বেশী দামে কিনা,কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:৫৬:৫৮ সন্ধ্যা
এক)
শিরনামটি জনাব আবুল মানসুর সাহেবের।এই নামে তার একটি বড় বই আছে। আমি সেটা পড়েছি আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে।
বইটি আমাকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন আমার বাবা।তখন পত্র লিখার যুগ।টেলিফোনের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হত। সাথে আকামা (আইডি) দেখাতে হত।প্রতি মিনিট ১৬ রিয়াল (বর্তমান হিসাবে ৩৩৬ টাকা) গুনতে হত।তাই টেলিফোনের আকাংখা থাকলেও সাধ্য ছিলনা।আমার বাবা একটি চিঠি ও দুটি বই - লোক মারফত পাঠিয়েছিলেন।
আবুল মানসুর সাহেবের বই এবং বসনিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আলীয়া আলী ইজ্জত বেগোভিচ এর লিখা প্রাচ্য পাশ্চ্যত্য এবং ইসলাম।এ দুটি বই আমার খুবই উপকার হয়েছে। ২০১১ তে যখন বাবা ওমরা করতে আসলেন তখন এই বই দুটি দেখালাম।বইগুলো পাঠানোর সময় আমার বাবা বই দুটি নিজে পড়ে লাল কালিতে দাগ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। ওমরাতে এসে আবার তিনি বইগুলো নিজে পড়লেন।আরো কিছু বিষয় আমাকে শুধালেন।
দুই)
মরহুম ইজ্জত বেগোভিচ বইটি লিখা শুরু করেছিলেন মার্শাট টিটোর আমল থেকে।তখন তিনি তরুন আইনজীবি।বসনিয়ার মুসলিম মাইনোরেটি নিয়ে কাজ করতেন।এই বইটি যখন প্রকাশিত হয় তখন লেখক জেল বন্ধি।আগ্রহী যে কেউ ই বইটি পড়তে পারেন। বইটির শেষ অধ্যায়ে সালাত সম্পর্কে যে তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে। তার তুলনা সত্যি বিরল।ইসলামিক স্কলারদের লিখা আর প্রেসিডেন্ট আলীয়ার লিখার মধ্যে বেশ তফাৎ রয়েছে। তিনি যেভাবে সালাতকে ব্যাখ্যা করেছেন তা আমি অন্য কোন স্কলারের লিখাতে পাই নি।
বইটিতে তথ্যসুত্র সবই দেয়া হয়েছে এবং পৃথিবীর প্রায় সব পন্ডিত ব্যক্তির উক্তি তুলে দেয়া হয়েছে।আল্লামা ইকবাল, রবিঠাকুর সহ আমাদের অনেক পরিচিত ব্যক্তিত্বের উক্তি রয়েছে। বইটা পড়ার আমন্ত্রন রইল।ভালো করে বইটি পড়লে নতুন বেশ কিছু দর্শন পাওয়া যাবে।
২য় বইটিতে (আবুল মানসূর সাহেবের) শেখ মুজিব আমলের (১৯৭২ থেকে ১৯৭৫) তুঘলকি সব কর্মকান্ডের যেমন সমালোচনা করা হয়েছে - তেমন মুজিব সরকারকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। তিনি আমাদের সাংবাদিক জগতে যতটা না পরিচিত তার চেয়ে বেশী বুদ্ধিভিত্তিক সমাজে আদরনীয় ছিলেন। যেহেতু তার লেখা প্রায় সবই বাকশালী মুজিব সরকারের বাস্তব ও সত্য সমালোচনা, তাই এই মানুষটাকে নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয় না আমাদের স্বাধীন! মিডিয়াতে। আরেকটি কারন আছে, কারনটা হল - প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের ছেলে যেমন আজ বামপন্থী নেতা - ঠিক তেমন আবুল মানসুর সাহেবের ছেলে আজ ভারতীয় দালাল শ্রেনীর এদেশীয় বড় এজেন্ট।আমি ডেইলি ষ্টারের জনাব মাহফূজ আনাম সাহেবের কথা বলছি।অবশ্য আবুল মানসুর সাহেব আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।পরবর্তীতে আবুল মানসুর সাহেব অপাংক্তেয় ছিলেন শেখ মুজিবের আওয়ামীলীগে।
তিন)
৫০,৬০ এবং ৭০ এর দশকে মুসলিমলীগ নেতাদের সন্তানরা যেভাবে মস্কোপন্থী - পিকিংপন্থী হয়েছিলেন। আবুল মানসুর সাহেবের ছেলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। আজ আবুল মানসুর সাহেব ইতিহাসের আড়ালে চলে যেতে বসেছেন।যেমন আমাদের বর্তমান প্রজন্ম জানেনা - দার্শনিক প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম - দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ - জাগরণের কবি ফররুখ আহমাদ - কবি শাহেদ আলীকে। এরা সবাই আমাদের জাতি সত্তা তৈরীর সিপাহাসালার ছিলেন। যদিও আবুল মানসুর সাহেব ছিলেন এদের বিপরীত মেরুতে। তবু তার লিখা বইটিতে বাকশালী সরকারের নির্মোহ একটি চিত্র রয়েছে।বইটা বাজারে পাওয়া যায় কি না জানি না। তবে বইটা বর্তমান আওয়ামীলীগকে জানতে হলে পড়া প্রয়োজন।যদিও আবুল মানসুর সাহেব আগাগোড়াই ছিলেন আওয়ামীগের সমর্থক।
চার)
দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৩ বছর। স্বাধীন হবার পর শেখ মুজিবকে যারা প্রাতরিত ও ফ্যাসিষ্ট শাসনের দিকে ধাবিত করেছিল আজ তার কন্যাকে একই গোষ্ঠী লেন্দুপ দর্জীর ভুমিকায় নামিয়েছে।নেত্রীও তার ঘোমটা খুলে নেমে পড়েছেন।আমাদের শেখ মুজিব এমন ছিলেন না।
১১ বছর ছিলেন শেখ মুজিব জেলে। বলা হয় গনতন্ত্রের জন্য শেখ মুজিবের এই ত্যাগ। কিন্তু এত বড় মাপের নেতা - কিভাবে দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে নিন্দিত,ফ্যাসিষ্ট নেতা বনে গেলেন - তাও আবার মাত্র ৩ বছরের মধ্যে।ইতিহাসের স্বার্থে বিষয়টা গবেষনা করা প্রয়োজন।১৫ আগষ্টের পরিণতি আমরা কেউই কামনা করিনি এখন ও না। একজন গনতান্ত্রিক ও মানবিক গুন সম্পন্ন ব্যক্তি এরকম পরিণতির চিন্তা ও করতে পারে না।তা সম্ভব ও না।
কিন্তু প্রশ্ন হল - তার পর ১৫ আগষ্টের পরিনতি কেন হল?শেখ মুজিবের এই পরিণতির জন্য দায়ি কে? তিনি নিজে না তার সাঙ্গপাঙ্গরা?
শুধুমাত্র আবেগ দিয়ে যারা ১৫ আগষ্টকে পর্যালোচনা করেন তাদের ঐতিহাসিক ভুল এই জায়গায়।আর এই ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে আজ নেত্রী হাসিনার মেহেরবানীতে।যা ছিল ইতিহাস তা আজ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে অস্বীকার করা হচ্ছে।
কেন শেখ মুজিব নিহত হবার পর তার দলের নেতারা লাইন বেঁধে আওয়ামীলীগ নেতা মুশতাকের মন্ত্রী পরিষদের গর্বিত সদস্য হলেন?(৬জন ছিলেন)
কেন আওয়ামীলীগ নেতা মালিক উকিল লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের বললেন, বাংলাদেশের ফিরাউন নিহত হয়েছে।বাস্তবতা তো এই ছিল, লন্ডনে ১৫ আগষ্টের নায়কদের কোন ক্ষমতা ছিলনা?
তার পর ও কেন গোটা বাংলাদেশে একটি শোক মিছিল হল না?
আজকের তরুন প্রজন্ম এই বিষয়টা বিবেক দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলে ১৫ আগষ্টের ইতিহাসের সাথে সঠিক বিচার হবে।এবং বর্তমান ডিজিটাল সমস্যাটা বুঝতে পারবে।বুদ্ধির জগতের এই বড় কাজটা যাদের করার দায়িত্ব ছিল, তারা তাদের দায়িত্ব পালন না করাতে আজকের সমস্যা।১৯৭৫ সালের প্রকৃত ইতিহাস চর্চা করা উচিত নির্মোহ দৃষ্টিতে।দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে শেখ মুজিবের শাসন ব্যবস্থা বিচার করলে সমস্যা জট শুধু লাগবেই।
পাঁচ)
শেখ মুজিবের শাসন ব্যবস্থা এবং ১৫ আগষ্টের কারন এবং প্রেক্ষাপট আবুল মানসুর সাহেবের এই বইটি পড়লে কিছুটা বূঝা যায়।শেখ মুজিব কেন এমন আচরণ করলেন? কেন ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ উপহার পেল জাতি।আজ শেখ মুজিবের ভাই শেখ নাছির এর নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হয়েছে - ব্যক্তি শেখ হাসিনার অবশ্য এটা কৃতিত্ব। তবে এই মানুষটি আমাদের সোনালী আঁশের গলায় ফাঁস লাগিয়েছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর পাট গুদামের আগুনের রহস্য শেখ নাসির সাহেব নাকি শুধুমাত্র জানতেন।এ নিয়ে শেখ মুজিব বেশ কয়েকবার ১০ নম্বরে ডেকে এনে ধমক দিয়েছিলেন। স্বাধীন দেশের পাট গুদামের আগুন আর আজকের পোশাক শিল্পের আগুনের রহস্য - ৭১ এর সেই চেতনা কি না- ৪৩ বছর পর আজ কে শেখ নাছিরের ভুমিকায় আছেন - তা জানানো অতীব প্রয়োজন।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিব মন্ত্রী হয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যান মন্ত্রী।দুর্নিতির দায়ে শেখ মুজিবকে মন্ত্রী পরিষদ থেকে বের করা হয়। এই বিষয়গুলো কিছুটা হলেও ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে লিখেছেন।
আজ আমাদের জাতীয় জীবনে যে বুদ্ধিভিত্তিক তান্ডব চলছে। বলা হয় ৭৫ সালের পর বাংলাদেশে সব কিয়ামত হয়েছে। ৭৫ পূর্ব শেখ মুজিব শাসন সঠিক ছিল।গনতন্ত্র ছিল আরো কত বাহারী গল্প।আমাদের ৪৭ এর আযাদি ১৯৭১ এর স্বাধীকার আন্দোলন - ঐতিহাসিক ৭ ই নভেম্বর আমাদের জাতীয় এই টার্নিং পয়েন্টগুলো নব্য ডিজিটাল বাকশালী বুদ্ধিবৃত্তিক দুস্যুতার খপ্পরে পড়েছে।
সময় এসেছে - ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট এর প্রেক্ষাপট আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানানো। কারন এই পরিবারটি আমাদের মহান ৭১ সালের যুদ্ধের সময় সম্পূর্ণ নিরাপদ অবস্থানে ছিল।বলার সময় এসেছে দেশের মালিক কোন একটি পরিবার নয়- একটি দল নয় - এক ব্যক্তি নয়। তাদের কোন অধিকার নেই দেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করার।
শেখ মুজিব নিজে জেনারেল রাও ফরমান আলী ডেকে কারাবরণ করেছিলেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী তখন এই জেনারেল রাও ফরমান আলীর মেহমান ছিলেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ভাষায় - শেখ হাসিনা সন্তান জন্ম দেয়া ছাড়া ১৯৭১ সালে আর কিছু করেন নি।
আমি মনে করি - এটা জাতীর জন্য বিরাট একটি রহমত। নতুবা ৭১ নিয়ে আরো অনেক মিথ্যাচার করা হত।শেখ হাসিনার ভুমিকা নিয়ে কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যই সত্য ইতিহাস।
এটা বলা প্রয়োজন আগামীর জন্য। নতুবা আমাদের আগামী প্রজন্ম তার জাতীয় চেতনা হারিয়ে ফেলবে। বলা উচিত এবং বলা প্রয়োজন।সবাইকে এক সাথে। আমরা পিন্ডি থেকে দিল্লীর প্রজা হবার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি।এই বোধটি আমাদের স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।মুসলিম স্বাতন্ত্রবোধ ই আমাদেরকে বর্তমান নেন্দুপ দর্জী তথা ঘষেটি বেগমের হাত থেকে বাঁচাতে পারে।নতুবা বেশী দামে কিনা আমাদের স্বাধীনতা খু্বই কম মূল্যে বিক্রি হয়ে যাবে।
বিষয়: বিবিধ
১৮২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন