বাংলাদেশের শিয়াবে আবু তালেব উপত্যকা - সাতক্ষীরা জনপদ

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০২:১০ দুপুর

সাইদুশ শুহাদা হযরত হামযার ইসলাম গ্রহন। তার আগে হযরত ফারুকে আযমের ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহন। এগুলো সবই ছিল নবুয়তের ৬ষ্ঠ বছরে। হযরত ওমরের ইসলাম গ্রহনের মাত্র তিন দিন পরই হযরত হামযা ইসলাম গ্রহন করেন।

ফারুকে আযমের ইসলাম গ্রহনে পরই ইসলাম (জুহুর) প্রকাশ্যে আসে। সালাত আদায় হয় একেবারে কাবার চত্তরে। আর হযরত হামযার ইসলাম গ্রহনে বনু হাশেম এই নতুন আন্দোলনের সাথে একাত্ম হয়ে যায়। মোটা মোটি প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস চলে এভাবেই। তীব্র সহিংসতার ভেতর দিয়েও শত্রুদের মধ্য থেকে সর্বোত্তম ব্যক্তিবর্গ ইসলামের অন্তুর্ভুক্ত হয়।মক্কার তাগুত শক্তি তাদের সর্বশেষ চেষ্টা করে বয়কটের মাধ্যমে।

নুবয়তের ৭ম বছরের মহাররম মাসে মক্কার সব গোত্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে বনু হাশেম গোত্রকে বয়কট করার চুক্তি সম্পন্ন হয়।

সেই চুক্তিতে যা ছিল -

এক) বনু হাশেম গোত্র মুহাম্মদ (সাঃ) কে আমাদের হাতে সমর্পন করতে হবে।

দুই) মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করার অধিকার দিতে হবে।

এই দুটি শর্ত বনু হাশেমকে মানতে বাধ্য করার জন্যই শিয়াবে আবু তালেব উপত্যকায় আটকাবস্থায় থাকতে হয় প্রায় তিন বছর।

এই তিনটি বছর বনু হাশেমকে (মুসলমানদেকে) যে সমস্ত বয়কটের সম্মুখীন হতে হয় -

ক) তাদের সাথে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক কেউ রাখতে পারবে না।

খ) লেন দেন বা ব্যবসা বানিজ্য করা যাবে না।

গ) কোন প্রকার খাদ্য পানীয় সরবরাহ করা যাবে না।

ঘ) কোন প্রকার যোগাযোগ রক্ষা করা যাবে না।


প্রথমে মক্কার নেতারা আবু তালেবের কাছে বিষয়টার সুরাহা চেয়েছিল। কয়েকবার দারুন নদওয়া ও আবু তালেবের বাড়িতে মিটিং হয়। কিন্তু আবু তালেবের শক্ত অবস্থানের কারনে কাফেরদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়। আবু তালেব মুসলমান না হয়েও হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে তাদের হাতে তুলে দিতে রাজি হননি।ফলাফল যা হবার তাই হয়।তখন পর্যন্ত সকল মুসলমান এবং বনু হাশেম গোত্র বয়কটের আওতায় চলে আসে।

আবু তালেবের সাথে যখন মক্কার তাগুত শক্তির দরকষাকষি চলছিল। তখন একদিন আবু তালেব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে ডেকে পাঠালেন। পরিস্থিতি বুঝালেন। মক্কার নেতৃবৃন্দের আবদার পেশ করলেন কলিজার টুকরা ভাতিজার সামনে। রাসূল (সঃ) সরাসরি জবাব ছিল। আমি যে মিশনের দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। তা আমার কোন ব্যক্তিগত বা পারিবারিক অথবা গোত্রীয় কোন বিষয় বা মিশন নয়। এটা আল্রাহ প্রদত্ত একটি অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। তাই চাচা আপনার পক্ষ থেকে আমার প্রতি যে সামাজিক নিরাপত্তা রয়েছে - তা তুলে নেন। আমাকে যিনি রাসূল করে পাঠিয়েছেন তিনি ই আমার হেফাজত করবেন।

গোটা মক্কার বিরুদ্ধে একা দাড়িয়ে যাবার হিম্মত দেখে আবু তালেব ভাতিজাকে বললেন - যে কোন পরিস্থিতে তোমার সাথে আছে বনু হাশেম। তুমি একা নও। চিন্তা করুন - তখন ও বনু হাশেমের সবাই ইসলাম গ্রহন করেন নি। এমনকি রাসূলের চাচা আব্বাস ও নয়। এভাবেই তিন তিনটি বছর শিয়াবে আবু তালেবে নিদারুন কষ্টে থাকতে হয় কাবা ঘরের মুতাওয়ালী পরিবারের সদস্যবৃন্দ।যারা মক্কার নেতৃত্বের আসনে ছিল।

তারা আটকাবস্থায় গাছের পাতা পর্যন্ত চিবিয়ে এবং শুকনো চামড়া সিদ্ধ করে ও আগুনে ভেজে খেতে হয়েছে। অবস্থা এত দূর গড়ায় যে, বনু হাশেম গোত্রের নিশ্পাপ শিশুরা যখন ক্ষুধার যন্ত্রনায় কাঁদতো, তখন বহু দূর পর্যন্ত তার মর্মভেদী শব্দ শোনা যেত।মক্কার যৌথ বাহিনীর লোকজন এসব কান্না শুনে আনন্দে আত্মহারা হত।

এই অবস্থায় থেকেও রাসূলের সাথীরা কখনো মক্কার তাগুত শক্তির করুণা চেয়ে বা তাদের সাথে কোন প্রকার অধীণতা মানতে প্রস্তুত ছিলেন না।

অবশ্য মক্কার কিছু বিবেবান ব্যক্তি এগিয়ে আসেন। এবং বয়কটের জন্য যে চুক্তি করা হয় তা ছিড়ে ফেলা হয়। লোকেরা যখন চুক্তিটাকে কা'বার প্রাচীর থেকে নামালো তখন অবাক হয়ে দেখলো যে, সমগ্র চুক্তিটাকে উই পোকায় খেয়ে ফেলেছে। কেবল 'বিসমিকা আল্লাহুম্মা' কথাটা বাকি আছে।

তখনকার ঐ কঠিন পরিস্থিতে যে সমস্ত ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন।তারা হলেন।

এক) হিসাম বিন আমরই প্রথম উদ্যোক্তা ছিলেন - এই নিপীড়নমূলক চুক্তি বাতিলের।

দুই) যুহাইর বিন উমাইয়া।

তিন) মুতয়াম বিন আদীর।

চুক্তি বাতিলের জন্য যে পরিস্থিতি সাম্ভাব্য করে তুলে। তা হল - হযরত খাদিজার ভাতিজা হাকীম বিন হিযাম তার চাকর দিয়ে কিছু গম পাঠানোর চেষ্টা করলে আবু জাহলের যৌথ বাহিনী তা আটকাতে চেষ্টা করে। ঠিক এ সময় আবুল বুখতারী প্রতিবাদ করেন।

তার পর বিষয়টা মক্কার দারুন নদওয়াতে (সাংসদে) আলোচনা হয়। এবং আবু জাহল সহ তাগুত শক্তি পরাস্থ হয়।

আমার প্রিয় দেশের কিছু জনপদ আজ একই ভাবে শিয়াবে আবু তালেবের মত আটকবস্থায় রয়েছে।সেখানকার বনিআদমদের কোন আওয়াজই আমাদেরকে স্পর্শ করছেনা। আমরা নিয়মিতই জীবন যাপন করছি। আমাদের মিডিয়া সম্প্রদায় নিজেদেরকে বিক্রি করে দিয়েছে মুশরিক ভারতের কাছে অল্প মূল্যে।

সাতক্ষীরার আমীরের ছেলে। তাই তাকে পরিক্ষার হল থেকে যৌথবাহিনি আটক করেছে।এর আগে দাখিল পরিক্ষার সময়ও তাকে আটক করা হয়েছিল।সাজানো গোছানো বাড়ি তছনছ করেছে। আবু জাহলের যৌথবাহিনী যা কল্পনা ও করেনি। আজকের আবু জাহল ফিরউনদের যোগ্য সন্তানরা তার চাইতে বেশী নির্মমতা দেখাচ্ছে।মানবতা,মানুষত্যকে তারা লজ্জায় ফেলেছে।

কোথাও কি আবুল বুখাতারী নেই।হুংকার দিবে এই মানব রুপি দানবদের?

তখন বনু হাশেমের নারী শিশুরা রক্ষা পায় নাই। ঠিক আজও একই চিত্র। তবে নির্যাতনের রকমারি আগের তুলনায় অনেক ভয়াভহ ও কৌশলী।


রাসুল (সঃ) বলেছেন - মুসা (আঃ) সময়ে ছিল ফিরউন।আমার সময়ে ফিরউনের ভুমিকায় আছে ইবনে হিশাম (আবু জাহল)। তবে মুসার ফিরউনের চাইতে আমার ফিরউন (আবু জাহল) আরো নির্দয় ও কঠিন।

আমার মনে হয় সাতক্ষীরা, দক্ষিন চট্রগ্রাম,বগুড়া,নোয়াখালীর রায়পুরের জনগনকে জিজ্ঞেস করেন -তারাতো ফিরউন বা আবু জাহল দেখেনি। এ যুগের ফিরউন বা আবু জাহলের যোগ্য উত্তরসুরী কে? জবাবটা পেয়ে যাবেন। প্রয়োজন নিজের বিবেককে জাগ্রত করা।

স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা আজ খামছে ধরেছে সেই একই অসুর শক্তি। আপনারা তাকে চিনেন তো?

বিষয়: বিবিধ

২১২১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

175854
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
মুিনর লিখেছেন : সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এ নব্য ফেরাউন আবু জেহেলদেরকে কঠিন হস্তে প্রতিহত করতে হবে। আমাদের যার যার অবস্থান থেকে বজ্র কন্ঠে হুংকার দিতে হবে। আমাদের শিসা ঢালা প্রাচীরের মত ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ নব্য আবু জেহেলদেরকে প্রতিহত করতে হবে।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৭
129145
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকে অসংখ্য মোবারকবাদ।সহমত রাখি।
175855
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৯
আবু সাইফ লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ...

হিংসা হয় সাতক্ষীরাবাসীদের জন্য...

নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তাঁদের পুরস্কৃত করবেন-
আখেরাতে তো বটেই- দুনিয়াতেও ইনশাআল্লাহ..

আর জাতির জ্ঞানপাপীদের জন্য যা অপেক্ষা করছে তা কল্পনা করতেও গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়..

"ইন্না মা'য়াল 'উসরি ইউসরা"
Praying Praying Praying Praying Praying
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৮
129146
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : জাতির জ্ঞানপাপীদের জন্য যা অপেক্ষা করছে তা কল্পনা করতেও গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়..
ভয় লাগে - আল্রাহ যেন আমাদেরকে ক্ষমা করেন।
175875
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৫
আবু ফারিহা লিখেছেন : শিয়াবে আবু তালেবের ফেরাউন যেমনি ভাবে পরাজিত হয়েছিল ঠিক সেই ভাবেই আজকের নব্য ফেরাউন সময়ের ব্যবধানে একদিন পরাজিত হবে ইনশাল্লাহ। সুন্দর উপস্হাপনের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৮
129148
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ তা হবেই।আপনাকে ও মোবারকবাদ।
175881
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৩
মাজহার১৩ লিখেছেন : সাতক্ষীরা বাসীদেরকে তাদের রাজ্যেই ইসলাম প্রতিষ্টা করতে হবে। এরপর পার্শ্ববর্তী রাজ্যে।
175909
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৯
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : সাতক্ষীরার ভাইরা তাদের পরীক্ষায় উর্ত্তিন হয়েছে। আমরা কোথায়?
176124
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:৫৪
আবূসামীহা লিখেছেন : হযরত ওমরের ইসলাম গ্রহনের মাত্র তিন দিন পরই হযরত হামযা ইসলাম গ্রহন করেন।
======
ব্যাপারটা হবে হামজার (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের মাত্র তিন দিন পরই ওমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন।
Happy
176263
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:০৩
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : হযরত ওমর ই প্রথম ইসলাম গ্রহন করেন। তার তিন দিন পর হযরত হামযা ইসলাম গ্রহন করেন। দেখুন 'মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলূল্লাহ (সাঃ)বইটির ১৬১ থেকে ১৬৭ পৃষ্ঠা।সিরাতে ইবনে হিসাম এর ১ম খন্ড।
আপনাকে ধন্যবাদ।
176777
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:০২
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : সত্যিই তারা কঠিন ঈমানী পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং হচ্ছেন। কিন্তু আমরা আমাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছি তাই ভাববার বিষয়।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০১
131988
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আমাদেরকে আরো ভাবতে হবে এবং কৌশল বের করতে হবে।
177280
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:১০
আবু আশফাক লিখেছেন : সাতক্ষীরা সিয়াবে আবু তালিব আর দেশটা আজ ফিলিস্তিন।
১০
178972
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০১
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : সত্যি কথাটা লিখেছেন। আপনপাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File