জেদ্দার টেবিল টক শো এবং হারাতুল মাজলুম
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:১৬:০৭ সন্ধ্যা
এক)
বেশ কিছু দিন পর জেদ্দার বালাদে গিয়েছিলাম।যদিও প্রতিদিন এই বালাদের পাশেই যেতে হয় চাকুরিস্থলে।কিন্তু আগের মত রাজনৈতিক আড্ডা দেয়া হয় না।এর কারন অনেকগুলো। কর্মজীবনের ব্যস্ততার সাথে রয়েছে নতুন নতুন সমস্যা।তবে আমার বন্ধুরা বলে বিয়ে মানে বিবাহিত জীবনের খাঁচায় বন্দী হওয়া। অথচ সেই ১৯৯৭ থেকেই বালাদে ছিলাম।প্রতিদিনকার রুটিন ছিল রাত দশটার পর রাজনৈতিক আড্ডার। এটা খুবই জমজমাট হত।ভেনু হত আমাদের ভালবাসার (আমাদের এক সিনিয়র বন্ধু) মোবাইল অফিস।শুরু হত আমরা চারজন বা পাঁচজন দিয়ে।শেষ হত প্রায় ১৫ থেকে ২০জন দিয়ে। সবাই কথা বলার অধিকার রাখতেন। তবে মডারেট যেভাবেই সুযোগ দিতেন সবাই সেটা মানতেন।সুযোগ হত অনেক কিছু জানার।অনেকে শুধু শুনতেন। মতের পরিবর্তন করেও অনেকে নিজেদের পূর্বের আদর্শ ছেড়েছেন।
দুই)
বালাদ হল জেদ্দা শহরের মুল শহর। এর পাশে হারাতুল মাজলুম (এলাকার নাম) হল জেদ্দার ঐতিহাসিক স্থানের সমষ্টি।জেদ্দাতে যা কিছু দেখার মত তা সবই- প্রায় এই এলাকায়।যেমন, এখানে আছে প্রায় ১৪০ বছর পূর্বের একটি মসজিদ, তুর্কিদের সংসদ,শত বছর পুরনো একটি পানি শোধনাগার,তুর্কি আমলের বিল্ডিং।আমি নিজে এই এলকায় ছিলাম বেশ কয়েক বছর। কিন্তু আমি কখনই এগুলো জানতাম না।সাউদ পরিবারের রাজতন্ত্রের শত বছর উদযাপনের সময় আল জাজিরা জেদ্দা শহর নিয়ে একটি ডুকুমেন্টারী প্রচার করেছিল।আমি সেটা দেখে প্রথম জানতে পারি মসজিদটির কথা। এমন আরো অনেক কিছু রয়েছে হারাতুল মাজলূম সহ আশে পাশের এলাকায় - যা বছরের পর বছর বসবাস করে আমরা কেউ জানতাম না।এলাকাটি পর্যটন শিল্পের একটি বিরাট সুযোগ ছিল। কিন্তু কালো আর লাল সোনার আধিক্যতা স্থানীয়দের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না।আল্লাহর দেয়া এই নেয়ামত আর কতদিন চলবে? এটা তাদের ব্যাপার।কারন উম্মাতুল আ'রাব আর উম্মাতুল ইসলাম বলে একটি ফিতনা এখন প্রবল আকার ধারন করেছে।
বিয়ে করার অনেক ফায়দা তথা ফজিলত রয়েছে। প্রবাসী হলেতো আরো লাভ আছেই। তবে আমার মত লোকদের জন্য ক্ষতি কারন রয়েছে বেশ। এই জরুরি কর্মটি করার পূর্বে আমার বন্ধু মহলে আমি ছিলাম খুবই জরুরী ব্যক্তি। বিয়ে করার পর হয়ে গেলাম কেমন অচেনা। এই চিন্তা আমার পূর্বে ছিল। কিন্তু সে দিন বালাদে গিয়ে আবিস্কার করলাম - আমার আগের মতটি ভুল ছিল। বরং আমি নিজেই আলাদা হয়ে গেছি। আমার প্রিয় বন্ধুরা আগের মতই আছে।
তিন)
টেবিল টকের বিষয় ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে। বিএনপি কি? জামায়াত থেকে আলাদা হয়ে যাবে। শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাকশালের সকল নির্যাতন জামায়াত সহ্য করে এখন আলাদা করে দেবে। বিএনপির নেতৃত্ব কি এটা করবে? করলে কার কি ক্ষতি হবে ইত্যাদি।
আলোচনায় কেউ জামায়াতকে দায়ি করলেন। আবার কেউ দায়ি করলেন বিএনপিকে।সবাই সবার যুক্তি দিয়ে নিজের মত প্রতিষ্টা করতে চেষ্টা করলেন।প্রাণবন্ত আলোচনা হল। সবার দাবী মাঝে মধ্যে এভাবে আমাদের টেবিল টক শো করা প্রয়োজন।এই ক্ষেত্রে আমাকেই দায়ি করা হল। পুরাতন টকারদের সাথে নতুন এক ভাই যুক্ত হলেন। যিনি খুবই প্রাজ্ঞ এবং পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়নে ভাল মুনসিয়ানা দেখালেন।
