বাকশালী যখন ডিজিটাল হয় - আপনি থেকে তুই

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:১৫:৩৮ সন্ধ্যা

ঘটনা আমার কাছে যুতসই মনে হল না। কেমন যেন খাপছাড়া মনে হল। মনে হল লোকটা নির্জলা মিথ্যা বলছে।বাংলা ভাষার বেশ কিছু সুবিধা আছে, সম্বোধনের জন্য - আপনি,তুমি,তুই। অবশ্য জাপানিদের শব্দ ভান্ডারে আছে আরেকটি শব্দ। যার অর্থ 'বেশী আপন'। এর আবিস্কারক হলেন হিমু চরিত্রের লেখক হুমায়ুন আহমদ।

আমি লোকটাকে আপনি বলে এসেছি। এতদিনের এই শ্রদ্ধাবোধ থেকে হঠাৎ করে তুমিতে যাবো। না একেবারে তুই বলবো। এ যেন অসত্য,মিথ্যা বলার উস্তাদ। বলার কায়দাটা এমন যে, লোকটা একেবারে মহাসত্য একটি ঘটনা বর্ণনা করছে। নিজের মেজাজটা এজন্য তিরক্ষি হয়ে গেল। কি বলবো, তুই না তুমি।

অবশ্য আমি শাহবাগের তরুন প্রজন্মের সাথে কিছুদিন অবস্থান করলে হয়তো 'তুই' রুচিবোধ এসে যেত।শাহবাগের তরুনদের কাছে তুই শব্দটার খুবই কদর।আমি সেরকম পারিবারিক আবহে লালিত পালিত হয়নি। যাদের সাথে উঠা বসা তাদের ও আচরণে এমন শাহবাগী তুই নেই।তাই তুমিতে ই থাকলাম।

এবার ঘটনাটা বলি -

জেদ্দা শহরে অনেক অনুষ্ঠান হয়। সবগুলোর দাওয়াত পাই এমন নয়।নিজের সামাজিক অবস্থান এবং চাকুরীগত সমস্যা নিয়ে চেষ্টা করি অংশগ্রহনের।

আরেকটি কারন আছে যা ব্লগে লিখা যাবে না। অদৃশ্য একটি বারণ।তবে আমি বিশ্বাস করি - সামাজিক বলয় তৈরী করা উচিত একজন মানুষের।যদি সেই মানুষটা চায় সমাজের কিছু উপকার করতে।অবশ্য এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলেন আমাদের পরিচিত অতি সম্মানিত বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তারা যত পারেন ততই আপন ঘরমুখী।এই অঙ্গনে আজব একটা বিষয় - গনমুখি চরিত্রের লোকদেরকে যেমন ভয়ে কম্পমান, তেমন সন্দেহের চোখে দেখা হয়। শুনেছি অভিযোগ বা বিতর্ক যা বলুন - তা নাকি খুবই পুরাতন। আলোচিত অনুষ্ঠানে যথারিতি তাদের অনুপস্থিতি।

আমি দাওয়াতটা পেয়েছিলাম - আপন কমিউনিটির সদস্য হবার কারনে।দাওয়াতে দ্বীনের কাজের জন্য আমার আপনার একটি সামাজিক ভিত্তি প্রয়োজন।সামাজিক পরিচিতি,ভিত্তি,গ্রহনযোগ্যতা ইত্যাদি গড়ে উঠে প্রবাসের এই সমস্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের মাধ্যমে।

আমার এই নায়কের সুরুত (চেহারা) একেবারে জামায়াতি।সিরতে (চরিত্রে) একেবারে খাটি বাকশালী। ব্যবসা বানিজ্য সবই জামায়াতিদের সাথে। নিজের সন্তানদেরকে (ঢাকায়) জামায়াতিদের মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন।আলোচিত প্রোগ্রামে তিনি ও আমন্ত্রিত। অনুষ্ঠান শুরু হবে জু'মআর সালাতের পর। একসাথে যাচ্ছি মসজিদে। একসাথে আমরা দশ বারো জন। আলোচনার বিষয় বাংলাদেশীদের আকামা ট্রান্সফার। একজন বললেন যতদিন এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন আমাদের সমস্যা সমাধান হবে না। আরেকজন - ইন্ডিয়ার সুবিধার জন্য ই এই সরকার এটাকে জিঁইয়ে রাখবে। আরেকজনের মন্তব্য - ইসলাম,মুসলমান,কুরআন,হাদীস,রাসূল, আলেম ওলামা,মাদ্রাসার প্রতি এই সরকারের আচরণ বন্ধ না হলে - কখনোই আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি আর আমি পাশা পাশি হাটছি। তিনি বললেন, আপনারা শেখ হাসিনা সম্পর্কে কিছু জানেন না। আমি একটি ঘটনা বলি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে।

দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু এদেশে আসেন।বৈঠকটি হয় রিয়াদে।বাদশা ফায়সালের একান্ত দাওয়াতে। বাদশা ফায়সাল পাকিস্থানীদের কুমন্ত্রনায় বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন, আপনার দেশের নাম কেন বাংলাদেশ রাখলেন। কেন ইসলামী নাম রাখলেন না।

জবাবে বঙ্গবন্ধু বাদশাকে বললেন। আপনার দেশের নাম তো ইসলামী না। আপনি আপনার দেশের নাম কোন সাহাবীর নামে রাখুন। আমি ও পরিবর্তন করবো। এপর্যন্ত শুনেই আমার কান গরম হয়ে গেল।বলে কি ব্যটা। মুখে লম্বা দাড়ি। গায়ে হুজুরদের চেয়ে বেশী লম্বা জামা।বক্তৃতার সময় ঠিকই হামদ ও নাত দিয়ে শুরু করে। এত বড় মিথ্যা।তাও মসজিদে যাবার সময়।

আমি শোধালাম, ভাই আপনার মত লোকেরা ভুল তথ্য দিলে সমস্যা হবে। আমার মনে হয় আপনার কোথাও হয়তো ভুল হচ্ছে।

সাথে সাথে তিনি বললেন, না আমার কোন ভুল হচ্ছে না। আমাকে ওমুক .....

আমার আর সহ্য হল না। আমি বললাম প্লিজ - আর না। অসত্য বলবেন, বলার অভ্যাস আছে। কিন্তু স্থান কাল পাত্র ভেদে বলবেন।এটা নিশ্চিত শেখ মুজিবের আল্লাহর ঘর দেখার ভাগ্য হয় নাই। তাকে মহত্ব করে দেখাবার জন্য আন্য কোন গল্প বানানো সহজ। বাজারে এরকম অসংখ্য গল্প আছে। কিন্তু এমন কিছু বলবেন না - যা মোটেই সম্ভব নয়। শেখ মুজিব ৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর্যন্ত সাউদি আরবে আসেন নি। বা আসতে পারেন নি।

আবার তিনি কিছু বলতে চেষ্টা করছিলেন। পাশের একজন বললেন - আর না ভাই। এখন মসজিদে যাচ্ছি তো। সালাত আদায় করবো। সালাতের পর কিছু সওয়াব হবে। সেই সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ আগেই ব্যলেন্স করবেন না। যে ব্যক্তি সাউদিতে ই আসলো না। বাদশা ফায়সালের সাথে দেখা হল না।মরার পরে তাকে নিয়ে এমন মিথ্যা বলা আওয়ামীলীগের বুদ্ধিজীবিদের দ্বারা ই সম্ভব।

আমি এই ঘটনার পর - শত ইচ্ছা থাকার পরও এই ভদ্রলোককে আপনি থেকে তুমি বলতে পারি নি। তুই বলা শাহবাগী প্রজন্মের মা বাপেরা শিখাবে। ভাবলাম এটা কোন সভ্য মানুষের কাজ না।তুই তুই বলে চিৎকার করা নিশি কটুম্বদের কাজ হবে। নিচে নামা যায়। এত নিচে নামলে তো শয়তানের বদনাম হবে।

ভাবছিলাম যে দলের এক কর্মী তার নেতাকে নিয়ে এমন মিথ্যা রচনা করতে পারে। তার দলের নেতা নেত্রীরা কতই না সহজ করে মিথ্যা বলতে পারেন। ৫ তারিখের নির্বাচন জাতীয় তামাশা আর উপজেলা নির্বাচনটা নিয়ে ডিজিটাল বাকশালীদের মন্তব্য আরো বড় মিথ্যা হবেই।জনগনকে সাবধান হবার সময় এসেছে। বিষয়টা একা জামায়াত বা বিএনিপির নয়। বরং তা গোটা জাতীর জাতীয় দায়িত্ব।পিতারটা ছিল শুধু বাকশাল - জয়ারটা আরো কয়েক ডিগ্রি হাই। ডিজিটাল বাকশাল।

বিষয়: বিবিধ

১০৬৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

179926
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : এরকম অনেক আছে যারা সামনে একরকম ভেতরে অন্যরকম।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৬
133205
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকে মোবারকবাদ। এদের থেকে সাবধান।
179959
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৫৪
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : পিতারটা ছিল শুধু বাকশাল - জয়ারটা আরো কয়েক ডিগ্রি হাই। ডিজিটাল বাকশাল।

হাসাইলেন বড্ড হাসাইলেন।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৭
133206
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : হাসলে শরীরের জন্য খুবই ভাল। তবে
179965
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:০১
শেখের পোলা লিখেছেন : ধন্যবাদ৷
শেষ লাইনে লিখেছেন; 'জয়ার জন্য' ওটা জায়ার জন্য হবে, আর শব্দটা ব্যবহার হয় স্ত্রীর বেলায়, কন্যার জন্য 'আত্মজা' হয়৷ মাইণ্ড করলে স্যরি৷
180249
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৭
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : ভাই - মাইন্ড নয়। বরং উপকারই করলেন। এমন মন্তব্য কাম্য। মোবারকবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File