হযরত ওমরের (রাঃ) ইসলাম গ্রহন ও সাময়িক প্রসঙ্গ (ধারাবাহিক) পর্ব - ৩
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০২:৪৬:৫২ রাত
নয়) (২য় পর্বের পর)
খিলাফাহ শাসন ব্যবস্থা।খিলাফতের দায়িত্বে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব। তাই বুরোক্রাসী, বা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে লাল ফিতার দৌরাত্ব - আবার আত্মীয়করণ-দলীয়করণ- জেলাকরন, এগুলো কিছুই ছিলনা।প্রশাসনে যারা ছিল তারা সবাই নাগরিকের সেবক ছিলেন। নিজেদেরকে প্রভু (শাসক) মনে করতেন না।খিলাফাহ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের একটা গুন থাকা অপরিহার্য।এই গুনটিই যথেষ্ট ছিল প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ও গণবান্ধব করতে। সেটা হল তাকওয়া। মহান মালিক আল্রাহ সুবহানুহু ওয়াতায়ালাকে ভয় করা সকল ক্ষেত্রে।তাই আজকের মত এত গোয়েন্দা বাহিনীর বেতন গুনা লাগতো না খিলাফত যুগে। সবাই তার দায়িত্ব শতভাগ পালন করতো পরকালীন জাবদিহিতার ভয়ে।
বৃদ্ধ পরের দিন মদিনায় এসে তার জন্য নির্ধারিত ভাতা গ্রহন করে আপন নীড়ে চলে গেলেন।
কিছুদিন পর দেখা গেল হযরত ওমরের এই রাষ্ট্রীয় ফরমানটির ফলে কিছু সমস্যা তৈরী হয়েছে। খলিফার কাছে নালিশ আসতে থাকলো। রাষ্ট্রীয় এই সুযোগ গ্রহনের জন্য কিছু লোক অনৈতিক ভাবে নিজেদেরকে লিষ্টে নাম লিখাচ্ছে।
এই তথ্য জানার পর হযরত ওমর (রাঃ) শুরা সদস্যদের সাথে আলোচনা করে রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করে দিলেন। আজ থেকে বৃদ্ধ,প্রতিবন্ধী এবং শিশু ভাতা দেয়া হবে। অতএব আজকের পর থেকে কেউ তার সন্তানদেরকে আলাদা করে দেয় - অথবা সন্তান তার পিতা মাতাকে আলাদা করে দেয় - তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করবে রাষ্ট্র।
ইতিহাসের এই বিরল ঘটনায় যে শিক্ষাটাবড় হল, এটাই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম রাষ্ট্র কতৃক তার নাগরিকের জন্য প্রথম ভাতা প্রচলণ।
আর এই পদ্ধতিটা চালু করেন ইতিহাসের সবচেয়ে নাগরিক বান্ধব শাসক খলিফা হযরত ওমর (রাঃ)। আরো চলমান বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের জন্য শিক্ষনীয় বিষয় হল,যে বৃদ্ধের কারনে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় এটা প্রচলণ হল, তিনি কিন্তু মুসলমান ছিলেন না।বরং তিনি ই্য়াহুদী সম্প্রদায়ের ছিলেন।খিলাফাহ সরকারে এই বৃদ্ধটি ছিলেন সংখ্যালুঘু সম্প্রদায়। খিলাফা ব্যবস্থার এটা হল আলোচনার দিক। বিবেচনার বিষয়।
অথচ - আজকের বাস্তবতা কী? যে জাতির খলীফা একজন অমুসলিম নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এত বড় পদক্ষেপ গ্রহন করলেন - - সেই জাতির কোন মানবাধিকার নেই।শুধু নেই নয় দাবী করাও যাবে না।গণহত্যা চালালে তা বলা যাবে না।তাবৎ পৃথিবীতে আজ অধিকার হারা,নির্যাতিত,আপন বসত বাড়ী থেকে উৎখাত করা,নুন্যতম মানবাধিকার না দেয়া - এটা নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। নতুন করে আবার পরীক্ষা চলছে - গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত হবার পর ও ক্ষমতায় এরা থাকতে পারবে না।কারন তারা হয়তো সত্যিকার মুসলমান।
আবার সকল দোষ যেন এই জাতির ভাগ্য হয়েছে। প্রায় সকল ক্ষেত্রে মুসলমানদেরকে দ্বায়ী করা হয়। মার খেলে আবার প্রতিবাদ করলেও। আর এগুলো সবই করছে মুসলিম নামের নিকৃষ্ট কিছু দালাল শাসক শ্রেণী।
প্রতিনিয়ত এই মেরুদন্ডহীন, জালেম - ফ্যাসিষ্ট শাসকদের প্রভুরা উপদেশ দেয় - সংখ্যালূঘুদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য।নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করার জন্য। এটা হল দেশের বাহির থেকে।
মুসলিম দেশ গুলোতে নতুন আরেক শ্রেণী তৈরী করা হয়েছে। যাদেরকে বলা হয় - সুশীল সমাজ।এদের খাওয়া দাওয়া -আমোদ ফূর্তি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয় এনজিও নামের বেনিয়াদের দ্বারা।এরা সবাই নামে মুসলিম কিন্তু কাজে কর্মে চিন্তা চেতনায় তাদের প্রভুদের পোষ্য দালাল।
সাম্প্রদায়িক বলা হয় খলিফা ওমরের উত্তরসূরীদেরকে। এখন প্রশ্ন হল - আজকের মুসলমানরা কি খলিফা ওমরের যোগ্য উত্তরসুরি? এর কারন আমি মনে করি - হযরত ওমর (রাঃ) কে মুসলমানদের রিডিং পদ্ধতি। ওমর (রাঃ) চরিত্রের যে রুপায়ন মুসলিম সমাজে, তার সাথে খলিফা ওমরের মিল নেই। মুসলিম নামের আজকের শাসকরা অবশ্যই হযরত ওমর (রাঃ) নীতি নৈতিকতা থেকে বহু দুরে। মুসলমান হওয়া তো অনেক পরের বিষয়। আগে মুসলামন তার পর না হযরত ওমরের উত্তরসুরীর বিষয়।
মুসলিম শাসক শ্রেনীর চরিত্র আজ বিশ্ববাসী দেখছে - তার সাথে খিলাফাহ শাসন ব্যবস্থার কোন সম্পর্ক নেই। আর দৃষ্টিভংগীর ফারাক তো আছে। যাকে আমি বলি ঈমানহীন মুসলিম।তাই অধিকাংশ মুসলিম শাসকরা আজ ইসলাম ও মুসলমানের সবচেয়ে বড় শত্রু।
এটা সত্য এবং লজ্জাজনক,৫২ বা ৫৮ টি মুসলিম দেশের অধিকাংশ নেতারা ই মেরুদন্ডহীন। আপন জাতির জন্য এক গজব হয়ে দাড়িয়েছে।মুসলিম উম্মার যেন নিয়তি হয়ে দাড়িয়েছে। মুসলিম নেতা বা শাসক তিনি অবশ্যই স্যেকুলার হতে হবে। বা স্যেকুলারদের সেবাদাস হতে হবে। স্যেকুলার না হলে তাকে মুসলমানদের নেতা বলা যাবে না। বংশবদ মিডিয়া তাদেরকেই হাইলাইট করে।
অবশ্য এই সব অথর্ব অযোগ্য শাসক বা নেতারা ইসলাম ও মুসলমানদের কিছু রসম রেওয়াজ পালন করেন বা চর্চা করার সুযোগ দেয়।
যা নিজেদের ক্ষমতা - প্রভাব, মুসলিম জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্য করার জন্য। বিষয়টা এভাবে বলতে পারি - প্রতারণা,ধোকা দেবার জন্য কিছু সময়ের জন্য তারা মুসলামন হয়।জীবনের বাকি সময় ওরা স্যেকুলার।অবস্থা এমন দাড়িয়েছে, মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক দুশমন হল স্যেকুলার রাজনীতি এবং স্যেকুলার শাসক শ্রেণী।নিকট অতীত সাক্ষ্যি - এই স্যেকুলার বস্তুবাদীরা (কোথাও বামপন্থী) যত মুসলমানকে হত্যা করেছে তার শত ভাগের একভাগ ও অমুসলিমদের হাতে নিহত হয় নাই।
যেহেতু মুসলিম উম্মার সামনে ইসলামের পরিপূর্ণ রুপ নেই বা খিলাফতের বাস্তব নমুনা নেই। যা আছে তাতে ও অতিরিক্ত ভক্তি আর আবেগ আর বিকৃতির রুপ।
এজন্য আমরা সম্মিলিত ভাবে সবাই প্রতারণার স্বীকার হচ্ছি। বার বার বিশ্বাস ভংগের কারন হচ্ছে। আমরা আহত নিহত নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছি আমাদের নির্বাচিত অনির্বাচিত সরকারগুলোর মাধ্যমে।
দশ)
কেন রাসুল (সঃ) হযরত ওমর (রাঃ) সম্পর্কে বললেন, আমার পরে আর কোন নবী আসবেন না। যদি নবী রাসূল প্রেরণের ধারাবাহিকতা থাকতো তাহলে খাত্তাবের ছেলে ওমরকে নবী করা হত। হযরত ওমর (রাঃ) চরিত্রের এই দিকটি একেবারে ভুলে আছে আজকে মুসলিম সমাজ। আমাদের সম্মিলিত ভূল টা এই জায়গায়। যাকে আমি বলছি, দৃষ্টিভংগীর সমস্যা।
শহীদ সাঈয়েদ কুতুব (রঃ) ভাই মুহাম্মদ কুতুবের ভাষায় - ওমর (রাঃ) কখনো খেলাফতকে নিজের একটা বাড়তি অধিকার হিসাবে গ্রহণ করেননি।তবে তিনি খেলাফতকে নিজের একটি বাড়তি দায়িত্ব অবশ্যই মনে করেছেন। বলা বাহুল্য সে দায়িত্ব আল্লাহর আইন জারী করা ছাড়া আর কিছু নয়। সাইয়েদ কুতুবের এই মন্তব্যের প্রমান পাওয়া যায় ওমর (রাঃ) এর অভিষেক ভাষণে।
ওমর (রাঃ) তার বাইয়াত অনুষ্ঠানে যে ভাষণ দেন তাতে বলেন,
ভাই সব!'আমি তোমাদের একজন। তার চেয়ে বেশী কিছু নই। যদি খালিফাতুর রসূলের (হযরত আবু বকর (রাঃ)) অুনুরুধ প্রত্যাখ্যান করা সংগত হতো তাহলে আমি কিছুতেই তোমাদের এ দায়িত্ব গ্রহণ করতাম না।'
অপর এক ভাষণে ওমর (রাঃ) বলেন,
আমার ওপর তোমাদের কতিপয় দায়িত্ব অর্পিত আছে সেগুলো আমি উল্লেখ করছি। এগুলো সম্পর্কে তোমরা সব সময় আমার কাছে হিসাব চাইবে।তোমাদের খাজনা ও কর আদায় করা আমার দায়িত্ব। আমি তোমাদের মধ্যে সততার সাথে সম্পদ বন্টন করবো।তোমাদেরকে বিপদের মুখে নিক্ষেপ করবো না,বেশীদিন সীমান্ত রাখবো না। আরো বেশ কিছু দায়িত্বের কথা স্বরন করে দেন জনগনকে। যাতে সর্বদা খলিফাকে জবাবদিহীতার মধ্যে রাখতে পারে।
আগামী পর্বে -
২য় পর্বের লিংক -
http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/1876/IBNAHMED/26169
১ম পর্বের লিংক -
http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/1876/IBNAHMED/26103
বিষয়: বিবিধ
২২০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন