আমাকে কি বড় হতে দিবানা - যেতে হবে বহুদুর - ঐশী মেয়েটা বহুদুর যেতে পেরেছে?

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১৮ আগস্ট, ২০১৩, ০১:২৯:০৪ রাত

দেশের বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর কনজুমার বা ভোক্তা হলাম আমরা সাধারন পাবলিক। সাধারন বলতে আমি বলছি - আমি - আপনি, এবং আপনারা। অবশ্য দেশের উপরতলার কিছু মানুষ আছেন যারা ভোক্তা এবং একই সাথে এই কোম্পানীগুলোর সুবিধাভোগী।ঐ সাধারন বাঙ্গালী ভাষায় যাকে দালাল বলা হয়।

এই সুবিধাভোগীদের পরিচয় আমাদের সমাজে হরেক রকম। কেউ সাংস্কৃতিক কর্মী,কেউ মানবাধিকার নেত্রী,কেউ সুশীল সমাজ,কেউ পরিবেশবাদি,কেউ আবার ৭১ এর চেতনা পন্থী। এই শ্রেনীর মানুষজনরা আবার দেশের একটি বিশেষ দলের প্রতি অন্ধ। বিচার বিবেচনা সবই তাদের লোভ পায় এই দলের পক্ষে দালালী করতে। এরা সময়ে অসময়ে একটি বিশেষ ৭১ এর চেতনার পক্ষে প্রচারণা চালান। যার অর্থ আসে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর এ্যডের মাধ্যমে।

আবার মিডিয়াতে এই সমস্ত বহুজাতিক কোম্পানীগুলো সমান ভাবে তাদের অর্থ লগ্নি করেন না। ঐ একই পক্ষের মিডিয়াতে ই তাদের শতকারা ৮০ ভাগ এ্যাড বরাদ্ধ হয়।

উদাহারন হিসাবে বলা যায় - গ্রামীণ ফোন কোম্পানী। গ্রামীণ ফোনের এ্যাড যারা পান তাদের একটা হিসাব করুন। একটা লিষ্ট তৈরী করুন। দেখবেন আপনার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। চ্যানেল আই, বৈশাখী সহ দেশের সুশীল সমাজ বান্ধব সকল মিডিয়াতে বড় বড় এ্যড দেয়া হয়।

এই সুশীল সমাজ কারা? তাদের পরিচয় বর্তমানে সবার কাছে পরিস্কার। প্রথম আলো, ডেইলি ষ্টার, চ্যনেল আই,সিপিডির প্রোডাক্ট সুশীল সমাজ,বাংলাদেশের রাজনৈতিক এতিম বামপন্থী সম্প্রদায়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যারা রামপন্থী অর্থ্যৎ ভারত পন্থী।বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর ভোক্তা দেশের সাধারন মানুষ হলেও এই কয় প্রকার মানুষ এবং প্রতিষ্ঠান,রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ভাবে স্যেকুলার গোষ্ঠী উপকৃত হয়ে আসছে। এই জায়গায় দেশের সাধারন মানুষের মৌলিক বোধ বিশ্বাসের বিপরীত চিন্তা চেতনাকে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার সকল আর্থিক যোগান দেয় বহুজাতিক কোম্পানীগুলো। রবিঠাকুরকে নিয়ে মেগা সিরিয়াল, আলোচনা,নাটক,আলেখ্যনুষ্ঠান,টকশো ইত্যাদিতে যত না আগ্রহ তাদের। তত বেশী অপছন্দের জায়গা হল জাতীয় কবি নজরুলকে নিয়ে কোন ফান্ড বা এ্যড খরছ করা।

দেশের মাত্র ৩% পাসেন্ট উপজাতির সাংস্কৃতি নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজনে ফান্ড দেয় বহুজাতিক কোম্পানীগুলো দাতা হাতেম তাইর মত। কিন্তু বাকি ৯৭ ভাগ মানুষের বাৎসরিক উৎসবে (ঈদ) সেরকমটা দেয়া হয় না। বরং এই ক্ষেত্রে কারুনের অবস্থা। এটা বর্তমান বাস্তবতা। আরো কঠিন বাস্তবতা হল, এই ৯৭ ভাগ মানুষের দৈনন্দিনের চর্চিত বিষয়গুলোকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা,বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা, ইসলাম মুসলামনকে কষে গালি দিতে পারে এমন ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান,মিডিয়াকে নানা ভাবে সাহায্য করা হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে।

তাদের এ্যাডগুলোও তৈরী করা হয়,প্রচার করা হয় এমন ভাবে যাতে দেশের ৯৭ ভাগ মানুষের চিন্তা, চেতনা, রুচি,বোধ বিশ্বাস সর্বপরি সাংস্কৃতিকে আক্রমন করা যায়। এক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয় জাতির আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে। আমি বলছি আমাদের জাতীয় অহংকার ৭১ এর আবেগের কথা।

গ্রামীণ ফোনের এ্যাড ছিল আলো আসবে। দেখানো হলো আলোর ছায়া পড়ছে একটি ঘরে। সেই ঘরে পবিত্র কুরআন পড়ছে কিছু ছেলেরা। ছেলেদের মাথায় টুপি গায়ে পান্জাবী। তারা বাহিরের আলোর রশ্মি দেখে কুরআন বন্ধ করে আলোর দিকে দৌড় দিচ্ছে।

এই এ্যড দিয়ে কি বুঝানো হল। কৌশল করে বুঝানো হল কুরআন,মাদ্রাসা হল আলোর বিপরীত। এগুলো ছেড়ে আসো ডিজুজ সাংস্কৃতিতে। কী চমৎকার এ্যড!

গ্রামীণ ফোন যে দেশের মালিকানায়, সেই দেশে একই এ্যাড দেখানো হত - চিত্রটা একটু বদলিয়ে। টুপি আর পান্জাবী জায়গায় মাথায় এপ্রোন, এবং খৃষ্টীয় নানক।

তাহলে ভাবুনতো চরম ধর্মনিরপেক্ষ নরওয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক এই এ্যডের জন্য কত আইন আদালতে হামাগোড়ি দিতে হত গ্রামীণ ফোনকে। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশ এবং দেশের সুশীল বান্ধব মিডিয়া তাদের পয়সায় গৃহ পালিত,তাই তাদেরকে কেউ কিছু বলতে পারছে না।বলার সাহস ও নেই। যে মন্ত্রনালয় এগুলো দেখার বিষয়। সেই মন্ত্রনালয়ের সচিবের ছেলের চাকুরীতো গ্রামীণ ফোনে পেতে হবে।

আরেকটি এ্যড নতুন। কলেজগামী মেয়ের পিছু নেয়া পিতাকে ধমক দিয়ে মেয়ে বলছে, কেন আমার পিছনে আসছো,আমি কি বড় হইনি। আমাকে যেতে হবে বহুদুর।

এই বহুদুর কোথায়। সেটা হল ডিজুজ সাংস্কৃতি।যে সাংস্কৃতির জোয়ার দেখেছিল কয়েক মাস আগে শাহবাগে। যেখানে বাঙ্গালী ঘরের মেয়েরা একই তাবুতে ছেলেদের সাথে রাতের বেলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশিক্ষন নিয়েছিল। দেশের তাবৎ মিডিয়া একই সাথে হুক্কা হোয়া করছিল। কী নান্দনিক দৃশ্য!

এই ডিজুজ সাংস্কৃতি নিয়ে দার্শনিক কবি ফরহাদ মাজহার বেশ কয়েক বছর আগে পত্রিকায় লিখেছিলেন। তার পর থেকে তিনি সুশীল সমাজ থেকে তার নাম খসে পড়ে। তিনি বুদ্ধিজীবি মহলে সাম্প্রদায়ীক হয়ে গেলেন।


আরেকটি এ্যড ছিল দেখবেন যেটা ডিসেম্বর মাসে প্রচারিত হয়। সেটা হল কন্যা অপেক্ষা করছে বাপের জন্মদিন পালনের। পিতা কেক নিয়ে হাজির। বলুন তো এটা কী গ্রামীণ ফোন ব্যবহারকারীদের ঘরে পালিত হয়।

না বাড ডে পালনের জন্য প্রচারণা। দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি গ্রামীণ ফোনের যদি দ্বায় বদ্ধতা থাকতো। তাহলে এ্যডগুলোর চিত্রায়ন,গল্প নির্বাচন,এ্যডের ডায়লগ, চরিত্র ভিন্ন হত।

চ্যনেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রা। এটা গ্রামীণ ফোন তৃতীয় মাত্রা। এক বছরের আগত প্যনালিষ্টদের একটি তালিকা করুন। দেখুন কাদেরকে আমন্ত্রন করা হয়। পুজা পার্বনে আমন্ত্রন করা হয় বাছাই করা হিন্দু ধর্মের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বদেরকে। আর মুসলামানদের উৎসবে বা ইস্যুতে আমন্ত্রন করা হয় হকার নেতা এবং ইসলামকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন কারী মিজবাহ সাহেবকে। এবার ঈদের বিশেষ তৃতীয় মাত্রায় দেখলাম,বিএনপির ঢাকার সদস্য সচিব আব্দুস সালাম সাহেব,স্ত্রী কন্যকে। তারা সুশীল সমাজের জাতে উঠার জন্য গাইলেন রবিন্দ্র সংগীত।

বলুনতো একটা কবিতা বা গান কি? আছে রবিঠাকুরের ভাষায় মুছলমানদেরকে নিয়ে।অথচ অনুষ্ঠানটা ছিল ঈদের বিশেষ তৃতীয় মাত্রা। দেশের সত্যিকার গ্রহন যোগ্য আলেমদেরকে কি কখনো তৃতীয় মাত্রায় দেখেছেন।


গ্রামীণ ফোনের জিরো আওয়ারের বা অন্য যে কোন অনুষ্ঠানের মেহমানদেরকে লিষ্টটা নিজেরা করুন।

এরকম রবি,বাংলা লিংক বা স্কয়ার,প্রাণ সহ দেশীয় এবং আর্ন্তজাতিক কোম্পানীগুলোর মিডিয়াতে অর্থ লগ্নি কোথায় এবং কি প্রচার - প্রচারণায় ব্যবহার করা হয়। এই বিবেচনাটা কি আমারা ভোক্তারা কখনো করি। কখনো কি চিন্তা করি ইসলাম,মুসলামন,দেশ জাতির বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান। তাদের পন্যের ভোক্তা হয়ে নিজেরাই নিজেদের সাথে যুদ্ধ করছি। এই বিবেচনা করা কি আমাদের উচিত নয়?

আরেকটি এ্যডের কথা মনে পড়লো। দেখবেন - একটি নৌকার পাশে দাড়িয়ে সবাই দোয়া করার ষ্টাইলে শপথ করছে। আর নেপথ্যে বলা হচ্ছে - সকল কনফিউশান পিছনে ফেলে নৌকাকে ধাক্কা দেন।অথবা নৌকায় চড়। কি আগাম নির্বাচনী প্রচারনা। এখন আর সেটা দেখানো হয় না।

গত নির্বাচনের পূর্বে - প্রথম আলো গ্রুপের শ্লেগান ছিল বদলে যাও বদলে দাও। বাংলা লিংকের এ্যড ছিল - দিন বদলের। একটি ঢেউ টিনের এ্যড ছিল - পুরানা জিনিস বাদ দাও নতুন আর দিন বদলের যুগে প্রবেশ কর। কি বিচিত্র দেশ।

এই ক্ষেত্রে বিএনপি পন্থী ব্যবসায়ী বা জাতীয়তাবাদী ও ইসলাম পন্থী ব্যবসায়ীদের কথা বললাম না। কারন তারা শুধু মাত্র ব্যবসায়ী। সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই তারা জাতীয়তাবাদী বা ইসলাম পন্থী।

তবে জনাব ফালু ভাইর টিভি এবার ১৫ আগষ্টের দিন ও রাত পুরাটাই নিরপেক্ষ ছিল। কেমন নিরপেক্ষ ছিল তা যারা দেখেছেন তাদেরকে বলবো মন্তব্য করুন। তবে টিভিতে আরেকটি চিত্র দেখছিলাম আর বিএনপির নেত্রীর বালখিল্য আচরন অনুভব করছিলাম। সেটা হল এবারও ওমরাতে নেত্রীর পিছনে দাড়িয়েছিলেন আমাদের সফল ফালু ভাই। বিচিত্র দেশের মহা বিচিত্র বিরোধীদলের নেত্রী।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File