হযরত ওমরের (রাঃ) ইসলাম গ্রহন ও সাময়িক প্রসঙ্গ (ধারাবাহিক)

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২৮ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:৫০:০০ বিকাল

এক)

আমরা হযরত ওমর (রাঃ) এর জীবনের কিছু দিক আলোকপাত করতে চাই। এই আলোচনা বা লিখা শুধুমাত্র জীবন - চরিত্র ভিত্তিক নয়। বরং এর সাথে সমসাময়িক বিষয়গুলোও আমাদের আলোচনায় আসবে। ব্লগে লিখা বা পড়া সব মিলিয়ে আমরা দেখতে চাই আমাদের ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য,তথ্যাদি - যা আমাদের বর্তমান সময়ে জানা উচিত। ধারণ করা প্রয়োজন।কারন ইতিহাস শুধুমাত্র চর্চার বিষয় নয় বরং শিক্ষার বিষয়। আর সেই শিক্ষাটা গ্রহন করতে হয় সময় মতো।বিপরীত হলে সমুহ বিপদ।বর্তমান সময়ে আমাদের বিপদের অনেকগুলো কারনের মধ্যে এটি একটি বড় কারন। আমার ইতিহাস থেকে আমাদের পথ চলার পাথেও গ্রহন করিনা।এটা মুসলিম উম্মার সমস্যা।সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন না করাই আজকের এই সমুহ বিপদ।

সময় আমাদের জন্য একটি পরিক্ষা আবার অমুল্য সম্পদ ও বটে। সময়ের কসম খেয়েছেন মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে। একটি সূরার নাম ই করা হয়েছে 'সূরাতুল আসর'।

এই সময় বলতে - শুধু চলমান সময় ই নয়। বরং অতীত,বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। আবার আসর বলতে যুগ, কাল, শতাব্দীকে ও বূঝানো হয়।গত শতাব্দীর মুজাদ্দীদ আল্লামা মওদুদী (রঃ) সূরাতুল আছরের তাফসীরে খুবই চমৎকার করেছেন।

একই সূরার তাফসীর পড়ার অনুরুধ করি, গত শতাব্দীর আরেক মুজাদীদ- শহীদ সাঈয়্যেদ কুতুবের তাফসীর ফি যিলালিল কোরআন থেকে।শহীদের হৃদয় নিংড়নো তাফসীর। শহীদ হবার জন্য অপেক্ষমান এক ইসলামী আন্দোলনের নেতা - যিনি নির্জনে বসে সময়ের (আসরের) তাফসীর করেছেন। কষ্ট হলেও সূরাতুল আসরের তাফসীরটা পড়ুন। জীবন পাল্টে দেবার মত পরিকল্পনা রয়েছে এই শহীদের লেখা তাফসীরে। আমার দৃষ্টিতে তাফসীর ফি যিলালিল কোরআনের সফলতা হল - শহীদ সাঈয়্যেদ কুতুব হৃদয়ের গভীর থেকে যে প্রত্যয়ের সাথে তাফসীর উপস্থাপনা করেছেন। সেই উপলব্ধি,সেই বোধ,সেই প্রত্যয় প্রতিটি তাফসীর পাঠককে সমভাবে আলোড়িত,ভাগ করে দেয়। তাফসীর ফি যিলালিল কোরআনের পাঠক নিজেকে আবিস্কার করতে পারে- শহীদ এই মুসন্নিফের একান্ত পাশে। তিনি সার্থক ভাবে সময়কে ধারণ করে এই বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরটি লিখেছেন।

তাই সময়কে যারা শাসন করতে পেরেছেন তারা ইতিহাসে চির স্বরণীয় হয়ে আছেন। সময়কে পরিকল্পিত ভাবে যারা ব্যবহার করতে পেরেছেন তারা সামগ্রিক জীবনে সফল হয়েছেন। সময় নিয়ে যারা উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন- তারা তাদের প্রতিভার ব্যবহার করতে পারেননি। আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিভাকে কাজে লাগানোর বা সেটা সমাজ ও গণমানুষের জন্য ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অবশ্য আমি ব্যক্তিগত জীবনে সময়ের অপচয়কারীদের দলে।

দুই)

মানুষ গোমরাহ হয় তিনটি কারনে। এই গোমরাহ শব্দটি শুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রে নয়। বরং মানুষ তিনটি কারনে গোমরাহ হয়।

এই মৌলিক কারনেই ব্যক্তি তার জীবনের মিশন ঠিক করতে বার বার ভুল করে।ব্যক্তির চিন্তা চেতনার উপর ই নির্ভর করে তার কর্ম। কর্ম ই বলে দেয় মানুষটি কি বোধ বিশ্বাস ধারণ করে।বোধ বিশ্বাসের বা চেতনার প্রতিফলন দেখা যায় তার ব্যপ্তিময় জীবনে।

রাজনৈতিক বা ধর্মীয় ব্যক্তি হলেও - মানুষকে বিচার করার প্রধান উপায় হল তার আচার - আচরণ।ব্যক্তির পরিচয় ঠিক করতে হলে তাকে তার কর্ম দিয়ে ই বিচার করতে হয়।

ব্যক্তি জীবনে সে ধার্মিক,রাজনৈতিক জীবনে তিনি সেকুলার, অর্থনৈতিক জীবনে আবার মার্কসবাদী।

এগুলো শুনতে খুবই ভাল লাগে।কেমন বৈচিত্র জীবন! কিন্তু আসলে এরকম জীবন হল - ব্যক্তি নিজের সাথে নিজেই প্রতারণা করার জীবন। মানব জীবনে এর চেয়ে বড় ভন্ডামী (মুনাফিকি) আর কিছু নাই।
এজন্য ইসলামের সকল কিছুর ভিত্তি রাখা হয়েছে ঈমানকে। ঈমান ছাড়া কোন কল্যাণকর কাজের ফল, ব্যক্তি যেমন ভোগ করতে পারে না। তেমন তার দ্বারা সমাজ ও উপকৃত হয় না।এ ধরনের পিকুলিয়ার টাইপের জীবন হয় দেশ ও জাতীর জন্য খুবই বিপদজনক।যা আজ দেশের জনগণ ভোগ করছে।যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়েন আবার তিনিই সংবিধান থেকে আল্লাহ নাম মুছে দেন।যিনি মদিনার সনদে দেশ চালাতে বলেন - আবার সেই অতি পিকুলিয়ার?মুসলমান আলেমদেরকে হত্যায় মেতে উঠেন। এর কারন আমাদেরকে খোজা প্রয়োজন নিজেদের স্বার্থে।জাতীর কল্যাণেতো বটেই।

যে তিনটি কারনে মানুষ গোমরাহ হয়।অথবা ঈমান হারা হয়। সেগুলো হল-

ব্যক্তি তার নিজের চিন্তা চেতনার গোলাম হওয়া। যা কোরআনে এসেছে নফসের দাসত্ব করা।

২য়টি হল- ব্যক্তি তার রসম রেওয়াজের গোলামী করা।এই রসম রেওয়াজটা খুবই তাৎপর্য পূর্ণ।হাজার বছরের জাতিয় ঐতিহ্য,জাতীয় সাংস্কৃতির আনুগত্য করার নামে শিকড় সন্ধান করা।

৩য়টি হল - মানব রচিত মতবাদ।মানুষের তৈরী করা পথ,মত,ইজম,দফা,কর্মসূচী ইত্যাদি।

আমাদের সমাজের উচুস্থরের মানুষরা, এই তিনটি গোমরাহীতে ডুবে আছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে ২য় এবং ৩য় কারনে ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছে আমাদের পরিচিত,শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক সংগঠন,ব্যক্তি,আদালত সহ আরো অনেক।

এজন্য দেখা যায় - মুসলমান ঘরে জন্ম গ্রহন করে,মুসলামান নাম গ্রহন করে,ব্যক্তি জীবনে নামাজী হয়েও মহা সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান।

একজন মুসলমান সকল ক্ষমতার উৎস বিশ্বাস করলে সে মুসলমান হবে। নতুবা অবশ্যই সে মুসলমান নয়।হযরত ওমর (রাঃ) নবীর মিশনের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল এই জায়গাগুলো তে। তিনি তার জাতীয় ঐতিহ্য,চেতনার বিপরীত দর্শন গ্রহন করতে ই ছিলেন সম্পুর্ণ নারাজ।

রাসূল (সঃ) যখন নবুয়ত লাভ করেন তখন হযরত ওমরের বয়স ছিল ২৭। ২৭ বছরের একজন পড়ালেখা করা মানুষ এবং বিচার বুদ্ধিতে পরিপক্ষ ছিলেন। মক্কাতে যে কয়জন লেখা পড়া জানতেন তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত ওমর (রাঃ)। কিন্তু বার বার তাকে ইসলাম থেকে দুরে রেখেছে - তার জাতীয় ঐতিহ্য,চেতনা,সমকালীন সাংস্কৃতি।তিনি মক্কাবাসীর হাজার হাজার বছরের জাতীয় এহিহ্য ও সাংস্কৃতির বিপরীত সকল উদ্দোগকে জীবন দিয়ে প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।

তিন)

ইসলাম খুবই দ্রুত গতিতে হযরত ওমরের পরিবারে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর ভগ্নিপতি সাঈদ প্রথমেই ইসলাম গ্রহন করেন।তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাঁর বোন ফাতেমাও মুসলমান হয়ে যান। ওমরের পরিবারের আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নঈম বিন আব্দুল্লাহও ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেন। তার পরিবারের দাসী লুবাইনাও ইসলাম গ্রহন করেন।হযরত ওমর শুধু মাত্র জানতে পারেন দাসী ইসলাম গ্রহন করেছে। এই মহীয়সী নারীকে ওমর নিজের হাতে নির্যাতন করতেন। পিটাতে পিটাতে ওমর ক্লান্ত হয়ে পড়লে, বিশ্রাম নিয়ে আবার পিটাতেন।

তার সম্পর্ণ অজান্তে ই ইসলাম তার পরিবার দখল করে ফেলে। এটা জানার পর তিনি আরো ক্রোধে অধীর হয়ে ইসলাম গ্রহনকারীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান। যার পরিণতিতে তিনি নিজেই আত্মসমর্পন করেন মহা সত্যের কাছে।

(আশা করছি লিখাটি ধারাবাহিক লিখার। সাহায্য চাই মহান আল্লাহর।আমি কয়েকটি সিরাত পড়ে যা পেয়েছি তাতে মনে করি আমার প্রিয় অঙ্গন, সকল ব্লগার ভাই বোনদেরকে শেয়ার করার। হযরত ওমর (রাঃ) জীবনের এমন অনেক দিক রয়েছে যা সাধারণত আমাদের সমাজে চর্চিত হয় না।মানার ব্যাপারটাতো আরো অনেক পরের। আমার লিখার সকল তথ্য সুত্র ইনশাআল্লাহ লিখাটি শেষ করলে দিব।সকলের দোয়া চাই।)

আগামী পর্বে।

বিষয়: বিবিধ

৩২৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File