পাকিস্তানের চুকুম ভোদাই রাজনীতি এবং আমার পাশের বাসার প্রধানমন্ত্রী শরীফ।

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৪:৩৯:০৯ বিকাল



এক)

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা সাহেবের বিষয়ে যা হয়েছে, তা এক কথায় একটি মন্দ দৃষ্টান্ত। যার জন্য এই মায়া কান্না এবং যাদের উপকারে করা হয়েছে,তাদের ক্ষতিটাই বেশী হয়েছে। বিষয়টা আপাতত নয় বরং সুদুর ভবিষতের জামায়াতের জন্য একটি বিষফোঁড় হিসাবে কাজ করবে।

অবশ্য জামায়াতের নেতৃত্ব যে কঠিন সময় পার করছে -তাদের বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। তবে বাংলাদেশের কিছু বিকৃত ও হুলুদ মিডিয়া এবং রাজনৈতিক এতিম বামপন্থীদের জন্য একটা বড় বিষয় হল। এবার জামায়াতকে (পড়তে হবে ইসলামকে) কষে গালি দেবার মত বড় অস্ত্র, তারা বিনাপয়সায় পেয়ে গেল।

এ নিয়ে চলবে বেশ কিছু দিন ভাড়াটিয়া কলাম লেখকদের ইসলাম-মুসলমানদের মাথা মুন্ডু নিপাত করার বিপ্লবী কলাম লিখা।আর টিভি টকারদের ইনিয়ে বিনিয়ে ইসলামকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বকবকানী।যোগ হল কলিকাতার হোটেল (নকল) মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গবেষনার বিষয়। ইতিমধ্যে এই সবগুলোই শুরু হয়েছে।

মজলূম জামায়াতে ইসলামীর জন্য এগুলো নগদ পাওনা।পাকিস্তান সরকার এবং পাকিস্তান জামায়াতের মেহেরবানীতে বাংলাদেশের জামায়াত বিরোধীতার জন্য একটি মহা সুযোগ করে দিল। বাকি রইল আগামীতে ইসলামী রাজনীতি বন্ধের আদালতি তুঘলকি রায়।


দুই)

পাকিস্থান হঠাৎ করে এমন কর্মটি কেন করতে গেল।কেনই বা পাকিস্তান জামায়াত জাতীয় পরিষদে এই বিল আনতে গেল তা বোধগম্য নয়।পাকিস্তান জামায়াত কি এখনো রাজনৈতিক পরিপক্কতা অর্জন করেনি!

আন্তর্জাতিক এই ট্রাইব্যুনালের জন্ম ২০১৩ তে নয়।এমন না যে, পাকিস্তান নতুন করে এই বিষয়টি জানতে পেরেছে। ভারতের বুদ্ধি পরামর্শ এবং অর্থে এই বিচার বিভাগীয় হত্যাকান্ডের ডিজিটাল দেশীয় জল্লাদ খানা (বিচার ব্যবস্থা) এবং তার জল্লাদ সমগ্র (বিচারপতিবৃন্দ) সবই প্রকাশ্যে ই গঠিত হয়েছে।এই মন্তব্যটি আমার নয়। এটা একজন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধার।

এর আগে শেখ মুজিবের বন্ধু ভুট্টোর দুর্নিতির বরপুত্র মিষ্টার ১০% জামাই আসিফ আলী এবং যুগপৎ তার ছেলের প্রেমিকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনা রাব্বানী বলেছিলেন এই ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়।তখন লিখেছিলাম - পাপ করলো শুশুর বাবাজী আর ফল ভুগবে চিকন আলীরা !

পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক দল সমুহের যদি সামান্য ঐতিহ্যবোধ আর নৈতিকতার কিছু জায়গা থাকতো - তাহলে তারা শুরু থেকে এই বিষয়ে বক্তব্য রাখার সুযোগ ছিল।আন্তরিক হলে ত্রিদেশীয় চুক্তির আওতায় এর সমাধান হতে পারতো অনেক আগেই।বিহারী কসাই কাদেরকে আব্দুল কাদের বানিয়ে বিচারিক হত্যাকান্ড করতে পারতো না।



আবার প্রশ্ন হল - সুযোগটা কেন পাকিস্তান জামায়াত করে দিল? কেন পাকিস্তান জামায়াত এই উটকো ঝমেলা পাকাতে গেল?

৪১ বছর পূর্বে যে ইস্যু শেখ মুজিব সরকারকে বাধ্য করে ভারত নিজেরা সিমলা চুক্তির মাধ্যমে কবর দিয়েছিল। তার চল্লিশা - কুলখানী সবই করেছিল তখনকার মুজিব সরকার। সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ভারত তার স্বার্থ আদায় করেছিল শত ভাগ। আর বাংলাদেশের জন্য ক্ষমার মহত্ব! নামক বালখিল্যতার মুলা ধরিয়ে দিয়েছিল।শেখ মুজিব সরকারের তখন চ্যালেঞ্জ করার কোন শক্তি ছিল না।২৫ শালা গোলামী চুক্তির আওতায় তখনকার মুজিব সরকারের কিছুই করার ছিল না। বিষয়টা আরো ভাল করে বলতে পারবেন হাসিনার এককালের কাকা ডঃ কামাল সাহেব।

তাহলে প্রশ্ন এই ট্রাইব্রুনালের জন্য এত খরছ এবং রিস্ক ভারত কেন নিল?

উত্তর যত ভাবেই দেয়া হউক। মূল একটাই পয়েন্ট। সেটা হল - ভারতের সকল অন্যায়,অত্যাচার,বর্ডারের বাংলাদেশী হত্যা,সাংস্কৃতিক আগ্রাসন,পানির ন্যায্য হিস্সা না দেয়ার বড় বাধা হল ইসলামী শক্তি। যা হল মুসলিম চেতনা। যাকে আমরা বলতে পারি ৫৬ হাজার বর্গমাইলের আসল চেতনা। আর এই চেতনা লালন করে,পালন করে এবং খুবই মজবুত ভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির। আরো বড় আকারে বললে বলা যায় - প্রায় ইসলামী দল সমুহ।অবশ্য কিছু মাজার পন্থী তথাকথিত ইসলামী দল ও পীররা এই সমীকরণের বাহিরে।কারন এই শ্রেণীর ইসলামী ডাকাতদেরকে খুবই সস্তায় কিনতে পারে ভারত বা আওয়ামীলীগ।

বিএনপি হল সুবিধাবাদীদের আখড়ার বড় সমিতি। তারা না জাতীয়াতাবাদী আর না তারা বাংলাদেশী চেতনায় বিশ্বাসী। ক্ষমতা আর অর্থ নিয়ে তাদের সকল দেন দরবার।
এটা সত্য যে, আজকের সময় সন্ধিক্ষণে বিএনপিই একমাত্র ভরসার জায়গা - দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে। বড় দল হিসাবে বিএনপির যে দায়িত্ব পালন করার কথা,সেই দায়িত্ব অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে চরম ত্যাগ ও কোরবানীর মধ্যে জামায়াত শিবির পালন করছে।তাই দেশের মানুষের এত সমর্থন জামায়াতের প্রতি।বাংলাদেশের সুশীল এবং সুশীল বান্ধব মিডিয়া যতই চেচামেচি করুক বা চিত্রিত করুক - জামায়াতের এই গণআন্দোলনকে সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের নাম দিয়ে।আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি - আগামীতে যখন গনতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস লিখা হবে তখন আজকের জামায়াতের এই কোরবানীর কথা স্বর্ণাক্ষরে লিখতে হবে।

তিন)

এবার আসুন দেখি কেন বাংলাদেশের রং টাইমে পাকিস্তানের মাথা মোটা রাজনীতির এই নিন্দা প্রস্তাব।

প্রথমত পাকিস্তানে সরকারে রয়েছে মুসলিমলীগ সরকার। অবশ্য মুসলীমলীগ উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী হওয়ার সাথে সাথে চরম বিতর্কিত। এই দলটি পাকিস্তানে গত নির্বাচনে ৬ ভাগে বিভক্ত হয়ে নির্বাচন করেছিল। সেই মুসলীমলীগের ই একটি অংশের প্রধানমন্ত্রী হলেন নওয়াজ শরীফ। সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের সাথে চুক্তি করে নওয়াজ দেশ থেকে বিতাড়িত হন সামরিক আমলে। তার বসবাসের জায়গা হয়েছিল আমার ই বাসার পাশে। জেদ্দাতে যারা আছেন তারা বিষয়টা ভাল করে জানেন।

হয়ত কেউ বলবেন ভাই আপনার বাসার পাশে নওয়াজ শরীফের বাসা ছিলনা -বরং নওয়াজ শরীফের বাসার পাশে আপনার বাসা ছিল। আমি এটা মানতে সম্পূর্ণ নারাজ। দুটি কারনে। একটি হল - নওয়াজ শরীফ ভাড়া দিয়ে থাকতেন না। আরেক জনের বদান্যতায় জায়গা হয়েছিল আলীশান মহলে। অবশ্য তার পাইক পেয়াদা ছিল অনেক। জৌলুশ তো ছিলই।সেক্ষেত্রে আমি নিতান্ত একজন ছাপোষা মানুষ।তুলনা চলে না।

তবে আমি প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধ করতাম। কারো করুণায় নয় ছিলাম না। ২য় কারন হল- আমি নওয়াজ শরীফের পূর্ব থেকে ই থাকতাম ঐ এলকায়। আমার বাসা থেকে আজকের প্রধানমন্ত্রীর বাসা ছিল মাত্র ১ মিনিটের দুরুত্ব। জু'মার সালাত আদায় করতাম প্রায়ই একই মসজিদে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে তিনি আসতে পারতেন না। কারন তিনি আমার মত স্বাধীন ছিলেন না। স্কট করে আনা হত, আবার স্কট করে নেয়া হত। দুর থেকে দেখতে পেতাম চিড়িয়াখানার প্রাণী দর্শনের মত করে।কখনো ইচ্ছা ও হয় নাই হাত মেলাবার।

তার পারিবারিক কর্মচারী যারা ছিলেন, তাদের সাথে প্রায়ই কথা হত। বুঝতে চেষ্টা করতাম একসময়ের ব্যবসায়ী প্রধানমন্ত্রীর আচার আচরণ,চিন্তা চেতনা ইত্যাদির। আজ সেই পলাতক! ব্যক্তি পাকিস্তান নামক দেশের প্রধানমন্ত্রী।

এত কথা বললাম এই জন্য যে, চাকুরীর সুবাদে অনেক বড় বড় শিক্ষিত পাকিস্তানী আমার সহকর্মী এবং বস ছিলেন। এখনো আছেন।

তাদের বড় সমস্যা দুটি।

একটি হল - হাম বড়া ভাব। এটাকে অহংকার বলা যাবে না। আমাদের স্থানীয় ভাষায় বলা যায় - চুকুম ভোদাই।(এর অর্থ হল - রাগ আছে প্রচন্ড কিন্তু মাথায় বুদ্ধি নেই) মাথা মোটা। বুদ্ধি দিয়ে নয় গায়ের জোরে।মাথা না খাটিয়ে হঠাৎ করে রাগের মাথায় যারা কাজ করেন তাদেরকে বলা হয় চুকুম ভোদাই। উদাহারণ দেয়া যাক -

পাকিস্তানের নিউক্লিয়ারের জনক কিউ খান। বেচারা বিদেশের চাকুরী (ইটালী ১৯৭৪) বাদ দিয়ে নিজ দেশের খেদমতে নিজেকে উজাড় করে দিল। পাকিস্তানকে এটম বোমা ক্লাবের সদস্য বানালো। অথচ এই মাথা মোটা জাতি তাকে কী দিল? প্রথমে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করলো মোশারফ সরকার। তার পর ১৭ মাস নযর বন্দি করে রাখলো আপন গৃহে।যাকে হিরো বানাতে পারতো সেই লোকটাকে বিশ্বব্যাপি একজন বিতর্কিত চরিত্রে পরিণত করলো। এখন এই বিজ্ঞানী পাকিস্তান জামায়াতের ছাত্র সংগঠন, জামায়াতে তালাবার বিভিন্ন প্রোগ্রামে মাঝে মধ্যে অংশগ্রহন করেন।

একই কাজ করে ভারতে আব্দুল কালাম ভারত রত্ম পেলেন এবং দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এখন তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বক্তৃতা করে বেড়ান। কর্ম এক থাকলেও ফলাফল হয়েছে সম্পুর্ণ বিপরীত।

অথচ যে কারনে কিউ খানের উপর নেমেছে এই জাতীয় অবজ্ঞা - সেই একই কারন ছিল ভারতের আব্দুল কালাম সাহেবের প্রতি। ভারতের অহংকার এই বিজ্ঞানী প্রায় ১৭ বার ইসরঈল সফর করেছেন। এই অভিযোগ নয় বরং তা প্রমানিত ছিল।

জন্মের পর থেকে পাকিস্তান কখনোই সুস্থ রাজনীতির চর্চা হয় নাই। এখন ও না।এর ফল তারা ভুগছে।ভু- রাজনীতির দিক থেকে হতে পারতো তারা দক্ষিন এশিয়ার একজন গনতান্ত্রিক যোগ্য পার্টনার। কিন্তু ঐ চকুম ভোদাই চরিত্রের জন্য আজ বোমা খাওয়ার (ড্রোন হামলা) দেশে পরিণত হয়েছে।

পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা তারা তাদের দেশকে ভাল বাসে না।বরং দুবাই,লন্ডন আর পাকিস্তানের বড় বস আমেরিকাকে বেশী ভাল বাসে।বেশী ভয় করে।পাকিস্তান আর্মীর বড় সফলতা হল - প্রতিবারই তারা নিজ দেশের জনগনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছে।

অন্যের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে আর্মী লালন করার পরিণতি পাকিস্তান আজ ভোগ করছে। পাকিস্তানের আর্মী জেনারেলরা তাদের প্রোফাইল পাঠায় ওয়াশিংটনে। সেখান থেকে বেতন ভাতা ইত্যাদি ঠিক হবার পরই চাকুরীর স্থায়িত্ব হয় আবার বিতাড়ীত হন।এটা হল পাকিস্থানের ২য় সমস্যা।

পাকিস্থানের বর্তমান সমস্যার জন্য দায়ী যেমন চুকুম ভোদাই রাজনীতিবিদ তেমনই সমান ভাবে দায়ী হল পাকিস্তান আর্মী।

অবশ্য আমাদের দেশের বর্তমান আর্মী যাদের জন্য আমার দেশের মানুষ নিয়মিত দোয়া করে। এদের অবস্থান অনেকটা পাকিস্তান এবং মিশরের আর্মীর মত হয়েছে। ঐ দুটি দেশের সেনাবাহিনী সরাসরি আমেরিকার অর্থে পালিত হয়।আর আমার দেশ জাতিসংঘের পিসকিপিং মিশনের পয়সায় বিবেক বন্ধী হয়েছে। এই তিন দেশের আর্মী এখন পোশাক আশাকে নিয়মিত বাহিনী হলেও মনোজগতের দিক থেকে এরা একেবারে খাটি ভাড়া খাটা কামলা।ভাড়া খাটা কামলার মালিক যেমন, যেভাবে প্রয়োজন মনে করে ঠিক তেমন কাজে লাগায়। এদের কাছে দেশ প্রেম বা নিজের জাতির প্রতি দায় বলে কিছু ই থাকে না। বরং যাদের অর্থ পেটে পড়ে তাদের হয়ে কাজ করতে হয়। আমাদের কম হাইটের জেনারেল মঈন ইউ আহমদ সাহেব ঐ রকমই একজন খাটি কামলা ছিলেন।

পাকিস্তান যা করেছে - মোল্লা সাহেবকে নিয়ে - তা তাদের ঐ চকুম ভোদাই রাজনীতি বা কুটনীতি।আপাতত একটা নতুন বদনামের সীল লাগলো দেশের স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী জামায়াত শিবিরের উপর।


বিষয়: বিবিধ

১৬৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File