আমাদের এই টেবিল টকের আলোচনার নির্যাস ছিল তা আপনাদেরকে শেয়ার করছি -
এক) জামায়াত এই পর্যন্ত এসেছে কারো ওপর ভর করে নয়। বরং রক্ত আর ত্যাগের পরাকাষ্টা দেখিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে। তাই ভারতীয় দালালদেরকে ভয় পেয়ে বিএনপি এই কাজটি করলে বিএনপিরই ক্ষতি হবে বেশী।কারন বিএনপি এখনো আক্ষরিক অর্থে কোন দল নয়। এটা এখনো একটি বহুরুপিদের বহুমুখি ক্লাব ই আছে।পাবলিক সমর্থন এক বিষয় আর সংগঠন আরেক বিষয়।
দুই) জামায়াত বিএনপি বা আওয়ামীলীগের মত কোন দল নয়। বরং জামায়াত হল আদর্শিক দল। এদেশের মাটি ও মানুষের হৃদয়ের কুন্দরে লালিত আদর্শই চর্চা করে জামায়াত। আগামীর সময়ই বলে দিবে জামায়াত সঠিক ছিল। যেমন কেউ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর উক্তিটি যুক্তি হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। রণাঙ্গনের এই মুক্তিযুদ্ধা বলেছেন - ১৯৭১ সালে জামায়াতের যে রিডিং ছিল - আজ আমরা ৪৩ বছর পর এসে বুঝতে পারছি।
জামায়াতের ভয়ের জায়গা ছিল - ভারতীয় সহযোগিতায় আমরা স্বাধীন হলে আমাদের স্বাধীনতা অরক্ষিত হবেই। জাসদের প্রতিষ্টাতা এবং ৯ম সেক্টরের কামান্ডার মেজর জলীল যা বুজেছিলেন আজ থেকে ২৫ বছর পূর্বে তা কাদের সিদ্দিকীরা বুঝতে পারছেন ৪৩ বছর পর।চিন্তার জগতে জামায়াতের এই অগ্রসর ও দুরদর্শীতার জন্য কেউ বললেন অপেক্ষা করতে আগামীর ইতিহাস লেখা পর্যন্ত।তাদের দাবী হল - যখন নির্মোহ ইতিহাস লেখা হবে তখন জামায়াতের ভুমিকার প্রতি সত্যিকার বিচার করা হবে।
তিন) যে রক্ত ঝরিয়েছে জামায়াত বিগত দিন। এই রক্ত কথা বলবে। জামায়াত কখনোই জাসদের রাজনীতির পরিণতি হবে না।বা চরিত্রহীনার মত অন্যের খোয়াড়ে আশ্রিত হবে না।অথবা জাসদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেভাবে অল্প দামে বিক্রি হয়েছে,জামায়াতের নেতৃত্ব তা কখনো ই হবে না। জামায়াতের আদর্শিক এই মানুষগুলো সেই পরিক্ষা দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। এবং সফলতার সাথে তারা তাদের আদর্শিক জায়গায় অবস্থান করছেন।তাই আগামীতে জামায়াত আরো শক্ত ভিত্তির ওপর দাড়িয়ে রাজনীতি করবে। জামায়াত ১৯৭১ এর পর ছিল না।দেশের ব্যলেন্স অবপার্লামেন্ট হতে পথ পাড়ি দিতে হয়েছে ১৯৯১ পর্যন্ত।আজকের শেখ হাসিনার দল আওয়ামীলীগ পদচম্বুন করতে হয়েছিল জামায়াতের।তার পর ১৯৯৬ তে ব্যলেন্স আবকান্ট্রি হয়েছে এই জামায়াত। কেন জামায়াতকে এত ভয়। ভয়ের কারন হল নির্বাচনের মত নির্বাচন হলে জামায়াত যে দলের সাথে থাকবে সেই দলই সরকার গঠন করেবই।এই সিগনাল ভাল করে বুঝতে পেরেছে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং তাদের ভারতীয় আর্যরা।সমস্যাটা এই জায়গায়।
চার) আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক জগতের নেতৃত্ব এখনো বামপন্থী,রামপন্থী আর পরজীবি দালাল মানষিকতার লোকদের হাতে। এই জায়গায় জামায়াতের বড় আকারে দুর্বলতা রয়েছে। বিএনপির সাংস্কৃতিক কর্মীদের আদর্শিক কোন কমিটমেন্ট নেই। তাদের আলাদা কোন প্লাটফরম নেই। যা আছে তা দিয়ে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মোকাবেলা করার কোন শক্তি নেই। এই ক্ষেত্রে জামায়াতের কমিটমেন্ট যেমন আছে তেমন তাদের কর্মী ও আছে। প্রয়োজন সম্মন্নিত উদ্দোগের।
সমস্যা হল এই সেক্টরে এখনো কাজ করতে তেমন কারুর আগ্রহ নেই ।যারা করতে চায় কিছু - তাদের পিছনে শুধু সমালোচনা ছাড়া আর কিছু করা হয় না।সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষগুলো সব সময় চায় একটু পদ পদবী সম্মান।এখনো এই ধারাবাহিকতা বা ঐতিহ্য শুরু করতে পারে নাই বাংলাদেশী পন্থীরা। বামপন্থী,রামপন্থী,বাকশালীরা যেভাবে একজন আরেকজনের পীঠ চুলকানো সম্মান,প্রতিষ্ঠার কসরত করে - তার তুলনায় বিএনপির একেবারে জিরো। তবে
প্রেসিডেন্ট জিয়ার অনন্যতা এই জায়গায়। তিনি চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশী জাতিয়াতাবাদের ভিত্তি মজবুত করতে। বুদ্ধিবৃত্তিক একটা বলয় তৈরী করতে। কিছুটা সফল হয়েছিলেন।তার পর আর কোন কাজ হয় নাই। ম্যডাম খালেদা জিয়ার সেই হাইট যেমন নেই তেমন তার আশে পাশের নেতৃত্বের কোন চেষ্ট ছিল না।
পাচ) ডিজিটাল বাকশালকে রুখতে হলে কেউ বলেছেন - রেমিটেন্স বন্ধ করে দিতে।প্রবাস থেকে যদি সবাই রেমিটেন্স বন্ধ করে দেয় তাহলে ডিজিটাল বাকশাল প্রতিষ্টা প্রলম্বিত হবেই। আবার কেউ বলেছেন জামায়াত নিজে থেকেই বিএনপিকে ছেড়ে দিতে। আবার কেউ বলেছেন এখন জামায়াত ৬০ এবং ৭০ দশকের মিশরের ইখওয়ানের কর্মপদ্ধতি গ্রহন করতে। সামাজিক নিরাপত্তার বলয় তৈরী করার এখনই সময়।যা করেছিলেন আজকের উদীয়মান অটোমান শক্তি তুর্কির আব্দুল্লাহ গুলরা।
পায়াস আর চা দিয়ে আপ্যায়ন করার মাধ্যমে জেদ্দার বন্ধ হয়ে যাওয়া টেবিল টক শো সমাপ্ত হয়।সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেন।
আমি পাশের দোকান থেকে দুই কিলো পরিমান ইলিশ মাছ কিনে বাসায় ফিরে আসি।বাসায় এসে দেখি রাত ১টা বাজতে ৫ মিনিট বাকি।
পাদটিকা
এই তরুনের রক্ত কথা বলবেই। এরা দেশ জাতি গণমানুষের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে। ইসলাম এবং মুসলামান তথা দেশের গণমানুষের জন্য তাদের এই ত্যাগ।দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হলে ইসলাম তথা ইকামতে দ্বীনের কাজ করা সবই বন্ধ হয়ে যাবে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৯ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আগামী অবশ্যই আমাদের। পৃথিবীতে থাকলেও আমরা, না থাকলেও আমরা, জেলে গেলেও আমরা...
ধন্যবাদ।
এভাবেই একদিন ইনশাআল্রাহ।
ধন্যবাদ।
বাংলার জমীনে ইসলামী আন্দলনের শহীদ কর্মীদের রক্ত কখনো বৃথা যাবেনা ইনশা আল্লাহ।
এই রক্তই একদিন কথা বলবে।
নাস্তিক মু্ক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সবাইর সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
আমাদের কাজ হল ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রায় কর্মীদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া।
অন্তত আমাদের ২০ হাজার ভাই জেলখানার বিতরে পঙ্গুত্ত জীবন যাপন করছে।
সত্য বলেছেন। দোয়ার মাধ্যমে অনেক কিছু হয়। তবে আমার মনে হয় আমরা সবাই সবার জায়গা থেকে কাজ করা প্রয়োজন।মোবারকবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন