ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও বর্তমান ভাষা সৈনিকবৃন্দ
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:১১:২১ সন্ধ্যা
বাংলাকে যারা আপন করেছিল
ঐতিহাসিকরা মনে করেন মুসলিম শাসন আমল ছিল বাংলা ভাষার জন্য এক রহমত। যদিও মুসলিম শাসন আমলে রাষ্ট্রীয় ভাষা ছিল ফার্সী।কিন্তু বিশেষ করে মোগল আমলে স্থানীয় ভাষাগুলোর স্বাতন্তিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় সহযোগীতা ছিল আবারিত। বাংলা মাসের গোড়াপত্তন সহ বাংলা ভাষার মৌলিক কাজগুলো হয় মুসলিম শাসন আমলে।
বর্গী ও চানক্য
বৃটিশরা এসেছিল ব্যবসা করতে। বৃটিশ আর দেশীয় চানক্য ভ্রাম্মনদের চক্রান্ত,শটতা আর বিশ্বঘাতকতার শাসন ব্যবস্থা ছিল পরাধীনতার ২০০ বছর।
বৃটিশ বেনিয়াদের সাথে দেশীয় মিরজাফরদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুসলিম ও মুসলমানদের ঐতিহ্য,সাহিত্য, সাংস্কৃতিতে বিশেষ করে বাংলা ভাষায় জবর দখল করা হয় সংস্কৃত আবহ।বাংলা ভাষা তখন কলিকাতার বাবুদের দখলে ছিল।
হিন্দি আর উর্দু নিয়ে প্রস্তাব
ঐতিহাসিক বঙ্গ ভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত আজকের বাংলাদেশ ছিল ওপার বাংলার জমিদারী আর চাষাভুষা,কাঙ্গালদের জনপদ। আজকের বাংলাদেশের পরিবর্তন টা শুরু হয় বঙ্গ ভঙ্গের পর থেকে।
বড়লাট লর্ড মাউন্ট ভারত বিভাগ পরিকল্পনা ঘোষনার পর পরই মূলত: উপমহাদেশের রাজনীতিতে ভাষার অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। মহাত্মা গান্ধী রাষ্ট্রভাষা উপলক্ষে হিন্দি ও উর্দুর পরস্পরবিরোধী দাবীর মিমাংসা করতে প্রস্তাব করেন। আমাদের রাষ্ট্রভাষা হবে হিন্দুস্থানী। [b]তিনি আরো ব্যখ্যা দিয়ে প্রস্তাব করেন।আরবী বর্ণমালায় লিখিত হবে যাকে আমরা উর্দু বলবো আর দেবনাগরী বর্ণমালায় লিখিত হবে তাকে বলা হবে হিন্দি।
কিন্তু গান্ধী কিছুদিন যেতে না যেতেই তার এ মত বদলাইয়া নতুন ফর্মূলা হাজির করেন।এটা হয় যখন নেহেরু একটি রিপোট পেশ করেন গান্ধীর কাছে। এবার এই মহান নেতা ঘোষনা করেন ভাবী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে হিন্দি - হিন্দুস্থানী। (দেখুন আজাদ ২৩শে এপ্রিল ১৩৩৭/শুক্রবার। ১০ই বৈশাখ ১৩৪৪।)
বাংলা নিয়ে প্রস্তাব ও তার কারিগর
গান্ধীর এই প্রস্তাবের বিপরীত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডক্টর জিয়া উদ্দিন আহমদ উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
জ্ঞানতাপস ডক্টর শহীদুল্লাহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা শীর্ষক একটি প্রবন্ধ ১৯৪৭ এর ২৯ জুলাইয়ের দৈনিক আজাদে প্রকাশ করেন।তিনি উদ্দুকে বিদেশী ভাষা বলে তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং ডক্টর জিয়া উদ্দিন সাহেবের কড়া সমালোচনা করেন।
অবশ্য তখন কলিকাতার অনেক বাবু সাহিত্যিক ছিলেন যারা এই বিষয়ে কোন কথা বলেন নি। বরং বাবুজীর সেই প্রস্তাবের সাথে একমত ছিলেন।
জাতীয় জাগরণের কবি ফররুক আহমদ বিভাগ পূর্ব ১৯৪৪ সালে এক প্রবন্ধে পাকিস্তান রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য কঠোর সমালোচনা করেন।তিনি তখন একটি ঐতিহাসিক সনেট লিখেন। এই সনেট থেকে তৎকালীন সচেতন মুসলিম সাহিত্যিকদের রাষ্ট্রভাষা চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।
মিডিয়া ও বর্তমান ভাষা সৈনিক
অবশ্য তখন অনেক বামপন্থি ছিলেন তারা সবাই দুনিয়ার মজদুরদের মুক্তির জন্য কাজ করছিলেন। কেউ ই তখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী নিয়ে অগ্রসর হন নাই।প্রয়োজন ও মনে করেন নি।
অথচ আজ মিডিয়াতে বিরাট বিরাট আকারের টকার রা (আলোচক) ৫২ ভাষা আন্দোলন কে ইসলাম ও মুসলিম সাহিত্যের বিপরীত দাড় কারাবার নিরন্তর ইতিহাসের মিথ্যাচার করছেন।
একটি উদাহারন দেই - প্রফেসার আনোয়ার হোসেন যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা অধ্যাপক। ভুমিদুস্যু হিসাবেখ্যাত বসুন্ধরা গ্রুপের ইংরেজী দৈনিকের সম্পাদক। চ্যনেল আইতে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বলতে গিয়ে ডক্টর জিয়া উদ্দিনের নাম নিলেন।এবং ডক্টর জিয়া উদ্দিন সাহেবের নাম নিয়ে ইসলাম আর মুসলামানকে জড়ালেন।
কিন্তু গান্ধীর সেই প্রথম হিন্দির পক্ষের প্রস্তাবের কোন আলোচনা করলেন না। বরং তিনি ইতিহাসের যে ছাত্র তা স্বরণ করে দিয়ে দর্শককে বুঝাতে চেষ্ট করলেন ভাষা আন্দোলন বামপন্থি আর নাস্তিকদের সফল একটি ঐতিহাসিক কর্ম।
এই অধ্যাপক কিন্তু একবারের জন্য ও নাম নিলেন না তমুদ্দুন মসলিসের।যে সংগঠনটি ভাষা আন্দোলনের প্রসুতি ঘর ছিল। নাম নিলেন না প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম সাহেবের। আব্দুল গফুর,কবি শাহেদ আলী,দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহেবের।
বাংলাদেশের সুশীল বান্ধব মিডিয়া কিভাবে ৫২ ভাষা আন্দোলন থেকে ইসলাম মুসলমান সাহিত্যিকদেরকে ব্লাক আউট করা যায় তা ইতিহাসের নামে ইতিহাসের সাথে বলাৎকার করছেন রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা আর ভ্রমন্য অর্থে।
[b]পরিকল্পিত মিথ্যাচারের ফলাফল
পরিকল্পিত ভাবে এমন একটি আবহ তৈরী করা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের সামনে, বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠির মৌলিক বোধ বিশ্বাসকে ভাষা আন্দোলনের বিপরীত আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে দেয়ার।
তৌহীদবাদী বোধ বিশ্বাসকে মুছে তথাকথিত প্রগতিশীলতার নামে বস্তুবাদী মতবাদের প্রতিষ্ঠা করার বুদ্ধিবৃত্তিক ডাকাত আর হাইজ্যকাররাই এখন মহান ভাষা সৈনিক। আর এই মিথ জাতীকে গেলানোর জন্য অবার্চীন কিছু মিডিয়াকে বন্ধু রাষ্ট্রের গোয়েন্দারা এবং বহুজাতিক কোম্পানীর অর্থে লালন,পালন,তোষণ চলছে।ইতিহাসের সাথে এই বর্গী কর্মকান্ড করা হচ্ছে একটি চেতনার নাম করে। সেই চেতনার তরুনরা এখন শাহবাগ নামের সার্কাসের মুল অভিনেতা।[/b]
আবেদন
সর্বশেষ জাতীয় জাগরণের কবির সেই ঐতিহাসিক সনেটটির কয়েক লাইন পাঠকের জন্য পেশ করলাম। যা আজকের বাস্তবতায় এখনো প্রাসঙ্গিক হবে।
দুইশ পঁচিশ মুদ্রা সে অবধি হয়েছে বেতন
বাংলাকে তালাক দিয়া উর্দুকে করিয়াছি নিকা
বাপাগু শ্রমের ফলে উড়িছে আশার চামচিকা
উর্দু নীল অভিজাত্যে
(জানে তা নিকট বন্ধুগণ)উর্দু বনাম বাংলা। মাসিক মোহাম্মদী।
ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস পড়ার জন্য কয়েকটি সহায়ক গ্রন্থ।
১) আমাদের মাতৃভাষা চেতনা ও ভাষা আন্দোলন। মুস্তফা নূরুল ইসলাম সম্পাদিত।
২) ভাষা আন্দোলন - সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন।মোস্তফা কামাল।
৩) বঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি। বদরুদ্দিন ওমর।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন