিসের। আশা করি আগামীতে আপনার বিশ্লেষন ধর্মী মন্তব্য পাবো।
214443
২৮ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:০৪
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : ভূমিকাতেই একটা পর্ব শেষ করে দিলেন?
২৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৮
163108
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : ভুমিকা লম্বা হওয়ার জবাবটা আগামীতে দেব ইনশাআল্লাহ। আপনার সেই মন্তব্য কামনা করি যা আপনি করেন। আগামী পর্বে।
214444
২৮ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:০৬
আহমদ মুসা লিখেছেন : প্রথম পর্ব পড়ে অনুমান করছি আগামী পর্বগুলো খুবই চমকপ্রদ হবে। আগামী পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
২৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৯
163110
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : হয়তো চমকপ্রদ হবে। তবে তা আনন্দের নয়। বরং তা হবে খুবই বিষাদের।মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
214445
২৮ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:০৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কওমি আলেমদের আর্থিক ভিত্তি পরনির্ভরশিল হওয়া একটি বড় সমস্যা। এই কারনেই তারা বৃটিশ ভারতে হয়েপড়েছিলেন কংগ্রেস পন্থি। যদিও মাওলানা আশরাফ আলি থানভি এর নেতৃত্বে একটি অংশ শেষ পর্যায়ে ভুল বঝতে পেরে পাকিস্তান আন্দোলনে যোগ দেয়।
তবে ইসলামি আন্দোলন বিশেষ করে জামায়াত ই ইসলামির একটি বড় ব্যার্থতা কওমি মাদ্রাসাগুলিকে আন্দোলনের মুল ধারায় আনতে না পারা।
ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টটির জন্য।
২৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৩০
163111
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আর্থিক ভিত্তি পরনির্ভরশিল হওয়া একটি বড় সমস্যা।
একেবারে খাটি কথা। তবে এটাই একমাত্র কারন নয়। আগামী পর্বে রয়েছে এর জবাব।আমন্তন রইল।
214504
২৮ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
আবু সাইফ লিখেছেন : বিএনপি তো মুসলিমলীগের পথ ধরেছে-

এদের ফেরাতে না পারলে হেফাজতও তার ঐতিহাসিক পথে চলবে- এটাই স্বাভাবিক!

লাউগাছ জাংলায় ওঠার আগে একটা কঞ্চি বা কাঠি অবলম্বন লাগে-

কিন্তু ফুলে ফলে জাংলা ভরে গেলে আর সে কঞ্চি বা কাঠি দরকারই থাকেনা!

জামায়াত তো এ কঞ্চি বা কাঠি হতে পারবেনা, হেফাজতও নেবেনা!

সুতরাং জাতির প্রয়োজনেই একটা কিছু কঞ্চি বা কাঠি জোগাড় করে নিতে/দিতে হবে!!
২৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৩১
163112
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : যাযাকাল্লাহ। আপনার মন্তব্য এরকমই হয়। জোগাড় করার দায়িত্ব কাদের। কে করবে? আশা করবো না প্রতিক্ষায় থাকবো।
২৯ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫০
163187
আবু সাইফ লিখেছেন : আশা বা প্রতীক্ষা- এককভাবে কোনটাই নয়

বরং পরিকল্পিতভাবে কাজ করে আশা করা কর্তব্য


মুশকিলটা হলো-
এমন কাজ কেউ করতে চেষ্টা করলে
সেটাকে প্রথমতঃ নিরুতসাহিত ও
পরে নিন্দিত করা হয়!

এটি ইসলামপন্থীদের সামষ্টিক আচরণ!!
214624
২৯ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:১৮
আবু জারীর লিখেছেন : হকপন্থী শ্রোদ্ধেয় আলেমকুল ইসলাম পন্থীদের চেয়ে সেকুলারদেরই বেশী আপন মনে করে আর প্রতারিত হয় কিন্তু তার পরেও ইসলাম পন্থীদের ছায়া মাড়ানও দোষনীয় মনে করে। আফসোস! কেন যে তারা এত বড় ধোকার মধ্যে আছে বুঝিনা।
214894
২৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৩২
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : বুঝতে হলে আমাদের কওমী হাজারাতের ইতিহাস এবং বর্তমান সিলসিলা পড়া প্রয়োজন। আমি মনে করি আপনার সেটা আছে। মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
217339
০৪ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:১০
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম! পর্ব ৪ পড়ে আপনার লিখার সাথে পরিচিতি হলাম। এখন ১ হতে পড়ছি। মাশাল্লাহ - লিখকের পরিচয় জেনে, লিখা পড়ার আনন্দ একেবারেই ভিন্ন।
১০
217661
০৫ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৪৮
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ - আপনি পড়েছেন এবং কষ্ঠ করে মন্তব্য করেছেন। যাযাকা আল্লাহু খায়ের।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File